আর অল্প কয়েকদিন পরে পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে যাচ্ছে। যেহেতু ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না তাই ভুলে গেলে চলবেনা রমজানে ডায়াবেটিক রোগীর করণীয় ও বর্জনীয়। তাই আমাদের আজকের পোষ্ট সাজিয়েছি রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা এবং রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় নিয়ে।
বিশ্বের প্রতিটি দেশেই একটি বড় সংকট হচ্ছে ডায়াবেটিস। আমাদের বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি ডায়াবেটিস রোগী শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশে। মজার বিষয় হলো যারা শনাক্ত হয়নি তাদের মধ্যে একটি বড় অংশই ইতিমধ্যে ডায়বেটিসে আক্রান্ত কিন্তু তারা জানেই না। আমরা সকলেই জানি ডায়াবেটিস কখনও সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না। সুতরাং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা, প্রতিনিয়ত শরীর চর্চা আবশ্যক। একই সাথে ধূমপান, মদ্যপান, জর্দা, সাদাপাতা ইত্যাদি বন্ধ করার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।
ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হলে খাদ্যাভ্যাসে শৃঙ্খলা মেনে চলাটা আবশ্যক। ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখতে হলে তার তিন মাসে আগে থেকে সুগার কন্ট্রোল থাকা উচিত। একজন ডায়াবেটিস রোগী যদি নির্দিষ্ট সময় পরপর খাবার গ্রহন না করে, বিশেষ করে যারা ইনসুলিন বা সালফোনিল ইউরিয়া ওষুধ সেবন করেন তাদের মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। কিন্তু যারা রোজা রাখেন তাদের সাহ্রির পর দিনের একটা বড় অংশ অর্থাৎ একটা দীর্ঘ সময় কিছু না খেয়ে থাকতে হবে। আবার সন্ধ্যার পর ইফতারিতে নির্দিষ্ট ক্যালরি সঠিকভাবে গ্রহণ করতে হবে। এ সময় পানিশূন্যতার সংকট যেন দেখা না যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। যথাযথ নিয়ম না অনুসরন না করে রোজা রাখার ফলে রক্তে শর্করা কমে যাওয়া, রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়া, পানিশুন্যতার মতো ভয়ংকর বিপদ দেখা যেতে পারে। তাই রমজানে চাই ডায়াবেটিস রোগীর বিশেষ সচেতনতা।
রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকাঃ
সাহ্রির খাবারঃ
সাহ্রি খাওয়া হয় সাধারনত রাতের শেষ প্রহরের দিকে অর্থাৎ ভোর রাতের দিকে। এই জন্য অনেকে পর্যাপ্ত পরিমান পানি খাওয়ার সময় পান না। কিন্তু একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য পর্যাপ্ত পানি খাওয়া আবশ্যক। অন্যথায় তাকে পানিশুন্যতার মতো সমস্যা পড়তে হতে পারে। একজন ডায়াবেটিস রোগীর খাবার হিসেবে সাহ্রিতে প্রোটিনযুক্ত খাবার অবশ্যই খেতে হবে। প্রোটিনযুক্ত খাবার হিসেবে মাছ, মুরগি, ডিম বেছে নিতে পারেন। গরুর মাংস, ডাল না খাওয়াই শ্রেয়। আর যাদের হজমজনিত সমস্যা আছে তারা ডাল ও গরুর মাংস এ সময় এড়িয়ে চলবেন। প্রটিনের জন্য সাহ্রিতে এক গ্লাস অথবা এক কাপ দুধও খেতে পারেন।
ইফতারের খাবারঃ
সারা দিন রোজা রাখার পর সাধারনত শরীরে পানিশূন্যতা থাকবে। কিন্তু এই কারনে বা পিপাসার কারনে একসাথে অনেক বেশী পানি পান করা যাবেনা এবং এই সময়ে শরবত জাতীয় পানীয় থেকে দূরে বিরত থাকতে হবে। কারন এই ধরনের পানীয় শরীরে অধিক সময় নিয়ে শোষিত হয়ে হজমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। চাইলে একদম পাতলা করে শরবত বা ফলের জুস খাওয়া যেতে পারে। রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকাতে ইফতারে পানিশূন্যতা এড়াতে ডাবের পানি, ইসবগুলের ভুসির শরবত, টক দইয়ের লাচ্ছি, তোকমা, চিনি ব্যতীত লেবুর শরবত ইত্যাদি রাখতে পারেন।যদি কারো অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে থাকে তাদের প্রথমে টকজাতীয় শরবত প্রথমেই খাওয়া যাবেনা। এক্ষেত্রে সবজির স্যুপ বা সবজির জুস করে খাওয়া যেতে পারে।
মনে রাখতে হবে ইফতারের খাবার হতে হবে সকালের নাশতার সমান, অর্থাৎ সারা দিনের খাবারের ৩ ভাগের ১ ভাগ। এ জন্য কয়েকটি আদর্শ ও স্বাস্থ্যকর খাবার হলো কাঁচা ছোলা সেদ্ধ সঙ্গে আদা, পুদিনা ও অল্প লবণ মিশিয়ে মুড়ি মাখানো, টমেটো, দই-চিড়া, দই–বড়া ইত্যাদি। আরো খেতে পারেন নরম খিচুড়ি, লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি, সেদ্ধ ডিম, মিক্সড ফল বা ফলের সালাদ যেকোনো একটি। তবে অবশ্যই ডালের তৈরি খাবার খাবেন না। আপেল, কলা, খেজুর, আম, কমলা, নাশপাতি, পেঁপে, পেয়ারা মিষ্টি ফলের মধ্যে যেকোনো একটি ফল খেতে পারবেন। তবে অবশ্যই সীমিত পরিমানে। এক্ষেত্রে টক ফল খাওয়া যাবে ইচ্ছামতো। পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগীর খাবার হিসেবে ইফতারে ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত ও মসলাদার খাবার শতভাগ বর্জন করতে হবে।
রাতের খাবারঃ
ইফতারের পর থেকে রাতের সময়কাল থাকে খুব অল্প। এমন অনেকেই আছেন যারা ইফতারে বেশি খাবার খেয়ে ফেলার কারনে রাতের খাবার বাদ দেন। এটি মোটেই ঠিক নয়। ডায়াবেটিস রোগীসহ আমাদের প্রত্যেকেরই রাতের খাবার হিসেবে হালকা কিছু খেয়ে নেয়া উচিৎ। খুব অল্প মসলায় রান্না করা ছোট মাছ, মাংস, সবজি খেতে পারেন। যদি কেউ চান রাতের খাবারে লাল আটার রুটি, মুড়ি, চিড়া, ওটস, যেকোনো একটি পরিমাণমতো খেতে পারেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই যেকোন প্রকার ভুনা করা খাবার বর্জন করতে হবে।
কিছু করণীয় ও বর্জনিয়ঃ
এক দিনে অধিক আইটেম না খেয়ে প্রতিদিন একটি করে আইটেম রান্না করুন।
ভাজাপোড়া ও মসলাযুক্ত খাবারগুলো বর্জন করুন।
ফ্রিজে এক খাবার রেখে অনেক দিন ধরে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
সারাদিনে রোজা রাখার পর বেশি করে চা–কফি খাবেন না। এতে আপনি আরো বেশী পানিশূন্যতায় ভুগবেন।
ভুনা খাবার এর পরিবর্তে তরল বা পানিজাতীয় খাবার খান।
ঝাল খাবার এড়িয়ে চলুন কারন এসব খাবার আপনার অ্যাসিডিটির পরিমাণ বাড়িয়ে তুলবে।
রোজা শুরুর ১৫ দিন থেকে এক মাস আগে শর্করার মাত্রা, কিডনির অবস্থা, সম্ভব হলে রক্তের চর্বির পরিমাণ জেনে নিন।
ওষুধের কোনো পরিবর্তন দরকার আছে কি না, তা চিকিৎসকের পরামর্শ করে নিন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোজায় খাদ্যতালিকা মেনে চলা। আশা করছি উপরোক্ত রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।
https://bdhealth.org ভিজিট করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা নিয়ে ভিডিও দেখতে চাইলেঃ