নানা কারণে চেহারার লাবণ্য নষ্ট হয়ে যায়। যারা অফিস করেন তাদের প্রতিদিনই বাইরে বের হতে হয়। ফলে তাদেরকে অারও বেশি করে এই সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে শীত মৌসুমে ত্বক আরও বেশি শুষ্ক ও রুক্ষ্ম হয়ে পড়ে। তাই রূপও তার সৌন্দর্য হারায়। রূপের লাবণ্য ধরে রাখতে আমরা নানা উপায় অবলম্বন করি। সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক কিছু উপায় অবলম্বন করেও আমরা রূপের লাবণ্য ধরে রাখতে পারি। এর মধ্যে একটি সহজলভ্য উপাদান হচ্ছে মধু। বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক উপাদান হলো মধু যার গুণাগুণ অগণ্য। এই খাদ্য উপাদানটি কিভাবে ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে ভূমিকা রাখে তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো:
মধু ও অ্যালোভেরা জেল
মধু ও অ্যালোভেরা জেল প্রতিটি এক টেবিল চামচ পরিমাণ নিয়ে খুব ভালোভাবে মেশাতে হবে। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে যেন ভালোভাবে সেট হয়ে যায়। এরপর আরও ১০ মিনিট সময় পর্যন্ত রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ব্রণের সমস্যা কমাতে ও দূর করতে এই ফেসপ্যাকটি বিশেষ উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।
মধু ও ডিমের সাদা অংশ
ডিমের শুধুমাত্র সাদা অংশ এবং এক চা চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। পুরো মুখে তৈরিকৃত এই ফেসপ্যাকটি লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে যেন মুখে ভালোভাবে সেট হয়ে যায়। এরপর ১৫-২০ মিনিট সময় অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। মুখের ত্বকের জন্য এই প্যাকটি বিশেষভাবে উপকারী। কারণ এতে রয়েছে ডিমের সাদা অংশ। যা ত্বকের রমকূপকে ছোট করতে সাহায্য করে থাকে এবং ত্বককে অনেক নমনীয় করে তোলে।
মধু ও গুঁড়ো দুধ
এক টেবিল চামচ মধু এবং এক চা চামচ গুঁড়ো দুধ একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। ঘন এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে নিয়ে ১০ মিনিট সময় অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রতি মাসে দুইবার এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করাই পরিষ্কার ও সুস্থ ত্বক পাওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট।
মধু ও লেবুর রস
একটি বাটিতে এক টেবিল চামচ পরিমাণ মধু ও দুই চা চামচ পরিমাণ লেবুর রস নিয়ে একসাথে ভালোভাবে মেশাতে হবে। তৈরিকৃত ঘন ফেসপ্যাকটি মুখের লাগিয়ে বড়জোর ৫ মিনিট সময় অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে এবং ত্বকের ময়লা দূর করতে চাইলে প্রতি সপ্তাহে একবার এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করা প্রয়োজন।
গোলাপ জল ও মধুর মিশ্রণ
এটি একটি সহজ ফেসপ্যাক। এক টেবিল চামচ মধু ও এক টেবিল চামচ গোলাপ জল একত্রে মেশান। তারপর এটি মুখে লাগান। এর ১০ মিনিট পর তা ধুয়ে ফেলুন। এভাবে তা নিয়মিত ব্যবহার করুন। দেখবেন ত্বকের উজ্জ্বল্য ফিরে আসছে। নিয়মিত গোলাপ জল ও মধুর প্যাক ব্যবহারে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে এবং মৃত ত্বক সরে যাবে।
মধু ও টকদই
দুই চা চামচ মধুর সাথে এক টেবিল চামচ ফ্রেশ টকদই মিশিয়ে নিতে হবে ভালোভাবে। মিশ্রণটি পুর মুখের ভালোভাবে ও মসৃণভাবে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এরপর সাধারণ তাপমাত্রার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে মুখে ভালো কোন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। দাগযুক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে এই ফেসপ্যাকটি বিশেষ উপকারী। প্রতি সপ্তাহে একবারের জন্য এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করাই যথেষ্ট।
কলা ও মধুর মিশ্রণ
দুই টেবিল চামচ মধু ও একটি কলা নিন। কলাটিকে ভালো করে পিষে মধুর সঙ্গে মেশান। তারপর তা মুখে ব্যবহার করুন। ১৫ মিনিট পর্যন্ত শুকাতে সময় দিন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন যদি আপনি এটি ব্যবহার করেন তাহলে অন্য কোনও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে না। এটি ত্বককে অতি নমনীয় করে তোলে।
মধু ও গ্রিন টি পাউডার
দুই চা চামচ মধুর সাথে আধা চা চামচ গ্রিন টি পাউডার মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে হবে। ৫-১০ মিনিট অপেক্ষা করার পর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। ত্বকের সাধারণ যেকোন সমস্যার ক্ষেত্রে এই ফেসপ্যাকটি খুব ভালো কাজ করে থাকে। সপ্তাহে একবারের জন্য এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করাই যথেষ্ট।
মধু ও অলিভ অয়েল
এক টেবিল চামচ পরিমাণ অলিভ অয়েল এবং মধু একসাথে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এরপর ব্লেন্ডকৃত মিশ্রণ পুরো মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে ২-৫ মিনিট সময় অপেক্ষা করে সাধারণ তাপমাত্রার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। প্রতি সপ্তাহে একবার এই ফেসপ্যাক ব্যবহারে ত্বক ভেতর থেকে পুষ্টি পাবে।
উল্লেখিত প্রতিটি ফেসপ্যাক একদম প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই তৈরি করা। তবে একেকজনের ত্বকের ধরণের উপর নির্ভর করে একেক ধরণের ফেসপ্যাক মানানসই হবে। সেক্ষেত্রে পরিপুর্ণভাবে যেকোন ফেসপ্যাক ব্যবহার করার পুর্বে দেখে নিতে হবে সেটা ত্বকের সাথে মানানসই কিনা।