পুরুষ বন্ধ্যাত্ব

0
2230
পুরুষ বন্ধ্যাত্ব,বন্ধ্যা

এ কেমন কথা, পুরুষদের সন্তান জন্ম দেবার ক্ষমতা নেই- ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। হ্যাঁ পুরুষ বন্ধ্যাত্ব কথাটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ও সত্য। আমাদের দেশে শতকরা ৫০ থেকে ৫৫ জন সন্তানহীন দম্পত্তিদের স্বামীর কারণে সন্তান জন্ম দেবার ক্ষমতা থাকে না। অথচ আমরা সহজে এই কথাটি মেনে নিতে পারছি না, ফলে পুরুষ শাসিত সমাজে কেবলমাত্র স্ত্রীদেরকেই সন্তান জন্ম দিতে না পারার জন্য দায়িত্ব বহন করতে হয়। সংসারে অশান্তি, বহু বিবাহ, তালাক এমনকি আত্মহত্যার মত ঘটনাও এই কারণে অহরহ ঘটে থাকে। একমাত্র বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা ছাড়া এর অন্য কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা নাই। দোয়া-তাবিজ, পানিপড়া, ঝাড়-ফুক, পীর-মোরশেদ-এর মত আধ্যাত্মিক ও হারবাল চিকিৎসা দেশের প্রচলন আছে। বাস্তবে এতে কোন ফলাফল লাভের আশা করা যায় না। আমাদের দেশে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ সন্তানহীন দম্পত্তি রয়েছে। তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি পুরুষদের কারণে সন্তান জন্ম দিতে ব্যর্থ। আর্থ-সামাজিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তনের ফলে এর প্রভাব স্ত্রীগণের চেয়ে স্বামীদের মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দিতে না পারার প্রভাব পুরুষদের ওপর বেশি পড়ে, ফলে দিন দিন পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় অধিক হারে বেড়েই চলছে। মাদকদ্রব্য সেবন, ধূমপান, যৌন রোগ, যক্ষ্মা, বসন্ত, মামস, মিজেল, হানিয়া, হাড্রোসিল, রেডিশিয়ান, আঘাত, ক্যান্সার রং এর কাজ করা এবং অন্যান্য কারণে পুরুষদের প্রজন্ম ক্ষমতা দিন দিন প্রকট হারে বেড়েই চলছে -এম্ব্রায়োলজিস্টগণ মনে করেন।

প্রজনন ক্ষমতা না থাকায় বা কমে যাওয়ার বিষয়টি চিকিৎসকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত এতে পুরুষদের যৌনক্ষমতা কোন প্রভাব থাকে না। কেমল পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ইহা নির্ণয় করা যায়। পুরুষদের বীর্যে যদি শূক্রাণু একেবারে না থাকে, তবে তাকে এজোসপারমিয়া বলাহয়। বীর্যে সম্বন্ধে একটু জানা দরকার। বীর্যটা হলো প্রজনন গ্রন্থির সিক্রেশান এর চারটি পদার্থের মিশ্রণ ছবি হবে।

আরও পড়ুনঃ   হরমোনজনিত পুরুষ বন্ধ্যত্ব

১. অন্ডকোষে থেকে স্পার্ম ২. ভাস গ্রন্থি থেকে তৈরি জলীয় পদার্থ ৩. প্রোস্টেট থেকে জলীয় পদার্থ এবং ৪. পিচ্ছিল পদার্থ। কোন কারণে যদি অন্ডকোষ থেকে স্পার্ম তৈরি না হয় অথবা কম পরিমাণ তৈরি হয় সে ক্ষেত্রে ঐ পুরুষকে এজোসপারমিয়া অথবা ওলিগোসপারমিক আখ্যায়িতক করা হয়। ওলিগোসপারমিক হলো স্পার্ম কম পরিমাণ থাকা। এই সমস্ত ক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা থাকে না অথবা কমে যায়। সাধারণত একজন সুস্বাস্থ্য ও সবল পুরুষের প্রতি সিসিতে ১২০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন শূককীট থাকে, যদি এর পরিমাণ ৪০ মিলিয়নের নিচে থাকে তাকে ওলিগোসপারমিয়া বলা হয়। তবে এখানে একটু জানা ভাল যে, সময় মত ওলিগোসপারমিয়া পুরুষদের চিকিৎসা না করলে ধীরে ধীরে এজোসপারমিয়া পুরুষ হিসেবে পরিগণিত হবে যাহা হবে অত্যন্ত দুরভাগ্যজনক। এখানে বলা ভালো যে, স্বামীকে অথবা পুরুষদেরকে ওষুধের সাহায্যে শূককীট তৈরি করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ স্বামীর সন্তান জন্মদান করার ক্ষমতা লোপ পেল। পক্ষান্তরে মহিলাদের যদি ডিম্ব তৈরিতে কোন প্রকার অসুবিধা থাকে, তবে ওষুধের সাহায্যে অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।

আলোচনায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, স্বামীদের প্রজনন ক্ষমতা একবার নষ্ট হয়ে গেলে বা কমে গেলে ঐ দম্পত্তির সন্তান লাভের কোন সম্ভাবনা রইল না। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বদৌলতে বর্তমানে চিকিৎসার সাহায্যে সন্তান জন্ম দেয়া সম্ভব হচ্ছে। মেশা/পেশার সাহায্য স্বামীর অন্ডকোষ হতে স্পার্ম সংগ্রহ করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওয়াস করে সন্তান জন্ম দেয়া সম্ভব। সে ক্ষেত্রে স্ত্রীর সন্তান গ্রহণ করার ক্ষমতা আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। চিকিৎসাটি যত তাড়াতাড়ি করা যায় ততই মঙ্গলজনক। কারণ বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা কমে যায়। তবে পুরুষদের চেয়ে মেয়েদের বেশি থাকে।

বিশ্বে প্রায় ১০০ মিলিয়নের বেশি নিঃসন্তান দম্পত্তি রয়েছে। টেস্টটিউব বেবী জন্মদানের জনকদ্বয় ডা. রবাট এডওয়ার্ড এবং ডা. পেট্রিক স্ট্রেপটিও প্রথম টেস্টটিউব বেবী জন্ম দেয়ার মাধ্যমে বিপ্লব সাধন করেন। এরপর থেকে এই চিকিৎসাটি অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে অতি দ্রুত উন্নতি লাভ করছে। আই ইউ আই; আইভি এফ, ইকসি, গিফট, জিফট, মেশা, পেশা, হাড্রোটিবেশন ইত্যাদির মাধ্যমে হতভাগ্য সন্তানহীন দম্পত্তিগণের চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়া হচ্ছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এই চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করে চলেছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কোন পৃষ্ঠপোষকতা নাই বললেই চলে। দেশে ১৬ কোটি মানুষের জন্য কেবলমাত্র হাতেগোনা ৫ থেকে ৬ জন এম্ব্রায়োলোজিস্ট কাজ করে যাচ্ছে। চিকিৎসাটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। প্রকৃতপক্ষে উন্নতমানের চিকিৎসার জন্য যে ধরনের যন্ত্রপাতি দরকার ব্যক্তিগতভাবে তা সংগ্রহ করা অত্যন্ত দুরূহ। ফলে উন্নতমানের চিকিৎসার জন্য অধিকাংশ সন্তানহীন দম্পতিগণ নিজের সন্তান লাভের আশায় দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য চলে যায়। ফলে কেবল এই চিকিৎসার জন্য প্রতি বৎসর প্রায় ১০০০ কোটির টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। অথচ সরকারের সহযোগিতা পেলে ৫০/৬০ কোটি টাকার মধ্যে সন্তানহীন দম্পতিদের চিকিৎসা, এম্ব্রায়োলোজিস্ট ও নার্সদের প্রশিক্ষণ সম্ভব। বাংলাদেশ ফারটিলিটি সোসাইটি (বিএফএস) এবং বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সাইন্স (বিমস) এর জন্য ১০০ সজ্জাবিশিষ্ট ইন্সটিটিউট অব হিউম্যান রিপ্রোডাকশান তৈরি করার লক্ষ্যে একটি প্রজেক্ট সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। এতে যে কেবলমাত্র অর্থ পাচার বন্ধ করা সম্ভব হবে তাই নয়, বিদেশ হতে চিকিৎসার জন্য অনেক নিঃসন্তান দম্পত্তিগণ বাংলাদেশে আগমন করবে। এই লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি।
-অধ্যাপক ডা. এম এ বাসেদ

আরও পড়ুনঃ   যা ব্যবহার করে যৌবন ধরে রাখতে পরেন আজীবন!

পুরুষের বীর্যের মান উন্নত করে যে খাবারগুলো

বিঃ দ্রঃ গুরুত্বপূর্ণ হেলথ নিউজ ,টিপস ,তথ্য এবং মজার মজার রেসিপি নিয়মিত আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে লাইক দিন আমাদের ফ্যান পেজ বিডি হেলথ নিউজ এ ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen − ten =