যেসব কারণে শরীর ফুলে পানি আসে

0
292
শরীর ফুলে পানি

শরীর, হাত, পা ও মুখ ফুলে যাচ্ছে। পেট সব সময় ভরাভরা ভাব, খেতে ইচ্ছা করে না, পেটে গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে।

কাজ করতে গেলে সহজে হাঁপিয়ে উঠছেন, শরীর অত্যধিক ঘেমে যাচ্ছে এবং কাজ করার সময় শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, বুক ধড়ফড় করছে। এ অবস্থায় কি করবেন বা কোন ধরনের চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। কেউ বলছে কিডনির সমস্যা, আবার কেউ বলছে হার্টের সমস্যা— এসব শুনে আপনি দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছেন।   উপরোল্লিখিত সমস্যাগুলোর মূল কারণ আপনার শরীরে অত্যধিক পানি জমা হয়ে যাওয়া। শরীরে পানি জমা হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে হার্ট ফেইলুর, কিডনি ফেইলুর, লিভারের সমস্যা, রক্তশূন্যতা, থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া— এসব কিছুকেই বিবেচনায় আনা হয়। এসবের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ কারণ হিসেবে হার্ট ফেইলুরকে দায়ী করা হয়। হার্ট ফেইলুর কেন হয়? যারা দীর্ঘদিন যাবৎ উচ্চ রক্তচাপজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন, যারা দীর্ঘদিন যাবৎ ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন, যাদের হার্টের রক্তনালিতে ব্লক আছে (এর লক্ষণ হিসেবে পরিশ্রমকালীন সময়ে বুকের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা ও বিশ্রামে এসব উপসর্গ দ্রুত নিরাময় হওয়া), যারা হার্টে রিং পরেছেন বা বাইপাস অপারেশন করেছেন, যাদের হার্টের বাল্বের সমস্যা আছে, যারা জন্মগত ও বংশগত হৃদরোগে ভুগছেন এসব কিছু হলো হার্ট ফেইলুরের প্রধান কার, তাছাড়াও অন্য যেসব কারণে পানি জমা হয়ে থাকে যেমন কিডনি ফেইলুর, লিভারের সমস্যা, থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি এবং রক্তশূন্যতা ইত্যাদিতে দীর্ঘসময় ধরে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও পর্যায়ক্রমে হার্ট ফেইলুরে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই একসময় এ ধরনের সব রোগীই হার্ট ফেইলুরে আক্রান্ত হবে, এটাই এসব রোগের পরিণতি এবং জটিল পর্যায়ে হার্ট ফেইলুরের চিকিৎসাই এসব রোগীর জন্য কার্যকর  চিকিৎসা বলে বিবেচিত। প্রথমে উল্লিখিত লক্ষণগুলো হলো হার্ট ফেইলুরের চরম পর্যায়ের উপসর্গ। সাধারণভাবে  হার্ট ফেইলুর খুব ধীরে ধীরে ঘটতে থাকে। ফলে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় ধরে আস্তে আস্তে এর প্রকোপ বাড়তে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় অনেক রোগীই তাতে তেমন গুরুত্ব দেন না, তাই প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্নও হন না বা চিকিৎসা গ্রহণ করেন না। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারলে অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা হার্ট ফেইলুরকে প্রতিরোধ করতে পারবেন বা এর জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন অথবা হার্ট ফেইলুরের অগ্রগতিকে শ্লথ করে,  হার্ট ফেইলুরে আক্রান্ত হওয়াকে বিলম্বিত করে অনেক দিন তা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।   হার্ট ফেইলুরের প্রাথমিক লক্ষণ অনেক রয়েছে, যেমন—

আরও পড়ুনঃ   অনেক বয়স পর্যন্ত তারুণ্য ধরে রাখার কৌশল!

শারীরিক যোগ্যতা কমতে থাকা, মানে শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করা, পরিশ্রম করার দক্ষতা কমে যাওয়া, কম পরিশ্রমে বেশি ক্লান্তি বোধ করা, খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া, হজম প্রক্রিয়ায় অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হওয়া, বুকে হালকা ব্যথা ও চাপ অনুভূত হওয়া বিশেষ করে কাজ-কর্ম সম্পাদনের সময়, কাজের আগ্রহ কমে যাওয়া, আগের চেয়ে বেশি অলসতা বোধ করা, শারীরিক ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকা, পরিশ্রমের সময় হালকা কাশি হওয়া ও দম কমে যাওয়া, পেটভরে খাওয়ার পর অস্বস্তি বোধ করা বা শ্বাসকষ্ট হওয়া। খাওয়ার পর রাতে বিছানায় শুতে গেলে হালকা কাশির উদ্বেগ হওয়া বা শ্বাসকষ্ট হওয়া, কারও কারও মধ্যরাতে শ্বাসকষ্টের জন্য ঘুম ভেঙে যাওয়া,  ঘুমের সময় নাক ডাকার প্রবণতা বাড়া। অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়ে মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়, তার সঙ্গে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে এবং হাইপ্রেসারের রোগীদের রক্তচাপ বৃদ্ধি ঘটে থাকে। তাই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শমশের হার্ট কেয়ার এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × five =