১৫ মিনিটের বেশি টিভি দেখলেই ক্ষতি
সম্প্রতি একটি গবেষণায় উঠে এসেছে দিনে ১৫ মিনিটের বেশি টিভি দেখলে সৃজনশীলতা কমে যায় শিশুদের। বিশেষ করে, যে সব শিশু বই পড়ে বা কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে তাদের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে। ১৫ মিনিটের কম সময় যদি টিভি দেখা হয় তবে এতটা ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। এসব তথ্য উঠে এসেছে ব্রিটেনের স্ট্যাফোর্ডশায়ার ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায়। ৩ বছরের ৬০টি শিশুর ওপর এই গবেষণা চালিয়ে গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন, দিনে ১৫ মিনিটের বেশি টিভি দেখলে শিশুদের মধ্যে সৃজনশীলতা কমে যায়।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়টির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক সারা রোজ বলেন, ‘শিশুদের সৃজনশীলতায় টিভি প্রত্যক্ষ প্রভাব নিয়ে আমরা গবেষণা করছিলাম। শিশুদের একটি দলকে ‘পোস্টম্যান প্যাট’ নামে একটি ধারাবাহিকের আধ ঘণ্টার এক একটি পর্ব দেখানো হয়েছিল। অন্যদিকে, আরেক দলকে বই পড়া বা পাজেল সমাধান করতে দেওয়া হয়। এর পর তাদের সৃজনশীলতা পরীক্ষা করি আমরা।’ তাতে দেখা যায়, টিভি দেখার ফলে নিজস্ব ভাবনায় প্রভাব পড়েছে শিশুদের। যদিও সেই প্রভাব সময়ের সঙ্গে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ক্রমাগত এই ঘটনা ঘটতে থাকলে শিশুরা খেলাধুলা বা অন্য কাজে কম সক্রিয় ও সৃজনশীল হয়ে ওঠে, যা তাদের বৃদ্ধিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অনেকে বলেন, ধীরগতির এমন টেলিভিশন কোনও শো-য়ে শিশুদের মধ্যে প্রভাব পড়ে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমরা গবেষণায় তেমন কিছু পাইনি।
বেশি সময় ধরে টেলিভিশন দেখলে শিশুদের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এ অভ্যাসের কারণে পরবর্তী জীবনে তাদের হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অস্ট্রেলিয়ায় চালানো এক গবেষণা ফলাফলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ইউনিভার্সিটি অব সিডনি পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, ছয় থেকে সাত বছর বয়সী যেসব শিশু বেশির ভাগ সময় টিভি দেখে তাদের চোখের পেছনে ধমনি সরু হয়ে যায়। ফলে বয়সকালে তাদের হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। সিডনির ৩৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছয় থেকে সাত বছর বয়সী দেড় হাজার শিক্ষার্থীর পর এ গবেষণা চালানো হয়।
এ গবেষণার গবেষক গোপীনাথ বলেন, ‘গবেষণা ফলাফলের ভিত্তিতে বলা যায়, শৈশবে অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করলে পরবর্তী সময়ে হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়তে পারে। টেলিভিশনের সামনে অতিরিক্ত সময় কাটালে নড়াচড়া কম হয়, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি হয় এবং ওজন বাড়ে। টিভি দেখার পরিমাণ এক ঘণ্টা কমিয়ে যদি খেলাধুলা করা যায়, তাহলে শুয়ে-বসে থাকার ক্ষতিকর দিকটি এড়ানো সম্ভব। মুক্তভাবে খেলাধুলার সুযোগ থাকা উচিত এবং স্কুলগুলোতে সপ্তাহে অন্তত দুই ঘণ্টা শারীরিক কসরত বাধ্যতামূলক করা উচিত।’’ গবেষণা প্রতিবেদনটি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাময়িকীতে ছাপা হয়েছে।
(সূত্র : এএফপি)