হোমিওপ্যাথি ।। মুখের ঘা অ্যাপথাস আলসার নিরাময়ে

0
5395
হোমিওপ্যাথি ,মুখের ঘা, অ্যাপথাস আলসার

আমাদের মাঝে কারও কারও প্রায়ই দেখা যায় যে মুখের ভেতরে বিশেষ করে গালের ভেতর দিকে, মাড়িতে, জিহ্বায়, মুখের তালুতে, ঠোঁটের ভেতরে ব্যাথাযুক্ত ক্ষত বা ঘা সৃষ্টি হয়। এগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজে থেকেই ভাল হয়ে যায়। তবে যে ক’দিন থাকে সে ক’দিন রোগীকে বেশ অস্বস্তি ও যন্ত্রণার মধ্যে থাকতে হয়। রোগটি কিন্তু একেবারে ভাল হয়ে যায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আবার এর আবির্ভাব ঘটতে পারে। একমাত্র ভুক্তভোগীদেরই এ ব্যাপারে বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে শতকরা দশভাগ লোকের এ সমস্যা থাকতে পারে। এটি হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমা নেই, যেকোনো বয়সেই হতে পারে। তবে সাধারণত দশ থেকে চল্লিশ বছর বয়সের মধ্যেই বেশি দেখা যায়।

অতিরিক্ত ধূমপান, খুব গরম জিনিস পান বা চুনের মত ক্ষারদ্রব্য লেগে গিয়ে অথবা ‘সিফিলিস’ প্রভৃতি কারণেও মুখের ভিতর ক্ষত বা ঘা সৃষ্টি হয়। পাকস্থলীর অজীর্ন দোষ এবং মুখব্যাদান করে শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়াবশতঃ এ রোগ হতে পারে। এ সকল স্থানীয় অবস্থাদি ব্যতীত ‘আয়োডিন’, ‘আর্সেনিক’ ‘মার্কারি’ প্রভৃতির ওষুধের অপব্যবহারের জন্যও মুখমধ্য প্রদাহের উৎপত্তি হয়ে থাকে। যাদের বার বার এ সমস্যা দেখা দেয় তাদের ক্ষেত্রে দাঁতের কামড় বা দাঁত দিয়ে আঘাতের ফলেও এ সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিক হওয়ার আগেও এর আধিক্য দেখা যেতে পারে। আবার গর্ভাবস্থার শেষ দিকে ভাল হয়ে যাওয়ার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়।

যাদের বারবার মুখের এই ঘা হওয়ার প্রবণতা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে রোগটির প্রক্রিয়াকে চারটি ধাপে বিভক্ত করা যায়। প্রথম ধাপের সময়কাল চব্বিশ ঘণ্টা। এ সময়ে শিরশিরে, টানটান, জ্বালাপোড়া, ব্যথা, অতিরিক্ত অতি অনুভূতি ইত্যাদি জাতীয় অনুভূতি থাকতে পারে রোগীর কিন্তু বাহ্যিক কোনো ঘা, ক্ষত বা কোনো লক্ষণ থাকবে না। দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে আলসার পূর্ব ধাপ। এ ধাপের সময়কাল আঠার ঘণ্টা থেকে তিনদিন পর্যন্ত হতে পারে। এ সময় ব্যক্তিভেদে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সবার ক্ষেত্রেই কমবেশি ব্যথা থাকবে। তৃতীয় বা আলসার ধাপের সময়কাল এক থেকে ষোল দিন পর্যন্ত। এ সময় অল্প উঁচু অথবা এলাকার সমান অবস্থায় ক্ষত দেখা দেবে এবং তার চারপাশে লাল বৃত্তাকার এলাকায় সৃষ্টি হবে যা পরবর্তী সময়ে ধূসর অথবা হলুদ আবরণ ক্ষতের ওপর পড়বে। এ সময় আক্রান্ত এলাকায় প্রচণ্ড ব্যথা থাকবে এবং ঘা সৃষ্টির ২/৩ দিন পরেও ব্যথা থাকবে। চতুর্থ বা শেষ ধাপের সময়কাল হচ্ছে চার থেকে পঁয়ত্রিশ দিন পর্যন্ত। এ সময় প্রাকৃতিক নিয়মে ঘা শুকিয়ে যাবে। প্রতি তিনজন রোগীর দু’জনের ক্ষেত্রে দেখা যায় পনের দিনের মধ্যেই রোগ সেরে যায়। অন্যদিকে এক জনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত এর পুনরাবৃত্তি হতে পারে। যেসব রোগীর ক্ষেত্রে হালকা ক্ষত বা ঘা সৃষ্টি হয় তারা গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয় এমন রোগীদের তুলনায় তাড়াতাড়ি আরোগ্য লাভ করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ   এক্টিভেটেড চারকোল (কার্বন) কী? ত্বকের যত্নে অ্যাক্টিভেটেড চারকোল / কার্বনের ব্যবহার জেনে নিন

একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে রোগের প্রথম দু’তিন দিন আক্রান্ত এলাকায় প্রচণ্ড ব্যথা থাকবে এবং এর ফলে খাওয়া দাওয়া ও কথা বলায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে। আক্রান্ত এলাকার সংখ্যা একও হতে পারে আবার অনেকও হতে পরে। মুখের এ ধরনের ঘা বা ক্ষতের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকতে পারে এমন অনেক রোগের বেলায়ও এমন ঘা দেখা যেতে পারে। যেমন. ভাইরাসজনিত জ্বর ঠোসা রোগের ক্ষেত্রে, . ক্যানডিডা জাতীয় রোগ, . আঘাতজনিত ক্ষতের বেলায়, . রক্তের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিকারী কোষের স্বল্পতা রোগের ক্ষেত্রে, . ভিটামিন বি১২ অথবা ফলেট জাতীয় ভিটামিনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতায়, . আয়রনের অভাবজনিত এবং ৭. আরও কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে।

হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান: রোগের কারণ দূর করার চেষ্টা করতে হবে। স্থানীয় প্রদাহ নিবারণ করার জন্য আভ্যন্তরিক ওষুধ সেবন ছাড়া কোনো প্রকার মুখ ধোয়ার ওষুধ ব্যবহার করবেন না। অসুবিধে হলে রোগীকে শুধু দুধ বার্লি, দুধসাগু প্রভৃতি তরল দ্রব্য পান করিয়ে রাখতে হবে। তা নাহলে দুধভাত, হালুয়া প্রভৃতির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। লক্ষণ সাদৃশ্যে-নিম্নলিখিত ওষুধ প্রয়োগ করে এই রোগ দ্রুত আরোগ্য করা যায়। যথা- ১. মার্কুরিয়াস, ২. নেট্রাম মিউর, ৩. ক্যালি মিউর, ৪. নাইট্রিক অ্যাসিড, ৫. হিসার সালফার, ৬. রাসটক্স, ৭. বোরাক্স, ৮. আর্সেনিক, ৯. সাইলিসিয়া, ১০. কার্রোভেজ, ১১. সিকেলি, ১২. লাইকোপোডিয়াম, ১৩. নাক্সভমিকা উল্লেখযোগ্য। তারপরও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে ওষুধ সেবন করা উচিত।

ডা. প্রধীর রঞ্জন নাথ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × 3 =