স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যে সরিষা তেলের উপকারিতা

0
858
ত্বক ও চুলের যত্ন,সরিষার তেল

ভোজ্য তেলের ভেতরে সরিষার তেলের গ্রহণযোগ্যতা ও খাদ্য উপযোগিতা বরাবরই বেশি। অনেকেই তাদের প্রতিদিেনের রান্নার কাজে সরিষার তেল ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এই সরিষার তেলে রয়েছে বেশকিছু উপকারিতা। কয়েকটি সমীক্ষায় দেখা যায় যে সরিষা তেলে একটি বিশেষ ধরনের উপাদান আছে যা কলোরেক্টাল এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে।আগের যুগের দাদি-নানিরা ত্বকের যত্নে সরিষার তেল ব্যবহার করতেন। বর্তমানে এই তেল শুধু রান্নার কাজে ব্যবহার করা হলেও রূপচর্চায় এর গুণাগুণ কোনো অংশে কম নয়। ওমেগা আলফা ৩ ও ওমেগা আলফা ৬ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ উৎস হওয়ায় সরিষার তেলকে স্বাস্থ্যকর তেল বলা হয়। এর ঔষধি গুণাগুণের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে এই তেল। ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্যের জন্য সরিষার তেলের অসাধারণ উপকারী।সামান্য কাটা ছেঁড়ায় এন্টিসেপটিক এর কাজ করে। সরিষার তেল সন্ধিস্থলের ব্যথা হ্রাস করে।

সরিষা তেল শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় যা হৃদরোগের আশঙ্কা কমায়। নিদ্রাহীনতা ও ক্যান্সার প্রতিরোধক। শরীরে ব্যথা কমায়। শ্বাসকষ্টের প্রদাহ হ্রাস করে। রক্ত সঞ্চালন, হজম প্রক্রিয়া এবং হরমোন নিঃসরণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সরিষার তেল আপনার শরীরের পাচক রস নিঃসরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ক্ষুধা বাড়ে।

সরিষা তেল চুলকে ঝলমলে করে তোলে, খুশকি দূর করে এবং চুল বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সরিয়া তেল চুল এবং মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন। এটি চুল পাকা রোধ করবে। সরিষা তেলে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন আছে। এটি নিয়মিত মাথার তালুতে ম্যাসাজ করার ফলে নিয়মিত নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সরিষার তেল অনেক কার্যকরী।

সরিষা তেল মাথা ব্যথা কমায়। শুষ্ক ত্বক মসৃণ ও কোমল করে। ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করে এবং ত্বকের প্রদাহ দূর করে। শীতের সময় সরিষার তৈল মাখলে ত্বক সুন্দর থাকে। পোকামাকড় সরিষার তেল সহ্য করতে পারে না। এই তেল ব্যবহার করে পোকামাকড় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে সরিষা তেল। নাকের বদ্ধভাব দূর করে। কানের ব্যথায় কানের ড্রপের বিকল্প। সামান্য কাটা ছেঁড়ায় অ্যান্টিসেপটিকের কাজ করে। নিয়মিত এই তেল মালিশ করলে বাতের ব্যথায় উপকার পাওয়া যায়। দাঁত মজবুত করে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে সরিষা তেল।

আরও পড়ুনঃ   ঘুমানোর আগে বালিশের নিচে শুধু এক কোয়া রসুন রাখুন

এবার গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপকারিতার একটি তালিকা দেখে নিনঃ

১. ওমেগা ত্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধি: বিশ্ব সংস্থার প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুসারে সরষের তেল ওমেগা ত্রি এবং ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধি, যা জয়েন্ট পেন এবং ডিপ্রেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়: সরষের তেলে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর ফ্যাট স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে মনোযোগ বৃদ্ধি এবং সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতার উন্নতিতেও সাহায্য করে।

৩. শরীরে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে সরষের তেলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা খারাপ কোলস্টেরলের মাত্রা কমানোর মধ্যে দিয়ে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। সেই সঙ্গে শরীরের প্রতিটি কোণায় যাতে ঠিক মতো রক্ত পৌঁছে যেতে পারে সেদিকেও খেয়াল রাখে।

৪. হার্টের বন্ধু: এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে ঠিকই। কিন্তু একাধিক গবেষণায় একতা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে নিয়মিত সরষের তেল খেলে হার্টের কোনও ক্ষতি হয় না। বরং হৃদপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বাড়ে। সেই সঙ্গে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

৫. ডিপ ফ্রাই করার জন্য আদর্শ: আমরা মানে বাঙালিরা যেহেতু বেশিরভাগ খাবারই উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করে থাকি তাই আমাদের জন্য সরষের তেলের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আজকাল অনেকে বাঙালিই স্বাস্থ্যের কথা ভেবে অলিভ ওয়েল ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু একথা জেনে রাখা ভাল যে রকমের খাবার আমরা খেয়ে থাকি তা বানাতে অলিভ অয়েল একেবারেই আদর্শ নয়। কারণ কম তাপমাত্রায় বানানো খাবারে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু যেসব খাবার বেশি আঁচে বানানো হয়, তাতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে শরীরের ভাল হওয়ার থেকে খারাপ হয় বেশি।

৬. ঠান্ডা লাগার হাত থেকে বাঁচায়: আজও ঠাকুমা-দিদিমারা নাতি-নাতিনিরা ছোট থাকতে সরষের তেল মাখিয়ে থাকেন। কেন এমনটা করে জানেন? কারণ ঠান্ডা লাগা এবং সর্দি-কাশির সমস্যা থেকে শুরু করে একাধিক রোগের হাত থেকে বাঁচাতে এই তেলটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।

আরও পড়ুনঃ   কাঁঠালের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

৭. পেটে ব্যথা এবং মাথা যন্ত্রণা নিমেষে কমায়: সরষের তেলে উপস্থিত অ্যান্টি-ইমফ্লেমেটারি উপাদান যে কোনও ধরনের প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষত মাথা যন্ত্রণা এবং তলপেটের অস্বস্তি কমাতে এই প্রকৃতিক উপাদানটি দারুন কাজে আসে।

ত্বক ও চুলের যত্নে সরিষার তেল

সরিষার তেল ত্বক ও চুল সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সরিষার তেল ওমেগা ৩, ওমেগা ৬, ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ই ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের উৎস।  রূপচর্চায় এটি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন নিশ্চিন্তে।

জেনে নিন কীভাবে রূপচর্চায় ব্যবহার করবেন সরিষার তেল-
৮.প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন লোশন হিসেবে
সরিষার তেলে রয়েছে ভিটামিন ই যা সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির পাশাপাশি প্রকৃতির অন্যান্য দূষিত পদার্থ থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করে। বাইরে বের হওয়ার আগে সামান্য সরিষার তেল ম্যাসাজ করে নিন ত্বকে।
৯.ঠোঁটকে কোমল ও মসৃণ রাখতে
লিপ বাম ব্যবহার করার পরও ঠোঁট ফাটা থেকে মুক্তি মিলছে না? সরিষার তেল ম্যাসাজ করুন ঠোঁটে। এটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজ হিসেবে কাজ করবে এটি।  ফাটা শুষ্ক ঠোঁট আপনার সৌন্দর্যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই ঠোঁটের যত্নে প্রতি রাতে লিপ বামের পরিবর্তে কয়েক ফোঁটা সরিষা তেল ব্যবহার করুন। সকালে উঠে আপনি পেয়ে যাবেন বেবি সফট লিপ।

১০.ত্বকের কালচে ভাব/দাগ দূর করতে
মেছতা বা ত্বকের কালচে দাগ দূর করতে পারে সরিষার তেলের ফেসপ্যাক। বেসনের সঙ্গে পরিমাণ মতো সরিষার তেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি ত্বকে ম্যাসাজ করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসবে দাগ।  ত্বকের কালচে ভাব দূর করতে সরিষার তেলের সঙ্গে মেশান বেসন, টক দই ও লেবুর রস—যা আপনি বডি প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
১১.অকালে চুল পাকা প্রতিরোধ করতে
সরিষার তেলে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান যা অকালে চুল পাকা প্রতিরোধ করে। এজন্য সমপরিমাণ অলিভ অয়েল ও সরিষার তেল একসঙ্গে মিশিয়ে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন। গরম তোয়ালে দিয়ে চুল পেঁচিয়ে নিন। কিছুক্ষণ পর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন চুল।
১২.চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে
সরিষার তেলে থাকা বেটা-ক্যারোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম  চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সরিষার তেলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড (অলিক ও লিনোলিক অ্যাসিড) চুল পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। চুলের গোড়া মজবুত করে এবং মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। নিয়মিত
সরিষার তেল ব্যবহারে চুল পড়া কমে।
১৩.দাঁতের যত্নে
লেবুর রসের সঙ্গে সরিষার তেল মিশিয়ে দাঁতে ম্যাসাজ করুন। নিয়মিত এটি ব্যবহার করলে দাঁতের হলদে ভাব দূর হওয়ার পাশাপাশি দাঁতের গোড়া শক্ত হবে।
১৪.খুশকি দূর করতে
নিয়মিত মাথার তালুতে সরিষার তেল ম্যাসাজ করলে দূর হয় খুশকি। এছাড়া মাথার ত্বকে অ্যালার্জি থাকলে সেটাও দূর করে সরিষার তেল।
১৫.প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে
ত্বকে সরিষার তেল ম্যাসাজ করলে লোমকূপের ভেতর থেকে দূর হয় ময়লা। প্রতিদিন বাইরে থেকে এসে সামান্য সরিষার তেল হাতের তালুতে নিয়ে ম্যাসাজ করুন ত্বকে। বাড়বে ত্বকের উজ্জ্বলতাও।

আরও পড়ুনঃ   যেসব রোগের মহৌষধ খেজুর

১৬.ফেসপ্যাক: সরিষার তেল আর হলুদ ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে ত্বকের খসখসে ভাব দূর হয় এবং শুষ্ক চামড়া ঝরে পড়ে।

১৭.দাঁতের মাড়ি: দাঁতের মাড়ির বিভিন্ন রোগ দূর করতে লবণ ও সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়। বাতের ব্যথা দূর করতে সরিষার তেলের ব্যবহার দেখা যায়।

১৮.শরীরের ঘাম: সরিষার তেল শরীর উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের ঘাম বের হওয়ার গ্রন্থিগুলো পরিষ্কার ও সচল রাখে। ফলে শরীরের বর্জ্য পদার্থগুলো বের হয়ে যায়।

১৯.পোকামাকড় থেকে রক্ষা:পোকামাকড় সরিষার তেল সহ্য করতে পারে না। এই তেল ব্যবহার করে পোকামাকড় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

২০.ত্বকের ওপর এই তেল দিয়ে ম্যাসাজ : সরিষার তেল অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদানসমৃদ্ধ। ত্বকের ওপর এই তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন দূর হয়। এরা ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি রোধ করে।

তাই প্রতিদিনের রান্নায় আজ থেকেই যোগ করতে পারেন সরিষার তেল। তবে সবার আগে নিশ্চিত হতে হবে, তেলটি ভেজালমুক্ত কি না। খাঁটি সরিষার তেল রান্নায় ব্যবহার করলে সুস্বাস্থ্যের ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন।

তথ্য: বোল্ডস্কাই

সরিষার তেল না খেয়ে যে উপকারগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × one =