বাগেরহাট জেলার সদর হাসপাতালে নজিরবিহীন চিকিৎসক সংকটের কারণে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ হাসপাতালের বর্হিরবিভাগে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও সেবা দেওয়ার চিকিৎসকদের অভাবে সেখানে রোগী কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক সময় রোগীদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্লিনিক অথবা অন্য জেলার হাসপাতালে। ফলে অসহায়, দরিদ্র, অসুস্থ মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগের পাশাপাশি অনাকাঙ্খিত মৃত্যু ও ভোগান্তির হার বাড়ছে। জেলার প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্রের এ দুরাবস্থায় এখানে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছে।
এখানকার সংকটের কথা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে আলোচিত হলেও আজও প্রতিকার মেলেনি। সম্প্রতি এ দুরাবস্থা আরও বেড়েছে। হাসপাতালটি এখন আর রোগী ধারণের অবস্থায় নেই। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা গুরুতর রোগীরা অর্থোপেডিক, মেডিসিন, সার্জারি, অ্যানেস্থেশিয়া, রেডিওলজি, ইউনানি, ডেন্টাল ও প্যাথলজির, চক্ষু ও শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভাবের কারণে চিকিৎসা নিতে পারছে না। বিশেষ করে শিশু ও গাইনী চিকিৎসকদের কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. সাহানা রাজ্জাক রোগী, রোগীদের স্বজন ও হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে প্রতিনিয়ত অশোভন আচরণ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই। তিনি প্রতিদিন খুলনা থেকে সঠিক সময়ে আসেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই র্দুব্যবহার ও আচারনের কারণে অধিকাংশ প্রসুতী মায়েরা বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে বাগেরহাট শহরের ক্লিনিকগুলোয় প্রায় তিন’শ মায়ের সিজার হয়েছে।
বৃহস্পতিবার হাসপাতালের বারান্দায় কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা প্রসুতী রোগী ছবি ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. সাহানা রাজ্জাকের কাছে প্রথমবার চিকিৎসা নিতে আসি। রুমে ঢুকতেই তিনি বলেন বাচ্চা নিয়ে আসছেন কেনো? বাসায় রেখে আসতে পারলেন না? এভাবে তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন।’ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও আয়ারাও তার আচরণ ও ব্যবহারে অসন্তোষের কথা জানান। তবে এব্যাপারে জানতে চাইলে ডা. সাহানা রাজ্জাক কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের ২৯টি পদের মধ্যে ১৯টি শূন্য। কনসালট্যান্টের ১২টি পদের মধ্যে ৯টিই শূন্য। এখানে চতুর্থ শ্রেণির ৬৫টি পদের মধ্যে ৪৪টি শূন্য। অন্যান্য পদগুলোরও একই অবস্থা।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন অরুন কুমার মন্ডল বলেন, সদর হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটসহ নানা সমস্যা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন সময়ে এসব বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তারপরও অন্য উপজেলা থেকে মেডিকেল অফিসারদের এনে রোগীদের সেবার জায়গা ধরে রাখার চেষ্টা চলছে। গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. সাহানা রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে বলেন তাকে একাধিবার সতর্ক করা হয়েছে।
রাজীব আহ্সান রাজু
বাগেরহাট প্রতিনিধি
০১৭৩৯-৯৯৭৭০০
তারিখ: ০৬.১০.২০১৬।