বিশেষ করে গরম এলে যেন এই দুর্গন্ধের অত্যাচার আরও বাড়ে। নিজের সমস্যা তো হয়ই, পোশাকেও হয়ে যায় বাজে গন্ধ, প্রিয় মানুষটির সামনেও পড়তে হয় লজ্জায়। গোপন অঙ্গে দুর্গন্ধ হওয়ার সমস্যাটা অনেকেরই আছে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা অনেক বেশী কিন্তু অনেক পুরুষদের ও হয়ে থাকে। এবং এটা এতই বিব্রতকর একটি সমস্যা যে কাউকে বলাও যায় না। আবার সহ্যও করা যায় না। আসুন খুবই গুরুত্বপুর্ণ বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করি-
আমাদের দেশে নারীরা স্পর্শকাতর অঙ্গের সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবার কথা তো চিন্তাই করেন না। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনার স্বাভাবিক যৌন জীবনে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে গোপন অঙ্গে দুর্গন্ধ।
প্রতিটি মানুষের শরীরে স্বাভাবিক একটি ঘ্রাণ আছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময় খুব সুক্ষ্মভাবে ঘ্রাণটি পরিবর্তিত হয়ে যায়। এছাড়াও মানুষের বগল, পায়ের পাতা কিংবা শরীরের অন্যান্য ভাঁজের জায়গায় দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। গোপন অঙ্গটিও বাদ যায় না। তবে গোপন অঙ্গে দুর্গন্ধ হবার পেছনে আছে বেশ কিছু কারণ-
– আপনার যদি স্বাস্থ্য ভালো হয়ে থাকে, তাহলে শরীরের ভাঁজে ভাঁজে ঘাম জমে যায়। সেখানে ব্যাকটেরিয়া জন্মায় ও দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।
– এছাড়া গোপন অঙ্গে ইস্ট বা ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন থেকে হতে পারে খুবই বাজে দুর্গন্ধ।
– গোপন অঙ্গ সঠিক ভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না রাখা, পিরিয়ডের সময় এক প্যাড দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করা ইত্যাদি কারণেও জন্ম নেয় দুর্গন্ধ।
– এছাড়া খুব বেশী টাইট পোশাক দীর্ঘসময় পরিধান করলেও ঘামে দুর্গন্ধ হতে পারে। অনেকের প্রস্রাব লিক করার সমস্যা থাকে। সে কারণেও গন্ধ হতে পারে।
গোপন অঙ্গের দুর্গন্ধ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায়-
১. পরিষ্কার পরিচ্ছনতা
গরমের সময়টা কম বেশি আমরা সবাই ঘামি। প্রথমেই যা করতে হবে তা হলো পরিষ্কার পরিচ্ছনতা রক্ষা করা। নিজের গোপন অঙ্গের যত্ন খুব ভালোভাবে নিন। সর্বদা পরিষ্কার থাকুন।
২. সাবান ও বডি ওয়াশ
বাজারে গোপন অঙ্গ পরিষ্কার করার জন্য ভালো কোম্পানির বিশেষ ধরণের সাবান ও বডি ওয়াশ কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। ভালো অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করুন।
৩. ঢিলে ঢালা পোশাক
বেশী টাইট পোশাক পরবেন না। গোপন অঙ্গে দুর্গন্ধ হলে ঢিলেঢালা পোশাক পরাই সবচাইতে ভালো।
৪. অন্তর্বাস বা পেন্টি
অতিরিক্ত ঘামের ফলে গোপন অঙ্গের স্পর্শকাতর জায়গায় ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামন বাড়ে ও গন্ধও বাড়ে। এই অবস্থা প্রতিরোধ করতে প্রথমেই সিনথেটিক অন্তর্বাস পরা একেবারেই বাদ দিতে হবে। পাতলা সুতির অন্তর্বাস পরিধান করুন।
৫. অন্তর্বাস ব্যবহার
অন্তর্বাস দিনে কমপক্ষে দুবার বদল করুন এবং এক অন্তর্বাস একবারের বেশী পরবেন না। একবার পরেই ধুয়ে দিন।
৬. ন্যাপকিন বা স্যানিটারি ন্যাপকিন
বাসায় অনেকে কাপড়ের ন্যাপকিন ব্যবহার করেন, তাই ভালো সুতি কাপড়ের ন্যাপকিন ব্যবহার করুন। ও ভালো কোম্পানির স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করুন। পিরিয়ডের সময় বাড়তি পরিছন্ন থাকুন।
৭. পানি ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ব্যবহার
দিনে অন্তত ২/৩ বার গোপন অঙ্গ হালকা গরম পানি ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। পরিষ্কার করে ধুয়ে, ভালো করে মুছে তারপর পোশাক পরবেন।
৮. ডেটল বা স্যাভলন ব্যবহার
নিজের অন্তর্বাস ধোয়া হলে ডেটল বা স্যাভলন মেশানো পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। তারপর চিপে রোদে শুকাতে দিন। এই অন্তর্বাস অনেকটা সময় আপনাকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমন মুক্ত রাখবে। আপনি চাইলে পানিতে স্যাভলন বা ডেটল মিশিয়ে সাথে তুলো ডুবিয়ে গোপন অঙ্গের আশেপাশের এলাকা যেমন থাই ও কুঁচকি মুছে নিতে পারেন। এতেও উপকার পাবেন।
৯. বেকিং সোডা
বেকিং সোডা দুর্গন্ধের সমস্যা প্রতিরোধ ও দুর্গন্ধের জন্য দায়ী ইস্টের প্রকোপ দূর করতে দারুণ কার্যকর। দ্রুত গন্ধ কমায় বেকিং সোডা। ১/২ কাপ বেকিং সোডা বাথটাবের পানিতে মিশিয়ে নিন, এরপর এতে শরীর ডুবিয়ে বসে থাকুন। সেটা সম্ভব না হলে পানিতে বেকিং সোডা মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে গোপন অঙ্গ ধুয়ে নিন। ১৫/২০ মিনিট পর চাইলে আবার পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন।
১০. নিমের পাতা
নিমের পাতাও ইস্ট ইনফেকশন দূর করে গোপন অঙ্গের দুর্গন্ধ কমায়। পানিতে নিম পাতা ফুটিয়ে নিন। সেই নিম পাতা ফুটানো পানি ঠাণ্ডা করে প্রতিদিন এটা দিয়ে গোপন অঙ্গ ধুয়ে নিন।
১১. ভিনেগার
আপনি শুনে হয়ত অবাক হবেন যে ভিনেগার অতিরিক্ত ঘামের পরিমাণ অনেক কমিয়ে আনে। রাতে ঘুমানোর আগে ভিনেগার আপনার স্পর্শকাতর জায়গায় লাগিয়ে ঘুমান আর সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত করতে থাকলে আস্তে আস্তে আপনি ঘামের দুর্গন্ধ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।
১২. টক দই
গোপন অঙ্গের দুর্গন্ধ দূর করতে প্রতিদিন অন্তত দুই কাপ টক দই খান। ফলাফলে নিজেই বিস্মিত হবেন।
১৩. গোলাপজল বা এসেনশিয়াল অয়েল
প্রতিদিনের গোসলের পানিতে ওডিকোলন, গোলাপল বা কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে গোসল করুন।
১৪. ফিটকিরি গুঁড়া বা পুদিনা পাতা
গোসলের পানিতে এক চা চামচ ফিটকিরি গুঁড়া বা পুদিনা পাতা থেঁতো করে মেশাতে পারেন। এটা শরীর ঠান্ডা ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
১৫. শশা
শশাতে পানির ভাগ বেশি থাকে যা শরীরের গন্ধ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন একটি করে শশা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
১৬. সালফিউরিক সম্মৃধ খাবার
ডায়টেশিয়ানের মতে সালফিউরিক সম্মৃধ খাবার যেমন ব্রকলি, বাধাকপি, ফুলকপি পরিমাণে কম খেতে হবে। কারণ এগুলোতে মিনারেল সালফার থাকে যা গন্ধযুক্ত গ্যাস আমাদের ত্বকের সাহায্যে নির্গত করে।
এসবের পরেও যদি গোপন অঙ্গের গন্ধ দূর করতে না পারেন, অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যান। এটা হতে পারে অন্য কোন শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত! লজ্জায় নিজের শরীরকে অবহেলা করবেন না। দেশে অনেক ভালো ভালো গাইনি ডাক্তার আছেন।