হারবাল উপায়ে রূপ চর্চা সম্পর্কে জেনে নিন

0
1049
হারবাল, রূপ চর্চা

যুগ যুগ ধরে সৌন্দর্য চর্চায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে হারবাল। কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনী আপনাকে সুন্দর করে তুললেও এর কমবেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা স্বীকার করেন অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই। তবে ভেষজ উপাদান কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই প্রকৃত সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে আপনাকে করবে মোহনীয়। হারবাল রূপচর্চার নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন রূপ বিশেষজ্ঞ হাসিনা মমতাজ

ত্বকের হারবাল যত্ন


ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করার বিকল্প নেই। মুখ ধোয়ার জন্য কেমিক্যালযুক্ত ক্লিনজিং মিল্ক ব্যবহার না করে হারবাল উপায়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারি। এক্ষেত্রে দুই চাচামচ দুধের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর তাতে তুলা ভিজিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। ত্বক পরিষ্কার করার জন্য দুধ ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে তুলা ভিজিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে হলুদ বাটা ও চন্দনের গুঁড়া মিশিয়ে লাগান।
পাকা পেঁপে ময়েশ্চারাইজের কাজ করে। স্বাভাবিক ত্বকের যত্নে কাঁচা পেঁপের কষ, চন্দন গুঁড়া, গোলাপজলে মিশিয়ে মুখে লাগান। তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে দইয়ের সঙ্গে লেবুর রস মিলিয়ে সারা মুখে মেখে রাখুন। কয়েক মিনিট পর ভেজা তুলা দিয়ে মুছে ফেলুন। গোলাপ, পুদিনা, আমলা, বাঁধাকপি ও শসার নির্যাস একসঙ্গে মিশিয়ে টোনার তৈরি করে মুখে লাগালে তা ত্বককে মসৃণ করে তোলে। ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনার জন্য আমন্ড, বাদামি গোলাপের পাপড়ি এবং দুধের সর দিয়ে বেটে মুখে লাগান। ত্বককে টানটান করার জন্য ত্বকে লেবুর খোসা ঘষুন। লেবুর খোসায় উপস্থিত অ্যাস্টিনজেন্ট লোমকূপ বন্ধ করে ত্বককে টানটান করে।


ত্বকে যদি অন্য রকম এক আভা নিয়ে আসতে চান তাহলে মসুর ডাল বাটা, নিমপাতা বাটা, কাঁচা হলুদ বাটা, দই, মধু একসঙ্গে মিশিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক উজ্জ্বল করার জন্য এক কাপ ফোটানো দুধে অর্ধেক লেবুর রস দিন। এতে আধা চাচামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে দিন। রাতে শোয়ার আগে এটি মুখে ও হাতেপায়ে মেখে নিন।

আরও পড়ুনঃ   মাত্র ১৫ মিনিটে ফর্সা-উজ্জ্বল চেহারা


বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে তার ছাপ পড়তে থাকে। বয়স ধরে রাখতে হারবালের কোনো জুড়ি নেই। মুখে বয়সের ছাপ কমাতে চাইলে প্রতিদিন ডাবের পানিতে লেবুর রস দিয়ে পান করুন। যাদের মোটা শরীর তারা দেহের চর্বি কমাতে এক গ্লাস পানিতে একটি পুরো পাকা লেবুর রস এবং চার চাচামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন।


ব্রণের সমস্যা ত্বকের সৌন্দর্য পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়। যারা ব্রণের সমস্যায় ভোগেন তারা নিমপাতা পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি ও চন্দন বাটা মুখে প্রলেপ দিন। আধা ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহখানেক এভাবে করলে ব্রণ পুরোপুরি চলে যাবে। তবে অনেকে নিমপাতা বেটে মুখে লাগান। এতে ত্বক কালো হয়ে যায়। ব্রণের সমস্যায় কচি মুলার রস ও সামান্য নিমপাতা সেদ্ধ পানি তুলার সাহায্যে ত্বকে লাগান। অনেকের মুখেই কালো কালো দাগ দেখা যায় যা সৌন্দর্যহানি ঘটায়। ১ চাচামচ ধনিয়ার রসের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে সারা রাত মুখে লাগিয়ে রেখে দিন। সকালে উঠে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটায় পুরো মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন কয়েক দিন ব্যবহারেই উপকার পাচ্ছেন। অনেকে মেছতা সমস্যায় ভোগেন। মেছতা সমস্যা একমাত্র হারবাল পদ্ধতিতেই পুরোপুরি ঠিক হয়। যাদের মুখে মেছতা আছে তারা ১ চাচামচ সাদা জিরা গুঁড়া, ১ চাচামচ হলুদ গুঁড়া, ১ চাচামচ সরষে গুঁড়া ও ১ চাচামচ আটা মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মেছতার ওপর লাগান। বিশ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। মুখে ক্লান্তির ছাপ কাটাতে চন্দন বাটা, তুলসী বাটা গোলাপজলে মিশিয়ে গলায় ও মুখে লাগান। দেখবেন ত্বক উজ্জ্বল হয়ে গেছে।


মরা কোষ উঠানোর জন্য প্রয়োজন স্ক্রাবার। ভেষজ উপাদান দিয়েই স্ক্রাবিং করা যায়। এজন্য ১ চাচামচ করে আতপ চালের গুঁড়া, মধু, মেথি, মসুর ডাল বাটা, কাঁচা হলুদ বাটা, চন্দন বাটা ডাবের পানির সঙ্গে মিশিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে রাখুন। বিশপঁচিশ মিনিট পর তা ধুয়ে ফেলুন। ত্বককে মসৃণ করার জন্য ১ কেজি পরিমাণ মসুর ডাল গুঁড়া করে তাতে আধা টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়া, শুকনো পোলাপ পাপড়ি গুঁড়া, চার টেবিল চামচ বেসন মিশিয়ে নিন। এ মিশ্রণটি গোলাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে আপনি মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এ মাস্কটি মুখে ও গলায় লাগিয়ে পনের মিনিট শুয়ে থাকুন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সমপরিমাণ ভিনেগার ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে পানি দিয়ে পাতলা করে নিয়ে ত্বকে টোনার হিসেবে ব্যবহার করুন। মুলতানি মাটি, গোলাপজল ও চন্দন গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। বিশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এ উপকরণটি সব ধরনের ত্বকের জন্যই উপযোগী।

আরও পড়ুনঃ   ডিমের খোসায় লুকিয়ে রয়েছে ত্বকের সৌন্দর্যের চাবিকাঠি!


চুলের সৌন্দর্যে হারবাল


ত্বক যতই সুন্দর হোক না কেন চুল যদি হয় উস্কোখুস্কো তবে সব সাজসজ্জাই মাটি হয়ে যাবে। আর তাই চুল সুন্দর করতে প্রয়োজন নিয়মিত যত্ন। চুলকে মসৃণ করতে কচি আমলকীর রস ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে মাথায় ৪০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিন। চুল কালো করতে চাইলে জবা ফুলের রস লাগান। পুষ্ট ও ঝলমলে চুলের জন্য পাকা কুমড়ার বীজ চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। পাকা কুমড়ার বীজ শুকিয়ে বায়ু নিরোধক পাত্রে রেখে দিন এবং মাঝেমধ্যে চিবিয়ে খান। চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে পেঁয়াজের রস পুরো মাথায় লাগান। শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু করে ফেলুন।


শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে আপনি চুলে রিঠা ব্যবহার করতে পারেন। এক মুঠো রিঠা সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি ফুটিয়ে নিন। তারপর তা চুলে শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করুন। মসুর ডাল বাটার সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে চুলে প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আধা ঘণ্টা মাথায় রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল সতেজ হবে। এছাড়া সারা রাত মেথি ও কয়েকটা কাঁচা আমলকী পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন তা বেটে চুলে লাগান। চুল ঝরঝরে করার জন্য মেহেদি, আমলকী, টকদই ও ডিম ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে মাখুন এবং এক ঘণ্টা পর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুলের প্রোটিন ট্রিটমেন্টের জন্য ডিমের সাদা অংশ ফেটে তাতে মেথি গুঁড়া মিশিয়ে চুলে লাগান।

fastaidbd

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 × 4 =