কোন অসুখে কী খাবেন

0
851
কোন অসুখে কী খাবেন

ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল:

অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধে খাবার হলো ছদ্মবেশী যথার্থ ওষুধ। যদিও মারাত্মক অসুস্থতায় চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে, কিন্তু ছোটখাটো স্বাস্থ্য সমস্যায় খাবার হলো প্রাকৃতিক চিকিৎসাব্যবস্থা। এতে খরচও খুব কম হয়, আবার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও খুব কম। একই সাথে আপনি পাবেন পর্যাপ্ত পুষ্টি।

সাধারণ সর্দিকাশি
গবেষণায় দেখা গেছে, মুরগির সুপ প্রদাহ কমানোর মাধ্যমে সাধারণ সর্দি-কাশিকে প্রতিহত করতে পারে। এ ছাড়া পিপারমেন্ট চা, যার মধ্যে রয়েছে মেনথল, সেটা নাক বন্ধ হওয়াকে পরিষ্কার করতে পারে। ভিটামিন-সি নিয়ে যদিও কিছুটা মতভেদ রয়েছে তবু অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সাধারণ সর্দি-কাশিতে ভিটামিন-সি বেশ ভালো কাজ করে। কমলার রস, মোসাম্বি, গরম লেবু চা প্রভৃতি থেকে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় ভিটামিন-সি পেতে পারেন।

প্রাক-মাসিক সিনড্রোম
আপনি কি খুব কম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করেন? এ কারণে আপনার প্রাক-মাসিক সিনড্রোমের উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মহিলা দৈনিক তাদের খাবারের সঙ্গে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করেছেন তাদের তিনটি মাসিক চক্র ব্যথামুক্ত হয়েছে, তাদের তলপেট কামড়ায়নি, পায়ে পানি জমেনি। তাই নিয়মিত ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে প্রাক-মাসিক সিনড্রোম থেকে দূরে থাকুন।

প্রস্রাবের সংক্রমণ
যদি আপনার প্রস্রাবে খুব খারাপ সংক্রমণ হয়ে থাকে তাহলে আপনি এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করবেন। কিন্তু আবার যাতে সংক্রমণ না হয় সে জন্য আপনি কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রস্রাবের সংক্রমণ প্রতিরোধের ভালো উপায় হলো কালো ও নীল জাম খাওয়া এবং প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব জাম প্রস্রাবের রাস্তার টিস্যুতে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিহত করে।
ব্যথা
টক স্বাদের লাল চেরি আপনাকে ব্যথামুক্ত রাখতে পারে। প্রায় ২০টা চেরি ফলে রয়েছে ওই পরিমাণ অ্যাসপিরিন কিংবা আইবুপ্রোফেনের মতো প্রদাহবিরোধী ক্ষমতা। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষণা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। যদি আপনি টাটকা লাল চেরি না পান তাহলে টিনজাত লাল চেরি গ্রহণ করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ   কোন ডিমে পুষ্টি বেশি?

কোষ্ঠকাঠিন্য
আপনার তন্ত্রকে উজ্জীবিত রাখতে অদ্রবণীয় আঁশ যেমন ভুসিযুক্ত খাদ্যশস্য, সম্পূর্ণ খাদ্যশস্যের রুটি গ্রহণের পরিমাণ বাড়াবেন। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে তিসির বিচি খুবই কার্যকর। বিভিন্ন ধরনের শিম ও কলাতেও প্রচুর আঁশ রয়েছে, সেগুলো খেতে পারেন। প্রচুর পরিমাণ পানি পান করবেনÑ দিনে কমপক্ষে আট গ্লাস এবং খাবারের পরে কয়েক টুকরো আনারস খাবেন; এতে রয়েছে ব্রমেলেইন নামক এনজাইম যা দৈনন্দিন কোষ্ঠ পরিষ্কারে সহায়তা করে।

প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি
পেয়ারা খাওয়ার অভ্যাস করুন। কিংবা তরমুজ খান। এসব ফলে রয়েছে ফ্রুকটোজ, যা প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধিকে প্রতিহত করতে পারে। কিভাবে প্রতিহত করে? ফ্রুকটোজ আপনার শরীরের ফসফেটের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আর প্রচুর পরিমাণ ফসফেট আপনার ১, ২৫-(ও এইচ) ২ডি নামক রাসায়নিক উপাদানের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। এই রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং আপনি যদি নিয়মিত পেয়ারা কিংবা তরমুজ খান তাহলে এসব ফলে বিদ্যমান ফ্রুকটোজ আপনার ফসফেট মাত্রাকে কমাবে, একই সঙ্গে কমবে আপনার প্রোস্টেটের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ এবং সেই সঙ্গে কমে যাবে আপনার প্রোস্টেটের বৃদ্ধি।
যেকোনো আঁশই ভালো আঁশ, কিন্তু দ্রবণীয় আঁশ (যা পাওয়া যায় যব ও শিমে) আপনার প্রোস্টেটের জন্য ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পুরুষ প্রচুর পরিমাণ দ্রবণীয় আঁশ খান তাদের প্রোস্টেট স্পেসিফিক এন্টিজেন বা পিএসএ’র মাত্রা কম থাকে। দ্রবণীয় আঁশ ক্ষতিকর স্টেরয়েড পরিষ্কার করার মাধ্যমে পিএসএ-কে কমাতে সাহায্য করে। এই পিএসএ প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি এবং প্রোস্টেট গ্রন্থির ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সুতরাং আজ থেকেই দ্রবণীয় আঁশ খাওয়া শুরু করুন।

হার্ট অ্যাটাক
দৈনিক একটি করে জাম খান। কালো বা নীল জামে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন-সি। দৈনিক একটি করে পেয়ারা কিংবা কয়েকটা আমলকী খেতে পারেন। এগুলোতেও রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-সি। গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে উচ্চমাত্রার ভিটামিন-সি আপনার রক্তনালীগুলোর কাজের উন্নয়ন ঘটিয়ে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুনঃ   জেনে নিন মানুষের শরীর সম্পর্কিত কিছু বিস্ময়কর তথ্য

ফুসফুসের ক্যান্সার
শরবতি লেবু বা মোসাম্বি লেবু খান। জার্নাল অব দ্য ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব লোক ঘন ঘন টকজাতীয় ফল খেয়েছেন তাদের ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি অর্ধেক কমে গেছে। শরবতি বা মোসাম্বি লেবু, বিশেষ করে সাদা ধরনের লেবুতে নারিংগিন নামক জৈব রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা ক্যান্সার উৎপন্নকারী এনজাইমের মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে।

দাঁতের সমস্যা
ভিটামিন-কে গ্রহণ করুন। এটা আপনার রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, যার কারণে রুট ক্যানেলের পর আপনার মাঢ়ির গর্ত ভরে আসবে। সবুজ শাকসবজিতে ভিটামিন-কে রয়েছে। কিন্তু যেহেতু আপনি চিবিয়ে খেতে পারবেন না সে কারণে এ সময় আপনি শাকসবজির রস পান করবেন।
সয়াবিন আপনার অপারেশন-পরবর্তী ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। গবেষকরা দেখেছেন, অপারেশনের পর সয়া প্রোটিন খেলে উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যথা কমে যায়।

অনিদ্রা
খোলসওয়ালা চিনাবাদাম অথবা পেস্তা খান। এর চর্বি আপনাকে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করবে। ইংল্যান্ডের গবেষকরা দেখেছেন, যেসব লোকের খাবারে সামান্য চর্বি দেয়া হয়েছে তারা ওই সব লোকের চেয়ে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েছেন, সেসব লোকের খাবারে লবণ বা চিনি দেয়া হয়েছিল।

সুস্বাস্থ্য লাভের উপায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen − 3 =