বিষণ্ণতা প্রতিরোধ

0
656
বিষণ্ণতা প্রতিরোধ,বিষণ্ণতা

বিষণ্ণতা রোগের রয়েছে দুষ্টচক্র, এটি রোগীর দৈহিক ও মানসিক গতি কমিয়ে দেয়।
বিনা প্রচেষ্টা কিংবা শক্তি প্রয়োগ ছাড়া কোনো কাজ করা যায় না। অল্পতেই ক্লান্তি আসে দেহ মনে। নিজে কম কাজ করতে পারে বলে নিজেকে দোষী ভাবে।
ধীরে ধীরে রোগী মনে করতে থাকে সে কিছুই করতে পারে না, ভবিষ্যতেও কিছু করতে পারবে না। তার বিষণ্ণতা কখনোই দূর হবে না। এ বিশ্বাস রোগীর মনে দৃঢ় আসন গেড়ে বসে। ফলে রোগী আরও গভীর বিষাদে ডুবে যায়। যে কোনো কাজকে তখন দুঃসাধ্য মনে হবে। এভাবে গভীর বিষাদে নেমে যেতে থাকে রোগী।
সমস্যা জয় করতে কাজের সিডিউল মেনে চলা
নিজেকে সক্রিয় করতে রোগের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, দুষ্টচক্রটি ভাঙতে হবে।
সিডিউল তৈরি করে মেনে চলার প্রচেষ্টা ধরে রাখতে পারলে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নিচে পর্যায়ক্রমে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হলো। এগুলো হচ্ছে- কাজকর্ম সিডিউলিং এর ধাপ। নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ী কোনো কাজ করতে পারলে ভালো লাগবে, নিজের মাঝে স্বস্তি কাজ করবে, মনের কষ্টকর উপলব্ধি তখন টের পাওয়া যাবেনা। মনের মধ্যে আস্থা আসবে, বিশ্বাস করতে ভালো লাগবে যে নিজের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে শক্তি অর্জিত হচ্ছে। কিছু অর্জনের অনুভূতি সঠিক সময়ে নিজেকে মোটামুটিভাবে ঐশ্বর্যবান ভাবতে বিশ্বাস জোগাবে।
সামান্য প্রচেষ্টা গ্রহণের মাধ্যমে কোনো কাজ উপভোগ করা যাচ্ছে, আনন্দ পাওয়া যাচ্ছে- এমন বোধও তখন সক্রিয় হতে পারে। সক্রিয় কাজে অংশগ্রহণ করতে পারলে ক্লান্তি টের পাওয়া যাবেনা। তখন কিছুটা হলেও নিজেকে সতেজ ভাবা যাবে। সাধারণত পরিশ্রমের পর ক্লান্তি এলে আমরা বিশ্রাম নিই। কিন্তু বিষণ্ণতা এলে উল্টোটি করতে হবে- বেশি কাজ করতে হবে, বেশি বেশি প্রচেষ্টা নিতে হবে। কিছুনা করলে নিজেকে আরও বেশি পরিশ্রান্ত, অবসাদগ্রস্ত মনে হবে।
অলস বসে থাকলে মন খোলা থাকে, নিজের বিষাদ নিয়ে নেতিবাচক ভাবনার জাল মনে তখন আরও জটিল হতে পারে, নিজের সমস্যার কথা বেশি বেশি মনে আসে। মন আরও বিষণ্ণবোধ করবে।
কাজের সিডিউল ঠিকমতো পালন করতে পারলে নিজের প্রেষণা ধীরে ধীরে উদ্দীপ্ত হবে, সক্রিয় হবে।
বসে থাকলে প্রেষণা উল্টো গতি পায়, ভেতরগত তাড়না হারিয়ে যায়। উৎসাহ বিলোপ হতে থাকে। যত বেশি কাজ করা যাবে, ছোট হোক, নগণ্য হোক, তত বেশি করার চেষ্টা শাণিত হবে।
কাজের গতি বৃদ্ধি পেলে চিন্তার গতিও বেগবান হয়। পরিচ্ছন্ন চিন্তা মনে স্বচ্ছতা সৃষ্টি করে, স্বস্তি ফিরে আসে মনে। সবকিছু এত সহজ নয়। এত সহজে কাজের সিডিউল পালন করা কঠিন। এত সুবিধা পাওয়া সম্ভব জেনেও কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা বিষণ্ণ রোগীদের জন্য কষ্টকর। তাদের নৈরাজ্যজনক বিষণ্ণ চিন্তা কাজ করার স্পৃহা আটকে দেয়, সক্রিয় কর্মকান্ডে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যখন কেউ বিষণ্ণ থাকে, ক্রমাগত ভাবতে থাকে তার দ্বারা কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়। কোনো কিছু অর্জন করা দুঃসাধ্য। আনন্দপূর্ণ প্রেক্ষাপট থেকে আনন্দ কুড়িয়ে নেয়া অসম্ভব।
মনোথেরাপির ধারাবাহিক পথে রোগী নিজের নেতিবাচক স্বয়ংক্রিয় চিন্তাগুলো জানতে পারে। বুঝতে পারে এই চিন্তাগুলো কাজ থেকে তাকে আটকে রাখে। রোগীর মূল টার্গেট হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় নেতিবাচক চিন্তাগুলো নোট করা এবং চ্যালেঞ্জ করা। যথাযথভাবে চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব হলে চিন্তাগুলো চলার পথ থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়, কোনো কাজ বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে না। প্রথমদ, নিজে কী করতে যাচ্ছি, কাজের ধরনটি বুঝতে হবে। কাজ করতে গিয়ে আনন্দ কিংবা সন্তুষ্টি অর্জিত হচ্ছে কি না পরিমাপ করে দেখতে হবে। সব বিষয়ে নিজের ধারণা স্বচ্ছ হলে সময় সঠিকভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হবে। দিনের বেশির ভাগ সময় সঠিকভাবে কাজে খাটানোর কৌশলটি একটিভিটিসি সিডিউলিং -এর প্রধান বিষয়।
কিভাবে কৌশলটি পালন করা সম্ভব?
এ বিষয়ে দু’টি ধাপ রয়েছে :
ধাপ ১. নিজেকে মনিটর করা।
ধাপ. ২ কাজের অগ্রিম পরিকল্পনা ঠিক করা।
ধাপ ১. নিজেকে মনিটর করার অর্থ নিজ কাজের ধরন পর্যবেক্ষণ করা, নিজ চোখে দেখা। ঘণ্টায় ঘণ্টায় রোগী কী করছে, বিস্তৃতভাবে তা নোটবই কিংবা ডায়েরিতে লিখে রাখা।
কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি চলাকালীন মনোথেরাপিস্ট একটি শিট সাপ্লাই দিয়ে থাকেন। সেই শিটেও সব তথ্য রেকর্ড করা যায়। কিভাবে সময় ব্যয় হচ্ছে, রেকর্ডশিট কিংবা ডায়েরি পড়ে খোলা চোখে নিজেই দেখতে পায় রোগী। নিজেকে সচেতন করে কাজ থেকে কতটুকু আনন্দ পাচ্ছে, রোগীর পক্ষে বোঝা সহজ হয়। এ ধরনের রেকর্ড সিস্টেম এবং বোঝাপড়া রোগীর নেতিবাচক স্বযংক্রিয় চিন্তাগুলো নিরীক্ষা করে দেখার সুযোগ করে দেয়।
আমি কিছুই করি না বা করতে পারছি না। কোনো কাজ করে আমি আনন্দ পাচ্ছিনা। বাস্তব রেকর্ড স্বচ্ছ পানির মতো রোগীর সামনে ধরা পড়ে। রেকর্ড শিটের বাস্তবতার সাথে নিজ কর্মকান্ডের তুলনা করে সে নিজের অবস্থান এবং কর্মকান্ডের অবস্থা কোন পর্যায়ে আছে বুঝতে পারে।
দেখা যাবে নিজের কর্মক্ষমতা এবং যোগ্যতা সম্পর্কে যতটুকু ধারণা পোষণ করত, রোগী তার চেয়ে বেশি গতিময়, দক্ষ ও যোগ্য। কাজ থেকে যতটুকু আনন্দ পেত, মনে করতো তার চেয়ে বেশি আনন্দ পায় সে।
এভাবে নেতিবাচক ধারণা বা কগনিশন বদলে গিয়ে ইতিবাক ধারণা নিজের মধ্যে আসন পায়, ইতিবাচক কগনিশন ধীরে ধীরে শাণিত হতে থাকে, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এভাবে খুলে যায়। এভাবে বিষণ্ণতার চাপ কমে আসে।
পরিবর্তনের ধারা প্রাথমিকভাবে এত দেখা না গেলেও অন্তত এটুকু বোঝা সহজ হবে কিভাবে রোগী সময় ব্যয় করছে। এই উপলব্ধির গুরুত্বও ব্যাপক।
যেভাবে নিজেকে মনিটর করতে হবে
ঘণ্টায় ঘণ্টায় নিজের কাজগুলো রেকর্ড করা।
প্লেজার এবং মাস্টারিং
কাজের আনন্দ বা প্লেজারকে ‘P’ এবং মাস্টারিং কিংবা কাজ আয়ত্তে আনাকে ‘M’ চিহ্ন দিয়ে মার্ক করা যেতে পারে।
একটি স্কেল-মার্কিং থাকবে ০ থেকে ১০ পর্যন্ত।
P ১০ অর্থ কোনো কাজে রোগী সর্বোচ্চ আনন্দ পেয়েছে।
P ০ অর্থ কাজটিতে রোগী মোটেই আনন্দ পায়নি। স্কেলে ০ থেকে ১০ পর্যন্ত মনের আনন্দপূর্ণ অবস্থার জন্য যে কোনো স্কোরে মার্ক করা যেতে পারে।
M দ্বারা বোঝা যাবে কাজে রোগী কতটা দক্ষতা দেখিয়েছে, অভিজ্ঞতা পেয়েছে।
M ১০ অর্থ যা করা হয়েছে তার মধ্যে সর্বোচ্চ অর্জিত হয়েছে। সঠিকভাবে কাজটি শেষ করতে পেরেছে বা আয়ত্ত করেছে। M০ অর্থ মোটেই অর্জন হয়নি কিছু।
স্কেলে নিজের দক্ষতা, অর্জন কিংবা কাজ আয়ত্তের বিষয়ে ০ থেকে ১০ পর্যন্ত যে কোনো স্কোর মার্ক করা যাবে (Hawton K 1996)।
নিজেকে মনিটরিং করতে সাধারণ সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। সমস্যাগুলো হলো ঃ রোগী ভাবে সে কিছুই করছে না।
মজার ব্যাপার হলো, টেলিভিশনের সামনে বসে থাকাও একটি কাজ। বিছানায় শুতে যাওয়া কিংবা জানালার পর্দার দিকে তাকিয়ে কোনো কিছুর ব্যাপারে শান্ত ও গভীরভাবে চিন্তা করাও এক ধরনের কাজের আওতায় পড়ে।
রোগী কিছুই করছে না, ঠিক নয়। কিছু না কিছু করছে ভাবছে ‘আমি কিছুই করছি না’। এটা ঠিক কোনো কোনো কাজ অন্যদের তুলনায় কম গুরুত্ববহ হতে পারে।
এ জন্য বলা হচ্ছে- ‘কিছুই করছি না’ এটি রেকর্ড না করে প্রকৃতপক্ষে কী অবস্থানে কিভাবে আছি বা করছি তা নোট রাখা।
নিজের অর্জন সম্পর্কে বোঝা
এই মুহূর্তে কাজটি কতটুকু কঠিন সেটি বোঝাতে M চিহ্নটি ব্যবহার করতে হবে। বিষণ্ণ হওয়ার আগে কাজটি কতটুকু ডিফিকাল্ট বা জটিল ছিল সেটি নয় কিংবা অন্যরা কতটুকু জটিল মনে করছে সেটিও নয়।
মনে রাখতে হবে, স্বাভাবিক সময়ে যে কাজটি করা সহজ, বিষণ্ণতার কালে সেটি দুঃসাধ্য মনে
হতে পারে।
এমনকি বিছানা থেকে ওঠা, দাঁত ব্রাশ করা কিংবা একটি টোস্ট বানানোও তখন জটিল কাজ মনে হতে পারে। এ ধরনের কাজ বিষণ্ণ অবস্থায় করতে পারা বিরাট সাকসেস, বিরাট অর্জন। এভাবে দেখতে হবে। কাজের ধরন অনুযায়ী স্কেলে মার্কিং বসাতে হবে। এ ধরনের সফলতার পর মনের অবস্থা স্কোরে তুলে ধরতে হবে।
এ কাজটি আমি ভালভাবে করতে পারি। তাতে কী? যেকোনো অজ্ঞও এ কাজটি করতে পারবে। এ ধরনের চিন্তাগুলোর ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। এ ধরনের নেতিবাচক চিন্তা বিষণ্ণতার দুষ্টচক্রে রোগীকে আটকে রাখবে।
এ ধরনের নেতিবাচক চিন্তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। নিশ্চিত হতে হবে যে, যেকোনো কাজের জন্য নিজেকে নিজের বাহবা দিচ্ছে রোগী।
দেরিতে স্কোর করা
যেকোনো কাজ করার সাথে সাথে P এবং M-এর স্কোর লিখে ফেলতে হবে। দেরিতে করলে বিষণ্ণতার কারণে আগের উপলব্ধি ধোঁয়াশাচ্ছন্ন হয়ে যেতে পারে, স্কেলে ভুল তথ্য উঠে আসতে পারে।
বিষণ্ণ হলে মন কেবল খারাপ কিছু ভাবে, খারাপ কিছু দেখে। ভালো কিছু চোখে পড়ে না। দেখে না। ভাবে না। একসাথে রেটিং করলে ফলাফল প্রভাবিত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। কাজ শেষ করার পর পরই রেটিং করলে অতি সামান্য সাকসেস এবং আনন্দ নিজেকে কিছুটা হলেও উদ্দীপনা দেবে। দেরিতে সেটি টের পাওয়া যায় না।
ধাপ ২ : কাজের অগ্রিম পরিকল্পনা ঠিক করতে হবে
কিভাবে নিজের সময় ব্যয় করছে, ধাপ ১ থেকে বুঝতে পারবে রোগী।
ধাপ ২ থেকে দিনের বিভিন্ন কাজের অগ্রিম পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হবে।
নির্ধারণের আগে নিশ্চিত হতে হবে ওই সব কাজের কথা যেগুলো রোগীকে আনন্দ দিয়েছে (P) যে কাজগুলো আয়ত্তে এনে রোগী সমাধা করেছে- সাকসেস অর্জন করেছে (M)।
অগ্রিম পরিকল্পনার মাধ্যমে রোগী বুঝতে পারবে সে নিজের জীবনযাপনের দায়িত্ব নিজে পালন করছে।
রোগীর কর্মপরিকল্পনার উদ্দেশ্যে নিজবোধকে প্রখর করে তুলবে। পরিকল্পনার ফ্রেমটি রোগীকে তুচ্ছাতিতুচ্ছ সিদ্ধান্তের জন্য নেতিবাচক চিন্তায় ডুবে থাকা প্রতিরোধ করবে।
পরবর্তীকালে আমি কী করব?
যতই খারাপ বোধ করুক না কেন, এই চিন্তা রোগীকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
যদি দিনের কাজগুলো আগে লিখে রাখা যায়, তবে আবেগতাড়িত হয়ে বেসামাল হওয়ার সুযোগ কমে যাবে।
পুরো দিনের কাজগুলো ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে এমনভাবে পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হবে যেন সহজে সমাধা করা যায়।
কিভাবে সম্ভব?
কাজের পরিকল্পনা আগাম তৈরি করে রাখতে হবে
প্রতিদিন সন্ধ্যা রাতে বা ভোরের শুরুতে কিছু সময় বরাদ্দ রাখতে হবে। বরাদ্দকৃত সমস্যাটি নির্ধারিত থাকবে পরবর্তী দিন কিংবা ওই দিনের কর্মসূচি ঠিক করে রাখার জন্য। মনে রাখা দরকার যখন মাথা পরিচ্ছন্ন থাকে, মন একটু ভাল থাকে তখন কর্মসূচি ঠিক করতে হবে। তখন বাস্তব কাজের লিস্ট করা সহজ হবে। যদি পরিকল্পনা নির্ধারণের সময়টি মনে না থাকে, মনে রাখার জন্য ‘কিউ’ ঠিক করে রাখতে হবে। ঘরে কোথাও লিখে রাখা যেতে পারে। যেখানে সহজে চোখ যায় এমন স্থানে লিখে রাখলে সময়সূচি চোখ পড়বে বারবার। ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।অথবা বাসায় কাউকে সময়টি স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। সঠিক সময়ে তিনি মনে করিয়ে দেবেন।
ধরা যাক, রোগী সময়সূচি পরিকল্পনার সময়টি রাত ৮টায় ঠিক করেছে। আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়মিত ৮টায় করতে পারলে নিজস্ব একটি ডিসিপ্লিন গড়ে উঠবে। চেষ্টা করা উচিত যেন ডিসিপ্লিনটি না ভাঙে, প্রতিদিনের রাত ৮টা যেন গুরুত্ব পায়। এ সময় প্রয়োজনে টেলিভিশন বন্ধ করে দিতে হবে অথবা মোবাইলের সাউন্ড অফ করে দিতে হবে।
কাজের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া, দক্ষতার সাথে কাজ করা বা কিছু অর্জন ও কাজের মধ্য থেকে আনন্দ কুড়িয়ে নেয়ার মধ্যে ব্যালান্স থাকা প্রয়োজন। এই লক্ষ্য ঠিক করে অগ্রসর হওয়া ভাল। দিনের পুরোটি সময় দি কেবল দায়িত্ব পালন কিংবা দৈনন্দিন গৃহস্থালির টুকিটাকি কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় তাহলে দিন শেষে নিজেকে বড্ড অবসাদগ্রস্ত মনে হবে, ক্লান্তি জড়িয়ে থাকবে দেহ-মনে। বিরক্তি কিংবা ক্ষোভও জিইয়ে থাকতে পারে মনে।
অন্যদিকে বলা যায়, পরিকল্পিত কাজগুলো যদি অবহেলা করা হয়, তবে কিছুই করা হলো না, কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়। এ ধরনের ভাবনার কারণে মন তেতো হয়ে উঠবে এবং ক্রমে ক্রমে কাজের লিস্ট বাড়বে। শেষ হবে না, বিষাদ আরও চেপে ধরবে নিজেকে।
অতীতে যে কাজগুলো রোগীকে পুরস্কৃত করেছে, মনে আনন্দ বয়ে এনেছে তেমনি কাজের লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত। একবার শুরু করতে পারলে দেখা যাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজের গতি এগিয়ে যাচ্ছে, আনন্দও পাওয়া যাচ্চে। যে কাজ নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং আনন্দ পাওয়া যায় এমন একটি কাজ দিয়ে দিনের যাত্রা শুরু করতে হবে। যথাযথ শেষ করা যাবে এমন কাজ বেছে নেয়া ভালো।
ভোরের সূচনাতে এমনটি বেছে নিতে পারলে সফলতার আশা বাড়বে। জটিল কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারলে নিজেকে পুরস্কৃত করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। এক কাপ কফি খাওয়া যেতে পারে অথবা টিভিতে ভালো লাগার একটি সিরিজ দেখা যেতে পারে অথবা একটি প্রিয় গান শোনা যেতে পারে। এভাবে নিজেকে পুরস্কৃত করা যায়।
বিছানা পরিহার করা উচিত। বিছানা কেবল রাতে ঘুমানোর জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। যদি রেস্ট কিংবা রিলাক্স হওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয় বিছানা বাদে অন্য উপায় খুঁজে নিতে হবে।
কী করা হচ্ছে প্রতিদিন যথাযথ রেকর্ড করতে হবে
নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্রিয় কাজে অংশ নিতে হবে। রেকর্ড শিটে লিখে রাখতে হবে সব প্রকৃতপক্ষে কী কী করা হয়েছে যথাযথভাবে নোট রাখতে হবে, যেমনটি নিজেকে মনিটরিং পর্বে করা হয়েছে, ঠিক তেমনি রেকর্ড রাখতে হবে। প্রতিটি কাজের জন্য এবং এর স্কোর লিখে রাখতে হবে। দিনের শেষে পরিকল্পনাটি সফল কিংবা অসফল হলো কি না মূল্যায়ন করে দেখতে হবে। রিভিউ করতে হবে কাজের অবস্থা। এমনটি করা গেলে নিজেকে দেখা সহজ হবে। নিজেকে বোঝা সহজ হবে, কিভাবে সময় কাটানো হয়েছে, কতটুকু উন্নতি বা অবনতি হয়েছে বোঝা গেলে পরবর্তী নিদের কর্মপন্থা নির্ধারণ অনেক স্বস্তিদায়ক মনে হবে। কোথায় ভুল হচ্ছে বোঝা সহজ হলে অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হবে।
সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে নিজেকে আরও সচ্ছল করবে, মনের বিষাদ দূর করতে নিজের মধ্যে আলো জ্বালিয়ে দেবে।
ডা. মোহিত কামাল
সহযোগী অধ্যাপক (সাইকো)
মনোরোগ ও মাদকাসক্তি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ
সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকোথেরাপিস্ট
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
শেরেবাংলা নগর, ঢাকা

আরও পড়ুনঃ   আহার এবং ডায়াবেটিস

 পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন: নতুন বাবাদের জেনে রাখা জরুরী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

10 + twenty =