গবেষণায় দেখা গেছে, ইতিবচাক চিন্তার মাধ্যমে ব্যক্তির আত্ম-সম্মানবোধ জাগ্রত হয়। ভালো চিন্তার মাধ্যমে সে সুখ খুঁজে পায়। এমনকি হতাশার মতো মানসিক রোগ থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত থাকতে পারে।
তবে ‘ইতিবাচক চিন্তা“ ধারণাটিকে অনেক সময় মানুষের কাছে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয় এবং অনেকেই তা বিশ্বাস করে। বাস্তবতাকে না মেনে নিয়ে শুধু ইতিবাচক চিন্তা করে মানসিকভাবে কিছুটা স্বস্তিতে থাকা গেলেও স্থায়ীভাবে মানসিক রোগ থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয় বলে জানান সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এন্টনি গ্র্যান্ট (Anthony Grant )।
অনেক মানুষ জীবনের অনেক বিষয়, বিশেষ করে মানসিক রোগকে হালকাভাবে নেয়। এমনকি কঠিন পরিস্থিতিতেও ভালো কিছু ফোকাস করে হাশিখুশি থাকাতে পছন্দ করে। ফলে মানসিক বিভিন্ন দিক নিয়ে তারা নীরব থাকে। এমনকি চুড়ান্ত কোনো বিষয় হলেও তারা কোনো ঝুঁকি নিতে চান না। ইতিবাচক আশাবাদ ব্যক্ত করে স্বাভাবিকভাবে তা করে ফেলেন। কিন্তু মানসিক রোগের ক্ষেত্রে আশাবাদী হওয়ার চেয়ে বাস্তববাদী হওয়া বেশি যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করেন অধ্যাপক গ্র্যান্ট।
তিনি বলেন, জীবনের প্রতিটি বিষয় নিয়ে স্থায়ীভাবে আশাবাদী হওয়া মানে বাস্তব ও সত্য থেকে দূরে সরে যাওয়া। এর ফলে বিভিন্ন সময় তাকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। যখন মানুষ তার সমস্যা, আবেগ, দূ:খের কারণ নিয়ে না ভেবে অবহেলায় সবকিছু গ্রহণ করে তখন তার বেলা “ইতিবাচক মনোভাব“ তেমন কার্যকর হয়না।
এ বিষয় নিয়ে ২০০৯ সালের positive self-statements only improved mood and wellbeing নামের গবেষণায় বলা হয়, যারা খুবই আত্মপ্রত্যয়ী কেবল তারাই ইতিবাচক মনোভাব ধারণ করে তাদের ব্যবহার ও আচরণকে উন্নত করতে পারে। কিন্তু যারা কম আত্মপ্রত্যয়ী তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি পুরোপুরি সত্য নয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা যেভাবে আমাদের চিন্তার জগৎ তৈরি করেছি তা বাস্তবতার চেয়ে ভীন্ন হতেও পারে। অনেক বিষয় আছে যা আমাদের জীবনে প্রাকৃতিকভাবে ঘটে যায় এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। সেক্ষেত্রে আশাবাদী না হয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করাই বরং ভালো।
তবে অস্ট্রেলিয়ার The Positivity Institute এর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাজি গ্রিন মনে করেন, পৃথীবির যে কোনো বিষয়ই হোক, তাতে হালকাভাবে নেয়ার কিছু নেই। সব সময় কঠিন বিষয়ে নিমগ্ন না থেকে ইতিবাচক চিন্তা করা যেতে পারে।
তিনি মনে করেন, কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যূর ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে ইতিবাচক চিন্তা করা শ্রেয়। তবে যে কোনো বিষয়ে আশাবাদী হওয়ার চেয়ে বাস্তববাদী হওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, মানসিক রোগীর কঠিন মুহুর্তগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা মাথায় আসতে পারে। তার মানে এই না যে, শুধু ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে, সেটি অস্বীকার করে পার পাওয়া যাবে। আবার বাস্তববাদী মানে মনে কোনো আশা রাখা যাবে না, সব সময় খারাপ চিন্তা করবো এমনটিও নয়।
তবে ডা. গ্র্যান্ট মনে করেন, মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে প্রথমে যুক্তিসঙ্গত লক্ষ্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এরপর লক্ষ্যে পৌঁছতে চিন্তা, আচরণ ও ব্যবহারে কি ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে তা নিয়ে ভাবতে হবে। কোনটা নিজের জন্য ভালো সেটা জেনে গ্রহণ করতে হবে এবং মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে।
সূত্র: এবিসি নিউজ
rate kom ghumano ki valo?
ami pray somoy ekaa eka kotha o hasi ..porbortita mmi ta kheyal kori…ar jonno ki kora jete pare?
ধন্যবাদ আপনার প্রশ্নের জন্য। রাতে অবশ্যই পর্যাপ্ত ঘুমাবেন। আমেরিকার ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ভার্জিনিয়া বিচের সাইকোথেরাপিস্ট ড. লরা এফ ডাবনি ‘হাফপোস্ট কানাডা’কে ইমেলের মাধ্যমে জানান, নিজে নিজের সাথে কথা বলাটা স্বাভাবিক বিষয়। এটাকে আমরা কখনো মানসিক সমস্যা বলতে পারি না। নিজে নিজের সাথে কথা বলা অনেক সাধারণ একটা বিষয়।
‘দ্যা আর্টের’ লেখক বিরনিকা তুগালেভা হাফপোস্ট কানাডাকে বলেন, বাস্তবতা হলো আমরা প্রত্যেকে নিজের সঙ্গে কথা বলি। তবে জনসম্মুখে জোরে জোরে একা একা কথা বলাটা একটু অদ্ভুত লাগে। আমাদের মস্তিষ্কে জটিল, বহুমাত্রিক কথোপকথন হয়ে থাকে।
তুগালেভার মতে, আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া সমসাময়িক ঘটনা বা দিনগুলো সম্পর্কে নিজে নিজেকে বোঝানো একটা ভালো বিষয়। আমাদের উচিত নিজের সাথে কথা বলা এবং কি ঘটছে তা নিজেকে বোঝানো।
তুগালেভা উদাহরণ হিসেবে বলেন, ধরুন আপনি ঘরের বাইরে যাচ্ছেন, তখন আপনি আপনার চাবি, কোর্ট, ব্যাগ বা অন্যান্য সব কিছু ঠিকভাবে নিয়েছেন কিনা-নিজের কাছে প্রশ্ন করতে পারেন।
তুগালেভা যোগ করেন, তাছাড়া আপনার যদি বসের সাথে কোন কারণে মনোমালিন্য হয় তাও নিজে নিজে চিন্তা করতে পারেন যে, আপনার কি করা উচিত।
এটা সাধারণ কিছু নয় বরং গুরুত্বপূর্ণ, নিজের কাছে নিজের কাজের ব্যাখ্যা চাইলে খুশি এবং তৃপ্তি পাওয়া যায়, যোগ করেন তুগালেভা।
নিজের সাথে কথা বলে সুবিধা:
মনস্তাত্ত্বিক প্রশিক্ষক এবং লেখক শেরি ম্যাকগ্রিগোর মতে, নিজের সাথে কথোপকথনের অভ্যাস গড়ে তোলা স্বাস্থ্যকর এবং সহায়ক হতে পারে।
যেসব সন্তান তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকে ম্যাকগ্রিগোর তাদের সাথে কথা বলেন। তিনি তাদের নিজেদের সাথে কথা বলতে এবং কাজে উৎসাহ জোগাতে সহায়তা করেন।
শেরি ম্যাকগ্রিগোর মেইল করে হাফপোস্ট কানাডাকে জানান, আমি আমার মক্কেলদের সাথে কথা বলি এবং তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি। এটি তাদের চাপ সামলে উঠতে সহায়তা করে। তাতে করে তারা চাপ কাটিয়ে নিজের কাজে মনোনিবেশ করতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্ব পিএইচডি প্রার্থী ইতর শাতজ বলেন, কঠিন সময়গুলোতে লোকেরা প্রায়শই নিজের সাথে কথা বলেন। আর এতে করে অনেকে নিজেদের সামলে নেওয়ায় সাহস পান।
দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে নিজের সাথে কথা বলুন:
মনস্তাত্ত্বিক প্রশিক্ষক ম্যাকগ্রেগর বলেন, নিজের সাথে কথা বলে আমরা আমাদের আমাদের করণীয় ঠিক করতে পারি। এবং পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। তাই আমাদের নার্ভাস মুহূর্তে আমাদের নিজেদের কাছে সর্বপ্রথম প্রশ্ন করা উচিত, কিভাবে আমরা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে পারি। তবে যে সব কথা আপনার মধ্যে কুচিন্তার জন্ম দেয় তা এড়িয়ে চলতে হবে।
নিজের সাথে কথা বলার অভ্যাস করুন:
বর্তমানে খুব মনোযোগ সহকারে নিজের সাথে কথা বলার চর্চা দিনকে দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ম্যাকগ্রেগর বলেন, একাগ্র চিন্তা মূলত একার চিন্তা নয়, এর সাথে জড়িত আশপাশের লোকজন বা পরিবেশের চিন্তাভাবনা।
কঠিন সময়ে আমাদের মন আমাদের অন্য এক জগতে নিয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের উচিত চিন্তা করার সময় ভালো চিন্তার অভ্যাস করা।
নিজের সাথে কথা বলা কখন ক্ষতিকর?
নিজের সাথে নিজের কথা বলার কারণে মানসিক সমস্যা খুব কম সময়ই হয়ে থাকে। তবে, কিছু কিছু সময় নিজের সাথে কথা বলা মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমরা যখন আমাদের কথা বলার সময় বিশেষ কিছু শব্দ বার বার ব্যবহার করতে থাকি বা কথা বলার সময় বিভিন্ন ধরণের অঙ্গভঙ্গি করি অথবা হাত-পা ছোড়াছুড়ি করি তখন একটি মানসিক সমস্যা ভাবা যেতে পারে।