ব্রেইন-সংক্রান্ত যে দশ কারণে মানুষ ক্রাইমে জড়ায় !

0
215
ক্রাইম

যখন কোন অপরাধ সংঘটিত হয়,সমাজ তখন চিন্তায় পড়ে যায় কিভাবে কেউ এমন কিছু করতে পারল! এসকল ক্ষেত্রে আমরা বেশিরভাগ সময়ই ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের পরিণতির কথা চিন্তা করি কিন্তু বুঝতে পারিনা যে আমার মতন একজন রক্তমাংসের মানুষ কিভাবে এমন হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। আমরা অনেকেই জানি না যে সাধারণ মানুষের তুলনায় অপরাধীদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ভিন্ন। কিছু কিছু মানুষ তাদের কষ্টসহিষ্ণু শৈশবের দরুন বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে আবার কিছু কিছু অপরাধী হয় মানসিক রোগী কিংবা দুর্বল ব্যক্তিত্বের অধিকারী যাদের অপরাধের প্রতি থাকে এক রহস্যজনক ঝোঁক। আসুন জেনে নিই ক্রিমিনাল ব্রেইনের দশ রহস্য!

এক।। যখন মস্তিষ্কের কিছু অংশ অকার্যকর হয়

একজন মানুষকে পরিপূর্ণ করতে তার মস্তিষ্কের প্রত্যেকটি অংশ একত্রে কাজ করে। কিন্তু বেশীরভাগ অপরাধীদের ক্ষেত্রে, মস্তিষ্কের সব অংশ একই আকারের হয় না। তাই তাদের চিন্তা-ধারণা অন্যদের চেয়ে ভিন্ন হয়। গবেষণায় জানা গেছে যে, যারা অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত তাদের মস্তিষ্কের বিশেষ করে ফ্রন্টাল লোবের দুটি অংশ তুলনামূলকভাবে ছোট হয়ে থাকে, ফলে অনেকসময় তারা একইরকম অপরাধ পূনরাবৃত্তি করে থাকে। সাধারণ মানুষের তুলনায় অপরাধীদের মস্তিষ্কের একটি অংশ ১৮% এবং অপর অংশটি ৯% ছোট হয়ে থাকে । মস্তিষ্কের এই অংশটি আমাদের চিন্তা-চেতনা, আবেগ এবং উদ্দেশ্যমূলক আচার-আচারণ নিয়ন্ত্রন করে, কিন্তু অপরাধীদের এই অংশে কোন নিয়ন্ত্রন থাকে না। একটি মনঃগবেষণায় আরো জানা যায় যে, অপরাধীদের এমাইগডালা (যা মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রনকারী একটি অংশ) সাধারণ মানুষের তুলনায় ১৮% ছোট থাকে।

দুই।। ব্রেইন টিউমার

অপরাধীদের নিয়ে এক গবেষণায় কিছু কিছু অপরাধীদের ব্রেইনে গবেষকেরা টিউমার পেয়েছেন। ধারণা করা হয় যে এজন্যই তারা বিকৃত চিন্তা করে থাকে এবং  বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৬ সালে চার্লস হোয়াইটম্যান নামক এক ব্যক্তি ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে ১৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে, পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় যা ছিল একটি মর্মান্তিক ঘটনা। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া তার চিঠি থেকে জানা যায় যে, তিনি প্রচন্ড মাথা ব্যথায় ভুগছিলেন এবং নানা রকম অযৌক্তিক কল্পনায় বিভোর থাকতেন। তার চিঠি থেকে আরও জানা যায় যে, তিনি তার মা এবং সহধর্মিণী কে হত্যা করে উম্মাদের মত হাসপাতালে ছুটে যান এবং ডাক্তারকে তার ব্রেইনের অটোপসি করার জন্য অনুরোধ করেন, পরবর্তীতে ঐ ডাক্তারের কাছ থেকে জানা যায় যে, তার মাথায় গ্লাইয়োব্লাস্টোমা টিউমার পাওয়া গিয়েছিল যা তার চিন্তা-চেতনাকে নিয়ন্ত্রন করছিল আর এই ধরনের অসামাজিক কাজের ক্যাটালিস্ট হিসেবে কাজ করছিল।

আরও পড়ুনঃ   সুন্দর স্বাস্থ্য পেতে যা করবেন!

তিন।।  ব্রেইনের নিউরোট্রান্সমিটার নামক ক্যামিকেলের অসামঞ্জস্যতা

আমদের ব্রেইনে নিউরোট্রান্সমিটার নামক ক্যামিকেল রয়েছে যা প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন সিগন্যাল আদান-প্রদানের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, কিছু কিছু অপরাধীদের এই নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রায় অসামঞ্জস্যতা থাকে যেমন সেরোটোনিন বা ডোপামিনের মাত্রা সাধারণ মানুষের তুলনায় ভিন্ন। সঠিক মাত্রার সেরোটোনিন মানুষকে আক্রমনাত্বক আচরণ থেকে দূরে রাখে, তাই সেরোটোনিন এর মাত্রা কমে গেলে মানুষ নিজের অজান্তেই আক্রমনাত্বক আচরণ করে বসে। অন্যদিকে ডোপামিনের মাত্রা বেড়ে গেলে মানুষ আক্রমনাত্বক আচরণ করতে পছন্দ করবে এবং বার বার একই কাজে লিপ্ত হবে। আর এভেবেই অসামঞ্জস্য সেরোটোনিন আর ডোপামিন মাত্রার কারনে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

চার।। যখন ব্রেইন মৌখিক অভিব্যক্তির প্রতি অসাড় হয়

এক পরীক্ষায় গবেষকেরা দেখেন যে, মানসিক রোগী যারা হিংসাত্মক কার্যকলাপের সাথে জড়িত তাদের বেশীরভাগ ই মৌখিক অভিব্যক্তি যেমন- ভয়, কান্না, দুঃখ ইত্যাদি বুঝতে অক্ষম। এতে প্রমাণিত হয় যে, কেন তারা এই ধরনের কর্মকান্ডের পর অনুশোচনায় ভোগে না!

পাঁচ।। প্রতিক্রিয়াহীনতা

সাধারণ মানুষের ব্রেইন যেভাবে ভয়-ভীতির প্রতি প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে তেমন একজন সাইকোপ্যাথের ব্রেইন প্রদর্শন করে না। গবেষনার স্বার্থে গবেষকেরা ইলেকট্রিক শক দেয়ার পূর্বে একটি নির্দিষ্ট টিউন বাজিয়ে দেখেন। সাধারণ একজন ব্যক্তি এই টিউনটি শুনে উদ্বিগ্ন হলেও একজন সাইকোপ্যাথের ব্রেইনে এর কোন প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায় নি। এই ধরনের প্রতিক্রিয়াহীনতা ভয়ানক আসামীদের মধ্যে খুব বেশী দেখা যায়।

ছয়।। তিনে লক্ষণ !

গবেষকেরা এক দল তিনবছর বয়সী বাচ্চাদের সামনে কোলাহলপূর্ণ শব্দ চালিয়ে দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন যে, তন্মোধ্যে ৮% বাচ্চারা ঐ শব্দের প্রতি কোন প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে না এমনকি ভয়ানক কিংবা অপ্রীতিকর শব্দের প্রতিও। বিশ বছর পর দেখা গেল ঐ ৮% এর প্রত্যেকেরই কোন না কোন ক্রিমিনাল রেকর্ড রয়েছে এবং তারা ভিন্ন ভিন্ন ভয়ানক অপরাধের সাথে জড়িত। এর মানে এই না যে, যেসকল বাচ্চাদের ব্রেইন শৈশবে ভয়-ভীতির প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল নয় তারা পরবর্তীতে অপরাধী হয়ে উঠবেই, কিন্তু হ্যাঁ তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা থাকার সম্ভবনা খুব বেশী। সেজন্য অবশ্য ঐ সকল বাচ্চাদের এমন পরিবেশে বড় করা উচিৎ যাতে তারা সামাজিক মূল্যবোধ আর নৈতিকতার শিক্ষায় বেড়ে উঠতে পারে।

আরও পড়ুনঃ   ব্রেইন টিউমারের নীরব ৮ লক্ষণ

সাত।। ব্রেইনের যৌক্তিক-অযৌক্তিক উভয়ের অতিরিক্ত যোগাযোগ

আমাদের ব্রেইন দুটি অংশে বিভক্ত; বাম এবং ডান। বাম পাশের যৌক্তিক অংশের সাথে ডান পাশের অযৌক্তিক অংশ কর্পাস কলোসাম নামক বান্ডল অফ ফাইবার দ্বারা যুক্ত হয়। কিছু কিছু অপরাধীদের ক্ষেত্রে এই বান্ডল অফ ফাইবার বেশ লম্বা হয়ে থাকে এতে সাধারণ মানুষের তুলনায় তাদের ব্রেইনের দুই অংশের কর্মক্ষমতা এবং যোগযোগ বৃদ্ধি পায়। আপাত দৃষ্টিতে এটা ভালো মনে হলেও, এই অতিরিক্ত যোগাযোগ অপরাধীদের চিন্তাকে যৌক্তিক-অযৌক্তিক দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলে, ফলে তারা সুষ্ঠু চিন্তা-ভাবণা করতে পারে না এবং অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে।

আট।। জেনেটিক্যালি অপরাধপ্রবণতা

আমরা অনেক সময় দেখেছি কিছু কিছু অপরাধী অনেক ভালো পরিবেশে জন্মালেও অনেক ঘৃণ্য অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। আমরা ভাবি কেন বা কে তাদেরকে এমন করতে বাধ্য করছে, আসলে বাধ্য করা নয় গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঐ সকল ব্যক্তির হিংসাত্বক কার্যকলাপের প্রতি আগে থেকেই আগ্রহ থাকে আর যখনই তারা সুযোগ পায় তারা এই ধরণের কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। তাই তাদের গতিবিধির প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিৎ, খুব ভালো হয় যদি তাদের মনঃরোগ বিশেষজ্ঞ দ্বারা মনঃস্তাত্বিক সংশোধণ করানো যায়।

নয়।। বয়ঃসন্ধিকাল !

বয়ঃসন্ধিকাল এমন একটা সময় যখন একজন মানুষ সবচেয়ে বেশী আক্রমনাত্বক আচরণ করে থাকে, এর কারণ হতে পারে তাদের অপরিপূর্ন ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট এবং হিতাহিত  জ্ঞানের অভাব। বয়স্ক একজন ব্যক্তির যেমন ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা থাকে, তেমনটি চিন্তা করার মত ক্ষমতা একজন বয়ঃসন্ধিকালের বাচ্চার থাকে না। তাই এই বয়সে যে কেউ অপরাধের সাথে খুব সহজেই জড়িয়ে পড়তে পারে। তাই বাবা-মার উচিৎ এবয়সের ছেলে-মেয়েদের সাথে অধিক সময় ব্যয় করা, নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া।

দশ।। গর্ভবস্থায় ধূমপান।

যখন একজন মা গর্ভবতী থাকা অবস্থায় ধূমপান করেন তখন তিনি অজান্তেই তার বাচ্চার ব্রেইনকে ক্ষতিগ্রস্থ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসকল মায়েরা গর্ভবতী থাকাকালীন সময়ে ধূমপান করেছিলেন তাদের মধ্যে ৩১% শিশুর বড় হয়ে কোন না কোন অপরাধের জন্য কারাভোগ করতে হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, নিকোটিন কোন না কোনভাবে ব্রেইনের নৈতিক চিন্তা-চেতনাকে বাধাগ্রস্থ করছে।

আরও পড়ুনঃ   ‘ধূমপানের কারণে দেশের ৮০ লাখ মানুষ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত’

সূত্র: ই-প্রকাশ

বিঃ দ্রঃ গুরুত্বপূর্ণ হেলথ নিউজ ,টিপস ,তথ্য এবং মজার মজার রেসিপি নিয়মিত আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে লাইক দিন আমাদের ফ্যান পেজ বিডি হেলথ নিউজ এ ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

nine + 11 =