কল্পনা করুন খুবই আকর্ষনীয় এবং ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন একজন নারী। কিন্তু যখনই তিনি হাতটি উপরে তুললেন, তখন তার নখের ধরণ দেখে তার প্রতি জন্ম নেয় ইতিবাচক ধারণা নেতিবাচকে পরিণত হলো। তার ময়লা এবং বিবর্ণ নখ অযত্ন এবং অজ্ঞতারই পরিচয় বহন করে। এটি যে শুধু সৌন্দর্যহানীকর তা নয়, অস্বাস্থ্যকরও বটে।
একই কথা খাটে পায়ের নখের ক্ষেত্রে। এর যত্নে অবহেলা আপনার ব্যক্তিত্ব খর্ব করার জন্য যথেষ্ট। সুতরাং আপনার মুখ এবং ত্বকের যত্ন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, সমানভাবে নখের দিকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে। আর এই জন্য দেখে নিন আকর্ষণীয় সুন্দর নখ পেতে হলে যা করবেন আপনি।
১/ ধরণ সম্পর্কে জানলে ঠিকমতো নখের যত্ন নেওয়া সম্ভব। এতে করে ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যায়। ভঙ্গুর, শুষ্ক, নরম ও সাধারণ নখের জন্য আলাদা ধরণের যত্নের প্রয়োজন রয়েছে।শুষ্ক নখের জন্য দিনে অন্তত ১ বার অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করুন। ভঙ্গুর নখে ময়েশ্চারাইজারের অভাব থাকায় দরকার বিশেষ যত্নের। তাই এই ধরনের নখের যত্নে ময়েশ্চারাইজার লোশন ব্যবহার করুন।নরম নখে ক্যালসিয়ামের অভাব এবং ময়েশ্চারাইজার বেশি থাকায় অনেকে নখ রাখতে পারেন না। তাই নরম নখের অধিকারীরা পানি থেকে একটু দুরে থাকবেন। নখে খুব বেশি পানি লাগাবেন না।
২/ যত্রতত্র নখের ব্যবহার ত্যাগ করতে হবে। টিনের কৌটা খোলা, কৌটার গায়ে লেভেল উঠানো, যে কোন স্থানে নখ দিয়ে খোঁচা মারা ইত্যাদি ত্যাগ করতে হবে।
৩/ সাধারণত কিডনি বা থাইরয়েডের সমস্যা, পুষ্টির অভাব, আয়রন কিংবা অন্যান্য খনিজ পদার্থের অভাবে নখের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায়। সে বিষয়ে সঠিক চিকিৎসা সেবা নিতে হবে।
৪/ নখ ভালো রাখতে নখে পানির ব্যবহার কমিয়ে দিন। বাসার দৈনন্দিন কাজে পানির ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন। প্রয়োজনে গ্লাবস ব্যবহার করুন।
৫/নখের আদ্রতা বজায় রাখতে ভালো ব্র্যান্ডের কিউটিকল ওয়েল ব্যবহার করতে হবে। রাতে শোবার আগে নখে অলিভ অয়েল লাগালে নখ শক্ত আর উজ্জ্বল হয়।
৬/ গোসলের পর নখে ভ্যাসলিন লাগালে ভেজা নখের সুরক্ষা হবে।
৭/ অতিরিক্ত নেইল পলিস বা রিমুভার ব্যবহার ত্যাগ করতে হবে। এতে নখের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায়।
৮/নখের শেপের ক্ষেত্রে চারকোনা শেপ পরিহার করাই ভালো। এতে নখ তাড়াতাড়ি ভাঙ্গে যায়।
৯/ নখ কাটার পর ফাইল করার সময় অনেক সতর্ক থাকবেন। কারণ নখ ফাইলের সামান্য ভুলের কারণে নখ ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে করে নখের অনেক ক্ষতিও হয়। সবসময় একই দিকে নখ ফাইল করার চেষ্টা করুন।
১০/ অনেকেরই নখ কামড়ানোর মতো বাজে অভ্যাস রয়েছে। এ কাজটি নখের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। নখ কামড়ালে এর শেপ এবড়োথেবড়ো হয়ে যায়। তখন হাত দেখতে অনেক বিশ্রী লাগে। তাই নখ কামড়ানোর মতো বাজে অভ্যাসটি দূর করুন।
১১/ নিউ ইয়র্ক মেডিক্যাল কলেজের চর্ম বিশেষজ্ঞ ডেন্ডি এঙ্গেলম্যান ওমেনসহেলথম্যাগ ডটকমের এক প্রতিবেদনে নখের শোভা বাড়াতে বেশ কিছু খাবারের নাম দিয়েছেন। এই খাবারগুলো নখ সুস্থ রাখে।এগুল হল-
- ডিম
- ব্রকলি
- সামন মাছ
- নারিকেল তেল
- মুরগির মাংস
- বেশি করে ভিটামিন এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুগ্ধজাত খাদ্য, ফল-মূল, শুষ্ক ফল এবং সবুজ শাক-সবজি খেলে শরীরের সাথে সাথে নখও কোমল, মসৃণ এবং উজ্জ্বল থাকবে।
আরো ৬টি টিপসঃ
সহজেই নখ ভেঙে যাওয়া
অনেকেরই হাত-পায়ের নখ বেশ সহজে ভেঙে যেতে দেখা যায়। বিশেষ করে রান্না ঘরের কাজ করতে গেলে নখ ভেঙে যাওয়ার প্রবনতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। নখ সহজে ভেঙে গেলে বুঝতে হবে আপনার শরীরে ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব আছে। যারা দীর্ঘদিন ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করে থাকেন তাদের শরীরে ভিটামিনের অভাব দেখা দেয়, ফলে বেশ সহজেই নখ ভেঙে যায়।
এই সমস্যা সমাধানে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ভিটামিন ওষুধ খেতে পারেন। আর নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়াটা খুব জরুরী। এছাড়া জেলেটিন নখের জন্য দারুন উপকারী। হালকা গরম পানিতে এক টেবিল চামচ জেলেটিন মিশিয়ে নিন। ঠাণ্ডা হলে যে কোন ফলের রসের সাথে মিশিয়ে খেয়ে নিন। পর পর কিছুদিন মেনে চললে উপকার পাওয়া যাবে।
নখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
নখ পরিষ্কার রাখা খুবই সহজ। এর জন্য ভালো মানের হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করবেন। হাতের নখের ময়লাগুলো আলতো করে পরিষ্কার করুন। বেশি চাপ প্রয়োগ করবেন না। অনেক সময় দৈনন্দিন কাজে নখ এবং এর আশেপাশের ত্বকে দাগ পরে যায়। এই দাগ দূর করতে সহ্য করার মতো গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে হাত ডুবিয়ে রাখুন। লেবুর রস দাগও দূর করবে আর আপনার নখের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে। পায়ের নখ পরিষ্কার করতে একটি সুতি কাপড়ে সবান পানি দিয়ে ঘষুন। এই সৌন্দর্য ধরে রাখতে প্রতিদিন দুইবার নখ পরিষ্কার করা উচিত।
এর সাথে সপ্তাহে একবার মেনিকিউর-পেডিকিউরও করা উচিত।
নখের কোমলতা
নখ পরিষ্কার করার পর একটি তোয়ালে দিয়ে নখে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করুন। নখে পানি জমে থাকলে তা থেকে ইনফেকশন হতে পারে। এবার পায়ের নখে কোনো ভালো মানের ময়শ্চারাইজিং ক্রিম নখ এবং এর আশপাশের ত্বকে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। এতে আপনার নখের চারপাশের ত্বক কোমল থাকবে। হাতের নখের জন্য অলিভ অয়েল, এলমন্ড কিংবা ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
নখের সুস্বাস্থ্য
আপনার সুন্দর নখ প্রকাশ করে আপনার ব্যক্তিত্ব এবং সুস্বাস্থ্য। যদি নখ হয় কোমল, মসৃণ এবং গোলাপী তাহলে বোঝা যাবে আপনার শরীরও সুস্থ্য আছে। ভাঙা, বিবর্ণ এবং দাগযুক্ত নখ কোন রোগ বা শারীরিক ভারসাম্যহীনতার চিহ্ন বহন করে। বেশি করে ভিটামিন এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুগ্ধজাত খাদ্য, ফল-মূল, শুষ্ক ফল এবং সবুজ শাক-সবজি খেলে শরীরের সাথে সাথে নখও কোমল, মসৃণ এবং উজ্জ্বল থাকবে।
নখের হলুদ ভাব
হাত-পায়ের নখে বেশ কিছুদিন একটানা নেল পলিশ লাগানো থাকলে নখের রঙ হলদেটে হয়ে যায়। সাধারণত ফাঙ্গাল ইনফেকশনের জন্যই এমনটা হয়ে থাকে। এছাড়া রান্না করার সময় হাতে হলুদ লাগলেও নখ হলুদ রঙের হতে পারে, এবং তা যা সহজে যায় না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটা লেবুকে অর্ধেক করে নিয়ে নখে ঘষুন, নখের হলুদ ভাব চলে যাবে। এছাড়া ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভেঙে নখে লাগাতে পারেন। এতে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। ফলে নখে দাগ থাকবে না আর হলদে ভাবও চলে যাবে।
ফাঙ্গাল ইনফেকশন
নখে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বেশ কিছু কারণে হতে পারে। মূলত ধুলো ময়লার কারনেই নখে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয়ে থাকে। এছাড়া নখের ভেতর দীর্ঘ সময় ময়লা জমে থাকলেও নানা রকম ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। এই সমস্যা সমাধানে প্রথমেই নখ ভালো মতো পরিষ্কার রাখাটা জরুরী। নখে যদি ইনফেকশন হয়ে থাকে তবে নেল পলিশ লাগাবেন না। কারন এতে সমস্যা আরও বাড়বে । আর অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মতো অ্যান্টি ফাঙ্গাল ওষুধ ও ভিটামিন খেতে হবে।