ডাক্তারদের কমিশন নেয়া কি বৈধ!

0
466
doctor commission

মুফতি আবু সাঈদ জুবায়ের : মানব সেবা, শ্রদ্ধা ও অর্থ বিত্তের সমন্বিত এক পেশাজীবীর নাম- চিকিৎসক। অন্য যে কোন পেশার তুলনায় এখানে মানব সেবার সুযোগটা একটু বেশি। তাই সবাই তাঁদের শ্রদ্ধার চোখে দেখেন, বিত্ত সম্পদ থাকে তাদের হাতের নাগালেই। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এই শ্রদ্ধার জায়গায়ও সৃষ্টি হয়েছে কিছু ফাঁক ফোকর। তাই নানা সময়ে আলোচিত হচ্ছেন এই আস্থাভাজন পেশাজীবী ডাক্তাররা। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এবং হাসপাতালের সাথে কিছু চিকিৎসকের আর্থিক যোগসূত্রের অভিযোগও আছে। অর্থাৎ চিকিৎসক নির্দিষ্ট কোন হাসপাতালে রোগী পাঠিয়ে হাসপাতাল হতে নির্ধারিত পরিমাণে কমিশন নিয়ে থাকেন। অনুরূপভাবে নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ লিখে যে কোম্পানি থেকেও বিভিন্ন পরিমাণে সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন। দেখা যাক ইসলাম এ বিষয়ে কি বলে?
কোন রোগী ডাক্তারের কাছে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে ব্যবস্থা পত্র আনতে গেলে ইসলামি ফিকহের পরিভাষায় রোগিকে বলা হবে মুস্তাজির -নিয়োগকর্তা বা অর্থ দাতা)। আর ডাক্তারকে বলা হবে আজির বা কর্মের বিনিময়ে অর্থ গ্রহীতা।
এক্ষেত্রে ইসলাম বলবে রোগির দায়িত্ব হল ডাক্তারকে তার অবস্থা জানানো এবং নির্ধারিত ভিজিট প্রদান করা। পক্ষান্তরে ডাক্তারের দায়িত্ব হলো রোগীর জন্য প্রযোজ্য চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা। মেডিকেল টেস্টগুলো ডাক্তাররা করিয়ে থাকেন তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব (অর্থাৎ, রোগ নির্ণয় করে প্রেসক্রিপশান দেয়া) যথাযথভাবে আদায়ের সুবিধার্থে, তদ্রুপ কোন ল্যাব বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করালে ভালো হবে, তা নির্ধারণ করে দেয়া ডাক্তারেরই পেশাগত দায়িত্ব। নির্ধারিত ভিজিটের বিনিময়ে তিনি এসব কাজগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে করে দিবেন।
উপরোক্ত বিশ্লেষণের নিরিখে একথাই প্রমাণিত হয় যে, মেডিকেল টেস্টে রোগী প্রেরণকারী ডাক্তারের জন্য কমিশন গ্রহণের কোন সুযোগ নেই। কারণ এক্ষেত্রে কমিশন গ্রহণের অর্থ হলো, নিজ দায়িত্ব সমাধানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য অন্যের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেছেন। অথচ এ দায়িত্ব পূর্ণ করার জন্য তিনি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করছেন। তাই হাসপাতাল কর্তৃক ডাক্তারদের প্রদত্ত এই কমিশন শরিয়ত নিষিদ্ধ উৎকোচের অন্তর্ভুক্ত হবে। সূত্র : ইমদাদুল ফাতাওয়া ভলিয়ম ৩ পৃ:৪১০/ ফাতাওয়া রশিদিয়া পৃ:৫৫৮
অনুরূপ, ওষুধ কোম্পানি তাদের ওষুধের নাম লেখার জন্য ডাক্তারদের যে দামি-দামি জিনিস পত্র, নগদ অর্থ ইত্যাদি দেওয়া হয় তাও শরিয়ত সম্মত নয়। কারণ এটিও শরিয়তের দৃষ্টিতে বিনিময়হীন উৎকোচের শামিল। কেননা রোগির জন্য কোন গ্রুপের এবং কোন কোম্পানীর ওষুধ সর্বাধিক কার্যকরী তা লিখে দেয়া একজন চিকিৎসকের পেশাগত দায়িত্ব। অবশ্য বিভিন্ন ছোটখাট স্টেশনারি সামগ্রী নেয়া যেতে পারে।
যেমন : কলম, প্যাড ইত্যাদি। এগুলোতে ঔষধ কোম্পানির ট্রেডমার্ক এবং উৎপাদিত পণ্যের ট্রেড ন্যাম ছাপানো থাকে। মূলত এগুলো কোম্পানির বিজ্ঞাপনের কাজ দেয়। তাছাড়া পণ্যগুলো এজন্যে নয় যে, সেগুলো বিক্রি করে অনেক টাকা উপার্জন করা যাবে। তাই এসব বিবেচনায় স্টেশনারি সামগ্রী গ্রহণ করা বৈধ।
সূত্র : বাস্তব জীবনে হারামের অনুপ্রবেশ
মূল : আল্লামা তাকি উসমানি।

আরও পড়ুনঃ   ইসলাম ও বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হস্তমৈথুনের শারীরিক ক্ষতিসমূহ জেনে নিন

চিকিৎসা সম্পর্কে ইসলামী বিধান কী?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ten − 3 =