বৃষ্টির দিনে ছাতাটা না হারিয়ে সজত্নে সেটিকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার ভাবনায় আমরা এতটাই মশগুল থাকি যে অন্য কিছু নিয়ে ভাবার সময়ই থাকে না। কিন্তু বছরের বাকি সময় আমাদের মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরপাক খায়, তা হল কীভাবে সুস্থ থেকে ডাক্তারের খরচ কমানো যায়। কিন্তু সেই ভবনার কোনও জুতসই প্রতিকারই খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই তো এই প্রবন্ধে এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদানের সন্ধান দেওয়া হল, যা শীত হোক কী গ্রীষ্ম, আমাদের সুস্থ রাখতে দারুনভাবে সাহায্য করতে পারে।
যে কোনও প্রকৃতিক উপাদানেই এত পরিমাণ শক্তি থাকে যে তাকে কাজে লাগিয়ে যে কোনও শারীরিক সমস্যাকে বাগে আনা সম্ভব। শুধু জানতে হবে সঠিক প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে। যেমন রসুনের কথাই ধরুন না। দেখতে কুৎসিত, খেলে গন্ধ বেরয় বিদখুটে। তবু দেখুন শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতে এই সবজিটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে রসুন। সেই কারণেই তো চিকিৎসকেরা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়া পরামর্শ দেন। তবে অ্যাস্থেমা রোগীরা ভুলেও রসুন খাবেন না। শুধু তাই নয়, যে কোনও অপারেশনের আগে রসুনকে এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। প্রসঙ্গত, খেয়াল রাখবেন দিনে ২-৩ টি কোয়ার বেশি রসুন খাওয়া একেবারেই চলবে না!
প্রতিদিন রসুন খেলে সাধারণত যে যে উপকারগুলি পাওয়া যায়, সেগুলি হল…
১. রক্তকে পরিশুদ্ধ করে:
প্রতিদিন এক গ্লাস গরম জলের সঙ্গে দুটো রসুনের কোয়া খেলে রক্তে থাকা নানা বিষাক্ত উপাদান শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে ত্বক এবং শরীর উভয়ই চাঙ্গা হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, যারা ওজন কমানোর কথা ভাবছেন, তারা দু কোয়া রসুন খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক গ্লাস গরম জলে লেবু চিপে সেই জল পান করুন। এমনটা করলে দেখবেন নিমেষে ওজন কমে যাবে।
২. ভাইরাল ফিবারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমবে:
ওয়েদার চেঞ্জের সময় যারা সর্দি-কাশিতে খুব ভুগে থাকেন। তারা আজ থেকেই দু কোয়া রসুন অথবা গার্লিক টি খাওয়া শুরু করুন। তাহলেই দেখবেন আর কোনও দিন এমন ধরনের শারীরিক সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে না। কারণ রসুন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে খুব শক্তিশালী বানিয়ে দেয়। ফলে ভাইরাসদের আক্রমণে শরীরের কাহিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে।
৩. হার্টের রোগকে দূরে রাখে:
রসুনে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রপাটিজ রয়েছে। এই উপাদানটি একদিকে যেমন শরীরে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, তেমনি উচ্চ রক্তচাপকেও নিয়ন্ত্রণে রাখে। আর একথা তো সবারই জানা আছে যে এই দুটি জিনিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে তো হার্টের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটার আশঙ্কা একেবারেই থাকে না। প্রসঙ্গত, রক্তে শর্করার মাত্রাকে স্বাভাবিক রাখার মধ্যে দিয়ে ডায়াবেটিসের মতো রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেও রসুনের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
৪. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের আশঙ্কা হ্রাস পায়:
গত ৭০০০ বছর ধরে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে রসুনের ব্যবহার হয়ে আসেছে। আর কেন হবে নাই বা বলুন, এতে উপস্থিত একাধিক কার্যকরি উপাদান ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস সহ একাধিক জীবাণুর সংক্রমণ আটকাতে যে কোনও আধুনিক মেডিসিনের থেকে তাড়াতাড়ি কাজে আসে। তাই তো প্রতিদিন ১-২ কোয়া রসুন খেলে এমন ধরনের সব রোগের খপ্পরে পরার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না।
৫. ক্যান্সার বিরোধী:
একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে প্রতিদিন রসুন খেলে পাকস্থলী এবং কলোরেকটাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। তাই যাদের পরিবারে এই ধরনের ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে তারা রসুন খাওয়া কোনও দিন বন্ধ করবেন না। দেখবেন উপকার পাবেন।
৬. ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:
শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান বা টক্সিনের কারণে ত্বকের যাতে কোনও ধরনের ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে রসুন। সেই সঙ্গে কোলাজিনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখার মধ্য়ে দিয়ে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। অন্যদিকে প্রায় প্রতিদিন যদি থেঁতো করা রসুন চুলে লাগানো যায়, তাহল দারুন উপকার মেলে। একবার ভাবুন আকারে ওইটুকু, কিন্তু কত কাজেই না আসে।
৭. ক্ষত সারায়:
কেটে গেলে এবার থেকে ক্ষতস্থানে এক টুকরো রসুন রেখে ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দিন। তাহলেই দেখবেন জ্বালা-যন্ত্রণা কমে যাবে। সেই সঙ্গে ক্ষতও সারতে শুরু করবে। আসলে রসুনে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। তাই তো যন্ত্রণা কমাতে এটি এতটা কাজে লাগে।
সূত্রঃ বোল্ডস্কাই