ত্বকের সৌন্দর্যের বড় শত্রু হলো ব্রণ। আমরা অনেকেই সারা বছর ব্রণ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, অনেকের ত্বক আবার সব সময়েই একদম পরিষ্কার! কখনোই ব্রণ হতে দেখা যায় না তাদের ত্বকে। এমন নির্ঝঞ্ঝাট ত্বকের রহস্যটা কি? তাদের ত্বক কি আমাদের চাইতে আলাদা? না, তারা মেনে চলেন এমন কিছু নিয়ম, রপ্ত করেন এমন কিছু অভ্যাস যা ব্রণ দূরে রাখে। এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো তৈরি করলে আপনিও মুক্তি পাবেন ব্রণের সমস্যা থেকে-
১) তারা কখনোই মুখ ধুতে ভুলে যান না
পরিষ্কার ত্বক হলো ব্রণ দূর করার প্রথম পদক্ষেপ। প্রতিদিন নিয়ম করে মুখ পরিষ্কার করুন হালকা কোন ক্লিনজার দিয়ে। মুখ ধুতে অনিয়ম করলে ত্বকের রোমকূপে তেল, ময়লা এবং মেকআপ জমে ব্রণ তৈরি করতে পারে।
২) তারা স্মার্টফোন পরিষ্কার রাখেন
অনেকেই ব্যাপারটা জানেন না, কিন্তু আপনার ফোনের স্ক্রিন আসলে খুবই ময়লা। গবেষণায় দেখা গেছে পাবলিক টয়েলেটের চাইতেও ময়লা হতে পারে এই স্ক্রিন। নিয়মিত পরিষ্কার না রাখলে ফোনে কথা বলার সময়ে এই ময়লা আপনার ত্বক লেগে ব্রণের প্রকোপ বাড়াতে পারে। নিয়মিত ফোনের স্ক্রিন পরিষ্কার করুন।
৩) তারা মুখে হাত দেন না
আনমনে মুখের ত্বকে হাত দেওয়া, গালে, চিবুকে বা কপালে হাত দিয়ে বসে থাকা এগুলোর কারণে ব্রণের উপদ্রব হতে পারে। কারণ এই কাজ করার ফলে হাত থেকে ময়লা চলে যায় মুখের ত্বকে। তা মুখে হাত দেওয়া থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকুন।
৪) নিয়মিত পাল্টান বালিশের কভার
প্রতি রাতে মুখ ধোয়ার পর যদি নোংরা বালিশে ঘুমাতে যান, তাহলে আসলে লাভ হবে না। আবারো ব্রণ দেখা দেবে। প্রতি তিনদিনে একবার করে বালিশের কভার পাল্টানো উচিৎ আপনার। নরম, মসৃণ কাপড়ে তৈরি বালিশের কভার আপনার ত্বক ভালো লাগবে।
৫) গ্রীকদের মতো খাওয়া
ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার খাদ্যভ্যাস ত্বকের জন্য খুবই ভালো এবং তা অনুসরণ করলে ব্রণ কম হতে দেখা যায়। এসব খাবারের মাঝে আছে সবজি, অলিভ অয়েল, হোল গ্রেইন এবং পরিমিত পরিমাণে কম চর্বিযুক্ত মাংস।
৬) তারা কখনোই ব্রণ খোঁচাখুঁচি করেন না
ব্রণ দেখা দিলেও অনেকে তা ফাটানোর জন্য খুঁচিয়ে থাকেন। এতে মুখে ক্ষত সৃষ্টি হয়, ত্বক সারতে দেরি হয় এমনকি স্থায়ী দাগ পড়ে যেতে পারে। আমাদের হাতে ব্যাকটেরিয়া থাকে, সেই হাতে ব্রণ খোঁচালে খারাপ ধরণের ইনফেকশনও হতে পারে।
৭) তারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেন
বেশী ওজন শুধু হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকিই বাড়ায় না, সেটা ব্রণের প্রকোপও বাড়িয়ে দেয়। ব্যায়াম এবং খাদ্যভ্যাস ঠিক রাখার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন, এতে ব্রণের চিন্তা করতে হবে না।
৮) তারা নিয়মিত চুল পরিষ্কার করেন
আমাদের চুলের গোড়ায় যে তেল উৎপন্ন হয় তা চুলের জন্য ভালো হলেও মুখের ত্বকের জন্য ভালো নয়। তা সহজেই রোমকূপ আটকে ব্রণ তৈরি করতে পারে। মাথা নিয়মিত শ্যাম্পু করলে কপাল এবং হেয়ারলাইনের ত্বক তেলমুক্ত থাকে। চুল স্টাইলিং এর সময়েও ভারী, তৈলাক্ত প্রডাক্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৯) তারা দুগ্ধজাত খাদ্য খান না
গরুর দুধ পান না করলে ব্রণের প্রকোপ কমে যায়। স্কিম মিল্ক পান করাটা ত্বকের জন্য আরো খারাপ। এর বদলে আমন্ড মিল্ক (কাঠবাদাম দুধ) পান করতে পারেন। তাতে আমাদের শরীরের দরকারি সব উপাদান আছে, কিন্তু তা ত্বকের ক্ষতি করে না।
১০) তারা ময়দা এড়িয়ে চলেন
রিফাইনড ফ্লাওয়ার বা সাদা আটা ও ময়দার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশী হবার কারণে তারা ব্রণ হবার পেছনে দায়ী। এগুলোর বদলে আপনি মাল্টি-গ্রেইন ব্রেড, পাস্তা, বাদাম, সবজি খেতে পারেন।
১১) তার মেকআপ শেয়ার করেন না
অন্যকে নিজের মেকআপ ব্যবহার করতে দেওয়া বা অন্যের মেকআপ ধার নেওয়াটা আপনার ত্বকের জন্য ভালো নয়। মেকআপ শেয়ার করা আর ব্যাকটেরিয়া শেয়ার করা একই কথা। দোকানে মেকআপ কিনতে গেলে সেটা আপনার হাতের ত্বকে চেক করুন, কখনোই মুখের ত্বকে ছোঁয়াবেন না।
১২) তারা ধূমপান করেন না
ধূমপান না করার অনেক অনেক কারণ আছে। আরেকটি কারণ হলো, ধূমপান ব্রণের উপদ্রব বাড়ায়। সুতরাং ব্রণ থেকে বাঁচতে চাইলে ধূমপান বন্ধ করুন।
১৩) তারা ত্বককে নিরাপদে রাখেন
দূষণ এবং সূর্যের আলো থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখাটা ব্রণের প্রকোপ কমানোর জন্য জরুরী। সূর্যের আলো ত্বকের ক্ষতি করে, শুকনো করে দেয়। ফলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করাটা জরুরী। শুধু তাই নয়, সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে তা দূষণ থেকেও আপনার ত্বক সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
১৪) তারা ত্বকের যত্ন নেওয়া থামিয়ে দেন না
ত্বক থেকে ব্রণ দূর হলেই সাধারণত আমরা যত্ন নেওয়া বন্ধ করে দিই। কিন্তু তা বড় একটি ভুল। ত্বকের প্রতি অবহেলা দেখালেই আবার ফিরে আসবে ব্রণ। আর ব্রণের জন্য কোন ওষুধ আপনাকে দেওয়া হলে সেটাও ব্যবহার করুন নিয়মমত।
সূত্র: Reader’s Digest
কে এন দেয়া