হার্টের সুরক্ষায় প্রযুক্তি

0
394
হার্ট ও প্রযুক্তি

প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনধারার মানও অনেকাংশেই বদলে গেছে। প্রাত্যহিক জীবনের সবক্ষেত্রে কয়েক বছর ধরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার।

ঠিক তেমনি চিকিৎসা বিজ্ঞানও ব্যতিক্রম নয়। ক্যান্সার এবং হার্টের রোগের চিকিৎসাতেও এখন এআই-এর ব্যবহার হচ্ছে। মানুষের স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজ করতে রয়েছে নানা অ্যাপ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আগেই অ্যাপটি জানিয়ে দেবে এবং আপনার হার্টের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য অবহিত করবে। এমন কিছু টুল বা অ্যাপ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন সাইফুল আহমাদ

‘হার্ট এইজ টেস্ট’ নামে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি জানাতে বিনামূল্যের একটি অনলাইন টুল বানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই টুলটিতে ৩০ বছরের বেশি বয়সী গ্রাহকদের তাদের জীবনযাত্রা ও শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করা হবে।

যদি টুলটি ধারণা করতে পারে গ্রাহকের হৃদপিণ্ডের বয়স তার আসল বয়সের চেয়ে বেশি তবে তার হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে বলে চিহ্নিত করা হবে এবং ঝুঁকি কমানোর পরামর্শ দেয়া হবে।

পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (পিএইচই)-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, ইতিমধ্যে ১৯ লাখ বারের বেশি এটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, পাঁচজনের মধ্যে চারজনের হৃদপিণ্ডের বয়স তাদের আসল বয়সের চেয়ে বেশি।

এক-তৃতীয়াংশের হৃদপিণ্ডের বয়স তাদের আসল বয়সের চেয়ে পাঁচ বছর বেশি এবং ১৪ শতাংশের হৃদপিণ্ডের বয়স ১০ বছর বেশি। পিএইচই-এর হৃদরোগ বিষয়ের প্রধান অধ্যাপক জেইমি ওয়াটারঅল বলেন, ‘লাখো মানুষ হৃদরোগের ঝুঁকিতে আছেন কিন্তু তারা এটি জানেন না, যা তাদের রুগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে বাঁচা বা কম বয়সে মারা যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। ’

মানুষ তার ওজন কমানো, ধূমপান ও অ্যালকোহল ছাড়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে তার হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো করতে পারেন বলে জানানো হয়েছে।

আমেরিকার খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন একটি অ্যাপের অনুমোদন দিয়েছে। এই সফটওয়্যার হৃদপিণ্ড বা ফুসফুসের হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগাম সতর্কতা দেবে। কেকটি আমেরিকান হাসপাতালে তা চালুও হয়েছে। এটা আসলে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা একজন রোগীর শারীরিক লক্ষণ যাচাই হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়ার অন্তত ছয় ঘণ্টা আগে সংকেত দিতে পারে।

আরও পড়ুনঃ   হার্ট চাঙ্গা থাকলে মস্তিষ্কও সুস্থ থাকবে

ফলে চিকিৎসক এবং নার্সরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। সফটওয়্যারটির নির্মাতারা জানিয়েছেন, এটি ব্যবহারের জন্য আলাদা বিশেষ কোনো যন্ত্রপাতির দরকার হবে না।

হাসপাতালে এখন যে নজরদারি ব্যবস্থাগুলো চালু রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করেই নতুন এই প্রযুক্তি কাজ করবে। অনেক হাসপাতালেই রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক বা কর্মী থাকে না। এমনকি একজন রোগীর সব তথ্য যাচাই-বাছাই করাও হয়তো তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। আর এই সমস্যারই সমাধান দেবে ওয়েভ ক্লিনিক্যাল প্লাটফর্ম নামের এই সফটওয়্যার।

সফটওয়্যারটি হার্ট বিট, ফুসফুসের শ্বাস নেয়ার ধরন, রক্তের চাপ, শরীরের তাপমাত্রা আর অক্সিজেনের মাত্রা যাচাই করবে। এ সব তথ্য স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের ফোন, ট্যাবলেট বা কম্পিউটারেও দেখতে পারবেন।

ফলে বিছানার পাশে না গিয়েও, তারা যে কোনো জায়গায় বসে রোগীর উপর নজরদারি করতে পারবেন। রোগীদের ০-৫ মাত্রায় নজরদারি করা হবে। কোনো রোগীর অবস্থা যদি ৩-এর বেশি হয়ে যায়, তখনি সফটওয়্যারটি সতর্ক বার্তা পাঠাতে শুরু করবে।

তবে এর মাধ্যমে সব রোগীকেই যে বাঁচানো যাবে, সেই আশা করছেন না বিজ্ঞানীরা। তারা এখন শুধু সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে চাইছেন।

হার্টের রোগীকে ওষুধ খাওয়া, চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এ সব বিষয় মনে করিয়ে দিবে ই-হার্ট অ্যাপ। এই অ্যাপে ক্লিক করেই এ সব সুবিধা পাবেন হার্টের রোগীরা।

গত বছরই রাজধানীর মিরপুর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির (বিইউ) আরবান ল্যাব ‘ই-হার্ট’ নামে অ্যাপ উদ্ভাবন করে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের হৃদরোগীদের জন্য ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন (এনএইচএফ), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহায়তায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির আরবান ল্যাব এ অ্যাপ তৈরি করেছে। যদিও এ অ্যাপ কেবল ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগীরা ব্যবহার করতে পারবে। হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগীরা হাসপাতালের আইডি বা নিজেরা অ্যাপ ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করে লগ ইন করতে হবে। এখানে রোগীর প্রোফাইল, রোগীর নাম, বয়স, উচ্চতা, ওজন, রক্তের গ্রুপ, রোগের ধরন থাকবে। এখানে রোগীর রোগ অনুযায়ী চিকিৎসক, ওষুধ খাবার পরামর্শ দেয়া হবে। এ ছাড়া কোন্ ওষুধ কখন খেতে হবে। রোগীর ওষুধের সেবনের সময় অনুযায়ী গুগল ক্যালেন্ডারে এলার্ম অপশন সেট করা থাকবে। প্রতিটি ওষুধ সেবনের জন্য এলার্ম সেট করা থাকবে।

আরও পড়ুনঃ   হার্ট ভালো রাখতে পাঁচ খাবার

সূত্রঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

sixteen − 3 =