মুখে ঘা বা ঠোঁটে ঘা হলে করণীয়: মুখে ঘা বা ঠোঁটে ঘা হলে কী করবেন?

0
3367
ঠোঁটে ও মুখে ঘা দূর করার উপায়

চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী, প্রায় দুশো রোগের প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পায় মুখগহ্বরের ঘা-এর মাধ্যমে। মুখের ভেতরের মাংসে বা জিহ্বায় ঘা হয়, ব্যথা করতে থাকে, কিছু খেতে গেলে জ্বলে… মোটামুটি এগুলোই হচ্ছে মুখে ঘা এর প্রাথমিক লক্ষণ। অনেকেরই এ সবের সঙ্গে সঙ্গে মুখ ফুলে যাওয়া বা পুঁজ বের হওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। সাধারণত, মুখে গালের ভেতরের অংশে বা জিভে ঘা হয় কোনওভাবে কেটে ছিড়ে গেলে। আবার শক্ত ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলেও এ সমস্যা দেখা দেয় অনেকেরর। খুব গরম পানীয় পান করলে বা কিছু চিবাতে গিয়ে গালের ভেতরে কামড় লাগলেও ঘা হতে পারে। মুখের ভেতরের অংশে বা ঠোঁটে আলসার বা ঘা হলে ———–

কীভাবে সাবধানে থাকবেন-

১. মুখে আঘাতের বিষয়ে সাবধানে থাকবেন। দাঁত ব্রাশের সময় সতর্ক থাকবেন। দাঁত আঁকাবাঁকা থাকলে সেটার চিকিৎসা করান।

২. এ সমস্যা রোধের জন্য পরিমিত খাবার, ঘুম, মানসিকভাবে চাঙা থাকার চেষ্টা করবেন।

কী করবেন ঘা হলে-

যষ্টিমধু

যষ্টিমধু মুখের ঘা দূর করতে বেশ কার্যকরী একটি উপাদান। এক টেবিল চামচ যষ্টিমধু দুই কাপ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর এটি দিয়ে কয়েকবার কুলি করুন। উপকার পাবেন।

ধনে পাতা
ধনে পাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে কুলকুচি করুন। দিনে কয়েকবার করে করলে আরাম পাবেন।
অ্যালোভেরা জেল

অ্যালোভেরা জেল বা অ্যালোভেরার রস মুখের ঘা কমিয়ে দিতে পারে। অ্যালোভেরা জেল প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক, যার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফিংগাল, অ্যান্টিভাইরাল উপাদান ক্ষত কমিয়ে দিতে পারে।

নারকেল দুধ

এক টেবিল চামচ নারকেল দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ দিনে তিন থেকে চারবার ঘায়ের জায়গায় লাগান। মধু ছাড়া শুধু নারকেলের দুধ দিয়েও ক্ষত স্থানে মালিশ করতে পারেন। এবং ক্ষত দ্রুত সেরে যাবে।

তুলসি

তুলসির পাতায় অনেক ওষুধি গুণ থাকে। মুখে ঘা হলে কয়েকটি তুলসির পাতা চিবিয়ে নিন। তুলসি পাতার রসে ঘা সেরে যাবে।বা কয়েকটি তুলসি পাতাসহ পানি দিনে তিন থেকে চারবার পান করুন। এটি দ্রুত মুখের ঘা প্রতিরোধ করে দেবে এবং মুখের ঘা হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেবে।

আরও পড়ুনঃ   দেহের ৮টি রোগ প্রতিরোধে মুখের স্বাস্থ্য

টি ব্যাগ

দ্রুত ব্যথা এবং জ্বালা দূর করতে টি ব্যাগ খুবই কার্যকর। একটি টি ব্যাগ ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে সেটি ঘায়ের জায়গায় লাগান। ব্যথা এবং ক্ষত দ্রুত সেরে যাবে।
টমাটো
খাবারের সঙ্গে পাতে কাঁচা টমাটো খাওয়া অভ্যাস করুন। কয়েক দিন খেলেই মুখের ভেতরের ঘা সেরে যাবে।

বরফ বা ঠাণ্ডা পানি

মুখের ঘায়ের ব্যথা বেশি হলে এক টুকরা বরফ নিয়ে ঘায়ের স্থানে রাখুন। অথবা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে কুলকুচি করতে পারেন। লবণ-পানি দিয়ে কুলকুচি করতে পারেন, এটি মুখের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।

মধু

একটি তুলোর বলে মধু লাগিয়ে নিতে হবে। এবার এটি মুখের ঘায়ের স্থানে লাগান। এছাড়া মুখের ঘায়ের স্থানে গ্লিসারিন, ভিটামিন ই অয়েল লাগাতে পারেন।প্রয়োজনে বিডি হেলথ খাঁটি মধু কিনুন।
লবণ
এক কাপ গরম পানিতে এক চিমটি লবণ ফেলে কুলকুচি ও গার্গল করুন। এতে ঘা হওয়া জায়গাটি তাড়াতাড়ি সেরে উঠবে। খাওয়ার আগে কুলকুচি করলে বেশি ফল পাবেন।

লবঙ্গের রস

এক টুকরা লবঙ্গ মুখে দিয়ে রাখুন বা লবঙ্গের রস দিয়ে ক্ষত স্থানটিতে লাগাতে পারেন। উপকার পাবেন।
হলুদ
হলুদ গুঁড়ো নিয়ে তাতে সামান্য মধু মিশিয়ে সেই মিশ্রণ মুখের ভেতরে হওয়া ঘা-এ লাগান।
পানি দিয়ে গার্গল
প্রথমে গরম পানি গার্গল করে সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা পানিতে গার্গল করতে পারেন। এই টোটকা কাজে দেবে। কয়েকবার পাল্টে পাল্টে করলে উপকার পাবেন।
বেকিং সোডা

বেকিং সোডা ক্ষারীয় তাই এসিডকে নিরপেক্ষ করে ও মুখের ঘা কে বিরক্ত করে এবং ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে ঘা নিরাময়ে সাহায্য করে। ১/২ কাপ উষ্ণ গরম পানিতে ১ চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন।

ফিটকিরি

মুখের ঘা যেহেতু সব সময় আদ্র থাকে তাই এই ঘা সারানোটা একটু কঠিন। আচার বানানোর জন্য ও শশা থেকে পানি বের করার জন্য ফিটকিরি পাউডার ব্যবহার করা হয়। ঠিক তেমনি মুখের ঘা শুকানোর জন্য ও ফিটকিরি পাউডার কাজ করে। ফিটকিরির একটা ছোট টুকরা সরাসরি মুখের ঘা এর মধ্যে লাগান। ১ মিনিট এভাবে রেখে দিন। এটা স্বাদে তিক্ত তাই ভালো লাগবেনা, রসটুকু গিলে ফেলবেন না। ৬০ সেকেন্ড পরে লালা সহ ফিটকিরি বাহির করে ফেলুন। তবে মুখ ধুয়ে ফেলবেন না। এতে করে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যথা কমে যাবে। আপনার আলসারটি যেতে হয়তো দুই বা তিন দিন সময় লাগবে তবে ব্যথা চলে যাবে তাড়াতাড়ি। যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্যথা না যায় তাহলে প্রক্রিয়াটি আবার অনুসরণ করুন।

আরও পড়ুনঃ   মাড়ির রক্তক্ষরণ ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে যা করবেন

সতর্কতা – এক আউন্স ফিটকিরি মানুষের জন্য বিষের মত কাজ করে। গর্ভবতী ও শিশুদের জন্য এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা নিষেধ।
এছাড়াও আরও কিছু টিপস
১) বাইরের পানীয় থেকে বিরত থাকা। মসলা যুক্ত খাবার পরিহার করা।

২) রাতে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমান।

৩) ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়া।

৪) নরম দাঁত ব্রাশ ব্যবহার করা, মুখে কোন চাপ না দেওয়া।

৫) মোটামুটি ভাবে ৭ দিনের মধ্যে এই ঘা ভালো হয়ে যায়। যদি ভালো না হয় অথবা ব্যথা থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ মাফিক carmellose sodium, benzocaine gels যুক্ত পেস্ট ও জেল মুখে লাগানো যায়। Chlorhexidine mouthwash মাউথ অয়াশ মুখের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। বাজারে Bongel cream, viodin mouthwash, riboflabin পাওয়া যায়, যেটা মুখের ঘা এর জন্য ভালো।
৬) মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়ার এন্টাসিড উপাদান মুখের এসিডকে নিষ্ক্রিয় করে যা মুখের ঘা এর তীব্রতা বাড়ায়। একটি কটন বলে মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়া লাগিয়ে মুখের ঘায়ে লাগাতে পারেন দিনে ৩-৪ বার।
৭) অ্যান্টাসিড ট্যাবলেট মুখের ঘা এ লাগিয়ে রেখে দিলে ব্যথা কমে যাবে ও নিরাময় হবে।
৮) হাইড্রোজেন পারক্সাইড দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে ঘা ভালো হয়।
৯) প্রতিদিন টকদই খান।
১০) মুখের আলসার হলে এসিডিক খাবার এড়িয়ে চলুন। কারণ এসিড মুখের ঘা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × 5 =