পাকা কলার উপকারিতা-পাকা কলা পুষ্টির বিশাল উৎস!

0
2384
পাকা কলার পুষ্টি

বছরজুড়ে সবচেয়ে সহজলভ্য এই ফলটি সস্তা ও স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। পাকা কলা পুষ্টির বিশাল উৎস।কলা অতিরিক্ত পেকে গেলে এর চামড়ায় কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়ে। আর এই দাগের কারণে বেশির ভাগ সময় অতিরিক্ত পাকা কলা কেউ খেতে চান না। কিন্তু আপনি জানেন কি, এই অতিরিক্ত পাকা কলার রয়েছে অনেকগুলো স্বাস্থ্যগুণ? কলা এমনই একটি ফল যা সব বয়সের লোকেরাই খেতে পারে। কলা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এমনকি পাকা কলার খোসা দাঁতের হলুদ দাগ দূর করতে দারুণ কাজ করে।

কলায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল, যা আপনার ত্বক ও হাড়ের জন্য উপকারী। তাছাড়া এটি ক্যানসার, হৃদরোগ, অসটিওআর্থিরিটিসের রোগের ঝুঁকি কমায়। বয়স্কদের হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যা প্রতিরোধ করে কলা। প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ কলায? থাকে, পানি ৭০.১%, প্রোটিন ১.২%, ফ্যাট বা চর্বি ০.৩%, খনিজ লবণ ০.৮%, আঁশ ০.৪%,শর্করা ৭.২%। তাছারা খনিজ লবণ এবং ভিটামিন ক্যালসিয?াম ৮৫মিলিগ্রাম., ফসফরাস ৫০মিলিগ্রাম,আয?রন ০.৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি, অল্প ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ৮ মিলিগ্রাম, মোট ক্যালরি ১১৬।

হতাশার সঙ্গে যুদ্ধ করবে:
বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত হয়েছে, খাদ্যাভাস হিসেবে কলা বিষন্নতার সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে। কলার মধ্যে খুবই উচ্চ ঘনত্বের ট্রিপটোফেন নামক এক প্রকার অ্যামিনো এসিড রয়েছে। বিষন্নতায় ভুগলে তাই দিনে ২টি করে কলা খেতে পারেন। কেননা এতে থাকা ট্রিপটোফেন শরীরের সেরোটোনিনে রূপান্তিরত হয়, যা বিষন্নতা কমাতে সাহায্য করে এবং মেজাজ ভালোর দিকে নিয়ে যায়।

অ্যানিমিয়া:
কলার মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমাণ আয়রণ রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে। ফলে অ্যামিনিয়ার সম্ভাবনা কমে। এমনকি অ্যানিমিয়া সারাতেও সাহায্য করে কলা।

রক্তচাপ কমায়:

কলা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম এবং পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এটি স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা হ্রাস করে থাকে। কলার মধ্যে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি এবং লবণের মাত্রা কম থাকায় উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা রুখতে পারে কলা।

আরও পড়ুনঃ   অশ্বগন্ধার ব্যবহার-কীভাবে রূপচর্চায় অশ্বগন্ধার ব্যবহার করবেন? অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অশ্বগন্ধার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কী?

হজমশক্তি বাড়ায়

অতিরিক্ত পাকা কলায় ফাইবারের পরিমাণ কমে যায়, যার কারণে এটি সহজে হজম হতে পারে।

শরীরের ধকল কাটাবে:
রাতে পার্টিতে গিয়ে মদ্যপানের পর শরীরে সৃষ্ট ডিহাইড্রেশন পূরণে সহায়ক কলা। কারণ, কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকায় শরীরের আদ্রতা এবং ইলেক্ট্রোলাইটস ফিরে পেতে সাহায্য করে।

মস্তিষ্ক:
টানা এক বছর ধরে গবেষণা চালানো হয়েছিল ইংল্যান্ডের টুইকেনহ্যাম স্কুলের ২০০ জন শিক্ষার্থীর ওপর। পরীক্ষার আগে টানা সকাল, দুপুর ও রাতের কলা খাওয়ানো হয় তাদের। কলার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম তাদের মনোসংযোগ বাড়ানোর ফলে অন্যদের থেকে পরীক্ষায় ভাল করেছিলেন ওই ২০০ জন শিক্ষার্থী।
কোষ্ঠকাঠিন্য:
কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন ২টি করে কলা খেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে। কলার মধ্যে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়তা করে।
হ্যাংওভার:
আগের রাতের অতিরিক্ত মদ্যপানের হ্যাংওভার কাটাতে বানান মিল্কশেকের কোনো তুলনা নেই। সঙ্গে যদি থাকে ১ চামচ মধু। কলা শরীরের অস্বস্তি কমায়, দুধ পেট ঠাণ্ডা করে ও মধু বজায় রাখে রক্তে শর্করার মাত্রা।

শরীরে হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে:
কলাতে যে পরিমান ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়, তা আপনার শরীরের হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট। প্রতিদিন ২টি কলা খেলে, তা আপনাকে দেবে মজবুত পেশী। এছাড়া যারা হাড়ের গাঁটে গাঁটে বাতের ব্যাথার সমস্যায় ভুগছেন, তাদের খাদ্যাভাসে কলা রাখতে পারেন।
মর্নিং সিকনেস:
কাজের চাপ, মানসিক চাপে অনেক সময়ই সকালে ঘুম থেকে উঠে অসুস্থ বোধ করি আমরা। রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকায় কম থাকে এনার্জির মাত্রাও। এই সময় কলা বজায় রাখে রক্তে শর্করার সঠিক মাত্রা।
মশার কামড়:
মশার কামড়ে ফুলে, লাল হয়ে ওঠা ত্বকের যত্ন নিতে ক্রিম বা অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করার আগে কলার খোসা ঘষে দেখুন ত্বকের ফুলে ওঠা অংশে।

আরও পড়ুনঃ   পেটের সমস্যা দূর করা ছাড়াও ওজন কমাতে ইসবগুল!

শরীর থেকে নিকোটিন অপসারণ করবে:
ধূমপান সম্প্রতি ছেড়ে দিয়ে থাকলে, এই সিদ্ধান্তে অটুট থাকতে সাহায্য করবে কলা। ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পরে শরীরের নিকোটিনের তাড়নায় আবারো ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ার ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সুতরাং কলা খেলে তা শরীরে থেকে নিকোটিন অপসারণে ভূমিকা রাখে, ফলে ধূমপান ছাড়ার পর শারীরিক অস্বস্তির মোকাবিলা করা যাবে।
স্নায়ু:
কলায় থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি যা স্নায়ুকে শান্ত করে। মানসিক চাপ কাটাতে ফ্যাটি ফুডের থেকে বেশি প্রয়োজনীয় কলা। কার্বোহাইড্রেটে পরিপূর্ণ হওয়ায় কলা রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রেখে স্নায়ুবিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
আলসার:
নরম ও মিহি হওয়ার জন্য পেটের সমস্যায় খুবই উপকারী খাবার কলা। অত্যন্ত খারাপ পেটের রোগেও কলাই একমাত্র ফল যা নির্বিঘ্নে খাওয়া যেতে পারে।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ:
অনেক দেশে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে কলা ব্যবহার করা হয়। গর্ভবতী মহিলাদের জ্বর হলে ওষুধের বদলে খাওয়ানো হয় কলা। থাইল্যান্ডে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে কলা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
দাঁত সাদা:
ঘরোয়া উপায়ে দাঁত সাদা করতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন কলার খোসা। কলার খোসার ভেতরের দিকটা দাঁতে ঘষতে থাকুন ২ মিনিট ধরে। এরপর ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মেজে ফেলুন। মাত্র ৭ দিনেই দাঁত হয়ে উঠবে ঝকঝকে সাদা।

পুষ্টির পরিমাণ:

প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম, ভিটামিন বি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ ফল হলো কলা। কলা যখন অতিরিক্ত পেকে যায় এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যায়। শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বুক জ্বালাপোড়া রোধ:

কলাতে প্রাকৃতিক অ্যান্টি অ্যাসিড রয়েছে, যা বুক জ্বালাপোড়া রোধ করে।

ক্যানসার প্রতিরোধে:

২০০৯ সালে জাপানিজ এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত পাকা কলাতে টিউমার নেক্রোসিস ফ্যাক্টর রয়েছেÑযা শরীরের ক্যানসারের কোষ ভেঙে দেয়। এটি ক্যানসার নিরাময় করে না, তবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ   গুণে ভরা এ্যালোভেরা

কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে

কলাতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার রয়েছেÑযা প্রাকৃতিকভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে থাকে।

রক্তস্বল্পতা দূর করে

কলায় থাকা আয়রন রক্ত কোষকে উজ্জীবিত করে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে থাকে। যা রক্ত স্বল্পতা দূর করে।

কর্মশক্তি যোগাবে:
কলার মধ্যে তিন ধরনের প্রাকৃতিক চিনির শক্তিশালী মিশ্রণ থাকে, এগুলো হচ্ছে: ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ এবং সুক্রোজ। কলার এসব প্রাকৃতিক চিনি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখবে এবং আপনাকে দেবে দিনের প্রয়োজনীয় কর্মশক্তি।

আরও পড়ুনঃ ফুসফুসকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যকর রাখার এগার উপায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

nine − three =