ব্রেন পাওয়ার বাড়ানোর নয়া উপায়

0
1304
ব্রেন পাওয়ার বাড়ানোর উপায়

গোলাপ মুনীর:

একটা প্রশ্ন দিয়েই শুরু করা যাক। প্রশ্নটা এমন : যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা দূরবর্তী এক গ্রহ থেকে তিনটি বার্তা পায়। বিজ্ঞানীরা এই বার্তার অর্থ উদ্ধার করে এভাবে- প্রথম বার্তা ‘Necor Buldon Slock’, যার অর্থ ‘Danger Rocket Explosion’, দ্বিতীয় বার্তা ‘Edwan Mynor Necor’, যার অর্থ ‘Danger Spaceship Fire’ এবং তৃতীয় বার্তাটি হচ্ছে ‘Buldon Gimilzor Gondo’, যার অর্থ ‘Bad Gas Explosion’। তাহলে Slock শব্দটির অর্থ কী?

কী কাঠখোট্টা প্রশ্নরে বাবা! এ ধরনের প্রশ্নের সঠিক জবাব পেতে হলে থাকা চাই উচু মাপের আইকিউ। আপনার সে আইকিউ না থাকলে তা বাড়িয়ে তোলা যায়। তা জানার জন্য আসুন আর্মস্টংর কাছে থেকে তার আইকিউ বাড়িয়ে তোলার কাহিনী- তার নিজের ভাষায়।

আমি সেই স্টিভ আর্মস্ট্রং, যে বরাবর ভয় আর ঘৃণা করে আসছি পরীক্ষাকে। পরীক্ষার্থীদের সারি সারি আসন। পরীক্ষা কক্ষে রোগ-জীবাণুনাশকের গন্ধ। বাইরে রোদের ঝলমলে আলো। আর আমি কিনা দক্ষিণ লন্ডনের একটি সুপারভাইজড কাসরুমের ডেস্কে বসে আছি মগজ ঝালাইয়ের জন্য মগজটাকে শাণিত করে তোলার জন্য। এবং আমি কি নিজের ইচ্ছায় এখানে বসি? এর জবাব একটাই : আমার ব্রেন পাওয়ারকে শাণ দিয়ে পৌঁছে দিতে হবে Mensa লেভেলে। হ্যাঁ, এখানে পাঠকদের জানিয়ে রাখি মাত্র সাত দিনে এই স্টিভ আর্মস্ট্রং নামের এই আমিটি ব্রেন পাওয়ার বাড়ানোর নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে আমার ব্রেনকে শাণিত করতে পেরেছিলাম Mensa লেভেল পর্যন্ত।

শিক্ষাবিদ Lancelot Ware আর অদ্ভুত স্বভাবী ব্যারিস্টার Roland Berill -এর মধ্যে ঘটনাচক্রে সাক্ষাৎ হয় ১৯৪৫ সালে। এরাই গড়ে তোলেন Mensa নামের সংগঠন। আইকিউ বাড়িয়ে তোলাই এর কাজ। ‘মেনসা’ হচ্ছে এমন একটি সংগঠন, যা যে কারো জন্য উন্মুক্ত। যারা স্ট্যান্ডারডাইজড আইকিউ টেস্টে সেরা দুই শতাংশের স্কোর করতে পারে তারাই ‘মেনসা’ লেভেলের আইকিউ-এর অধিকারী। শাব্দিক অর্থে Mensa মানে টেবিল। যা-ই হোক, আমি যখন ১৯৮০’র দশকে বেড়ে উঠছিলাম, তখন ‘মেনসা’ নামের এ সংগঠনটি আমার নজর কাড়ে। তখন একটা গুজব ছিল সব ‘মেনসা’ মেম্বারের প্রবেশের সুযোগ ছিল নিউকিয়ার বাঙ্কারে, আর তা তাদের নিরাপদ রাখবে যুদ্ধের সময়। ফলে তখন তাদের উদ্ভব ঘটে দেশটাকে পুনর্গঠনের জন্য।
বিশ্বব্যাপী ১০০টি দেশে রয়েছে ১ লাখের মতো মেনসা মেম্বার। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষের আইকিউ স্কোর বেশি, সেসব মানুষ দীর্ঘজীবী হয়। স্বাস্থ্য থাকে তুলনামূলক ভালো। কম আইকিউ স্কোরধারীদের চেয়ে বেশি আইকিউ স্কোরধারীদের শরীরও হয় বেশ লম্বা। ড. জেমস থমপসন লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের একজন ঊর্ধ্বতন প্রভাষক। পড়ান মনস্তত্ত্ব বিষয়ে। তিনি বলেছেন, উঁচু মাত্রার আইকিউ স্কোরধারীরা দ্রুত শেখার ক্ষমতা রাখে এবং তাদের বেলায় ঝুঁকি কম। এরা প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে দ্রুত। অর্থাৎ এদের রিয়্যাকশন টাইম দ্রুততর। এর ফলে এরা দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কমিয়ে আনতে পারে। থমপসন পুরো মানবগোষ্ঠীকে সাতটি আইকিউ গ্রুপে ভাগ করেছেন। সবচেয়ে নিচে অবস্থানকারী ৫ শতাংশ সমাজে ঠিকভাবে চলেফিরে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, যারা থমপসনের ভাষায় : ‘with a high risk of not functioning in society’। এর পরের ২০ শতাংশের শেখার গতি খুব ধীরগতির। থমপসন এদের বলে ‘slow learners’। মাঝের ৫০ শতাংশ ‘hands-on types, who learn better on the job than in the classroom অর্থাৎ এরা কাসের চেয়ে কাজের মাধ্যমে বেশি শিখতে পারে। এর ওপরের ২০ শতাংশ হচ্ছে ‘potential leader’, যাদের আমরা বলি ‘সম্ভাবনাময় নেতা’। আর তার ওপরের ৫ শতাংশ হচ্ছে ‘successful’ বা ‘সফল’। তারও ওপরের ২ শতাংশ হচ্ছে সেসব মানুষ, যেসব সর্বোত্তম সফল মানুষের সাথে আপনার দেখা মেলে- এরাও সফল মানুষের তালিকায়। আর শীর্ষে অবস্থান নেয়া আইস্কোরধারী ১ শতাংশ, যাদের দু-একজনের দেখা আপনি পেলেও পেতে পারেন। থমপসনের মতে, এরা ভিন্নমাত্রার চিন্তাবিদ- ‘The different thinker’। কিন্তু আমি এদের কোন দলে? আমি কি আমার স্থান নিরাপদ বাঙ্কারে নিশ্চিত করতে পারি?

আরও পড়ুনঃ   প্রতিদিন ডিম খেলে মস্তিষ্কের কি হয় জানেন?

থমপসন আমার জন্য একটা পরীক্ষামূলক ইন্টেলিজেন্সি টেস্ট তথা বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষার আয়োজন করেছিলেন। টেস্টে আমি ভালোই করেছিলাম ভোক্যাবুলারি ও লজিক টেস্টে। কিন্তু পিছে পড়ে যাই গণিতে ও স্থান চেনার ক্ষেত্রে অর্থাৎ স্পেটিয়েল পারসেপশনে। আমার সর্বমোট স্কোর দাঁড়িয়েছিল ১৩০, যা নর্মাল রেঞ্জের তথা স্বাভাবিক মানের ওপরের দিকটায়। স্কোরটা আমার জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। ভাবছিলাম, সামনে আমার জন্য কেয়ামতই অপেক্ষা করছে। আগামী যাচাইয়ের দিনে যদি আমাকে মেনসা-তে ঢুকতে হয়, তবে আমার স্কোর উত্তরণের একটা উপায় বের করতেই হবে। আমি দেখা করলাম লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের বায়োমেডিক্যাল ইমেজিং সেন্টারের ড. মার্ক লিথগোয়ির (Mark Lythgoe) সাথে। তিনি একজন নিউরো-সাইকোলজিস্ট তথা স্নায়ু-মনস্তত্ত্ববিদ। ব্রেনে রক্তপ্রবাহ বিষয়ে আছে তার বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের জ্ঞান। তার বিশ্বাস, যে কেউ মানসিক কসরতের মাধ্যমে নিজেকে চটপটেতর তথা স্মার্টার করে তুলতে পারেন। তিনি বলেন : ‘যখন একজন নিউরোলজিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করি, তখন ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হতো, ব্রেন হাড়ের মতোই অপরিবর্তনীয়। কিন্তু লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, লন্ডনের ক্যাব চালকরা তাদের ব্রেনের উত্তরণ ঘটিয়ে চলেছে। জ্ঞান তাদের নিউরন বাড়িয়ে তুলছে মনের এলাকাটায়, যাতে মেমরি বা স্মরণশক্তি বেড়ে যাচ্ছে- মূলত বাড়ছে তাদের ব্রেন পাওয়ার।

লিথগোয়ির বিশ্বাস, মানসিক কসরত তথা মেন্টাল এক্সারসাইজের মাধ্যমে ব্রেন কিছুটা হলেও ভেতরে নিউরন সৃষ্টির কাজটা শুরু করতে পারে। তিনি এও মনে করেন, খাবার ও অনুশীলনের ভূমিকা রয়েছে এ ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা যা খাই তা যেমনি প্রভাব ফেলে মাংসপেশি ও হাড়ের ওপর, তেমনি প্রভাব ফেলে ব্রেন স্ট্রাকচার বা মগজ কাঠামোতে।
যখন মেনসা আমাকে বলল, আমি সাত দিন সময়ের মধ্যে আবার টেস্টে বসতে পারি, লিথগোয়ি আমাকে ‘Get Smarter in a Week’ প্রোগ্রামের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন। আমাকে এ জন্য প্রতিদিন ১ ঘণ্টা করে ব্রেন এক্সারসাইজ করতে হবে। তবে তা একটানা ১ ঘণ্টা ধরে চালিয়ে যাওয়া চলবে না, একবারে ১ ঘণ্টা ডেস্কে বসে এ অনুশীলন করা যাবে না। বরং তা সময়টাকে ভেঙে কয়েক ভাগে ভাগ করে চলবে এ অনুশীলন- এ অনুশীলন চলতে পারে কাজে যাওয়ার পথে কিংবা একটা জিমন্যাসিয়ামে।

শনিবারে আমাকে দাঁত মাজতে হয়েছে ‘ভুল’ হাতে এবং চোখ বন্ধ করে দাঁড়াতে হয়েছে পানির ঝর্ণার নিচে। রোববারে সমাধান করি সোডোকু পাজেল, এরপর কিছুটা হাঁটাহাঁটি। সোমবারের রাতে খাই তেলযুক্ত মাছ এবং কাজে যাই। মঙ্গলবারে আমাকে বাছাই করতে হয় অপরিচিত কিছু শব্দ। শব্দগুলো নিই অভিধান থেকে এবং এগুলো ব্যবহার করি কথোপকথনে। বুধবারে সেরে নিই কিছু যোগ ব্যায়াম কিংবা মেডিটেশন কাস এবং কথা বলি কিছু অপরিচিতজনের সাথে। বৃহস্পতিবারটা যায় আয়েশে, নতুন পথে যাই কাজে এবং কাউন্ট ডাউন দেখি। শুক্রবারটা ছিল আমার পরীক্ষার আগের দিন। এদিন এড়িয়ে চলি ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল বা মাদকদ্রব্য এবং স্মরণে নেই আমার বাজারের তালিকা।

আরও পড়ুনঃ   অচেতন রোগী ঘরে, কি করি তার তরে

আমি একটি modafinil নামের একটা ওষুধও খুঁজে নিই- এ ওষুধটিকে বর্ণনা করা হতো ‘wakefulness promoter’ হিসেবে। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড্যানিয়েলে টার্নার ব্যবহার করেন একটি কম্পিউটারায়িত ইন্টেলিজেন্সি টেস্ট। এতে সংশ্লিষ্ট আছে চলমান রঙিন বল কল্পনা করে পাঁচটি মুভ বা চলের মাধ্যমে কনফিগার করা। ভলান্টিয়ারকে যত বেশি মুভ বা চাল দিয়ে কাজটি করতে হয়, তখন তার ভুলের সংখ্যাও তত বেশি। কিন্তু যখন ড্যানিয়েলি টার্নার তাদেরকে modafinil-এর মাত্রা যত বাড়িয়ে দেন, তখন কাজটা তাদের কাছে সহজতর হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘তখন আপনি দেখবেন তাদের পারফরম্যান্স তথা কর্মক্ষমতা বা সফলতা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়।’

যুক্তরাজ্যে modafinil বাণিজ্যিক হিসেবে Provigil নামে পরিচিত। চিকি ৎসকরা narcolepsy বা ঘুম রোগ সারাতে মাঝে মধ্যে এই প্রভিজিল ব্যবহারের পরামর্শ দেন। আমি সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন ১০০ মিলিগ্রামের ডোজ নিয়েছিলাম।
এলো পরীক্ষার দিন আমাকে দু’টি পরীক্ষা দিতে হলো- এতে ছিল ধ্রুপদ শব্দ, সংখ্যা ও যুক্তিসংশ্লিষ্ট প্রশ্ন। এর কালচার ফেয়ার আয়োজন করা হয়েছিল অ-ইংরেজি ভাষাভাষীদের জন্য। এর ধরন-ধারনটা ছিল কঠিন। ছিল কঠিন ধরনের আকার বা শেপ (shape)। আমি প্রচুর পানি পান করছিলাম। খাচ্ছিলাম স্বাস্থ্যকর খাবার। প্রতিদিন পান করছিলাম তিন ইউনিটের চেয়েও কম। মনে হলো আমি তৈরি।

প্রথমেই ছিল ‘কালচার ফেয়ার টেস্ট’। একটি সিকোয়েন্সে বা ধারাক্রমে পরবর্তী শেপ বা আকারটা বেছে নেয়ার কাজটাই ছিল বেশি। অথবা প্রশ্ন ছিল বিভিন্ন শেপ বা আকারের মধ্যে সম্পর্ক সংজ্ঞায়ন। Cattell III ই পরীক্ষাটি ছিল যথেষ্ট যন্ত্রণাদায়ক অর্থাৎ বিরক্তিকর। ধীরে ধীরে যত সামনে যাচ্ছি, প্রশ্ন ততই কঠিন থেকে কঠিনতর হতে লাগল। আমি প্রতিটি ক্যাটাগরি বা ধরনের প্রশ্নে কমপক্ষে একটা অজানা প্রশ্ন পেতে লাগলাম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আন্দাজের ওপর ভর করে এলোপাতাড়ি উত্তর দিয়ে সর্বোত্তম জবাবটাই আশা করতে লাগলাম। পাশাপাশি নতুন করে পাওয়া আমার মনোযোগ-শক্তি বা কনসেনট্রেশন স্ট্যামিনার জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছিলাম modafinil-কে।

পরীক্ষার ফল পেতে সময় নেয় ঠিক এক সপ্তাহ। Cattell III ই স্কেলে আমার মার্ক ছিল ১৫১ আর ‘কালচার ফেয়ার’-এ ১৩৩। দু’টি মিলে স্কোর গিয়ে উঠল ‘টপ-টু’ তথা সেরা- দুই শতাংশের গ্রুপের ঘরে। আমি তা অর্জনে সক্ষম হলাম।
লিথগোয়ি যেন হয়ে উঠলেন বিজয়ী। আমাকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘তুমি যেভাবে আইকিউ’ টেস্টে ভালো করলে, তা থেকে প্রমাণ হলো আইকিউ টেস্টে আসলেই তুমি কতটা তুখোড়’। তিনি আরও বললেন, ‘আমরা যে প্রোগ্রামের পরামর্শ দিয়েছিলাম, তা সংখ্যা নিয়ে অনুশীলন সহায়ক ভূমিকা পালন করে, বাড়িয়ে তোলে তোমার মেমরি বা স্মরণ ক্ষমতা। তোমাকে সক্ষম করে তুলবে আরও সৃজনশীল উপায়ে চিন্তাভাবনা করার। যখন তুমি দ্বিতীয় পরীা দিতে গিয়েছিলে, তখন তুমি ছিলে আরও ভালো করে প্রস্তুত।’
আমি যখন ফোন করে মেনসা-কে বলি, আমি মেনসা-তে যোগ দিতে আগ্রহী, আমি তাদের কাছে জানতে চাইলাম নিউকিয়ার বাঙ্কার (nuclear bunker) কী? একটু বিব্রত হয়ে Caroline Garbett আমাকে প্রশ্ন করেন : ‘বাঙ্কার?’। তিনি মেনসার কমিউনিকেশন ম্যানেজার। তিনি বললেন : ‘আমাদের কোনো বাঙ্কার নেই। আমাদের কোনো স্টাফকেও এ সম্পর্কে কিছু কাউকে বলতে বলিনি। এটা একটা ‘ইলিউশন’ বা বিভ্রান্তি। এ বিভ্রান্তি ভেঙে ফেলতে হবে।

আরও পড়ুনঃ   মস্তিষ্কের অসুখ স্ট্রোক

শাণিত করুন আপনার ব্রেন

বাড়িয়ে তুলুন স্মরণ ক্ষমতা : আপনি আজকের দিনে করবেন এমন ১০টি বা ততোধিক কাজের একটা ‘করণীয় তালিকা’ বা ‘to do list’ স্মরণে রাখুন অর্থাৎ কাগজে না লিখে তা মুখস্থ করে রাখুন। এটা আপনার স্মরণ ক্ষমতা তথা মেমরি বাড়ানোর একটা উপায়। এই হতে পারে, এ করণীয় তালিকাটি স্মরণে আনতে চেষ্টা করবেন কাজে যাওয়ার সময়, কিংবা খেলতে যাওয়ার সময়- তখন মনে মনে একটা সংযোগ গড়ে তুলতে চেষ্টা করবে কাজ ও কাজের স্থানটির মধ্যে। যেমন সংবাদপত্র কিনতে হবে সংবাদপত্রের দোকান থেকে, সড়কের কিনারের দোকানটায় কাপড় দিয়ে যেতে হবে ড্রাই কিনিংয়ের জন্য, কাফের বাইরে থেকে বাড়িতে ফোন করতে হবে ইত্যাদি।

তখন নিজেকে এসব প্রশ্ন করুন :
সংবাদপত্র কেনার পর কোন কাজটা করতে হবে? বাড়িতে ফোন করার আগে কোন কাজটা করতে হবে? করণীয় তালিকার দ্বিতীয় কাজ কোনটি? ড্রাই কিনারের বিষয়টি তালিকার কত নম্বর স্থানে আছে? পরদিন বের হন ২০টি কাজের তালিকা মুখস্থ করে বা স্মরণে রেখে। এভাবে ধীরে ধীরে তালিকা দীর্ঘ করতে পারেন দিন দিন। দেখবেন একইভাবে বাড়ছে আপনার স্মরণশক্তি।
স্থান-সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়ান : ঘরে বসে চোখ বন্ধ করে ভাবুন কোথায় কোন পথে যেতে হবে। একটি চেয়ারে বসে মানসিকভাবে আপনার বাড়ির চার পাশে ঘুরুন। চলার সময় মনে মনে প্রতিটি দৃশ্যমান বস্তু দেখুন। অতএব একটা ট্রে’র মাঝে ১২টি বস্তু রেখে এগুলোর অবস্থান মনে রাখতে চেষ্টা করুন। তখন কাউকে বলুন এর কয়েকটি সরিয়ে ফেলতে। আন্দাজ করুন কোনগুলো সারিয়ে ফেলা হয়েছে। এতে করে আপনার স্থান-সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়বে।

বেশি থেকে বেশি সংখ্যা নিয়ে চর্চা করুন :
প্রতিদিন এ অনুশীলন চালিয়ে যান। আপনার কেনা সামগ্রীর দাম পরিশোধের আগে মনে মনে যোগ করে ফেলুন। বিলগুলি হাতে পেলে সেগুলোকে আলাদা আলাদা ভাগ করে মিলিয়ে নিন। কতগুলো জিনিস পেছনে ফেলে এলেন তার সংখ্যা আন্দাজ করুন- যেমনি কতটা গাছ পেছনে ফেলে এলেন, কিংবা কতজন মানুষের একটি দল। কিংবা একটা বাগানে আছে কতগুলো গাছ। আপনার মনকে সব সময় কর্মতৎপর কিংবা চটপটে রাখলে এবং সব সময় সচল রাখলে সংখ্যাগত বিষয় নিয়ে, তাহলে আপনার গাণিতিক তীèতা আর প্রজ্ঞা বাড়বে।

বাড়িয়ে তুলুন শব্দক্ষমতা :
যতটুকু সম্ভব আপনার ওয়ার্ড পাওয়ার বা শব্দক্ষমতা বাড়িয়ে তুলুন। শব্দের খেলা খেলুন ও দেখুন। সময় ধরে এ খেলায় মাতুন। প্রতিদিন কিছু নতুন শব্দ শিখুন এবং তা সুযোগ পেলেই মাঝে মধ্যে ব্যবহার করুন। তৈরি করুন শব্দের অ্যানাগ্রাম। একট শব্দের বা বাক্যাংশের বর্ণগুলো পরিবর্তন করে নতুন ভিন্ন শব্দ বা বাক্যাংশ গঠনের নাম অ্যানাগ্রাম। একটা দিন কাটিয়ে দিন না শব্দ নিয়ে নানা বিশৃঙ্খলার ওপর কাজ করতে। এতে করে একটা শব্দের অর্থ বোঝার ক্ষমতা আপনার বেড়ে যাবে।

বাচ্চার মেধাশক্তি বাড়াবেন কিভাবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

19 − twelve =