ডিমের কতই না গুণ। ডিম রোগ প্রতিরোধক ও পুষ্টিকর খাবার। ডিম খেলে পুষ্টি চাহিদা পূরণসহ শরীরের সার্বিক আরোগ্য লাভে সহায়তা করে। কিন্তু জাপানি বিজ্ঞানীরা এবার ডিমের শক্তি বাড়াতে যা করতে চলেছে, তা বাস্তবিকই অবিশ্বাস্য!
সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড ইন্ডাস্ট্রিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির একদল গবেষক জানিয়েছেন, তারা জেনেটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সাহায্যে মুরগির ডিমের মধ্যে এমন একটি ড্রাগের প্রবেশ ঘটাবে, যা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র ক্যান্সার সেলে ধ্বংস হয়ে যেতে শুরু করবে, ফলে কমবে ক্যান্সার রোগের প্রকোপ। পুরোপুরি স্পেশালভাবে ‘ক্যানসার প্রতিরোধ ডিম’ পাড়বে মুরগি! রোজ একটি করে খেলেই আরোগ্য লাভ!
এমনই অবাক করা তথ্য দিয়েছেন জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্স ইনডাস্ট্রিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এআইএসটি) গবেষকরা।
গবেষকরা জানিয়েছেন তারা “ইন্টারফেরন বিটা” নামক বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন তৈরি করার চেষ্টা করছেন, যে প্রোটিন ডিমের মধ্যে ঢোকানো হবে। এই ডিম খেলে একদিকে যেমন ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, তেমনি মাল্টিপেল স্কেলেরোসিস এবং হেপাটাইটিসের মতো রোগও দূরে থাকবে।
ওষুধ দিয়ে ইতোমধ্যে বেশ কিছু মুরগির শুক্রাণু জিনগতভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, এসব মুরগির সঙ্গে সংমিশ্রণ ঘটিয়ে যে নতুন শঙ্কর প্রজাতির মুরগি তৈরি করা হয়েছে, তার ডিম ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। আর জিনের এই পরিবর্তন করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেছেন ইন্টারফেরনস নামে দুর্মূল্য ওষুধ। ক্যান্সার, হেপাটাইটিস, স্কেলারোসিসের মতো রোগে আক্রান্ত রোগীদের এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়। আর এই ওষুধ এতোটাই দুর্মূল্য যে, মাত্র কয়েক মাইক্রোগ্রামের দাম ৮৮৮ ডলার।
অর্থাৎ পরোক্ষভাবে এটির মিশ্রণের যে ডিম মানুষজন পাবেন তার দাম সাধ্যের মধ্যে হবে, তা বলা যাচ্ছে না।
এই ধরনের মুরগি প্রতিদিনই ডিম পাড়বে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। এখনও পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে রয়েছে গবেষণা। যদি গবেষণা সফল হয় তবে সোনার ডিমের আশা ছেড়ে ক্যান্সার প্রতিরোধক ডিম পেতে একটা মুরগি কিনে ফেললেই হয়! এই ডিম সাধারণের মানুষের কাছে আসতে যে আর কিছুটা সময় লাগবে, তা বলা যেতেই পারে।
তবে তাই বলে সাধারণ ডিম খাওয়া কমাবেন না যেন! কারণ যেমনটা প্রবন্ধের একেবারে প্রথমেই বলা হয়েছে, শরীরকে চাঙ্গা রাখতে ডিমের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এই প্রকৃতিক উপাদানটি নানাভাবে শরীরে কাজে লাগে। যেমন…
১. ভিটামিনের ঘাটতি দূর করে:
শরীরকে সচল রাখতে প্রতিদিন বি২, বি১২, এ এবং ই ভিটামিনের প্রয়োজন পরে, যার জোগান দিতে ডিমের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। প্রসঙ্গত, ভিটামিন বি২ এনার্জির ঘাটতি পূরণ করে, যেখানে বি১২ লহিত রক্ত কণিকার ঘটতি দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর “এ” এবং “ই” ভিটামিন কী কাজে লাগে? ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়। আর ই ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিযে রোগমুক্ত জীবনের পথ প্রশস্ত করে।
২. ওজন কমায়:
অতিরিক্ত ওজনের কারণে কি চিন্তায় আছেন? তাহলে প্রতিদিন ব্রেকফাস্টে একটা করে ডিম খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন ওজন কমবে চোখে পরার মতো। আসলে ডিমের অন্দরে থাকা একাদিক উপকারি উপাদান অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে শরীরে ক্যালরির প্রবেশ কম হওয়ায় ওজন কমতে সময় লাগে না।
৩. খনিজের ঘাটতি দূর করে:
ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, জিঙ্ক এবং ফসফরাস। এই খনিজগুলি রক্তাল্পতা দূর করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতিতে এবং হাড়ের শক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, ডিমে সেলেনিয়াম বলে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যান্সার রোগের প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৪. প্রোটিনের ঘাটতি দূর করে:
একটা ডিমে কম বেশি প্রায় ৬.৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। আর দিনের চাহিদা হল ৫০ গ্রাম প্রোটিন। তাই দিনে কম করে তিনটি ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। এমনটা করলে প্রায় ১৯.৫ গ্রাম প্রোটিনের ঘাটতি মেটে। বাকিটা মাছ, মাংস অথবা ডায়াটারি প্রোডাক্টের মাধ্যমে পূরণ করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এবার থেকে তাই দিনে ৩ টে ডিম খেতে ভুলবেন না যেন!
৫. ব্রেস্ট ক্যান্সারকে দূরে রাখে:
হাবার্ড ইউনিভার্সিটির করা এক গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে কম করে ৬ টা ডিম খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৪৪ শতাংশ কমে যায়। আসলে ডিমে উপস্থিত কোলিন নামক একটি উপাদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৬.ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বলে একটি উপাদান রয়েছে, যা শরীর থেকে টক্সিক উপাদানদের বের করে দিয়ে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়। আর এই উপাদানটি ঠেসে ঠেসে ভরা রয়েছে ডিমে। তাই প্রতিদিন ডিম খেলে কতটা উপকার পাওয়া যায়, তা নিশ্চয় বুঝে গেছেন।
৭.হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে:
প্রতিদিন নিয়ম করে ডিম খেলে শরীরে উপকারি কোলস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে শরীরে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা যত কমবে, তত হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়বে। তাই পরিবারে হার্টের রোগের ইতিহাস থাকলে ডিম খেতে ভুলবেন না যেন!
৮. দৃষ্টি শক্তির উন্নতি ঘটায়: ডিমে প্রচুর মাত্রায় রয়েছে ভিটামিন এ। এই ভিটামিনটি দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যাদের দিনের বেশিরভাগ সময়ই কম্পিউটারে কাজ করতে হয়, তাদের নিয়ম করে ডিম খাওয়া উচিত। কারণ এমনটা করলে কম বয়সেই চশমার উপর ভরসা করার আশঙ্কা কমে।
১০.ওজন হ্রাসে সাহায্য করে: অতিরিক্ত ওজনের কারণে যদি চিন্তায় থাকেন, তাহলে ডিম খেতে ভুলবেন না যেন! কিন্তু ডিমের সঙ্গে ওজন কমার কী সম্পর্ক? বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে ডিমের অন্দরে থাকা প্রোটিন শরীরে প্রবেশ করার পর এত মাত্রায় পেট ভরিয়ে দেয় যে সহজে ক্ষিদে পায় না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বারে বারে খাওয়ার প্রবণতা কমে। সেই সঙ্গে কমে ওজনও।
ডিম আমিষ না নিরামিষ?এবার জানিয়েই দিলেন বিজ্ঞানীরা