প্রোস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধির ফলে প্রস্রাব করতে কষ্ট হয়। একে বলে প্রোস্টাটিজম। আর এ ধরনের প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধিকে বলে বিনাইন প্রোস্টেটিক হাইপার প্লাসিয়া বা বিপিএইচ। বিপিএইচ হচ্ছে পুরুষদের সবচেয়ে সাধারণ বিনাইন (বিপজ্জনক নয় এমন) টিউমার। এটি ৫০ বছরের বেশি বয়সী বেশির ভাগ পুরুষের প্রস্রাবসংক্রান্ত কিছু উপসর্গের জন্য দায়ী। ধারণা করা হয় যে ৮০ বছর বয়সে পৌঁছানোর আগেই ২০-৩০ শতাংশ পুরুষের বিপিএইচ’র জন্য মেডিক্যাল অথবা সার্জিক্যাল চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
প্রোস্টাটিজমের কারণ
প্রোস্টেট গ্রন্থি হচ্ছে পুরুষের একটি যৌন গ্রন্থি, যা প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি মূত্রথলির গলার চার দিকে ঘিরে থাকে। দেখতে আখরোটের মতো। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রোস্টেট গ্রন্থিও বড় হতে থাকে। এই নির্দোষ বৃদ্ধির ফলে আখরোটের ভেতরকার ছিদ্রটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যার ফলে প্রস্রাব করতে কষ্ট হয়। এ ধরনের প্রতিবন্ধকতামূলক প্রস্রাবের উপসর্গগুলোকে প্রোস্টাটিজম বলে।
প্রোস্টাটিজমের উপসর্গ
বিপিএইচ’র জন্য প্রতিবন্ধকতামূলক প্রস্রাবের উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রস্রাব করতে দ্বিধাগ্রস্ততা, প্রস্রাবের গতি ও পরিমাণ কমে যাওয়া, প্রস্রাব করার পর মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি না হওয়ার অনুভূতি এবং থেমে থেমে প্রস্রাব হওয়া। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে ঘন ঘন প্রস্রাব করা, রাতের বেলা প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাব করতে প্রবল ইচ্ছা এবং কখনো প্রস্রাব আটকে যাওয়া।
প্রোস্টাটিজম রোগ নির্ণয়
অনেক পুরুষের বিভিন্ন মাত্রার প্রোস্টাটিজম থাকে। সামান্য উপসর্গের মধ্যে থাকতে পারে প্রস্রাব করার সময় মাঝে মধ্যে প্রস্রাবের থলি সম্পূর্ণ খালি না হওয়া; আবার অধিক গুরুতর উপসর্গের মধ্যে থাকতে পারে প্রস্রাবের থলিতে প্রস্রাব সম্পূর্ণ আটকে যাওয়া। আপনার চিকিৎসক আপনাকে প্রশ্ন করতে পারেন যে আপনি কতটা খালি করেন কিংবা তিনি আপনার প্রোস্টাটিজম আছে কি না তা দেখতে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিতে পারেন। তিনি তাৎক্ষণিক আপনার পায়ুপথে আঙুল দিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন এবং রক্ত পরীক্ষা করতে দিতে পারেন প্রোস্টেট ক্যান্সার দেখার জন্য।
প্রোস্টাটিজমের চিকিৎসা
যেহেতু অসংখ্য পুরুষের প্রোস্টাটিজমের কিছু উপসর্গ থাকে, তাই এ সিদ্ধান্ত নেয়া বেশ কঠিন যে কাকে চিকিৎসা দিতে হবে এবং কিভাবে চিকিৎসা দিতে হবে। একবার চিকিৎসা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে প্রথমেই বিবেচনা করতে হবে ট্রান্স ইউরেথ্রাল রিসেকশন অব দ্য প্রোস্টেটের (টিইউআরপি) ব্যাপারে। এটা একটা শল্যচিকিৎসা পদ্ধতি, যা বর্তমানে দীর্ঘদিন ধরে করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মূত্রনালী (লিঙ্গ) দিয়ে একটি নল ঢুকিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী প্রোস্টেট টিসুøর অংশকে কেটে আনা হয়। বছরের পর বছর ধরে এটাই হচ্ছে একমাত্র কার্যকর চিকিৎসা। প্রোস্টাটিজমের জন্য টিইউআরপি হচ্ছে এখন পর্যন্ত চমৎকার চিকিৎসা ব্যবস্থা, যদিও এটার কিছু ঝুঁকি রয়েছে।
সম্প্রতি ওষুধ দিয়েও প্রোস্টাটিজমের চিকিৎসা করা হচ্ছে। এসব নতুন ওষুধের কিছু ওষুধ মূত্রথলির গলাকে শিথিল করে তোলে, অন্য ওষুধ প্রোস্টেট গ্রন্থিকে সঙ্কুচিত করে। সাধারণভাবে এমন ওষুধ কার্যকর, কিন্তু টিইউআরপি’র মতো অতটা কার্যকর নয়।
এখন পর্যন্ত প্রোস্টাটিজমের চিকিৎসায় অন্য পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রোস্টেট গ্রন্থি খুব বেশি বড় হয়ে গেলে ওপেন সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করতে হবে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে পেট কেটে অপারেশন করতে হবে। বর্তমানে লেজার সার্জারির মাধ্যমেও প্রোস্টেটের চিকিৎসা করা হচ্ছে এবং তার ফলাফলও সন্তোষজনক। নতুন আরেকটি পদ্ধতি বেরিয়েছে যার নাম ‘ভ্যাপোরাইজেশন’।
বিপিএইচ’র রোগীদের প্রস্রাব করার সময় এত কষ্ট পাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। অনেক ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। কোন রোগীর জন্য কোন চিকিৎসা প্রযোজ্য হবে, সেটা আপনার চিকিৎসকই নির্ধারণ করবেন।
**************************
ডাঃ মিজানুর রহমান কল্লোল
লেখকঃ জেনারেল ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন। চেম্বারঃ কমপ্যাথ লিমিটেড, ২৫১ এলিফ্যান্ট রোড, কাঁটাবন মোড়, ঢাকা।