বয়সন্ধিকালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও কিশোর-কিশোরীদের সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা

1
1051
বয়সন্ধিকালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যা, বয়সন্ধিকালীন, স্বাস্থ্য পরিচর্যা

বয়সন্ধিকালকে বিভিন্ন মনস্তাত্বিক, জীব বৈজ্ঞানিকগণ ও চিকিৎসাক্ষিদরা বিভিন্নভাবে সজ্ঞায়িত করেছেন। সজ্ঞায়নের সাধারণ ধারণা হলো মানব জীবনে বয়সন্ধিকাল হলো শৈশব ও প্রাপ্ত বয়স্ক জীবনের মধ্যবর্তী পরিবর্তনশীল পর্যায়, যে পরিবর্তনশীল সময়ে মানুষ শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে নির্ভরশীলতা এবং অপরিপক্কতা হতে ধারাবাহিকভাবে মানসিক ও শারীরিক পরিপক্কতা এবং আত্মনির্ভরশীলতার দিকে যায়।

যৌন বিজ্ঞানীদের মতে, বয়সন্ধিকাল হলো সেই পরিবর্তনশীল সময় যখন জনন সম্বন্ধীয় অঙ্গ সমুহ পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে। অর্থাৎ বয়সন্ধিকাল হলো সেই অর্জনের সময়কাল যখন একজন মানুষ শিশু থেকে শিশু জন্মদানের সক্ষমতা অর্জন করে। প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে যে সকল বৈজ্ঞানিকগণ কাজ করেন তারা মানুষের জৈবিক জীবনকে কয়েকটি পর্যায়ে বিভক্ত করেন। যেমন, শিশু, বয়সন্ধিকাল, যৌবন ও বার্ধক্য। এ কয়েকটি পর্যায়ের মধ্যে বয়সন্ধিকাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। কারণ এ সময়েই ছেলে-মেয়েরা পূর্ণাঙ্গ মানুষের সকল বৈশিষ্ট্যগুলো অর্জন করতে শুরু করে। যেমন, দৈহিক বৃদ্ধি, শরীরের গড়ণে পরিবর্তন এবং যৌনবোধের বিকাশ। বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তন কিশোর ও কিশোরীর জীবনে একই সময়ে আসে না। মেয়েদের সাধারণত ৮-১৫ বছরের মধ্যে যেকোন সময় এবং ছেলেদের ১১-১৬ বছরের মধ্যে যে কোন সময় এই পরিবর্তন সূচিত হয়। পিটুইটারী গ্রন্থি হতে গ্রোথ হরমোন নিঃসরণের ফলে দেহে অস্থির বিকাশ দ্রুততর হয়। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ত্বকের ধরণ পরিবর্তিত হয়। হরমোন লেভেল যখন বেড়ে যাই তখন তৈলাক্ত সিবাসিয়াস গ্রন্থি অধিকতর কর্মক্ষম হয়ে পড়ে। যে সকল হরমোন দেহের বিভিন্ন অংশে লোম ও ত্বকের পরিবর্তন ঘটায়, সেই সকল হরমোন আবার প্রজনন অঙ্গও বিকশিত করে।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে অক্সফাম-এর অর্থায়নে গণসাক্ষরতা অভিযান, ব্র্যাক, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস), হাসাব, বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি (এফপিএবি) সহ কয়েকটি সংস্থা বাংলাদেশে কাজ করছেন। সংস্থ্গাুলো বয়সন্ধিকাল নিয়ে দেশে বেশ গবেষনাও পরিচালনা করেছেন।

সংস্থাগুলোর মতে, বয়সন্ধিকালের এসব পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন জরুরী। এ সময় ত্বকের পরিবর্তন ঘটে এবং শরীরের ঘাম বেশী যার ফলে যথাযথ পরিস্কার থাকা প্রয়োজন। আবার শরীরের দ্রুত বৃদ্ধির কারণে এবং শরীরের ক্ষয় পূরণের জন্য পুষ্টি চাহিদা পূর্ণ হওয়া দরকার। পাশাপাশি মনকে প্রফুল্ল রাখার জন্য খেলাধুলা ও শরীর চর্চা করা জরুরী।

আরও পড়ুনঃ   বয়ঃসন্ধিকাল নিয়ে যত কথা!

বয়সন্ধিকালে ত্বক সাধারণত পরিবর্তিত হয়। এ সময় হরমোন লেভেল যখন বেড়ে যাই তৈলাক্ত সিবাসিয়াস গ্রন্থিরস অধিকতর কর্মক্ষম হয়ে পড়ে এবং সেবাস নামে এক ধরণের চর্বিযুক্ত পর্দার্থ তৈরী করে এই সেবাস নিঃসরিত হয়ে ত্বকে একটা তৈলাক্ত আবহ তৈরী করে। যদি একটা লোমকুপ দ্বারা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এর থেকে ব্লাক হেড হতে পারে। যদি ব্লাক হেড পরিস্কার করা না হয় তাহলে এই লোমকুপের তেল জীবানু সংগ্রহ অব্যাহত রাখে। যার ফলে ব্যাকটেরিয়া পুরো এলাকাটা সংক্রমিত করে এবং এ সংক্রমনের ফলে ব্রণ বা মেছতা হতে পারে। যার ফলে পানি ও সাবান দিয়ে মুখমন্ডল বার বার পরিস্কার করার মাধ্যমে লোপকুপ পরিস্কার রাখতে হয়।

হরমোনের পরিবর্তনের জন্য বয়সন্ধিকালে ঘর্মগ্রন্থিগুলো অধিকতর ঘাম নির্গত করে। যখন এ রস বাতাস এবং বাতাসের ধুলা বালির সাথে মেশে ঘামে গন্ধ তৈরী হয়। তাই বয়সন্ধিকালে ঘাম হতে দুর্গন্ধের সমস্যাও দেখা দেয়। প্রাত্যহিক সাবান ও অধিক পানি দিয়ে গোসল এ গন্ধ থেকে পরিত্রাণের উপায় তবে বিশেষ খেয়াল রাখতে হয় হাতের নিচে ও যৌনাঙ্গের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে।

বয়সন্ধিকালীন সময়ে পুষ্টি চাহিদা অপূর্ণ থেকে গেলে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। এ সময় বিশেষ করে মেয়েদের শরীর থেকে প্রচুর রক্ত বের হয়ে যায় (মাসিকের সময়) তাই এ সময় বেশী করে খাবার খেতে হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানী বা গবেষকদের মতে, বয়সন্ধিকালে একজন কিশোর-কিশোরীর দৈনন্দিন নুন্যতম দুধ বা দুধের তৈরী খাবার ২শ গ্রাম, মাছ-মাংস ৫৮ গ্রাম, ডিম (সপ্তাহে ৩ দিন) ৪টি, ডাল ৫০ গ্রাম, শাক (সবুজ/লাল) ৮৭ গ্রাম, অন্যান্য সবজি ৮৭ গ্রাম, ফল (যেকোন ১টি) ১শ গ্রাম, চাল ৩শ গ্রাম, আটা ৬০ গ্রাম, আলু ১শ গ্রাম, চিনি/গুড় ৪০ গ্রাম, তেল ৪০ গ্রাম পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন হয়।

আব্দুল আজিজ

আরও পড়ুনঃ   সঠিক পদ্ধতিতে তরমুজ খেয়ে যৌনশক্তি ১০ গুন বৃদ্ধি করুন - তরমুজের উপকারিতা - যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়

1 COMMENT

Leave a Reply to David Cancel reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

two × 2 =