যা খেলে হিমোগ্লোবিন বাড়বে: হিমোগ্লোবিন কম থাকলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত

0
1557
হিমোগ্লোবিন

লোহিত রক্তকণিকার আয়রনসমৃদ্ধ প্রোটিনের নাম হিমোগ্লোবিন। এটি গোটা দেহে অক্সিজেন বহন করে।

মানুষের দেহে সঠিক পরিমাণে হিমোগ্লোবিন থাকা জরুরি। দেহকে সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পাদনের জন্য হিমোগ্লোবিন প্রয়োজন। ভারতের ফর্টিস হাসপাতালের চিকিৎসক মনোজ কে আহুজার মতে, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঝিম ধরা, ক্ষুধামান্দ্য ও দ্রুত হৃৎস্পন্দনের মতো সমস্যা দেখা যায়। যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অনেক কম হয়, তবে রক্তাল্পতা বা এর চেয়েও মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

হিমোগ্লোবিন কি? হিমোগ্লোবিনের কাজ কি? হিমোগ্লোবিনের অভাবে কী হয়?

চিকিৎসক আহুজার মতে, ‘সবার লৌহের দরকার হয়। তবে নারীদের ঋতুচক্রের সময়, গর্ভাবস্থায়, শিশুদের বেড়ে ওঠার সময়, রোগ থেকে সেরে ওঠার মুহূর্তে লৌহের বেশি দরকার হয়। সম্প্রতি এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে প্রাকৃতিক উপায়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানোর উপায় বর্ণনা করা হয়েছে। দেখে নিন কী খেলে হিমোগ্লোবিন বাড়বে।

দুধ
প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও প্রোটিন যোগায়।
দুধে খুব বেশি পরিমাণে আয়রন না থাকলেও এতে প্রায় সব রকমের ভিটামিন
বি আছে। এছাড়াও দুধে আছে পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম। এই খাদ্য উপাদান গুলো রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্ত শূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। তাই রক্ত
শূন্যতা রোগীদের জন্য নিয়মিত অন্তত এক গ্লাস করে দুধ খাওয়া উপকারী।

ডিম: আমিষ জাতীয় খাদ্যের মধ্যে ডিম অন্যতম। এতে রয়েছে আয়রন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। ডিমের কুসুমে আছে খনিজ পুষ্টি ও ভিটামিন। এ কারণে দুর্বল রোগীদের প্রতিদিন সিদ্ধ ডিম খেতে বলা হয়।

ডার্ক চকলেট: প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে ডার্ক চকলেটে। দেহে আয়রনের ঘাটতি মেটায় এটি। যার ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও দ্রুতগতিতে বেড়ে যায়।

বাদাম: যে কোনো ধরনের বাদাম মানবদেহের জন্য উপকারী বলে বিবেচিত হয়। যে কারণে তরুণদের কাজু বাদাম, চিনা বাদাম এবং আখরোট খেতে বলা হয়। এতে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে।

আরও পড়ুনঃ   হিমোগ্লোবিন কি? হিমোগ্লোবিনের কাজ কি? হিমোগ্লোবিনের অভাবে কী হয়?

মাংস: রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রোটিন। এজন্য সব ধরনের লাল মাংস যেমন- গরু ও খাসির মাংস খেতে হবে। কলিজা আয়রনের সবচেয়ে ভালো উৎসগুলোর মধ্যে একটি। আয়রন হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। মুরগির মাংস লাল না হলেও তা দেহকে অনেক আয়রন সরবরাহ করে থাকে।

সামুদ্রিক মাছ: এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টির উপাদান আছে। অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতায় শিকার রোগীদের প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ রাখতে হবে।

সয়াবিন: ছোলা বা সয়াবিন জাতীয় খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। সয়াবিন বর্তমানে রোগীদের জনপ্রিয় একটি খাবার। এ থেকে সুস্বাদু সব খাবার তৈরি হয় এবং এটা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়।

লৌহ/আয়রন যুক্ত খাবার
শরীরে লৌহের ঘাটতি হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে লোহা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। লৌহসমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে মুরগির কলিজা,বীট,পালং শাক, ঝিনুক, ডিম, আপেল, বেদানা, ডালিম, তরমুজ, কুমড়ার বিচি, খেজুর, জলপাই,আলমন্ড, আমলকি, কিশমিশ ইত্যাদি। বিশেষ করে রোজ একটি করে আপেল বা বেদনা খেলে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমানকে কম হতে দেয় না। ড্রাই ফ্রুটস যেমন কিসমিস, আলমন্ড, শুকনো খেজুর আয়রনের ভান্ডার। সুতরাং হিমোগ্লোবিন কম থাকলে এগুলি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
পালংশাকে অফুরন্ত আয়রন থাকে।এটি শুধু আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমান বাড়িয়ে তোলার সাথে সাথে আমাদের দেহে ক্যান্সার সংক্রামনকেও রোধ করে।এছাড়া কুমড়োর বীজেও প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে। ১০০ গ্রাম কুমড়োর বীজ আমাদের শরীরে ৮৩% আয়রনের যোগান দিতে পারে। সুতরাং হিমোগ্লোবিনের পরিমান বাড়িয়ে তোলার জন্য এই দুটি খাবারই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া চিকেন লিভার,মটন লিভার,সী ফুড, টোফু, ব্রাউন রাইস, ব্রকলি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে। তাই হিমোগ্লোবিন কমে গেলে এগুলি খাওয়া উচিত।

ভিটামিন সি
ভিটামিন সি-এর অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে। তাছাড়া ভিটামিন সি ছাড়া লোহা পুরোপুরিভাবে শোষণ হয় না। তাই শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমানকে বাড়িয়ে তোলার জন্য ভিটামিন C যুক্ত খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। ক্যাপসিকাম, পালংশাক,পাকাপেঁপে,জাম্বুরা, কমলা, লেবু, স্ট্রবেরি, গোলমরিচ, সবুজ ফুলকপি (ব্রকোলি), আঙুর, টমেটো ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। হিমোগ্লোবিনের অভাব হলে এগুলি খাওয়া উচিত।

আরও পড়ুনঃ   হাই ব্লাড প্রেশার? ঘরেই আছে সমাধান।

ফলিক অ্যাসিড
ফলিক অ্যাসিড একপ্রকার ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। লাল রক্তকণিকা তৈরিতে এর দরকার হয়। এতে এমনিতেই হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সবুজ পাতাবহুল শাক, স্প্রাউট, সবজি, কলিজা, ভাত,গমের শীষ, শিমের বিচি, বাদাম, কলা,মটন লিভার, ব্রকলি, মুরগির যকৃত ও সবুজ ফুলকপিতে অনেক ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়।

 বিট

লোহিত রক্তকণিকা সৃষ্টিতে বীটকে গুরুত্বপূর্ণ খাবার বলে তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা। হিমোগ্লোবিন বাড়াতে বিটের রস খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ফাইবার ও পটাশিয়াম। এর পুষ্টিমান শরীরের লাল রক্তকণিকা বাড়ায়।

আপেল
দিনে একটি করে আপেল খেয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে পারেন। আয়রনের উৎস আপেলে আরও নানা প্রকার পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রতিদিন খোসাসহ একটি আপেল খান। কিংবা অর্ধেক আপেল ও অর্ধেক বীটের জুস বানিয়ে দিনে দুইবার খেতে হবে।এতে আদা বা লেবুর রস দিতে পারেন বাড়তি ফ্লেভারের জন্য।

ডালিম
ডালিমে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার এবং প্রোটিন। আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা ও আঁশ (ফাইবার) সমৃদ্ধ ডালিম রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে দেহে রক্ত চলাচল সচল রাখে। প্রতিদিন মাঝারি আকৃতির একটি ডালিম খাওয়ার চেষ্টা করুন। অথবা এক গ্লাস ডালিমের জুস খান।

আলু   

শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাব হলে আলু খাওয়া উচিত। এতে প্রচুর পরিমানে আয়রন ও ভিটামিন C বর্তমান। তাই এটি শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমান বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

বিছুটি পাতার চা

বিছুটি পাতার কথা শুনে ভয় পাবেন না। এটি একট হার্বাল উদ্ভিদ যাতে রয়েছে ভিটামিন বি, আয়রন এবং ভিটামিন সি। এসব তথ্য দেন ভারতের ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউটের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ড. আদর্শ কুমার। এক কাপ গরম পানিতে দুই চামচ শুকনো বিছুটি পাতার গুড়া দিন। এটা ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। সামান্য মধু মিশ্রিত করুন। প্রতিদিন এই চা দুই কাপ খাবেন।

আরও পড়ুনঃ   রক্তদানের উপকারিতা

ব্যায়াম

মধ্যম বা ভারী ব্যায়ামের কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। যখন আপনি ব্যায়াম করেন, তখন দেহের অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এই অক্সিজেন পরিবহণের জন্য দেহে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন উৎপন্ন হয়।

আয়রন ব্লকার এড়িয়ে চলুন

এমন খাবার খাবেন না যা আয়রন গ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করে। বিশেষ করে কফি, চা, কোলা জাতীয় পানীয়, অ্যালকোহল, বিয়ার ইত্যাদি দেহকে আয়রন গ্রহণে বাধা দেয়। এগুলো খাওয়া এড়িয়ে গেলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি অবলম্বনে ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × three =