দেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা বাড়ছে দেদারছে। রাজনৈতিক প্রভাবে এসব মেডিকেল কলেজ অনুমোদন পাচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না নীতিমালা।
সরকারের নজরদারির অভাবে এসব কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অনুমোদনে কড়াকড়ি আরোপ করেছে এবং কয়েকটি কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশে বর্তমানে বেসরকারি খাতে অনেকগুলো মেডিকেল কলেজই রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে। যেখানে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। কেবল মুনাফা অর্জনই যেন এদের লক্ষ্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি নজরদারির অভাবেই রাজনৈতিক সুবিধায় এসব মেডিকেল কলেজ অনুমোদন পাচ্ছে এবং একথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে বর্তমান সরকারের শাসনামলেও সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, যশোর, পাবনা, নোয়াখালী, কক্সবাজার, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও গাজীপুরে মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানা যায়, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ছিল ৪১ টি, বর্তমানে এর সংখ্যা ৬১টি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিদর্শন কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বলেন, সুচিকিৎসক পাওয়া যাবে না যদি না মেডিকেল কলেজের মান বজায় থাকে। মেডিকেল কলেজগুলো কেবল সার্টিফিকেট বিতরণের জন্য কার্যক্রম চালাতে পারে না। সরকার এসব মেডিকেল কলেজের কার্যক্রমের মান কঠোরভাবে তদারকি করবে। পরিদর্শন কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিদর্শন কমিটি ইতোমধ্যে ২৫টি বেসরকারি কলেজের পরিদর্শন সম্পন্ন করেছে। আগামীতে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অনুমোদন, নবায়ন ও আসন সংখ্যা বৃদ্ধির সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ মেডিকেলঅ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের পৃথক পৃথক পরিদর্শন প্রতিবেদন সমন্বিতভাবে আলোচনার মাধ্যমে পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এছাড়াও, গত ১৯ জুন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম ও বাংলাদেশ মেডিকেলঅ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) আয়োজিত এক সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক কারণে মেডিকেল কলেজ অনুমোদনের কথা স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, আমি স্বীকার করছি এর মধ্যে কতগুলো রাজনৈতিক কারণেও দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলোর শিক্ষার মান নিয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব মেডিকেল কলেজের মান বাড়াতে কাজ করছি, সরকার এখন এ কলেজগুলোর মান বজায় রাখার উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, মেডিকেল কলেজ নীতিমালা ভঙ্গের কারণে কয়েকটি কলেজের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিয়েছি। কিন্তু ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই শুরু করে দেয় হইচই, পড়তে হয় চাপের মুখে। আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালিয়ে যায়।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ/ডেন্টাল কলেজ নীতিমালা অনুযায়ী নতুন মেডিক্যাল কলেজকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে হলে অন্তত দুই বছর আগে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালু করতে হবে। যেমন-৫০ আসনের মেডিকেল কলেজের কমপক্ষে আড়াইশো শয্যার হাসপাতাল, কলেজের একাডেমিক ভবন ও হাসপাতাল ভবন পৃথক ভাবে থাকতে হবে। কোনও মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ভাড়া বাড়িতে স্থাপন করা যাবে না।
বেসরকারি মেডিকেলস্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১১তে বলা হয়েছে, বিভিন্ন বিভাগের জন্য একই ক্যাম্পাসে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধাসহ পৃথক অ্যাকাডেমিক ভবন ও হাসপাতাল থাকতে হবে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক ও বিএমএ’র (বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই মাহবুব বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনও মেডিকেলকলেজ হতে পারে না। মেডিকেলকলেজ হয় ডাক্তার বানানোর জন্য। সেখানে যদি শিক্ষার পরিবেশ এবং সর্বোত্তম শিক্ষা না দিতে পারে তাহলে তো সাফার করবে জনগণ। নিশ্চয় রাজনীতিবিদরা চান না, জনগণ সাফার করুক। যদি এটি সত্য হয়ে থাকে তাহলে এটা মোটেই ঠিক নয়। সরকারকে এ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। অবকাঠামোসহ অন্যান্য সব শর্ত পূরণ করেই মেডিক্যাল কলেজ অনুমোদন পাবে, নয়তো নয়।