রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার উপায়

0
1012
রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার উপায়

হৃদরোগ এবং স্ট্রোক বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ৭২ লাখ লোক এই রোগে মৃত্যুবরণ করে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে হৃদরোগ এক ভয়ানক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ, করোনারী হৃদরোগ, বাতজ্বর ও বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ, জন্মগত হৃদরোগসহ সকল ধরনের হৃদরোগ আমাদের দেশে বিদ্যমান। অধিকাংশ লোকের ধারণা হৃদরোগ ধনীদের রোগ, যেটি সঠিক নয়। কারণ উচ্চ রক্তচাপ ও জন্মগত হৃদরোগ ধনী-গরীব সবারই হতে পারে। এছাড়া বাতজ্বর ও বাতজ্বরজনিত হৃদরোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায় ঘণবসতিপূর্ণ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসকারী গরীব ছেলেমেয়েদের মাঝে। শুধুমাত্র করোনারী হৃদরোগের প্রকোপ বিত্তবানদের মধ্যে বেশি, তবে গরীবরাও এ রোগে আক্রান্ত হয়।

হাইপারটেনশন (যা হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ নামে অধিক পরিচিত) হলো একটি জটিল দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) স্বাস্থ্যগত বিষয়, যার ফলে শরীরের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোন লক্ষণ এবং উপসর্গ নেই, তবে কোন কোন ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, অতিরিক্ত ঘুমের প্রবণতা, দ্বিধাগ্রস্ততা, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। নিয়মিত রক্তচাপ মাপাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে যেমন রক্তচাপ মাপা যায়, তেমনি বাড়িতে স্বয়ংক্রিয় মেশিনের সাহায্যে রক্তচাপ মাপা যায়।

বাড়িতে রক্তচাপ মাপার

কিছু নিয়মাবলী

++চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে রক্তচাপ মাপার উপযুক্ত মেশিন ক্রয় করুন। বাহুবন্ধনীর সাইজ সঠিকভাবে নির্বাচন করুন। রক্তচাপ মাপার বিভিন্ন সাইজের বাহুবন্ধনী পাওয়া যায়। বাহুতে যাতে বাহুবন্ধনী সঠিকভাবে লাগানো যায়, সেইদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাহুবন্ধনীর সাইজ সঠিক না হলে রক্তচাপের রিডিং যথার্থ হয় না। বাহুবন্ধনীর সঠিক সাইজ নির্বাচনের জন্য চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা দোকানদারের সাহায্য নিন।

++ রক্তচাপ পরিমাপের আধাঘণ্টা পূর্বে কফি পান করবেন না এবং ব্যায়াম করবেন না।

++ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসুন। পায়ের পাতা মেঝেতে রাখুন, পায়ের উপর পা উঠিয়ে বসবেন না কিংবা এক হাতের উপর অন্য হাত রাখবেন না। হাতের নিচে তোয়ালে অথবা বালিশ রাখুন যাতে হাতটা হার্টের বা হৃদপিন্ডের সমান্তরাল থাকে।

আরও পড়ুনঃ   পায়ে পানি আসা নিয়ে ভাবনা?

++সাতদিন যাবত বাড়িতে সকাল-সন্ধ্যা দুইবার রক্তচাপ পরিমাপের মাত্রাকে রক্তচাপের রেকর্ড হিসেবে গণ্য করা উচিত। রক্তচাপ ১ মিনিটের ব্যবধানে ২-৩ বার মাপুন।

++সঠিক নিয়মে রক্তচাপ পরিমাপের পর পরই তা লিপিবদ্ধ করুন।

রক্তচাপকে স্বাভাবিক

রাখতে করণীয়

১. বিড়ি, সিগারেট, জর্দ্দা, সাদা পাতা, গুলসহ সকল প্রকার তামাক জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। যদি আপনি তামাক গ্রহণ করে তাহলে আজই ছেড়ে দেয়ার জন্য মনস্থির করুন এবং ধীরে ধীরে একেবারে ছেড়ে দিন।

২. অতিরিক্ত ওজনের অধিকারীরা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হতে পারে। দুটি ভাল উপায় আছে যা আপনার ওজন  পর্যবেক্ষণে সহায়তা করবে; যেমন-বডি মাস ইনডেক্স এবং কোমরের পরিমাপ। বিএমআই বা বডি মাস ইনডেক্স একজন ব্যক্তির গড় ওজন নির্দেশ করে। বডি মাস ইনডেক্স কিভাবে হিসাব করবেন; প্রথমে আপনার ওজন (কি.গ্রাম) মাপুন এবং আপনার উচ্চতা (মি২) দ্বারা ভাগ করুন। যে ফলাফল পাবেন সেটাই আপনার বডি মাস ইনডেক্স। বিএমআই ১৮.৫-২৪.৯৯ কে স্বাভাবিক হিসাবে ধরা হয়। উল্লেখ্য দেশ এবং জাতিভেদে এই পরিমাপের তারতম্য হতে পারে।

৩. স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া সব সময় সর্বোত্তম। প্রতিদিন সকাল, দুপুর এবং রাত এই তিনবার স্বাস্থ্যসম্মত পর্যাপ্ত খাবার খান, কোন বেলায় খাবার গ্রহণ বাদ দিবেন না। প্রক্রিয়াজাত এবং ফাস্ট ফুড না খাওয়ার চেষ্টা করুন। তার পরিবর্তে-

++প্রচুর পরিমাণে ফলমূল এবং শাকসবজি খান; টাটকা এবং রঙিন ফলমূল বেশি করে খান

++সপ্তাহে অন্ততপক্ষে একদিন নিরামিষভোজী হোন

++যতদূর সম্ভব সোডিয়াম এবং লবণ কম গ্রহণ করুন

++খাবারের সাথে আলগা (পাতে) লবণ খাবেন না

++রান্না করার সময় খাবারে অল্প লবণ ব্যবহার করুন

++খাদ্যকে সংরক্ষণ করার জন্য লেবুর রস, ভিনেগার, কাচা রসুন, মসলা ব্যবহার করুন

++পণ্যের গায়ে সোডিয়ামের পরিমাণটা ভালোভাবে পড়ে নিন এবং কম সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান

++মদ্যপান পরিহার করুন

আরও পড়ুনঃ   স্ট্রোকের রোগীর মস্তিষ্ক কার্যক্ষম করে যে ভেষজ

৪. শারীরিকভাবে সক্রিয় হলে স্বাস্থ্যের চমৎকার উন্নতি ঘটে, সাথে সাথে রক্তচাপের মাত্রাও সঠিক থাকে। কায়িক পরিশ্রম করুন। নিয়মিত হাঁটা, সাইকেল চালানো কিংবা সাঁতার কাঁটার চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত সময় না পেলে দিনে দুইবার দশ মিনিটের সাধারণ ব্যায়ামও অনেক সাহায্য করে।

++লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি দিয়ে উঠা-নামা করুন

++সম্ভব হলে হেঁটে বা সাইকেল করে অফিসে যান

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে

ওষুধের ভূমিকা

অনেক ওষুধ আছে যেগুলো উচ্চ রক্তচাপ কমার সাথে সাথে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক প্রতিরোধে সাহায্য করে। আপনার ডাক্তার অথবা স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে কথা বলুন এবং পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন-

++ডাক্তারের পরামর্শমত নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত ওষুধ সেবন না করলে কোন ফল পাওয়া যাবে না।

++প্রতিটি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। সুতরাং কোন ওষুধ খেয়ে কোন ধরনের সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে আপনার ডাক্তারকে অবহিত করুন।

++ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন

০০ জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) আব্দুল মালিক, প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও মহাসচিব, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × five =