মানুষের নিত্য ব্যবহারিক এক বিশেষ সামগ্রী হলুদ (Turmeric)। প্রতিদিনের রান্নায় হলুদ ব্যবহার করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। হলুদের বহুপ্রকার গুনাগুণ আছে যা থেকে আমরা রোজই কম বেশি উপকৃত হয়ে থাকি ।
হলুদ যদি আপনার প্রতিদিনের ডায়েট চার্টে রাখেন, তাহলে অনেক উপকার পাবেন। হলুদের এমন অনেক গুন রয়েছে, যা অনেকেরই অজানা। যেমন বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে হলুদ। বাজার চলতি যে সমস্ত অ্যান্টি এজিং ক্রিম আপনি ব্যবহার করেন, সেই ক্রিমগুলির তুলনায় হলুদ কিন্তু অনেকটাই এগিয়ে।
গিটের ব্যথা থেকে রক্ষা করতে পারে হলুদ। অর্থাত, প্রতিদিন নিয়ম করে যদি হলুদ খেতে পারেন, তাহলে বিভিন্ন ধরণের ব্যথা থেকে মিলবে মুক্তি। অর্থাৎ, গিটের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে হলুদের সাহায্য নিতেই পারেন।
মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সাহায্য করে হলুদ। মস্তিষ্কের যে কোনও ধরণের রোগ থেকেও মুক্তি দিতে পারে হলুদ।
খাবারে হলুদ ব্যবহার করলে হজম শক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রেও পেতে পারেন উপকার। অর্থাৎ, যে কোনও ধরণের খাবারের পর হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে হলুদ। গ্যাস, অম্বল এবং অ্যাসিডিটি থেকেও মুক্তি দেয় হলুদ। খাবারে বিষক্রিয়ার প্রাথমিক চিকিত্সাও হলুদ দিয়ে করতে পারেন।
হৃদ রোগের হাত থেকে রক্ষা করতেও হলুদের জুড়ি নেই। তাই হৃদ রোগের সম্ভাবনা থেকে যদি মুক্তি চান, অবশ্যই ডায়েট চার্টে রাখুন হলুদ।
এসবের পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে, যে কোনও ধরণের ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে রক্ষা পেতে, অ্যালার্জির হাত থেকে রেহাই পেতে এবং যে কোনও ধরণের ত্বকের সমস্যা সমাধানে হলুদের জুড়ি মেলা ভার। তাই এবার থেকে রান্না ঘরের মশলা হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি হলুদকে ব্যবহার করে ফেলুন বিভিন্ন কাজে। আর দেখুন ম্যাজিক।
হলুদে আছে প্রোটিন , ভিটামিন সি , ক্যালসিয়াম ,পটাসিয়াম , কপার , ম্যাগনেসিয়াম , ও জিংকের মত পুষ্টিকর উপাদান সমূহ । যা ব্যবহারে মানব দেহ নানাভাবে উপকৃত হয়ে থাকে । বিশেষ করে ত্বকের ক্ষেত্রে হলুদের ব্যবহার খুবই লাভদায়ক ।
কাঁচা হলুদের ব্যবহার সবচেয়ে উপকারি । পেটের সমস্যা হোক বা ত্বকের সমস্যা উভয় ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ ভীষণ ফলদায়ক । নিদ্রা-জনিত সমস্যা থেকে সমাধানের পথ পেতে পারেন হলুদের নানাপ্রকার ব্যবহারের মাধ্যমে|
ত্বকের বলিরেখা , রোদে পোড়া দাগ , ব্রণ’র দাগ ইত্যাদি থেকে মুক্তির সহজ উপায় হল হলুদের রোজকার ব্যবহার । তাছাড়া অ্যালার্জি থেকে বাঁচতে হলুদের ব্যবহার হয়ে থাকে ।
কিভাবে ব্যবহার করবেন
আমরা প্রত্যেকে কম বেশি ব্রণ’র সমস্যায় ভুগি । ব্রণ’র দাগ সহজে যেতে চায় না। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে রোজ ব্যবহার করুন হলুদ । কিভাবে ? চিন্তা নেই সব বলছি । পরিমান মত হলুদগুঁড়ো নিন , তাতে সামান্য জল আর পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিন । মিশ্রণটা ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন দাগগুলিতে । শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিন । এক সপ্তাহের মধ্যে হাতেনাতে ফলাফল পাবেন ।
যাদের ত্বক খুবই তৈলাক্ত তারা চন্দনেরগুঁড়ো ও কাঁচা হলুদবাটা এক সাথে মিশিয়ে রোজ রাত্রিবেলায় ঘুমানোর আগে লাগিয়ে শুয়ে পড়ুন । সকালে উঠে ঠাণ্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিন । ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে যাবে ।
আজকাল দূষণের কারনে অল্প বয়সেই মুখে বলিরেখা দেখা দিচ্ছে । বয়সের ছাপ দূর করতে কাঁচা হলুদের সাহায্য অনায়াসে নিন । কাঁচা হলুদবাটা বা হলুদগুঁড়ো , বেসন , টক দইয়ের সাথে পরিমান মত মিশিয়ে নিয়ে সপ্তাহে ৩ দিন মুখে ফেস-প্যকের মত লাগান ।
রোজ সকালে একটা গোটা কাঁচা হলুদ মধু বা গুঁড়ের সাথে খাওয়া অভ্যাস করুন । পেটের সমস্যা , ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন । ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও মসৃণ । ওজন কমাতেও এটি করতে পারেন । শরীর রোগমুক্ত হয়ে উঠবে সহজে ।
প্রচণ্ড ঠাণ্ডা লাগা থেকে হলুদ আপনাকে বাঁচাতে পারে । কফ বা সর্দি হলে এক গ্লাস দুধে হলুদ মিশিয়ে পান করুন জলদি ভালো হয়ে যাবেন । তাছাড়া রোজ রাতে এক গ্লাস হলুদ মিশ্রিত দুধ পান করুন, যাদের নিদ্রা-জনিত সমস্যা তারা উপকৃত হবেন ।
যে কোন ক্ষত, পুড়ে যাওয়া স্থান, বা ফোস্কাক হলুদের প্রলেপ লাগালে হলুদ ম্যাজিকের মত সব সমস্যার উপশম করে । তাছাড়া হলুদে কারকুমিন উপাদান থাকায় এটি ভাইরাস প্রতিরোধক । কাঁচা হলুদ খেলে কমতে পারে টাইপ টু ডায়বেটিস ।
হলুদের ব্যবহার আমাদের রোজকার জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । সে রান্না হোক বা শরীরচর্চা । হলুদের গুনাগুণ দ্বারা আমরা নানাভাবে উপকৃত , যা অস্বীকার করা যায় না ।