নারীর যৌন রোগ : অর্গাজমিক ডিসওর্ডার

0
794
নারীর যৌন রোগ ,অর্গাজমিক ডিসওর্ডার

সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনে জিন্নাতুন নুরের একটি প্রতিবেদন আমার দৃস্টি আকর্ষণ করেছে।  প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ১২ জুন, শিরোনাম ছিল ‘সংসার ভাঙে শহরে বেশি, তালাকে এগিয়ে মেয়েরা’।

দেশের পৌরসভাগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় গত এক দশকে বিবাহ বিচ্ছেদের হার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।  শতকরা প্রায় ৭০ ভাগেরও বেশি তালাক দেওয়া হয়েছে নারীর পক্ষ থেকে।  বাকী ২৯ দশমিক ১৫ ভাগ তালাক দিচ্ছেন পুরুষরা।  তালাকপ্রাপ্ত নর-নারীরা পরকীয়া সম্পর্ককে বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন।

প্রতিবেদনটি একজন রোগীর কথা মনে করিয়ে দিল যাকে আমরা দেখেছিলাম আজ থেকে তিন বছর আগে সেক্স ক্লিনিকে। বলার অপেক্ষা রাখে না রোগীটি একজন নারী।  শিক্ষিত এবং উপার্যনক্ষম। হয়ত সে কারণেই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিতে তার সময় কম লেগেছিল।  তার ছিল অর্গাজমিক ডিসওর্ডার।  কিন্তু তিনি এটা বুঝতে পারছিলেন না।  তিনি ভেবেছিলেন সমস্যা তার স্বামীর মধ্যে। তাই তিনি তার স্বামীকে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হওয়ার পরামর্শ এবং সুযোগ দুটোই দিয়েছিল।  কিন্তু তার স্বামী ব্যর্থ হওয়াতে ডিভোর্স করে দ্বিতীয় বিয়ে করতে বাধ্য হন।

তার ভুল ভাঙল যখন তিনি দেখলেন দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গেও একই সমস্যা হচ্ছে।  তখন তিনি নিজেকেই একবার  ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন মনে করলেন। আমরা তাকে তার রোগ সম্পর্কে বুঝিয়ে বললাম এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিলাম। তিনি যখন বুঝতে পারলেন আসলে তিনি নিজেই রোগী তখন এক অপরাধবোধ তাকে পেয়ে বসল।  সেজন্যও আমাদের তাকে কাউন্সিলিং করতে হয়েছিল।

আমাদের সামাজিক দৃস্টিভঙ্গীতে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে পুরুষকে সক্রিয় সঙ্গী হিসাবে দেখা হয় বলে যেকোনো যৌন সমস্যায় পুরুষকেই দায়ী করা হয় আগে। ধরে নেওয়া হয় তার ব্যর্থতার জন্যই সব হচ্ছে।  কিন্তু প্রকৃত পক্ষে চিত্র ভিন্নও হতে পারে। যেমনটি হয়েছিল আমাদের ঐ রোগীর ক্ষেত্রে। পুরুষদের মতো নারীদেরও বেশ কয়েকটি যৌন রোগ আছে। সে রোগগুলো সম্পর্কে কম বেশি ধারণা থাকা আমাদের প্রয়োজন।  সেরকম কিছু রোগের কথাই তুলে ধরতে যাচ্ছি এ লেখায়।

আরও পড়ুনঃ   চেকআপের সময় অবশ্যই জানুন এই বিষয়গুলো

ফিমেল সেক্সুয়াল ইন্টারেস্ট/আ্যারাউজাল ডিসওর্ডার, ফিমেল অরগাজমিক ডিসওর্ডার, জেনিটো পেলভিক পেইন/পেনিট্রেশন ডিসওর্ডার।  নারীর যৌন রোগ মূলত এ কয়টিই। এছাড়াও আছে নেশা সংক্রান্ত যৌন সমস্যা যা নারী পুরুষ উভয়েরই হতে পারে।

আমাদের স্বাভাবিক সামাজিক দৃস্টিভঙ্গীতে দেখা হয় নারী হবে লজ্জাশীলা।  তার যৌন চাহিদা থাকবে কম।  প্রাচীন শাস্ত্র যে চার শ্রেণিতে নারীকে বিভক্ত করেছে তার মধ্যে একমাত্র হস্তিনী নারীর কামভাব প্রবল। এরকম একটি সামাজিক পরিবেশে ফিমেল সেক্সুয়াল ইন্টারেস্ট/আ্যারাউজাল ডিসওর্ডারের রোগী খুঁজে পাওয়া মুসকিল।  কারণ যৌন অনীহাকে অনেকেই সেক্ষেত্রে ইতিবাচক মনে করবে।  কিন্তু এই যৌন শীতলতার পরিমাণটা এতো বেশি যে পুরুষ সঙ্গীকে ঝামেলায় পড়তে হয়। আর কোনো সমস্যা যন্ত্রণাদায়ক না হলে আমরা তাকে মানসিক রোগ বলি না।

যিনি এই রোগে ভোগেন, তার যৌন ইচ্ছা বা আকাঙ্খা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে যায় বা বেশিরভাগ সময়ে একদম অনুপস্থিত দেখা যায়। যৌন মিলনে সে কোনো আগ্রহ অনুভব করে না। নিজে থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপও নেয় না।  নিজে থেকে পদক্ষেপ নেওয়া বলতে বুঝায় কাছে এগিয়ে আসা ,স্পর্শ করা, ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হওয়া বা ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। তবে দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতি হলেও এমনটা হতে পারে। সেক্ষেত্রে সেটা রোগ নয়।

নারীর যৌন শীতলতাকে রোগ আমরা তখন বলব যখন ৬ মাস বা তারও অধিক সময় ধরে-
১. যৌন কর্মকাণ্ডের প্রতি আগ্রহ থাকবে না বা কমে যাবে
২. যৌন উত্তেজক চিন্তা বা কল্পনা থাকবে না বা কমে যাবে
৩. যৌন কর্মকাণ্ডে নিজে থেকে কোনো পদক্ষেপ নেবে না আবার সঙ্গীর পদক্ষেপেও সাড়া দেবে না
৪. বেশিরভাগ যৌন মিলনে নিরুত্তাপ, নিস্তেজ, নিস্পৃহ থাকবে
৫. বাহ্যিক বা আভ্যন্তরীণ যৌন  উদ্দিপনা বা ইঙ্গিতের প্রতি অনীহা দেখা যাবে
৬. মিলন কালিন সময়ে শারীরিক বা যৌন স্পর্শে শিহরিত কম হবে বা হবে না

আরও পড়ুনঃ   পিরিয়ডের ব্যথায় সহজ ঘরোয়া সমাধান

কোনো কোনো নারীর মধ্যে সক্রিয় যৌন জীবনের ( আ্যাকটিভ সেক্সুয়াল লাইফ) শুরু থেকেই এ ধরনের সমস্যা দেখা যায়।  কারো কারো ক্ষেত্রে স্বভাবিক যৌন জীবনের পর এরকমটা দেখা দেয়।  প্রথমটাকে বলা হয় লাইফ লং বা আজীবন আর দ্বিতীয়টাকে বলা হয় আ্যাকোয়ার্ড বা অর্জিত।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

fourteen + seven =