যে খাবারগুলো পুনরায় গরম করে খাওয়া বিপজ্জনক!

3
1848
যে খাবার বারবার গরম করে খাওয়া ক্ষতিকর
যে খাবার বারবার গরম করে খাওয়া ক্ষতিকর

সাধারণত রান্নার পর সময় বাঁচানোর জন্য পরদিন সেই খাবার পুনরায় গরম করেই খাই। তবে, কিছু কিছু খাবার বারবার গরম করে খাওয়া মারাত্মক ক্ষতিকর। কর্মব্যস্ত জীবনে আমরা সময় বাঁচানোর জন্য কয়েকদিনের খাবার একসঙ্গে রান্না করে ফ্রিজে রেখে দেই এবং পরে সেটা অল্প অল্প করে গরম করে খাই। এটি আসলেই একটি ভালো অভ্যাস।

কারণ এতে করে খাবার এবং সময় কোনোটাই অপচয় হয় না। তবে কিছু খাবার আছে যা পুনরায় গরম করার ফলে উক্ত খাবার তার কার্যকারিতা ও পুষ্টিগুণ হারায় এবং অনেক সময় খাবার বিষাক্তও হয়ে যায়।

আসুন জেনে নিই কোন খাবারগুলো রান্নার পর রেখে দিয়ে আবার গরম করে খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।

*আলুর তরকারি: পুষ্টিগুণে ভরপুর এই খাদ্যটি যদি বারেবারে গরম করে খাওয়া হয়, তাহলে এতে উপস্থিত শরীরের উপকারী উপাদানগুলির কর্মক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে। ফলে এমন খাবার খেলে শরীরের কোনও উপকারেই লাগে না। শুধু তাই নয়, একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে বারবার গরম করে আলু দিয়ে বানানো কোনও তরকারি খেলে পেট খারাপ হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ফুড পয়েজেনিং হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

* ভাত :  ভাত রান্নার পর আপনি যেভাবেই রেখে দেন না কেন এটি ধীরে ধীরে পুষ্টিগুণ হারিয়ে ফেলে। চালে স্পোরস নামক এক ধরনের উপাদান থাকে যা ব্যাকটেরিয়ায় রূপান্তরিত হয় এবং রান্নার পরও এই ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফলে ভাত রান্না করে রেখে দেওয়া বা পুনরায় গরম করে খাওয়া উভয়ই ক্ষতিকর। এটা খেলে ডায়রিয়া এবং বমি হতে পারে।

* ডিম : উচ্চ মাত্রার প্রোটিন থাকায় ডিম সকলের নাস্তার আবশ্যিক উপাদান। তবে ডিম হচ্ছে এমন একটি খাবার যা পুনরায় উচ্চ তাপের সংস্পর্শে এলে বিষাক্ত হয়ে যায়। ফলে রান্না করা ডিম পুনরায় গরম করে খেলে আমাদের হঠাৎ করেই পেট খারাপ হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ   চাল ধোওয়া পানি অথবা ভাতের মাড় কখনো ফেলবেন না, কারণ তা অবিশ্বাস্য কাজের!

* মুরগী : মাশরুমের মতো মুরগী উচ্চ মাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। তবে উচ্চ তাপমাত্রায় পুনরায় গরম করে খেলে এই মুরগীই হয়ে উঠতে পারে আপনার জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক খাবার। কারণ পুনরায় গরম করলে এতে থাকা উচ্চ মাত্রার প্রোটিনের কার্যকারিতার পরিবর্তন হয় এবং তা মারাত্বক হজমের সমস্যা সৃষ্টি করে। তবে রান্না করা মুরগী যদি একান্তই গরম করে খাওয়ার দরকার হয় তবে তা নিম্ন তাপমাত্রায় একটু সময় নিয়ে গরম করা উচিত।

* পালং শাক : অন্যান্য সবুজ পাতাযুক্ত শাক-সবজির মতোই পালংশাকে উচ্চ মাত্রার আয়রণ ও  নাইট্রেট  থাকে। তবে পালং শাকও পুনরায় গরম করা বিপজ্জনক। কা্রণ উচ্চমাত্রার নাইট্রেট সমৃদ্ধ পালং শাক রান্নার পর যখন পুনরায় গরম করা হয় তখন তা পুরোপুরি নাইট্রাইটে পরিনত হয় যা খেলে দেহে ক্যানসার কোষ সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।

* পোড়া বা খাবার তেল: আমরা অনেকেই খাবার রান্নার পর অবশিষ্ট তেল রেখে দেই পরবর্তী কোনো খাবার রান্নার জন্য কিন্তু একবার ও কি খেয়াল করেছি এটা আমাদের শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর । পোড়া তেল ফের গরম করে রান্নায় ব্যবহার করলে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

* শালগম : শালগম সাধারণত স্যুপ বানানোর জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়। তবে উচ্চ মাত্রার নাইট্রেট সমৃদ্ধ শালগম রান্নার পর পুনরায় গরম করা হলে বিষাক্ত হয়ে যেতে পারে।

* মাশরুম : মাশরুম উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন সমৃদ্ধ। তবে মাশরুম যেদিন রান্না করা হয় সেদিনই খেয়ে ফেলা উত্তম। উচ্চমাত্রায় প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে রান্না করা মাশরুম গরম করা হলে প্রোটিন নষ্ট হয়ে যায়। ফলে পুনরায় গরম করা মাশরুম খেলে তা পেটের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর, এমনকি তা হৃদরোগের কারণও হতে পারে।

* বিট : বিট পালং শাকের মতো উচ্চ মাত্রায় নাইট্রেট সমৃদ্ধ সবজি। তবে রান্না করা বিট পুনরায় গরম করে খেলে তা পেটের অসুখের কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ   শিখে নিন উল্টো ডিম সেদ্ধ করার কৌশল!

* সেলারি (ধনে গাছের ডাটা) : সেলারি সবজিটিও উচ্চ মাত্রায় নাইট্রেট সমৃদ্ধ। তবে সেলারি ডাটা পুনরায় গরম করলে এর নাইট্রেট পুরোপুরি নাইট্রেইটে রূপান্তরিত হয়। শরীরে বেশি মাত্রায় নাইট্রেইট প্রবেশ করলে তা মেথিমোগ্লোবিনেমিয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এটি এমন একটি পর্যায়, যেখানে নাইট্রেইটে শরীরের রক্তে হেমোগ্লোবিন ও আয়রনের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করে জীবন্ত কোষে অক্সিজেন বহনে বাধা দেয়। যা শারীরিক জটিলতা থেকে শুরু করে মৃত্যুও ঘটাতে পারে।

* চা: এটা আমাদের অনেকেরই জানা যে একবার চা বানানোর পর তা ঠাণ্ডা হয়ে গেলে পুনরায় গরম করা উচিত নয়। কারণ চায়ের মধ্যে ট্যানিক অ্যাসিড থাকে। তৈরি করা চা ফের গরম করে পান করলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে।

অনেকেই আছেন যারা খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়া বা পচে যাওয়ার ভয়ে খাবার কয়েকবার গরম করে বা ফ্রীজে রাখেন। সেক্ষেত্রে যে সকল খাবার একাধিকবার গরম করা যায় না , সেসব খাবার ঠাণ্ডা স্থানে রাখতে পারেন যেখানে বাতাসের চলাচল ভালো । নতুবা আপনাকেই স্বাস্থ্য নিয়ে হুমকির মুখে পড়তে হতে পারে।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

3 COMMENTS

Leave a Reply to kiosk online shop Cancel reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

seventeen + thirteen =