ব্যথা পায় না যে পরিবারের মানুষগুলো!

0
214
ব্যথা
তারা উত্তাপ, মরিচের ঝাল এবং হাড় ফ্র্যাকচার হবার ব্যথাগুলো অনুভব করতে পারেন না।

মানুষ মাত্রই ব্যথা পায়। কেটে গেলে, ছড়ে গেলে, পুড়ে গেলে বা জোরে আঘাত পেলে আমরা ব্যথা পাই, কান্না করি বা চিৎকার করি। এ সবই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক তখনই যখন মানুষটির শরীর কেটে বা পুড়ে গেলে, হাড় ভেঙ্গে গেলেও তিনি ব্যথা পান না! ইতালির এক পরিবারে বেশ কিছু মানুষ এমনই, যারা ব্যথা পান না বললেই চলে। চলুন জেনে নিই তাদের কথা।

খুব কম বয়সেই লেটিজিয়া মার্সিলি বুঝতে পারেন তিনি অন্যদের চাইতে আলাদা। ত্বক পুড়ে গেলে তিনি ব্যথা পেতেন না, হাড় ভেঙ্গে গেলেও টের পেতেন না। তার পরিবারে এমন আরো পাঁচজন মানুষ আছেন যারা ব্যথার প্রতি সংবেদনশীল নন।

বিবিসিকে ৫২ বছর বয়সী লেটিজিয়া জানান, আমরা খুবই সাধারণ দৈনন্দিন জীবন কাটাই, হয়তো অন্যদের চাইতে ভালো সময় কাটাই কারণ আমরা সচরাচর ব্যথা অনুভব করি না।”

“আমরা ব্যথা পাই না তা ঠিক নয়। ব্যথা পাই ঠিকই কিন্তু মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য।“

গবেষকেরা ধারণা করেন কিছু স্নায়ু সঠিক প্রতিক্রিয়া না দেখানোর কারণে এই সমস্যাটি হয়। এ ব্যাপারটি নিয়ে যারা গবেষণা করছেন, তাদের ধারণা হয়ত এই পরিবারের সদস্যদের মাঝে কোন একটি জিন মিউটেশন খুঁজে পাবেন, যা ক্রনিক পেইনে ভোগা রোগীদের কাজে আসবে ভবিষ্যতে।

এই পরিবারকে যেভাবে প্রভাবিত করে এই অবস্থা

লেটিজিয়ার মা, তার দুই ছেলে, বোন এবং বোনের মেয়ে সবারই এই একই পরিস্থিতি। তাদের নামেই এই জটিলতাটির নাম- মার্সিলি পেইন সিনড্রোম।

ব্যথা হলো একটি সতর্কতা সংকেত। আপনি কোন কাজ করে ব্যথা পাচ্ছেন তারমানে সেখান থেকে আপনাকে সরে যেতে হবে, সেই কাজটি করা বন্ধ করতে হবে এবং সাহায্য নিতে হবে। কিন্তু মার্সিলি পরিবার ব্যথা টের পায় না বলে অনেক সময়েই তাদের হাড়ে ফ্র্যাকচার হলেও তারা একে আমল দেন না এবং পরবর্তীতে হাড়ের বড় ধরণের ক্ষতি হয় এ কারণে।

আরও পড়ুনঃ   সুখী দাম্পত্যের দশ টিপস

লেটিজিয়া জানান, আত ২৪ বছর বয়সী পুত্র লুডোভিকো ফুটবল খেলে এবং এই ব্যথা না পাওয়ার কারণে বেশ কয়েকবার সমস্যা পড়েছে। তিনি ব্যথা পেলেও খেলতেই থাকেন। ফলে তার গোড়ালীর আশেপাশের হাড় দুর্বল হয়ে পড়েছে।

লেটিজিয়ার ২১ বছর বয়সী ছোট ছেলে বার্নার্ডো বাইক থেকে পড়ে কনুইয়ের হাড় ভেঙ্গে ফেলেছিল কিন্তু সে বুঝতেও পারেনি। এই অবস্থাতেই সে নয় মাইল সাইকেল চালিয়ে গেছে।

লেটিজিয়া মার্সিলি
৫২ বছর বয়সী লেটিজিয়া মার্সিলি।

লেটিজিয়া নিজেও এর ভুক্তভোগী বই কি। তিনি স্কিইং করতে গিয়ে ডান কাঁধে ফ্র্যাকচার হয়, কিন্তু পুরো বিকেল তা বুঝতে পারেননি। পরদিন সকালে ওই হাতের আঙ্গুল শিরশির করছিল বলে ডাক্তারকে দেখান, তখনই ফ্র্যাকচারটা ধরা পড়ে। টেনিস খেলতে গিয়ে কনুইয়ের হাড় ভেঙ্গে ফেলেন একবার, তখনো একই অবস্থা হয়। তবে এরচাইতেও বেশী দুর্ভোগ তিনি পোহান তার দাঁতের একটি সমস্যার কারণে।

লেটিজিয়ার মা, ৭৮ বছর বয়সী মারিয়া ডমেনিকার এমন অনেক ফ্র্যাকচার আছে যা কখনোই সেরে ওঠেনি। তিনি মাঝে মাঝেই হাত পুড়িয়ে ফেলেন কারণ তিনি ব্যথা পান না।

লেটিজিয়ার বোন মারিয়া এলেনা মাঝে মাঝেই গরম পানীয় পান করতে গিয়ে মুখ পুড়িয়ে ফেলেন। আর তার কন্যা একবার বরফের মাঝে ২০ মিনিট হাত ডুবিয়ে রেখেছিল ব্যথার অনুভূতি না থাকার কারণে।

এত সমস্যা হবার কারণেও লেটিজিয়া বলেন, তারা কখনোই এই পরিস্থিতিকে খারাপ চোখে দেখেননি।

তারা কেন এত কম ব্যথা পান?

গবেষণার মূল লেখক, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ডঃ জেমস কক্স বলেন, মার্সিলি পরিবারের সবারই স্নায়ু ঠিকঠাক জায়গায় আছে কিন্তু তারা সঠিক কাজটা করছে না। Brain জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এই পরিবারের সাথে কাজ করে তাদের জিনের বৈশিষ্ট্য বা ফেনোটাইপ বের করার চেষ্টা করছেন। দেখা যাচ্ছে তারা উত্তাপ, মরিচের ঝাল এবং হাড় ফ্র্যাকচার হবার ব্যথাগুলো অনুভব করতে পারেন না।

কী জানা গেল তাদের জিনের ব্যাপারে?

আরও পড়ুনঃ   শরীরের যে ১২টি অঙ্গের ব্যথার রয়েছে ভিন্ন তাৎপর্য!

গবেষকেরা দেখেন, এই পরিবারের মানুষদের ZFHX2 জিনে একটি মিউটেশন আছে। এরপর তারা ইঁদুরের ওপর কিছু গবেষণা করেন যাদেরকে ওই জিন বাদ দিয়ে জন্ম দেওয়া হয়েছিল এবং দেখা যায়, তারাও সহজে ব্যথা পায় না। এই মিউটেশন হওয়া জিন সহ যখন নতুন এক ধরণের ইঁদুরের জন্ম দেওয়া হয় , দেখা যায় তারা উচ্চ তাপমাত্রায় সংবেদনশীল নয়। এ ব্যাপারে আরো বিশদ গবেষণা চলবে। তবে এখন পর্যন্ত এই পরিবারের মানুষই কেবল এই জিনের প্রভাব অনুভব করছে বলে জানা যায়।

সূত্র: BBC

আর বি 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

15 − twelve =