নারী ও পুরুষ প্রতিযোগী না সহযোগী?

0
603
নারী ও পুরুষ

মানব সভ্যতার অপরিহার্য দুটি উপাদান নারী ও পুরুষ। মহান স্রষ্টা নারী ও পুরুষ সৃষ্টির মাধ্যমে এ সভ্যতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। সে হিসেবে সমাজ-সভ্যতা বিনির্মাণে দু’পক্ষের রয়েছে স্বতন্ত্র ভূমিকা- মৌলিক অবদান। আর এ অবদান এতটাই মৌলিক যে পার্থক্যের ছেদরেখা টেনে দেখানো যায় না যে কোনটা বড় আর কোনটা ছোট। কিন্তু তা সত্ত্বেও যুগ যুগ ধরে মানুষ নিজেদের অজ্ঞতার দরুন, অন্ধ বিশ্বাসের দরুন এবং বিকৃত ধর্মীয় চিন্তাধারার দরুন ন্যায় থেকে দূরে থেকেছে। অজ্ঞতার স্রোতে আটকে থাকতে থাকতে সাধারণ বিবেকবোধ লোপ পেয়েছে মানবজাতির একাংশের অবদানের স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে যুগে যুগে নারী-পুরুষ সম্পর্কের সঠিক মূল্যায়নেও ব্যর্থ হয়েছে মানুষ। এ ব্যর্থতা চরম প্রান্তিকতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। কখনো কঠোরতার খড়গ কৃপাণ হাতে নিয়েছে কখনো তথাকথিত উদারতার নামে সমাজকে কঠিন ভাঙ্গনের মুখোমুখি করেছে। কখনো সমাজের একটি অংশকে অস্পৃশ্য-অচ্ছুৎ বানিয়ে রেখেছে কখনো মাথার মুকুট বানিয়ে শোভিত করেছে। কখনো আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে মানুষ পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করেছে আবার কখনো তাদের অাঁচলতলে রাজপ্রাসাদ গড়ে তুলেছে। মেহেদী রাঙা সে আঙুলের ইশারায় লঙ্কাকান্ড ঘটিয়ে দিয়েছে। প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত একই চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। পৃথিবীর ইতিহাস এ কথার সত্যতার সাক্ষ্য বহন করছে। সেই গ্রীক সভ্যতা, রোমীয় সভ্যতা, চৈনিক সভ্যতা, বৈদিক সভ্যতা, প্রাক-ইসলামী আরব সমাজ, মধ্যযুগের অন্ধকার ইউরোপ (উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় ১৮০১ সাল পর্যন্ত বৃটেনের আইনে নারী বেচাকেনা বৈধ ছিল) থেকে শুরু করে বর্তমানের এই সময় পর্যন্ত একই চিত্র। বিজ্ঞানের আশির্বাদপুষ্ট এ যুগ আধুনিক যুগ তবে অজ্ঞতা আর ভ্রান্তিতে পূর্ণ। আর বিজ্ঞানের এই আশির্বাদ বরং অজ্ঞতা অন্ধকারকে আরো গাঢ় করেছে। কারণ অসংখ্য ভ্রান্ত চেতনাকে বিজ্ঞানের নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। এ যুগ বস্তুগত উৎকর্ষতার ক্রম-অগ্রসরমান কখনো রকেটের গতিতে, কখনো উল্কার গতিতে, তবে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষের যথার্থ অবস্থান নির্ণয়ে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এখানেও সে চরম প্রান্তিক নীতি কার্যকর আর এটাই স্বাভাবিক। কারণ মানুষের জ্ঞান সীমিত, তার নিজের কল্যাণ-অকল্যাণ সম্বন্ধে সে খুব কমই জ্ঞাত। মানুষের সদা পরিবর্তনশীল মন তাকে কখনোই চিরন্তন সত্য ও কল্যাণকর কোন সিদ্ধান্ত এনে দিতে পারে না। এটা সম্ভব নয়। মানুষ যখন কোন বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্ত নেয় এটা তার সীমিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। ফলে তা কোন চিরস্থায়ী সমাধান দেয় না। বরং সাময়িক চোখ ধাঁধানো সফলতার আড়ালে সমাজের আরেকটা দিককে কুঁরে কুঁরে খেতে থাকে। তাই মানবরচিত স্বকপোল কল্পিত সমস্ত নীতি-বিধান ও সিদ্ধান্তগুলো কোনো যুগেই শান্তি দিতে পারেনি। এগুলো বিশ্ব প্রতিপালক মহান স্রষ্টাকে ভুলে যাওয়া এ তার দেখান বিধান বাদ দেয়ার অনিবার্য পরিণতি। এভাবে যুগে যুগে মানুষের খেয়াল-খুশি ভ্রান্ত চিন্তাধারার সুপকাষ্টে আসল মানবতা থেকেছে নিগৃহীত। চরম একপেশে নীতি মানবজাতির অর্ধাংশ নারীসমাজকে প্রকৃত সম্মান দিতে পারেনি। বর্তমান যুগে কিছু নতুন পরিভাষা বের হয়েছে। বলা যায়, বিগত শতক জুড়ে এগুলো বিশ্বকে দাবড়িয়ে নিয়ে বেরিয়েছে। ‘নারী আন্দোলন’, ‘নারী স্বাধীনতা’, ‘নারী অধিকার’, ‘নারী মুক্তি’, ‘নারী-পুরুষ সমানাধিকার’ এগুলো আসলে চরম প্রতারণাময় কিছু শব্দ, কিছু নীতিমালা। কিছু বাস্তবতা। মানুষের পরিবর্তনশীল মন-মস্তিষ্কপ্রসূত আন্দাজ অনুমানের ফসলগুলো যতই মনোহারী হোক না কেন, নারীর সম্মান-মর্যাদা উচ্চতর অবস্থান সংরক্ষণে এগুলো আফিমের ভূমিকা রেখে চলেছে। বর্তমান পাশ্চাত্যের ভাঙনমুখর সমাজের করুণ আর্তি আর সারা বিশ্বব্যাপী এগুলো অনুসরণের করুণ পরিণতি অপরাধ-বিশৃক্মখলায় পূর্ণ এই ধরনী সে সাক্ষ্যই দিচ্ছে। এগুলো আজ বিশ্ববাসীর কাছে সুগার কোটেড কুইনাইনের মত মনে হচ্ছে। তাই এ শ্লোগানগুলো যত জোরেসোরে উচ্চারিত হচ্ছে শ্লোগানদাতাদের জীবনীশক্তিও ততই নিঃশেষ হতে চলেছে। আর বর্তমানে এমনই এক প্রতারণাময় শব্দ হচ্ছে ‘প্রতিযোগিতা’। নারী ও পুরুষ তার মাঝে প্রতিযোগিতা! সমাজের দুটো অংশ একটি অন্যটির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কেন নামবে? এ প্রশ্নের জওয়াব জানার আগে আমাদের জানতে হবে প্রতিযোগিতা কি? একটা স্বচ্ছ ধারণা এ বিষয়ে থাকতে হবে। প্রতিযোগিতার জন্য অত্যাবশ্যকীয়রূপে কিছু শর্ত থাকে। যেমন-
১. প্রতিযোগিদের সমমান সম্পন্ন হতে হবে। কিছুমাত্র কমবেশি হলে তা প্রতিযোগিতা হবে না। হবে অসম যুদ্ধ বা অনিবার্যভাবে এক পক্ষের পতন ডেকে আনবে।
২. প্রতিযোগিতা হয় প্রতিদ্বনিদ্বর মাঝে যারা একে অন্যকে হারিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে চাই।
৩. প্রতিযোগিতায় পরাজিতের জন্য থাকে বঞ্চনা আর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য। প্রতিযোগিতার বিষয়টা যত গুরুত্ববহ হয় তাচ্ছিল্যের মনোভাবটাও ততই প্রকট হয়।
কেন এই প্রতিযোগিতা
এটা মনে উদয় হওয়া স্বাভাবিক যে, প্রতিযোগিতা কেন হবে? কার সাথে প্রতিযোগিতা? আমি যদি মেয়ে হই তবে পুরুষ জাতির বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা মানে তো সর্বপ্রথম নিজের জন্মদাতা পিতার বিপক্ষে যাওয়া। সেকি কখনো প্রতিযোগী হতে পারে? যদি পুরুষের কথা বিবেচনা করা যায় তবে তাকে তো তার মায়ের সংগে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হবে নয়তো বোনের সংগে। এমন তো কখনো হতে পারে না। কোন সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মানুষের সে কথা ভাবতে পারে না। যারা মাকে সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন মনে করে, যাদের জীবনের সকল চাওয়া পাওয়া মায়ের পায়ের তলে (জান্নাত) তারা কিভাবে মায়ের সংগে প্রতিযোগিতার আচরণ করতে পারে? আর যাই বা কিভাবে পারে নিজের রক্তে গড়া আদরের ধন সম্বন্ধে এমন নিচু মনোভাব পোষণ করতে? বুবু বলে যে ভাই আদরে কাছে টেনে নেয় সে ভাই সম্পর্কে কি এসব ভাবা যায়? স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক কত মধুর কত পবিত্র সেখানে কি এগুলো আশা করা যায়? বর্তমানে নারী-পুরুষ প্রতিযোগিতার চেতনাকে উস্কে দেয়ার মত একটি মডেল কাহিনী হলো বহুল প্রচারিত মিনার কাটুর্ন। এখানে সামাজিক বৈষম্য তুলে ধরা হয়েছে আর দেখানো হয়েছে মেয়েরা কত বঞ্চিত। আরো একটা ধারণা এটার সাথে মিশে আছে বলা যায়। লোকেরা সেটা অনুমান করে নেয় যে, যেহেতু পিতার সম্পত্তিতে মেয়েদের অর্ধেক মালিাকানা সেহেতু খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রেও তাকে অর্ধেক দিতে হবে অথবা না দিলেও চলবে। অথচ একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে আসল চিত্র আলাদা। রাসূল (সা.) বলেছেন, খাদ্যদ্রব্য এনে ঘরে মেয়ে থাকলে সর্বপ্রথম মেয়ের হাতে দিতে হবে। দেখা যাচ্ছে অর্ধেক নয় একভাগ নয় পুরোটাই মেয়ের হাতে দিতে হবে যাতে সে সবাইকে বিলি করতে পারে। সুবহানাল্লাহ। কি চমৎকার বিধান। কত শ্রেষ্ঠত্ব! আর সামাজিক বৈষম্য! এর ভিত্তি কতটুকু? হ্যা এটা সত্যি যে যুগ যুগ ধরে অশিক্ষা-কুশিক্ষার ফলে অনেক অনাচার দেখা যায়। তবে এটা সামগ্রিক পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে না। ঢুগ-ডুগী যতটা বাজানো হয় আসলে কি তাই? আমি কিছু বাস্তব উদাহরণ দিতে চাই কারণ অত্যধিক প্রচারণা আমাদের অন্তরে এটা বদ্ধমূল করে দিয়েছে যে, আমাদের সমাজে বুঝি নারীর অবস্থান জঘন্যে। কিন্তু গভীর দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে আমাদের সামাজ মেয়েদের কোথায় রাখছে। প্রথম উদাহরণটি হল আমার মেজো দাদী। গ্রামের এক সাধারণ পরিবারে জন্ম। ছোটবেলায় বৃদ্ধ বয়সে দেখেছি তাকে। তার নিন্দার জন্য বলছি না বরং ব্যাপারটা বোঝার জন্য বলছি যে, তার মত অসুন্দর মানুষ আমি কম দেখেছি। বৃদ্ধ বলে নয় সে যৌবনেও দেখতে অত্যন্ত অসুন্দর ছিল বলে শুনেছি। কিন্তু সে ছিল বিশাল বাড়িতে একটি মাত্র মেয়ে, একটি বোন। সেই অসুন্দর বালিকা ছোটবেলায় কি যে আদর-সোহাগে বড় হয়েছে সেসব কাহিনী শুনলে আমার কাছে কাহিনীই মনে হয়। সারাজীবন সে তাই পেয়েছে। আমার নানী। বেচারী আজো যেদিন তার সংসার ফেলে রেখে বাপের বাড়িতে বেড়াতে যায় সেদিন তার আত্মীয়-স্বজনেরা (আপন+দূর সম্পর্কের) মেয়ে এসেছে বলে আনন্দে ফেটে পড়ে। সে সমাজে এখনও কত সম্মান দেয় মেয়েকে মানুষ। গ্রামে দেখা যায় পারিবারিক বৈঠকগুলোতে মেয়ে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে। স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এ দেশের অবস্থান অনেক উচ্চে। নারীর সতীত্বের সংরক্ষণ, সম্মান মর্যাদার অতন্ত্র প্রহরী স্বামী। আর শাশুড়ি-বধূ এবং ননদ-ভাবী সম্পর্কে যে অসামঞ্জস্যতা দেখা যায় এটাও অপরাধপ্রবণ মানসিকতা থেকে উদ্ভুত নয় বরং কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের প্রচলিত রীতি হিসেবেই এগুলোকে ধরতে হবে। তাছাড়া মানুষে মানুষে সে নারী হোক বা পুরুষ, আল্লাহপ্রদত্ত আত্মিক বন্ধন তা ইসলামের ছায়াতলে এ দেশের মানুষ হাজার বছর ধরে লালন করেছে। বিগত দু’এক শতক হতে আজ এই পর্যন্ত ইসলামের সে ভরা নদী শুকিয়ে গেছে কিন্তু যে সরু রেখা রয়ে গেছে তারই ফলে আজো মেয়েরা সেখানে সম্মানিত। কিন্তু শত বছরের অজ্ঞানতার অন্ধকার আর দারিদ্রে্যর ফলে সমাজে নারী সম্পর্কিত বেশ কিছু অসংগতি দেখা যায়।
অশিক্ষিত মানুষেরা স্বভাবতই অসচেতন। তবে আমার মনে হয় আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে নারী নির্যাতনের জন্য অশিক্ষার মতই সমান দায়ী দরিদ্রতা, বেকারত্ব এবং সরকারি ব্যবস্থা ও আইনব্যবস্থা। নারীশিক্ষার বিষয়টা যদি ধরা হয় তবে দেখা যাবে যখন এ দেশের সরকার মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে পড়াশোনা এবং উপবৃত্তি সিস্টেম চালুসহ চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে শুরু করল তখন থেকে আজ পর্যন্ত পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। যৌতুক প্রথা যার বলি হতে হয় শত শত নারীকে। এটা এমন এক অপরাধ যার উৎপত্তিও অপরাধ প্রবণ মানসিকতা থেকে নয় বরং এর উৎপত্তি পার্শ্ববর্তী এক ধর্মে। তবে এ ঘৃণ্য প্রথার খারাপ প্রভাবগুলোর জন্য তাকে দায়ী করা যায় না। কারণ এটা তাদের সিস্টেম আর আমাদের মাঝে সংক্রমিত এবং ভয়ংকর। বিভিন্ন ফ্যাক্টর এজন্য দায়ী। সমাজের সেইসব উচ্চবিত্তরা যারা বিবাহ উপলক্ষে লাখো টাকা খরচ করে অযথা। গাছের পাতার মত অর্থের এই অপচয় বিলাসীদের জন্য কোন বিষয় নয়। কিন্তু সমাজের অন্য অংশে এর খারাপ প্রভাব পড়ে। নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তরা এর অনুসরণ করতে গিয়ে যত অনাচারের জন্ম দেয়। বেকারত্বের কশাঘাতও এজন্য কম দায়ী নয়। আর সমাজে যা একবার চালু হয় তা মানুষের কাছে গা সহা হয়ে যায় এবং খুবই স্বাভাবিক হয়ে যায়। আমাদের আইনব্যবস্থা এবং আইনের প্রয়োগ যদি ঠিকমত হত তবে এটা সমাজে বিস্তৃতি লাভের কোন সুযোগই পেত না। তবে যৌতুকের সবচেয়ে সুগভীর প্রভাব বিস্তারী কারণ হল অপরাধের বাণিজ্যিকীকরণ। যে দেশের আইন অপরাধীদেরকে কর্মী-শিল্পীর মর্যাদা দেয়, যে সমাজ পুরুষের জন্য অবৈধ প্রয়োজন পূরণের সবগুলো পথ অতি সহজলভ্য সে সমাজে এ ধরনের কুপ্রথার প্রচলন আশ্চর্যের কিছু নয়।
এই পর্যালোচনা থেকে একটি বিষয় উঠে আসে যে, আমাদের সমাজে সামগ্রিকভাবে মেয়েদের অবস্থান সম্মানজনক পর্যায়ে। কোন কালে তা এত খারাপ ছিল না এখনও এত খারাপ নয় যে, কোমরে অাঁচল বেঁধে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। তবে এটা সত্যি যে অশিক্ষা-কুশিক্ষার দরুণ দেশের এক বিশাল জনগোষ্ঠী ভুল ধারণা, ভুল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এগুলো দূর করার পন্থা জটিল কিছু নয় যদি সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছা কিছু থাকে। দেশ জুড়ে হৈ চৈ বাঁধাবার মত কোন জিনিসও নয়। প্রথমত, আইনের প্রয়োগ করতে হবে সঠিকভাবে। দ্বিতীয়ত জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে শুধু প্রচার নয় কিছু বাস্তবমুখী নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
শর্ত বিচারে নারী প্রতিযোগিতা
প্রতিযোগিতার প্রথম শর্তের দিকে যদি আমরা দৃষ্টি দেই তবে আমরা দেখতে পাব এটা মেনে নেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। নারী ও পুরুষের দৈহিক ও মানসিক শক্তি-সামর্থ্য আল্লাহতায়ালা সমান দেয়নি। সমাজব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই আল্লাহ একের থেকে অন্যকে সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্ট্য আলাদা যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সন্তান পালনের মত ধৈর্য্যের পরীক্ষায় পুরুষেরা যেমন চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হবে তেমনি কলকারখানা, তেলের খনি আর কয়লার খনিতে ধোয়া, গন্ধ, উত্তাপের মাঝে মেয়েরা পরিশ্রম করতেও অপারগ। তাই দু’পক্ষের সমমান সম্পন্ন হওয়া মোটেই সম্ভব নয়। এটা এমন এক বাস্তবতা যাকে অস্বীকার করা মানে নিজের চোখকে অবিশ্বাস করা নিজের কানকে অবিশ্বাস করা। পৃথিবীর তাবৎ ইতিহাসকে অস্বীকার করা এমনকি যাবতীয় বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব তথ্যকেও অস্বীকার করা।
দ্বিতীয়ত যেটা বিবেচ্য, তা হলো নারী-পুরুষের মাঝে প্রতিদ্বনদ্বীসুলভ মনোভাব থাকাটা কোনমতেই বাঞ্ছনীয় নয়। যে সম্পর্কই হোক না কেন তারা তো পরস্পর সুগভীর আত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ। নিজের আপনজনকে প্রতিযোগিতার পেছনে ফেলার হীন মানসিকতা একজন সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের থাকতে পারে না।
তবুও পৃথিবীপ্লাবী এই সয়লাবের মুখে নারীরা নিজেদের গা ভাসিয়ে এক অসম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এই অসম প্রতিযোগিতা পরাজিতের জন্য কি এনে দিচ্ছে বর্তমান যুগে। সে আলোচনা ইনশাআল্লাহ পরে হবে।
এর উৎস কোথায়?
সোজা উত্তর পাশ্চাত্যে। ইতিহাসের দিকে নজর দিলে দেখা যায় চৌদ্দশ শতকে ইউরোপে শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছিল। শিক্ষা-দীক্ষারও উন্নতি হচ্ছিল ক্রমাগত। কিন্তু নারীরা যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই রয়ে গেল। তার আগের কাহিনী এরূপ যে নারী অধিকার ধারণাটা বোধহয় ইউরোপীয় সমাজে ছিল না। পাদ্রীরা নারীর মধ্যে আত্মা আছে বলে স্বীকৃতি দিতেন না। নারী সকল অনিষ্টের মূল বলে তারা সার্টিফাই করতেন। সে পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারেনি শিল্প বিপ্লব। এমনকি ভলটেয়ার, রুশো, মন্টেস্কু, নিটশে, শোপেন হাওয়ার, ভেঞ্জেজ, এর মত দার্শনিক, বুদ্ধিজীবীরাও নারী সম্পর্কে অত্যন্ত হীন ধারণা পোষণ করতেন। তারপর ক্রমেক্রমে চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আসল তখন তারা এ নিয়ে ভাবতে শুরু করল। নারী অধিকারের বিষয়টি সামনে আসল। যার পরিণতি স্বরূপ ৮ মার্চ, ১৯১০ নারী সম্মেলন হয় এবং ঐ দিনটি বিশ্ব নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এভাবেই ‘নারী অধিকার’ ‘সমঅধিকার’, ‘নারী-পুরুষ প্রতিযোগিতা ধারণাগুলো মহাসমারোহে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। নারী প্রগতির এই মনোহারী শ্লোগানে প্লাবিত হয় পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্ত। এর ভাল মন্দ কোন বিচার বিবেচনা করার সুযোগ আমাদের হয়নি। ঔপনিবেশিকতার সেই যুগে পৃথিবীর Minimum দেশ ছিল পাশ্চাত্যের কব্জায়। তাদের নীতি দর্শন ছাড়া চরমভাবে প্রভাবিত। পাশ্চাত্যের চাপানো নীতিহীন ধর্মবিবর্জিত শিক্ষাব্যবস্থা। বিজয়ীদের জন্য বিজিতের অন্তরে, দেবতাতুল্য মহাত্মবোধ, নিজেদের সভ্যতাবিবর্জিত অন্ধকারাচ্ছন্ন দুর্দশাগ্রস্ত সমাজ, উন্নতির পথ খুঁজে না পাওয়ার তীব্র চেতনা সর্বোপরি কোন আদর্শিক চেতনার অভাব বিভিন্ন কারণে বিজিত দুনিয়ায় বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে নারী মুক্তির এসব চটকদার শ্লোগান এবং হাজারো প্রতিশ্রুতিময় প্রচারণা বলা চলে একটি জীবন দর্শনের মর্যাদা পায়। এবং শুরু হয় পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুসরণ।
আমাদের সমাজে প্রতিযোগিতার স্বরূপ
আমাদের সমাজে উনিশ শতকের শেষের দিকে যে নারী জাগরণ শুরু হয় তা প্রথম দিকে বেশ ইতিবাচক হলেও ক্রমান্বয়ে খোদাবিমুখ রাষ্ট্রব্যবস্থা, অনৈসলামী শিক্ষাব্যবস্থা, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অবাধ অনুপ্রবেশ, দেশি-বিদেশী এবং বিদেশীদের আশির্বাদপুষ্ট এনজিওদের ব্যাপক প্রচারণায় সে নারী জাগরণ বিকৃত পথে চলতে থাকে- ভ্রান্তির চোরাবালিতে আটকে যায়। ধর্মবিমুখ শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত এবং পাশ্চাত্য ধ্যান-ধারণায় মগজ ধোলাইকৃত এসব নারী নেত্রীরা (নেতারাও আছেন) সকাল বিকাল মঞ্চে বসে আবোল তাবোল বকতে থাকেন। যে যত বেশি পুরুষ জাতির গোষ্ঠী উদ্ধার করতে পারে, বেপরোয়া গালি ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পারে সেই তত বেশি নারীবাদী হয়ে ওঠে। যদিও প্রকৃতপক্ষে এইসব নারী-নেত্রীরা বৃহত্তর নারী সমাজের সাথে কমই সম্পর্ক রাখে। তাদের বিলাসী জীবনযাত্রা আর দুঃখিনী নারীদের পথচলা সম্পূর্ণ আলাদা। কখনো তারা নারীদেরকে উস্কে দেয় কখনো ইসলাম নারীকে এ দেয়নি তা দেয়নি আহাজারী করে মরে। তো যখন দেয়নি তখন কি করতে হবে? ‘হ্যাঁ, সেটাই বলতে চাই, তা হলো প্রতিযোগিতা, সবখানে প্রতিযোগিতা।’ স্কুলের শিশু থেকে শুরু করে সবার মধ্যে একটা জিনিস ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে তা হলো-
‘নারী, নারী, নারী
সবই করতে পারি।’
কিন্তু পারছে কি তাই। যদি তাই হতো তাহলে কি আর খবর আসতো।
‘ভোট চাইতে গিয়ে মেম্বার পদপ্রার্থীনী ধর্ষণের শিকার’
‘মহিলা এএসপি দুর্ধর্ষ অপারেশনে আসামীর উষ্ণ আবেষ্টনে কলঙ্কিত।’
নারীবাদীদের বিকৃত চিন্তাধারার সর্বশেষ ফসল নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০০৮। নারীর সমঅধিকারের কথা বলে এমন সব হাস্যকর চিন্তাধারার সমাগম ঘটিয়েছিল এতে যা দেশের সচেতন জনগোষ্ঠী ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। আর এনজিও গোষ্ঠীর পরিবার প্রথা উৎখাতের ষড়যন্ত্র এ দেশের জমিনে এক বড় ফিৎনা। ‘কিসের ঘর কিসের বর’ এই জাতীয় শ্লোগানগুলো এরাই সমাজে ছড়িয়েছে। মহিলাদেরকে সাইকেল, মোটর সাইকেল দিয়ে যথারীতি পুরুষ বানিয়ে ছেড়েছে। এই পুরুষালী স্বভাবের অহংকার উদ্ধত নারীরা সমাজে সংসার ভাঙার অগ্রদূত হিসেবে কাজ করছে। এর পরোক্ষ ফলাফল পরকীয়া যা অগণিত পরিবার তুষের আগুন জ্বালিয়ে রাখছে অথবা বিস্ফোরণ ঘটছে। কিছুদিন আগে পত্রিকায় এসেছে ‘স্ত্রীকে পরকীয়া থেকে ফেরাতে না পেরে শিশুসন্তানসহ হত্যা করে অবশেষে নিজেই র্যা বের হাতে ধরা দিয়েছে এক ব্যক্তি’। এগুলো সমাজের জন্য অশনি সংকেত। আর পুরুষের মত খাটুনির চাকরি কি দিয়েছে নারীকে? হ্যাঁ, প্রয়োজন ছিল নারী তার নারীত্ব বজায় রেখে এবং স্বল্প পরিশ্রমে শিক্ষকতা, চিকিৎসা পেশার মত কিছু পেশায় অথবা চিন্তা-গবেষণামূলক কোন কাজে নিয়োজিত থাকবে। কিন্তু পুলিশ, দারোয়ান আর বাইসাইকেল চালক হয়ে নারীকে যে কি সম্মান এনে দিচ্ছে তা আল্লাহই মালুম। আমাদের দেশের জন্য নারীদের ওপর গলিত টার্গেট যেমন আছে তেমনি জনগণের ক্রমবর্ধমান সচেতনতাও রয়েছে এটাই চলমান পরিস্থিতির সর্বশেষ রূপ।
পাশ্চাত্যে এর বিষময় ফল
পাশ্চাত্য নারী পুরুষ প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে বললে বোধহয় ভুল হবে না। যদিও দু’ আড়াই শত বছরের ইতিহাসে পাশ্চাত্যগুরু আমেরিকার কোন নারী প্রেসিডেন্ট নেই। তবুও বলতে হবে পার্লামেন্ট থেকে কলকারখানা, স্কুলের আঙিনা থেকে ফুটবল ক্রিকেটের মাঠ, জলে-স্থলে, জমীনে-অন্তরীক্ষে এমন কোন স্থান নেই যেখানে নারীর পদধূলি পড়েনি। নারী অভিনেত্রী, মডেলিং তারকা, বিমানবালা, Private secretary কত কি। কিন্তু এগুলো কি তার টার্গেটে পৌঁছে দিয়েছে। সে পেরেছে পুরুষের রাহুগ্রাস থেকে নিজেকে মুক্ত করতে? কিছু পরিসংখ্যান উল্লেখ করতে চাই-
১. মাইকেল প্যারেন্টি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তার বিখ্যাত গ্রন্থ আগলি ট্রথ গ্রন্থের Hidden Holocaust অধ্যায়ে কিছু গাণিতিক পরিসংখ্যান উল্লেখ করেছেন। যেমন- সেখানে প্রতি বছর ৭ লাখ মহিলা ধর্ষিত হয়। অর্থাৎ প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে একজন মহিলা ধর্ষিত হয়। এটা সরকারি হিসাব। যারা অভিযোগ পেশ করে তাদের সংখ্যা। এমন অনেকেই আছে যারা তিক্ততা হজম করে নীরবে।
২. চাইল্ড হোমে পালিত আমেরিকান শিশুরা যারা মায়ের স্নেহ পরশবঞ্চিত এ ধরনের শিশুদের আত্মহত্যার প্রবণতা ক্রমবর্ধমান। ২০০৩-২০০৪ সালে তা বেড়েছে ৭৬%। (দৈনিক ইনকিলাব, ১৫ মে ২০০৮)।
৩. যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১৮ সেকেন্ডে ১ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়। (জরিপ নিউজ উইক)
৪. দেশটিতে প্রায় ৫০ ভাগ নারী কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। আর বাকি ৫০ ভাগের যে এ ধরনের অভিজ্ঞতা নেই তা নয় তবে চাকরি হারানোর ভয়ে চেপে যায়। (ওম্যান ভায়োলেন্স এন্ড মেইল পাওয়ার)
৫. সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা যে শুধু গলাবাজি ছাড়া আর কিছু নয় সে সম্বন্ধে জানা যায় যুক্তরাষ্ট্রে একই কাজের জন্য শুধুমাত্র নারী হবার জন্য ২৩ সেন্ট কম দেয়া হয়। (ওম্যান ভায়োলেন্স এন্ড মেইল পাওয়ার)
৬. ১৯৯৮ সালে ৯ লাখ ৬০ হাজার পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ৪০ লাখ নারী তার স্বামী বা বয়ফ্রেন্ড দ্বারা নির্যাতিত হয়। (দৈনিক ইনকিলাব : ইউ এস জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট)
৭. ফিলিপিন পাশ্চাত্য সভ্যতার একটি গর্বিত দেশ যা বিশ্বমাঝে বউ পেটানোর দেশ হিসেবে পরিচিত। এখানে এক তৃতীয়াংশ নারী ১৫তম জন্মদিনে পৌঁছুবার পূর্বেই সহিংস ঘটনা বা যৌন হয়রানির শিকার হয়। (সূত্র এএফপি)
৮. ১৯৭৯ সালে আমেরিকায় ২৩,৩১,০০০ হাজার বিয়ের মধ্যে ঐ বছরই ১১,৮১,০০০টি তালাক হয়ে যায়।
৯. বৃটেনে ১৯৯২ সালে পুলিশ বিভাগে ৮ শতাংশ মহিলা সরাসরি যৌন নিপীড়নের শিকার হয় বাকি ৯২ ভাগকে কুৎসিত ও অশ্লীল কথাবার্তা দ্বারা উত্যক্ত করা হয়। (জরিপ : পুলিশ রিভিউ ম্যাগাজিন)
১০. গার্ডিয়ান পত্রিকার মতে, বৃটেনে প্রতি ২০ জনে একজন নারী ধর্ষিত হয় এবং ১০০ জনে একজন ধর্ষক ধরা পড়ে।
১১. যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া, কানাডাসহ ১০টি দেশে পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, প্রতি ৩ জন নারীর মধ্যে একজন তার স্বামী বা ঘনিষ্ঠ পুরুষ সঙ্গীর দ্বারা নির্যাতিত হয়। (দৈনিক জনকণ্ঠ, ৩১ জুলাই, ৯৯)
এই তো পাশ্চাত্য সভ্যতার চিত্র। যে সমাজ নারী ‘মানুষ’ কিনা একসময় সন্ধিহান ছিল সে সমাজ নারীকে অনেক দিতে চাইল। বহু বছরের বঞ্চনা সুদে আসলে পুষিয়ে দিতে চাইল। তবে এটা যে এত সদুদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিল তা নয় বরং নারীকে বাইরে এনে ভোগ বিলাসের বস্তু বানাবার কুউদ্দেশ্যই ছিল বেশি। কিন্তু কিভাবে তারা পারল? কতটা পারল? বিলাসী পুতুল নারী, সংসারবিমুখ নারী, অবৈধ ভোগ-বিলাসের জগতে লাস্যময়ী নারী। চুলের ফিতা বিক্রেতা থেকে মহাকাশযাত্রী নারী কিন্তু যে ছেলে মেয়েদের কাছে দরদী মা নয় স্বামীর কাছে একটি মুহূর্তের জন্যও বিশ্বস্ত। এই তো পাশ্চাত্যে নারী। এই তো নারীর অবস্থান। নারীর সমঅধিকারের নামে সুকঠিন সামাজিক দায়িত্বগুলো চাপিয়ে দিল। খেলার মাঠ, বাজার ঘাটে, বিজ্ঞাপনের মহড়ায় নগ্ন-অর্ধনগ্ন করে নারীদের ছেড়ে দেয়া হল। আর বলা হল প্রতিযোগিতায় লেগে যাও। তোমাদের সমাধিকার পেতে হলে পুরুষের সংগে প্রতিযোগিতা অপরিহার্য। এটা সমঅধিকার নয়, সমদায়িত্ব। তারই বাস্তব ফল আজকের পাশ্চাত্য। পরিবার গেছে, শান্তির সুখপাখি মুমূর্ষু। অপরাধমুখর মানবীয় প্রবৃত্তি আইনের কঠোর লাগাম লাগিয়েও যার সংক্রমণ থেকে সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত সে সমাজ। মাঝে মাঝেই সে সভ্যতার তীব্র আর্তনাদ শোনা যায়। শোনা যায় মৃত্যুঘণ্টা ধ্বনি। সচেতন গুটিকয়েক মানুষের আহাজারী শূন্যে মিলিয়ে যায়। ক্লিনটন-মনিকা কলঙ্কে আমেরিকার সাবেক ফার্স্টলেডী হিলারী ক্লিনটনের সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছিল। তাই তো তার মুখে প্রায়ই পরিবার আত্মিক বন্ধন-শান্তি প্রভৃতি সম্বন্ধে খেদোক্তি শোনা যায়। আর বর্তমানের ফার্স্টলেডী মিশেল ওবামা স্বামীর প্রশাসনে কোন দায়িত্ব না নেবার ঘোষণা দিয়েছেন আগে ভাগেই। তিনি বলেছেন, আমি ‘চীফ-ইন-ফর্ম’ হতে চাই। তিনি হতে চান সংসারী। কারণ যে আমেরিকায় এটারই যে বড় অভাব। ফরাসী লেখিকা মারয়াম হ্যারি মুসলমান নারীদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘প্রিয় ভগ্নিগণ, তোমরা আমাদের ইউরোপীয় নারীদের অবাধ স্বাধীনতা দেখে ঈর্ষা করো না এবং আমাদের অনুসরণ করে না। তোমরা জান না যে, দাসত্ববরণের কী পরিমাণ মূল্য দিয়ে আমরা আমাদের কথিত নারী স্বাধীনতাকে ক্রয় করেছি। আমি তোমাদেরকে বলছি, তোমরা বাড়িতে অবস্থান কর। তোমরা স্ত্রী ও মা হয়ে বেঁচে থাক। পুরুষদের সাথে সাদৃশ্য স্থাপনের এবং তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ো না।’
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নিউট গিংগ্রিচ ১৯৯৫ সালে নৈতিক অবক্ষয়ের ওপর প্রদত্ত ভাষণে বলেন, যে সমাজে ১২ বছর বয়সীরাও সন্তান জন্ম দেয়, ১৫ বছর বয়সীরা একে অন্যকে খুন করে, ১৮ বছর বয়সীরা পড়াশুনায় খারাপ করে অথচ ডিগ্রি পায় সে সমাজ টিকে থাকতে পারে না।
প্রতিযোগিতার পোকা মাথায় ঢুকিয়ে নারীদেরকে উম্মাদে পরিণত করেছিল নারী স্বাধীনতা আন্দোলন। প্রতিযোগিতায় পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবার দৃপ্ত শপথে উজ্জীবিত করেছিল। যেটাকে তারা মনে করেছিল স্বাধীনতা সেটাই আজ তাদের পায়ের শিকল। সন্তানের শ্রদ্ধা-ভালবাসা সম্মান, স্বামীর দায়িত্বশীল ভূমিকা সব থেকে বঞ্চিত। মায়া মমতাহীন পরিবেশে শুধু পশুর মত জৈবিক চাহিদা মেটানো ছাড়া শান্তির জীবন তিরোহিত। হ্যাঁ পতনশীল গাছকে যেমন ঠেকা দিয়ে রাখা হয় তেমনি সব অশান্তিকে ভুলে থাকার জন্য নাইট ক্লাব, হোটেল, রেস্তোরাঁ প্রভৃতি রয়েছে। কিন্তু মানুষের স্বাভাবিক জীবন চাহিদা কৃত্রিমতার আবরণে কখনোই ঢাকা পড়ে না বরং আরো উৎকট হয়ে দেখা দেয়। তাইতো শান্তি স্বস্তিহীন উন্নত বিশ্বে আত্মহত্যার পরিমাণ ক্রমবর্ধমান। ৫০% মানুষ ঘুমাতে পারে না ঘুমের ওষুধ ছাড়া, ২৫% আদৌ ঠিকমত ঘুমাতে পারে না। এটাই পাশ্চাত্যের আসল অবস্থা আর ব্যতিক্রম যেগুলো সেগুলোই চোখে পড়ে। এখানেই পাশ্চাত্য সমাজের সাথে আমাদের পার্থক্য।
ইসলাম বলে প্রতিযোগী নয় সহযোগী হতে ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ সম্পর্কের সঠিক রূপরেখা বুঝতে হলে প্রথমে জানতে হবে মানুষের মনস্তত্ত্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে এর কৌশলকে। ইসলাম যেহেতু আল্লাহপ্রদত্ত বিধান অতএব তাতে বিন্দুমাত্র ভুলের অবকাশ নেই। নির্ভুল এ জীবনবিধান। এর রয়েছে নির্ভুল কর্মপন্থা। এটা প্রথমেই বলে এখানে নয় সেখানে। এদিন নয় সেদিন, যেদিন মহান প্রতিপালকের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের জীবনের হিসাব দিতে হবে সেই কঠিন জবাবদিহিতা হবে দুনিয়ার কাজের ওপর ভিত্তি করেই। অতএব মানুষের মনে স্থায়ী আল্লাহভীতি পয়দা হয়ে যায় আপনা আপনিই যা অন্যায়ের পথে প্রধান প্রতিবন্ধক। ন্যায়ের সুষমায় ভরা সে সমাজে অন্যায় বাসা বাঁধতে পারে না। সাময়িক দেখা গেলেও তা বিস্তৃত হতে পারে না কোনমতেই বরং সমাজের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অবশেষে ধূলায় মিশে যায়। ফলে এখানে কাউকে তার অধিকার আদায়ের জন্য ধ্বংসের আগুন জ্বালিয়ে রাস্তায় নামতে হয় না। না চাইতেই পেয়ে যায়। মহান আল্লাহ তায়ালা এগুলো সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। আর মুসলিম সমাজ যুগ যুগ ধরে এ সৌন্দর্য ধারণ করেছে, লালন করেছে। একজন সুস্থ-সভ্য মানুষের কাছে ‘নারী অধিকার’ বলতে যা বোঝায় মহান আল্লাহ তায়ালা তার বিধানে তার চেয়েও বেশি দিয়েছেন। মানুষ যেটা ভাবতে পারে না তার ধারে কাছেও যেতে সক্ষম নয় মহান মাবুদ সেটা কল্যাণকর পন্থা হিসেবেই নির্দেশ করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষেরই অবস্থা হল ‘তাদের দিল রয়েছে কিন্তু তদ্বারা তারা চিন্তা-ভাবনা করে না, তাদের কাছে চক্ষু রয়েছে, কিন্তু তদ্বারা দেখে না, তাদের কান রয়েছে কিন্তু তদ্বারা শোনে না। তারা জানোয়ারের মত বরং তার চেয়েও নিকৃষ্টতর…’ (সূরা আরাফ : ১৭৯)
আসমানের নিচে আর যমীনের ওপরে মা ভিন্ন দুনিয়ায় আর কাউকে এতটা মর্যাদা দেয়া হয়নি যতটা দেয়া হয়েছে মাকে। এটা সন্তানের পক্ষ থেকে করুণার দান নয় বরং সন্তানের জন্য মায়ের সুগভীর ত্যাগের মহিমার স্বীকৃতি এবং মায়ের জন্য সন্তানের হৃদয়ের গহীনে লালিত ভালবাসার ওপর ভিত্তি করে এই সম্মানের রাজপ্রাসাদ প্রতিষ্ঠিত। মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো কেন মা যদি একটু চোখের আড়াল হয় তবেই সন্তান স্থির থাকতে পারে না। অন্তরে অনুভব করে ‘মা, তুমি তো আমার জীবনের সব। আমার অস্তিত্বের সবখানি তুমিই।’ সে যেন এই আয়াতেরই প্রতিরূপ ‘সম্মান কর সে মাতৃগর্ভের যা তোমাকে বহন করেছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার জন্য তার মাতা তাকে কষ্টের ওপর কষ্ট সহ্য করে গর্ভধারণ করেছেন, কষ্ট সহ্য করে তার মাতা তাকে প্রসব করেছেন।’ এই মাকে কি কখনো ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া যায়? তার সাথে অসদাচরণ করা যায়? ভোগবাদী সভ্যতায় মা জন্ম দিয়েই বিচ্ছিন্ন হয় সন্তান থেকে। চাইল্ড হোমের কৃত্রিম মায়াহীন পরিবেশ তার প্রথম অভ্যর্থনা। নাইটক্লাব, প্লে-গ্রাউন্ড, প্রমোদ কেন্দ্রগুলোর ওপরে এই ছোট শিশুর গুরুত্ব নয়। একটু বড় হলে মা-বাবা ‘রিলেটিভ’। ৬ মাস পর, এক বছর পর বা দশ বছর পর মা-বাবার সাথে দেখা করতে আসে। আর বৃদ্ধ বয়সে…। ঠিক উল্টো চিত্রই মুসলিম সমাজে। এখানে শিশুর জন্য সার্বক্ষণিক আশ্রয়দাত্রী মা-পরম মমতার ঠিকানা। পরিণত বয়সে মা তার কাছে পরম শ্রদ্ধেয় আর বৃদ্ধ বয়সে মা এতই কাঁচের পুতুল যে তার সামনে ‘উহ’ শব্দটাও উচ্চারণ করা যায় না। এত কিছু পাওয়ার পরও কি প্রতিযোগিতার মত কুৎসিত শব্দগুলো মানুষ কল্পনায় অাঁকতে পারে?
স্ত্রীরূপে নারীকে মহান আল্লাহ তায়ালা অনন্য মর্যাদায় ভূষিত করছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘স্বামী স্ত্রীর হৃদয়ে ভালবাসা ঢেলে দিয়েছি।’ ‘তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে এটাও একটি যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্যে থেকে সঙ্গীদের বানিয়েছেন, যাতে করে তোমরা তাদের নিকট সুখ-শান্তি লাভ করতে পার। তদুপরি তিনি তোমাদের মাঝে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য সৃষ্টি করে দিয়েছেন।’ এটাই বিবাহের ইসলামী দৃষ্টিকোণ। এটা শুধু পাশ্চাত্যের প্রচলিত ‘চুক্তি’ মাত্র নয় বরং পবিত্র চুক্তি যা একে অপরকে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ রাখে। আর এ ভালবাসার দাবি ও চাহিদা নারীকে পরম সম্মান ও মর্যাদার আসনে আসীন করে। নারীকে যে পুরুষের সাথে বিয়ে দেয়া হয় তার সাথে প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক নয় বরং সমমর্যাদাসম্পন্ন মুমিনের সম্পর্ক বজায় থাকে। ‘মুমিন নারী ও পুরুষ একে অপরের বন্ধু, সহযোগী’ (সূরা তাওবা)। কুরআন মাজীদে এভাবেই মুমিন নারী ও পুরুষকে সম্বোধন করা হয়েছে। কোথাও বলা হয়েছে ‘সৎকর্মশীল নারী ও পুরুষ’। এ ব্যাপারে কোন বিশেষত্ব দেয়া হয়নি পুরুষকে। স্বামীর নিকট স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকারগুলো সংক্ষেপে এরকম
জোরপূর্বক বা অসম্মতিতে বিয়ে হতে পারে না। ‘হে মুমিনগণ তোমাদের জন্য জোরপূর্বক অধিকারভুক্ত করা জায়েয নেই।
ভরণ-পোষণের সব দায়িত্ব স্বামীর ওপর। স্ত্রী সম্পদশালী হলেও।
স্ত্রী-সম্পদশালী হলেও মোহরানা দিতে হবে।
চাকরি-ব্যবসা বিভিন্ন পেশার মাধ্যমে স্ত্রী সম্পদ অর্জন করলেও স্বামী তার ওপর কোন অধিকার খাটাতে পারবে না।
স্ত্রী সর্বাবস্থায় সুবিচার ও সদাচরণ পাবার অধিকারী। তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ কর যদি তোমরা তাদের কোন কিছু অপছন্দকর হতে পারে আল্লাহ তার মধ্যে প্রকৃত কল্যাণ দান করবেন।’ (সূরা নিসা : ১৯)
স্বামী তার নিরাপত্তার জিম্মাদার। ‘পুরুষ নারীদের রক্ষক ও ব্যবস্থাপক কেননা আল্লাহ একজনকে অধিক শক্তি দান করেছেন অপরজন থেকে এবং তারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে।’ (সূরা নিসা : ৩৪)
সবচেয়ে বড় কথা হল ইসলাম স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ককে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে ভূষিত করেছে। যে সম্পর্কের ভিত্তি হল দয়া-মমতা, পারস্পরিক সম্মান বোধ। ফলে তারা সাহচর্য ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সমাজ গড়ে তোলে। স্বামীর নিকট নারী যেমন ভোগের সামগ্রী নয়, নয় ক্রীতদাসী অথবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের কেউ তেমনি পাশ্চাত্যের মত স্রেফ চুক্তিভিত্তিক অধিকার বিনিময়কারিনীও নয়। ইসলাম প্রদত্ত এই মর্যাদা পৃথিবীর কোন যুগে কোন সমাজে ছিল না, এখনও নেই। এখানে শুধু সহযোগিতা আছে, স্বতঃস্ফূর্ত অধিকার আদায় আছে, প্রয়োজনে আইনের আশ্রয়ও আছে কিন্তু প্রতিযোগিতার মত ঘৃণ্য শব্দগুলো নেই। রাজপথে যাওয়ার সাধ ইচ্ছা বা প্রয়োজনীয়তা দুটোই নেই। মার্কিন নওমুসলিম শিক্ষাবিদ ড. আসমা বাসিলা বলেন, ‘মুসলমান স্বামী এবং খৃস্টান স্বামীতে যে কী পার্থক্য তা আমি বুঝেছি বিয়ের পর। স্ত্রীকে রক্ষা ও তার অধিকার আদায়ে যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকে মুসলমান স্বামী এবং তাকে রক্ষা করে যে কোন বিপর্যয় ও দুর্ঘটনা থেকে। আর অমুসলিম স্বামী সীমাবদ্ধ থাকে চুক্তিভিত্তিক অধিকার বিনিময়ের আচরণে। ইউরোপের মস্তিষ্ক যেসব ব্যক্তিত্ব তাদের দৃষ্টিতে বিবাহ একটি চুক্তি যার চূড়ান্ত লক্ষ্য অধিকার বিনিময় এবং স্ত্রী তাদের দৃষ্টিতে স্রেফ পণ্য; সন্তান উৎপাদনের সহজ মাধ্যম। অথচ ইসলামে বিবাহের ভিত্তি হল পারস্পরিক প্রেম, ভালবাসা ও সহমর্মিতা, যেখানে দু’জন দুজনার; প্রত্যেকে অপরের কল্যাণে সর্বদা ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। এ কারণেই নারীর নিরাপত্তা, শান্তি ও প্রশান্তির যাবতীয় উৎস একমাত্র ইসলাম।’
ইসলাম কন্যাকেও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে রেখেছে। প্রিয়নবী (সা.) তার কন্যাদেরকে যে কত ভালবাসতেন তা ইতিহাসের পাতায় এখনও জীবন্ত। কন্যা ফাতিমা ছিল তাঁর জীবনের সবটুকু। কোন সফর থেকে এসে সর্বপ্রথম ফাতিমা (রা.) এর সাথে দেখা করতেন। খাবার খাইতে বসে তিনি অন্য কাউকে স্মরণ না করলেও ফাতিমাকে (রা.) স্মরণ করতেন। মৃত্যুর পর সবার আগে ফাতিমা তাঁর সাথে মিলিত হবে বলে সুসংবাদ দিয়ে গেছেন। তিনি নিজে শুধু করে দেখিয়েছেন তা নয় বরং তাঁর সাহাবীদেরকেও এ বিষয়ে কঠিন প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছেন। উম্মতে মুহাম্মাদীকে হেদায়াত করে গেছেন এ বিষয়ে। তাঁর (সা.) প্রশিক্ষণে সাহাবীরা এত বেশি মানবিক উন্নতির পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন যে, শুধু নিজেদের কন্যা নয় এতিম কন্যা লালন পালনের দায়িত্ব নেবার জন্য একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় লেগে যেতেন। এ কোন কল্পকাহিনী নয় বরং সোনালী সমাজের সোনার মানুষদের সোনার মত জ্বলজ্বলে ইতিহাস। যে ইতিহাসের পেছনে বস্তুবাদ ভোগবাদের কলুষিত হাতছানি নেই। আছে শুধু ত্যাগের মহিমা আর মাওলাকে সন্তুষ্ট করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা। প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তিনটি মেয়ে বা তিনটি ভগ্নির প্রতিপালন ও শিক্ষাদান সুচারুরূপে করবে যতক্ষণ না তাদের নিজ নিজ ব্যবস্থা হয়; তার জন্য বেহেশত অবধারিত।’ আরো বলেছেন, ‘যার নিকট কোন মেয়ে থাকে আর সে মেয়েকে তুচ্ছ না করে এবং ছেলেকে অগ্রগণ্য না করে আল্লাহ তায়ালা তাকে বেহেশত দান করবেন।’ কন্যার অধিকারের ক্ষেত্রে যে বিষয়টা নিয়ে হৈ চৈ করে ময়দান কাঁপানো হয় তা হল পিতার সম্পত্তিতে মেয়েদের অর্ধেক পাওনার বিষয়টা নিয়ে। একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখলে এমন মস্তিষ্ক বিকৃতির সুযোগ ঘটে না। নারী তার সমগ্র জীবনে কখনোই ভরণ-পোষণের দায় বহন করে না এটা হচ্ছে প্রথম কথা। দ্বিতীয় কথা হল মেয়েরা তার স্বামীর কাছ থেকে, পিতার কাছ থেকে, ভায়ের কাছ থেকে সম্পত্তি পায়। তৃতীয় কথা হল তাদের সম্পদ ব্যয়ের কোন খাত নেই বললেই চলে। আর একজন ছেলে-তাকে শুধু নিজের ভরণ-পোষণ নয় স্ত্রী-পুত্র-কন্যার ব্যয়ভারও বহন করতে হবে, আত্মীয়-স্বজনদেরও হক রয়েছে তার কাছে এবং সে অন্য কোন উৎস থেকে সম্পদ পায় না, মেয়েদের মত। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে পিতার সম্পত্তিতে মেয়েদের চেয়ে দ্বিগুণ সম্পদ লাভটা কি তার প্রতি সুবিচার নয়। স্পষ্টত বোঝা যায় সুবিচারের পাল্লাটা ছেলেদের দিকে নয় বরং মেয়েদের দিকেই ঝুঁকে আছে। যা হোক এ যে পরিপূর্ণ ইনসাফ ভিত্তিক ব্যবস্থা তা আমরা বুঝতে পারি। আর এ বিষয়ে অন্ধের মত চিৎকার দিতেই যারা অভ্যস্ত তাদের জন্য শুধু হেদায়াত কামনা করতে পারি। সামগ্রিকভাবে ইসলামের যে দৃষ্টিভঙ্গী তা পর্যালোচনা করলে, নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিবেচনা করলে তা মানুষের সামনে এক আলোকিত জীবনের রাজপথ দেখিয়ে দেয়, এক সুমহান সমাজ ব্যবস্থার চিত্রকল্প মনে এঁকে দেয়। যে সমাজে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ শুধু নিজের স্বার্থ-সুবিধা নিয়ে বেঁচে থাকে না যেখানে আত্মকেন্দ্রিকতার চেয়ে অন্যের হক আদায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দয়া, মায়া, স্নেহ-মমতা আর পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে যে সমাজ গঠিত হয়, মানুষের হৃদয়বৃত্তি পরিপূর্ণরূপে বিকশিত হয় ফলে ফুলে। সবশেষে আহবান- আসুন, ‘প্রতিযোগিতার’ মত কদর্য ধারণাগুলো সমাজ ভাঙ্গনের ধ্বংসাত্মক পথগুলো ত্যাগ করে আমরা ইসলাম প্রদর্শিত সেই পথে চলি-যে পথে আছে অফুরান শান্তি, যে পথের শেষ সীমানায় দাঁড়িয়ে আছে সুমহান নেয়ামত ভরা জান্নাত। আল্লাহ আমাদেরকে সে পথে চলার তৌফিক দিন। আমীন।

আরও পড়ুনঃ   ভিক্স ব্যবহারে দেহের ফাটা দাগ দূর করুন খুব সহজে!

-শামছুন্নাহার শাপলা

বিঃ দ্রঃ গুরুত্বপূর্ণ হেলথ নিউজ ,টিপস ,তথ্য এবং মজার মজার রেসিপি নিয়মিত আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে লাইক দিন আমাদের ফ্যান পেজ বিডি হেলথ নিউজ এ ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

one + 16 =