ম্যামোগ্রাফি (Mamography) কী? কেন এবং কাদের জন্য এই টেষ্ট?

0
2479
ম্যামোগ্রাফি

ম্যামোগ্রাফি হলো স্তনের বিশেষ ধরনের এক্সরে পরীক্ষা। সাধারন এক্সরে পরীক্ষার চেয়ে এতে তেজস্ক্রিয়তা (Radiation) এর মাত্রা অনেক কম। এ পরীক্ষায় স্তনটিকে আল্ট্রাসেনসিটিভ এক্সরে মেশিনের গায়ে লাগিয়ে কম ভোল্টেজ এবং বেশী এম্পিয়ারেজ মাত্রার এক্সরে স্তনের ভিতর দিয়ে পাঠানো হয়। এতে রেডিয়েশন এর মাত্রা থাকে ০.১ সিগাই এর মতো যা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।

ম্যামোগ্রাফি পরীক্ষার মাধ্যমে হাতে যাচাই করে যে সকল স্তন টিউমার পাওয়া যায়না সেসকল টিউমার এক্সরে তে ধরা পরে। টিউমারটি ক্যান্সার না নিরীহ শ্রেনীর তাও ম্যামোগ্রাফি পরীক্ষায় অনেক সময় ধরা পরে তবে তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই বায়োপসি করা প্রয়োজন। মহিলাদের বয়স ত্রিশ এর উর্ধ্বে গেলে ম্যামোগ্রাফি পরীক্ষাটি সঠিক ফলাফল দেয়। এর কম বয়সি মহিলাদের স্তনের টিউমার নির্নয়ের জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা বেশী কার্যকর। তবে সব মিলিয়ে শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই ম্যামোগ্রাফি পরীক্ষাটি সঠিক ফলাফল দেয়। টিউমারটি ক্যান্সার না নিরীহ শ্রেনীর কোনো টিউমার তা ১০০% নিশ্চিত করার পরীক্ষা অবশ্য বায়োপসি করে হিস্টপ্যাথলজি করা।

সূত্রঃ সুস্বাস্থ্য

ব্রেস্ট ক্যান্সার শনাক্ত করার জন্য ম্যামোগ্রাম কার্যকরী একটি পদ্ধতি। ম্যামোগ্রাম হচ্ছে ব্রেস্টের এক্সরে করার একটি পদ্ধতি। প্রায় এক শতাব্দী পূর্বে ব্রেস্টের টিস্যু পরীক্ষা করার জন্য প্রথম এক্সরে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে ম্যামোগ্রামের জন্য যে এক্সরে মেশিন ব্যবহার করা হয় তাতে কম এনার্জির এক্সরে ব্যবহার করা হয়। এতে আগের তুলনায় কম রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয়। আজকের এই ফিচারে ম্যামোগ্রামের বিষয়ে জানবো।
১। ৪০ এর কম বয়সের নারীদের ম্যামোগ্রাফি করার পরামর্শ দেয়া হয়না। কারণ কম বয়সের নারীদের ব্রেস্টের টিস্যুর ঘনত্ব বয়স্ক নারীদের তুলনায় বেশি হয়। ম্যামোগ্রাফিতে ঘন অংশকে সাদা দেখা যায়। ব্রেস্ট ক্যান্সারকেও সাদা দেখায় বলে চিহ্নিত করা কঠিন হয়।
২। আপনার পরিবারে যদি ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস থাকে তাহলে চিকিৎসক আপনাকে ম্যামোগ্রাফি করার পরামর্শ দেবেন এবং আপনার বয়স ২৫ হলেও তখন তা করতে হবে।
৩। অনেকেই জানেন না যে ম্যামোগ্রাফি দুই ধরণের হয় – স্ক্রিনিং এবং ডায়াগনস্টিক। স্ক্রিনিং ম্যামোগ্রাফি হচ্ছে ব্রেস্টের রুটিন এক্সরে, যে নারীদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের তেমন কোন লক্ষণীয় উপসর্গ দেখা যায়না তাদের করাতে হয়। সাধারণত ৪০ এর বেশি বয়সের নারীদেরই এটা করার পরামর্শ দেয়া হয়। অন্যদিকে ডায়াগনস্টিক ম্যামোগ্রাফি হচ্ছে ব্রেস্ট এক্সরে, যে নারীদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ পায় অথবা চিকিৎসক যদি ক্যান্সার হওয়ার সন্দেহ প্রকাশ করেন তাহলেই করতে বলেন।
৪। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ম্যামোগ্রাফি করানো ঠিক নয়। আপনার ব্রেস্টে যদি কোন অস্বাভাবিকতা দেখা যায় অথবা ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশিত হয় তাহলে প্রথমেই একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ডাক্তার নিজে পর্যবেক্ষণ করবেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার নির্দেশ দেবেন।
৫। ম্যামোগ্রাফি করতে ২০-৩০ মিনিট সময় লাগে এবং এই পরীক্ষাটি করার পরই স্বাভাবিক কাজকর্ম করা যায়। ম্যামোগ্রাফি করার সময় বেশিরভাগ নারীই ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করে। ব্যথা যদি তীব্র হয় তাহলে যিনি ম্যমোগ্রাফি করাবেন সেই এক্সপার্টকে তা জানান।
৬। ম্যামোগ্রাফি করানোর উপযুক্ত সময় হচ্ছে পিরিয়ড হওয়ার ১ সপ্তাহ পর।
৭। ম্যামোগ্রাম করানোর দিন পাউডার বা পারফিউম ব্যবহার করা উচিৎ নয়। কারণ এগুলো ম্যামোগ্রামে ক্যালসিয়াম স্পটের মত দেখায়। গর্ভবতী নারীদের ম্যামোগ্রাম করানো উচিৎ নয়।

আরও পড়ুনঃ   এনজিওগ্রাম কি এবং কেন?

 এ বিষয়ে  ডা. এম.এইচ সরদার লিখেছেন স্তন ক্যানসার যে কত ভয়াবহ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০০৪ সালে বিশ্বজুড়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য নারীর মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশেও এ ক্যানসারে মৃতের সংখ্যা কম নয়। শুরুতে এটি নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন স্ক্রিনিং পদ্ধতির মধ্যে ম্যামোগ্রাফি জনপ্রিয়। যাদের পরিবারে মা, খালা বা বোনের স্তন ক্যানসারের আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস আছে এবং রক্তে এ ক্যানসারের জিন পাওয়া গেছে, তারা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এসব নারীকে ৩৫ বছরের পর থেকে প্রতি বছর একবার করে ম্যামোগ্রাফির পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু নর্থ আমেরিকার রেডিওলজিক্যাল সোসাইটির একটি সেমিনারে গবেষকরা বলেন, ম্যামোগ্রাফি বা বুকের এক্সরে ঝুঁকিপূর্ণদের ঝুঁকি বেশ বাড়িয়ে দেয়। নেদারল্যান্ডসের ইউনির্ভাসিটি মেডিক্যাল সেন্টারের মারিজকি সি জ্যানসেনের নেতৃত্বে একদল গবেষক ৯ হাজার ৪২০ জন ঝুঁকিপূর্ণ নারীকে গবেষণার কাজে বাছাই করেন। গবেষণায় দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সাধারণের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি। ঝুঁকিপূর্ণ নারী মধ্যে যারা ২০ বছর বয়সের আগে স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের জন্য ম্যামোগ্রাফি করেছেন, তাদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার হার অন্য ঝুঁকিপূর্ণ নারীর চেয়ে আড়াই গুণ বেশি। যারা ২০ বছরের পর ম্যামোগ্রাফি করিয়েছেন, তাদের মধ্যে এ হার দেড় গুণ বেশি। এ গবেষণার কথা বিবেচনা করেই বিশেষজ্ঞরা ৩০ বছরের কম বয়সী ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের স্ক্রিনিং করতে ম্যামোগ্রাফি বা এক্স-রে ব্যবহার না করে স্ক্রিনিংয়ের জন্য এমআরআই পরীক্ষা করতে পরামর্শ দিয়েছেন।

ইসিজি (ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম) ( ECG (Electrocardiogram)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 + one =