কোলেস্টরল কমাতে চাইলে কী করবেন?

0
998
কোলেস্টরল কমাতে, কোলেস্টরল, Reduce cholesterol

ডা. এআরএম সাইফুদ্দীন একরাম: যেসব খাবারে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি, সেসব খাবারই রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়ায়। এ জন্য সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন-মাখন, চর্বিযুক্ত গরু ও খাসির মাংস ইত্যাদির পরিবর্তে অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, জলপাইয়ের তেল, মাছ ইত্যাদি বেশি খাওয়া উচিত-

অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) ও বিভাগীয় প্রধান, মেডিসিন বিভাগ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ
আপনার রক্তে বর্তমানে কোলেস্টেরলের মাত্রা কত? ধরুন আপনি পাঁচ বছর আগে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখেছেন এবং সেটার পরিমাণ স্বাভাবিক ছিল বলে আনন্দিত আছেন, তাহলে কিন্তু ভুল হবে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। যাদের বয়স ২০ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি, তাদের প্রতি পাঁচ বছরে অন্তত একবার রক্তের লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করে দেখা উচিত।
কারও রক্তের কলেস্টেরলের মাত্রা যদি ২০০ মিলিগ্রাম/ ডেসিলিটারের বেশি হয় কিংবা কম ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন কলেস্টেরলের (তিকর কোলেস্টেরল) মাত্রা ১০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি হয়, তাহলে এগুলোর পরিমাণ কমানো উচিত। সাধারণত জীবন যাপনের পদ্ধতি পরিবর্তন করে এবং প্রয়োজন হলে ওষুধ সেবন করে ছয় সপ্তাহের মধ্যে এগুলোর পরিমাণ স্বাভাবিক অবস্থায় নামিয়ে আনা যায়।
রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা তেমন কঠিন কাজ নয়। নিচের ১১টি সহজ কৌশল অনুসরণ করে উপকৃত হতে পারেন:-
কলেস্টেরলের কাক্সিত মাত্রা ঠিক করুন
আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে আপনার শরীরে কলেস্টেরলের মাত্রা কত এবং আপনি কতটুকু কমাতে চান। এটা অনেক উপাদানের ওপর নির্ভর করে। যেমন- পরিবারের বাবা-মায়ের হৃদরোগের ইতিহাস আছে কি না এবং আপনার হৃদরোগ হওয়ার মতো ঝুঁকি রয়েছে কি না। যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপানের অভ্যাস, অতিরিক্ত মেদভুঁড়ি ইত্যাদি। যাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, তাদের কম ঘনত্বের কলেস্টেরল বা তিকারক কলেস্টেরলের মাত্রা ৭০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে থাকা উচিত। যাদের হৃদরোগের কোনো ঝুঁকি উপাদান নেই, তাদের ১৬০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে রাখা যেতে পারে। হৃদরোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, তাদের তিকারক কলেস্টেরল যত দ্রুত কমানো যায়, ততই মঙ্গল।
প্রয়োজন হলে ওষুধ সেবন করতে হবে
হৃদরোগের সংকেত থাকে, তাহলে কলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন করতে হবে। এক্ষেত্রে ধূমপান পরিহার করা, ওজন কমানো যেমন জরুরি, তেমনি ওষুধ সেবন করাও দরকারি। ফলে রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসে। চিকিৎসকরা কলেস্টেরল কমানোর জন্য নানা রকম ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। যেমন- নিয়াসিন, ফাইব্রেটস, স্টেটিনস ইত্যাদি। বর্তমানে স্টেটিন-জাতীয় ওষুধ জনপ্রিয়। স্টেটিন রক্তের তিকারক কলেস্টেরল ২০ থেকে ৫০ শতাংশ কমাতে পারে।
হাঁটুন এবং ব্যায়াম করুন
শারীরিক পরিশ্রম এবং ব্যায়াম শুধু রক্তে তিকারক কলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় তা-ই নয়, উপকারী কলেস্টেরলের পরিমাণ (বেশি ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল) ১০ শতাংশ বাড়ায়। মাঝারি পরিমাণ ব্যায়াম কিংবা জোরে জোরে হাঁটলেও উপকার পাওয়া যায়। নৈশভোজের পর কমপে ৪৫ মিনিট হাঁটুন। কেউ যদি প্রতিদিন ১০ হাজার সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করেন, তাহলে উপকৃত হবেন। যারা অফিসে চাকরি করেন, তাদের উচিত প্রতি ঘণ্টায় অন্তত পাঁচ মিনিট হাঁটা, চলাফেরা করা। আপনি যে ধরনের ব্যায়াম করুন না কেন, তা নিয়মিত করতে হবে। সপ্তাহে সাত দিন ব্যায়াম করতে পারলে খুবই ভালো। কমপে পাঁচ দিন ব্যায়াম করতে হবে।
চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করুন
কলেস্টেরল কমানোর আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে ডিমের কুসুম এবং অন্যান্য বেশি কলেস্টেরলযুক্ত খাবার খাওয়া পরিহার করা। এটাও ঠিক যে, খাবারের কোলেস্টেরলই শুধুমাত্র রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ানোর জন্য দায়ী নয়। মানুষের শরীরে প্রতিদিন কলেস্টেরল তৈরি হয়ে থাকে। যেসব খাবারে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি, সেসব খাবারই রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। এ জন্য সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন মাখন, চর্বিযুক্ত গরু ও খাসির মাংস ইত্যাদির পরিবর্তে অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, জলপাইয়ের তেল, মাছ ইত্যাদি বেশি খাওয়া উচিত।
আঁশযুক্ত খাবার বেশি করে খান
যে কোনো ধরনের সবজি এবং ফলমূল শরীরের জন্য উপকারী। এগুলো রক্তে কলেস্টেরলও কমায়। বিশেষত দ্রবণীয় আঁশ পরিপাক নালি থেকে স্পঞ্জের মতো কলেস্টেরল শুঁষে নেয়। সিম, বার্লি ইত্যাদি খাবারে প্রচুর আঁশ থাকে।
বেশি করে মাছ খান
মাছ ও মাছের তেল কলেস্টেরল কমাতে পারে। এর মধ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। এটা খুব সহজে রক্ত থেকে কলেস্টেরল এবং অন্যান্য তিকর চর্বি কমিয়ে ফেলে। প্রত্যেকেরই সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার মাছ খাওয়া উচিত। অধিকাংশ মাছেই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। যদি কেউ মাছ খেতে না পারেন, তিনি মাছের তেল থেকে তৈরি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ ক্যাপসুল চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে পারেন। বিভিন্ন উদ্ভিদজাত খাবারেও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। যেমন- সয়াবিন তেল, কাঠবাদামের তেল ইত্যাদি।
মদ্যপান পরিহার করুন
অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান শরীরের জন্য তিকর।
গ্রিন টি সেবন করুন
সবুজ চায়ের (গ্রিন টি) ভেতর রক্তের তিকারক কলেস্টেরল কমানোর উপাদান রয়েছে। ফলে এটি হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী।
বাদাম খান
বাদাম খেলে রক্তের কলেস্টেরল কমে। বিশেষত কাঠবাদাম এবং কাজুবাদাম। বাদামে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে। এ জন্য পরিমিত পরিমাণে বাদাম খাওয়া উচিত।
ধূমপান পরিহার করুন
ধূমপান করলে রক্তে উপকারী কোলেস্টেরল বা বেশি ঘনত্বের কলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। অতএব, রক্তের কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশ্যই ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এ জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।

আরও পড়ুনঃ   যে কোন খাবার থেকে ফরমালিন দূর করার সহজ উপায় জেনে নিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

16 − six =