নিউক্লিয়ার টেকনিক ও ম্যাগনেটিক ন্যানো বস্তুকণা ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংসের উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (বাপশক)। এ লক্ষ্যে দেশে এবারই প্রথম প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হবে।
বাপশকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. আলী জুলকারনাইন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা নিউক্লিয়ার টেকনিক ব্যবহারে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে চাই। ক্যান্সার কোষ ও ইঁদুর দিয়ে এনিমেল ট্রায়াল ব্যবহার করে ম্যাগনেটিক ন্যানো বস্তুকণা ভিত্তিক ইনডাকশন হিটিং প্রকৌশলের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংসকারী দ্রব্যাদির কৃতি মূল্যায়ন করা হবে। প্রথমে ক্যান্সার আক্রান্ত ইঁদুর নির্বাচন করা হবে। পরে ক্যান্সার কোষ ধ্বংসের জন্য ইঁদুরের শরীরে ম্যাগনেটিক ন্যানো বস্তুকণা ভিত্তিক ইনডাকশন পুশ করা হবে। এতে সুফল পাওয়া গেলে একই ধরনের ইনডাকশন ব্যবহার করা হবে মানুষের শরীরে’।
‘এর পরে নিউক্লিয়ার দিয়ে ক্যান্সার ধ্বংস করার পদ্ধতি সরকারের কাছে হস্তান্তর করবো। যেন এ পদ্ধতি দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ব্যবহার করা যায়’।
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করার ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে। এমনকি শ্রীলঙ্কাও আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। আমরাও আমাদের উদ্যোগ এগিয়ে নিতে চাই’।
বাপশকের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ড. দিলীপ কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ‘ক্যান্সার কোষ ধ্বংসসহ জীবন মান রক্ষায় আমরা ন্যানো টেকনলজি সংক্রান্ত গবেষণাগার স্থাপন করবো। প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার আক্রান্ত ইঁদুরের শরীরে পরীক্ষা চালাবো। যদি সফল হতে পারি, তখন মানবদেহে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করবো’।
তিনি জানান, ইঁদুরের শরীরে প্রাথমিকভাবে ট্রান্সমিশন ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপি প্রয়োগ এবং নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্সের ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন ও ক্লিনিক্যাল স্টাডিতে ন্যানো প্রযুক্তি ভিত্তিক গবেষণা ক্ষেত্রের উন্নয়ন করা হবে। যা জনসাধারণের জীবন মান রক্ষা ও উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
এ প্রকল্পে মোট ব্যয় করা হবে ৪৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। রমনা এলাকায় প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে।
প্রকল্পের আওতায় পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, ঢাকার বস্তুবিজ্ঞান বিভাগের ন্যানো এবং ন্যানো-জৈব প্রযুক্তি গবেষণাগারের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে। ন্যানো প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম, মেরামত ও সংগ্রহ করা হবে। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি কেনা হবে কোটি টাকা মূল্যের আধুনিক যন্ত্রপাতি ও নানা ধরনের ফার্নিচার। ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে দু’সেট বৈদেশিক যন্ত্রপাতি কেনাসহ ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নিয়োগ পাচ্ছেন বৈদেশিক পরামর্শক।
বাপশক আরও জানায়, বাংলাদেশের ন্যানো প্রযুক্তি সংক্রান্ত গবেষণা এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রায়োগিক গবেষণাকে যুক্ত করলে তা ভবিষ্যতে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে বাংলাদেশে পরমাণু শক্তি কমিশনের বস্তু বিজ্ঞান বিভাগে ন্যানো প্রযুক্তির দক্ষ বিজ্ঞানী, জনবল এবং কিছু যন্ত্রপাতি রয়েছে যা দিয়ে ন্যানো প্রযুক্তি বিষয়ে মৌলিক গবেষণা হচ্ছে।
-মফিজুল সাদিক