দারুচিনির উপকারিতা: দারুচিনির অজানা গুনাগুণ সম্পর্কে জেনে নিন!

0
10787
টাইপ-২ ডায়াবেটিস ,দারুচিনি ,স্মৃতি শক্তি
দারুচিনি এইগ্রহের সবচেয়ে বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভেষজ। এর মিষ্টি স্বাদ এবং সুন্দর সুবাস জন্য শতাব্দীর পর শতাব্দীর ধরে প্রায় প্রত্যেক সংস্কৃতির দ্বারা সম্মানিত হয়ে আসছে। দারুচিনিতে রক্তের শর্করার রোধক সহ উন্নত অসাধারণ ঔষধি গুণাবলী রয়েছে যা , প্রদাহ কমাতে এবং স্নায়বিক স্বাস্থ্য উন্নীত করতে সহায়তা করে। এছাড়াও সুগন্ধি মসলা হিসাবে দারুচিনি ব্যপকভাবে পরিচিত । শুধু রান্নায় গন্ধ বৃদ্ধি নয়, শরীর ও ত্বক উভয়ের জন্যই দারুচিনির ব্যবহার করা যায়।

গবেষকদের মতে পৃথিবীতে যত রকমের উপকারি ভেষজ আছে, তার মধ্যে সব থেকে উপকারি হল দারুচিনি। পৃথিবীর সেরা সাত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় রয়েছে দারুচিনি। কারণ এর মধ্যে মজুত রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সেই সঙ্গে দারুচিনি গাছের ছালের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন উপকারি উপাদান, যেমন- সিনামাডিহাইড, সিনামিক অ্যাসিড এবং সিনামেট। এগুলো নানাভাবে শরীরের উপকার করে থাকে। তাই দারুচিনির অনেক উপকারিতা রয়েছে । চলুন জেনে নেই দারুচিনি আমাদের শরীরের কি কি উপকারিতা সাধন করে থাকে।

দারুচিনির যা যা গুণ রয়েছে-

এক টেবিল চামচ দারুচিনি গুঁড়োতে ১৯ ক্যালরি, ৪ গ্রাম ফাইবার, দিনের চাহিদার ৬৮% ম্যাঙ্গানিজ, ৮% ক্যালসিয়াম, ৪% আইরন, ৩% ভিটামিন কে রয়েছে। এছাড়াও এই প্রাকৃতিক উপাদানটি রক্তচাপ সঠিক রাখতে সাহায্য করে, হজমশক্তি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে, হৃদরোগ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়, এমনকি নার্ভের অসুখের চিকিৎসাতেও দারুণ কাজ দেয়। এখন দেখে নেওয়া যাক আরো কিছু উপকারিতাঃ

১.দারুচিনি আমাদের দেহের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে; যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব উপকারীপ্রতিদিন আধা চা চামচ দারুচিনির গুড়ো রক্তে খারাপ কোলস্টেরল এলডিএল এর মাত্রা কমায়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিষন্ত্রণ করে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। ‘টাইপ টু’ ডায়াবেটিস পুরোপুরি ভালো হয়ত হয় না। তবে এ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে দারুচিনি। মূলত দুটি ভিন্ন উপায়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে দারুচিনি। এটি রক্তচাপ কমিয়ে দেয় এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমায়। এতে ডায়াবেটিক রোগীদের সুস্থ দেহ ধরে রাখা সহজ।

২. দারচিনি পেটের জন্য ভীষণ উপকারি। এটি অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করে ও পেটের ব্যথা উপশম করে। পেট পরিষ্কার করতে, রাতে শোবার আগে, দারুচিনির সঙ্গে হরীতকীর গুঁড়া মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এসিডিটি রোধ করতে, মধুর সাথে দারুচিনি মিশিয়ে খেলে এসিডিটি ভালো হয়ে যায়।

৩. ঈস্ট ছত্রাক ঘটিত ইফেকশন প্রতিরোধ করতে দারুচিনির গুণাবলী চমৎকার ভাবে কাজ করে। হৃদরোগীদের জন্যেও দারুচিনি খুব উপকারী। এটি রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে।

৪. দারুচিনি মরণ ব্যাধি লিম্ফোসাইটিক লিউকোমিয়ার বিস্তার রোধ করে। রক্ত জমাট না বাঁধার অসুখ হিমোফিলিয়া প্রতিরোধ করতে দারুচিনি বিশেষ ভূমিকা রাখে।


৫. রক্ত জমাট না বাঁধার অসুখ হিমোফিলিয়া প্রতিরোধ করে। 


৬. বাতের ব্যথা ও শরীরের হাড়ের ব্যথায় প্রতিদিন নাস্তায় আধা চামচ দারুচিনির গুড়ো এক চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে ব্যথা দূর হয়। তাছাড়া, দারুচিনি মিশ্রিত সরিষার তেল গায়ে মালিশ করলে ব্যথা ভালো হয়।


৭. রান্নায় দারুচিনির ব্যবহার খাবারকে দীর্ঘক্ষণ সংরক্ষণে সহায়তা করে।


৮. দারুচিনির ঘ্রাণ স্মৃতি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত দারুচিনি খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

৯. দারুচিনিতে বেশি পরিমাণে রয়েছে পলিফেনল এন্টিঅক্সিডেন্টস। এ জন্য এটাকে সুপারফুড ও বলা হয়।

১০. ইনসুলিন মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণ করে।

১১. এ মসলা শরীরের বাজে কোলেস্টরল এবং ট্রিগলিসিরাইডস্ কমায়। উঁচু ফ্যাটের খাবারের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
১২. শরীরের ক্ষতিকর ভাইরাস দূর করে দারুচিনি। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে দারুচিনি খেলে অপ্রয়োজনীয় ভাইরাস শরীরে বাসা বাধবে না। নিউ ইয়র্ক শহরের টুরো কলেজের গবেষকরা একটি গবেষণায় দেখেছেন, দারুচিনি পেঁয়াজ, রসুন, লবঙ্গ, কোকা-র থেকে এক্ষেত্রে ১০ শতাংশ বেশি কার্যকর।

আরও পড়ুনঃ   তরমুজের বিচির অবাক করা গুণ - তরমুজের বিচির উপকারিতা

১৩.দারুচিনি মেয়েদের ঋতুস্রাবের সময় অনিয়মিত রক্তঝরা, খিঁচুনিসহ আরও জটিল মেয়েলি সমস্যার উপশম। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে ইরানের ইলাম ইউনিভার্সিটি অপ মেডিক্যাল সায়েন্সে করা একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে ৮০ জন মেয়ে ঋতুস্রাবের সময়ে দারুচিনি খেয়েছেন, তাঁদের পিরিয়ড ক্র্যাম্পের সমস্যা অনেকটাই কম হয়েছে।দারুচিনি খাওয়ার ফলে এরা ঋতুস্রাবের সময়ে রক্তঝরা থেকে রেহাই পেয়েছে।

১৪.আর্থারাইটিসের সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা এক কাপ গরম পানির মধ্যে দু চামচ মধু আর দারচিনি গুড়ো মিশিয়ে সকাল সন্ধ্যা খেতে পারেন।

১৫.ঠাণ্ডায় গলা ব্যথা বা খুশখুশে কাশিতে মধু চায়ের সাথে দারুচিনি মিশালে আরাম পাওয়া যায়।
১৬.অনেকেই জয়েন্টের সমস্যায় ভুগছেন। এক্ষেত্রে দারুচিনিকে জয়েন্টের ব্যথা কমানোর ঔষুধ হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। উষ্ণ গরম পানির মধ্যে এক চামচ মধু আর দারচিনি গুড়ো ভালভাবে মিশিয়ে নিন, এরপর শরীরের ব্যথা স্থানে আস্তে আস্তে মালিশ করুন। ২-৩ দিন ভালভাবে মালিশ করুন। কিছুদিন পর দেখবেন ব্যথা কমে যাবে।

নিম্নে আরও ২৯ টি উপকারিতা পয়েন্ট ভিত্তিতে দেয়া হল:-

কন্ঠস্বর বিকৃতিতে/গলক্ষতে: কন্ঠস্বর সাময়িকভাবে বিকৃত হলে ১ গ্রাম পরিমাণ দারুচনি চূর্ণ ভালভাবে থেঁতো করে আধকাপ গরম পানিতে রাত্রিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেটাকে ছেঁকে নিয়ে সেই পানিটা খেলে কন্ঠস্বর স্বভাবিক হয়। গলক্ষতের ক্ষেতে সকাল-বিকাল দু’বেলা অল্প অল্প করে খেলে গলক্ষতের উপশম হয়।

জীবাণু ধ্বংস করে:

দারুচিনি খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী ওঠে। এক্ষেত্রে দারুচিনির তেল বা ক্যাপসুলও দারুণ কাজে আসে।

প্রদাহজনিত সমস্যা কমায়:

দারুচিনির মধ্যে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, তা প্রদাহ জনিত সমস্যা কমাতে অত্যন্ত কাজ দেয়। আর এই কারণেই তো হৃদরোগ, ক্যান্সার, ব্রেনের সমস্যা সহ আরও বহু ধরনের রোগ প্রতিরোধ দারুচিনি দারুন কাজে দেয়। গবেষকেরা দারুচিনির মধ্যে সাতটিরও বেশি ফ্ল্যাবোনয়েড উপাদান চিহ্নিত করেছেন, যা ক্ষতিকারক প্রদাহকে সমূলে বিনাশ করতে পারে। সেই সঙ্গে শরীরের কোনও অংশ ফুলে যাওয়া, ব্যাথা ইত্যাদি খুব সহজেই সারিয়ে তোলে দারচিনি।

পেটের যে কোনো সমস্যা দূর করে:
পেটে কোনো সমস্যা হলে দারুচিনি খেতে পারেন। কারণ এই মশলা আমাদের দেহে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে। দারুচিনি চা, দারুচিনি গুঁড়ো, দারুচিনি তেল আমাদের পেটের সমস্যার জন্য খুবই ভালো।

প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে:

গবেষকেরা এখনও অবধি দারুচিনির মধ্যে ৪১ রকমের ঔষধি গুণ খুঁজে পেয়েছেন। এছাড়াও এটি প্রমাণিত যে দারুচিনি বার্ধক্যজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, দারুচিনির অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মধ্যে রয়েছে পলিফেনল, ফেনলিক অ্যাসিড, ফ্ল্যাভোনয়েডস ইত্যাদি, যা বহু ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে রক্ত পরিশুদ্ধ করতে এবং ফ্যাট কমাতে, মস্তিষ্কের যাবতীয় রোগ সারাতেও কাজে আসে। একানেই শেষ নয়, ক্যান্সার এবং হৃদরোগ সারাতেও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দারুন কাজে আসে। শরীরের বিভিন্ন অংশের ক্ষত সারিয়ে তুলতে এই মসলা বেশ  কার্যকর।

ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় দারুচিনি:

ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার জন্য দারুচিনি খুবই কার্যকর। এক চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া, এক চা চামচ মধু, এক চিমটে মরিচ গুঁড়া এক গ্লাস পানিতে ভাল করে মিশিয়ে জ্বাল দিন। এরপর পান করুন। এভাবে প্রতিদিন খেলে এটি খুব ভাল প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে।

ওজন কমাতে দারুচিনি:
ওজন কমাতে দারুচিনি সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। এটি শরীরের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়মিত দারুচিনি খেলে খিদে কমে যায় এবং মেদ গলতে শুরু করে। পেটের রোগ, ইনফ্লুয়েঞ্জা, টাইফয়েড, যক্ষ্ণা এবং ক্যান্সারেও দারুচিনি উপকারি। ১ থেকে ৪ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো বিপাকে দ্রুত ভূমিকা রাখে, যা শরীরে সামগ্রিকভাবে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফলে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।

আরও পড়ুনঃ   জেনে নিন অলিভ অয়েলের ৭টি ব্যতিক্রমী ব্যবহার

হার্ট ভালো রাখে:

দারুচিনি, কোলেস্টেরলের সমস্যা, উচ্চ ট্রাই গ্লিসারাইড লেভেল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, দারুচিনিতে উপস্থিত বিশেষ কিছু কম্পাউন্ড, কোলোস্টেরল ও ট্রাই গ্লিসারাইড কমিয়ে ফেলে শরীর থেকে খারাপ কোলোস্টেরল দূর করে এবং ভাল কোলোস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ:

দারুচিনি রক্তে মন্দ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এ কারণে হৃদরোগীদের জন্য দারুচিনি খুব উপকারী। এটি রক্তচলাচল স্বাভাবিক রাখে।

রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি:

দেহের রক্ত তরল থাকতে সাহায্য করে দারুচিনি। রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে দারুচিনি।

ত্বকের যত্নে দারুচিনি:

দারুচিনিতে জীবাণুনাশক উপাদান থাকায় এটি ত্বকের চুলকানি, অ্যালার্জি এবং সংক্রমণ রোধে দারুন কাজে আসে। এক্ষেত্রে দারুচিনির নির্যাসযুক্ত তেল সরাসরি ত্বকে লাগালেও উপকার পাওয়া যায়। ত্বকের কোনও জায়গা ফুলে যাওয়া, ব্যাথা হওয়া, লালচে হয়ে যাওয়া কমাতেও কাজে আসে এই প্রকৃতিক উপাদানটি। প্রসঙ্গত, দারুচিনি এবং মধু একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ব্রণ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি ত্বকের রোগ থেকে মুক্তি মেলে।

অ্যালার্জির প্রকোপ কমায়:

যে কোনও ধরনের অ্যালার্জির চিকিৎসাতেই দারুণ কাজে আসে। এমনকি শ্বাসকষ্টের হাত থেকেও রক্ষা করে। কোনও খাবার থেকে অ্যালার্জি হলেও তা রোধ করতে পারে দারুচিনি।

হজম শক্তি বাড়াতে দারুচিনি:

এ খাদ্য উপাদানটিতে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যা শুধু মানসিক চাপ কমাতেই সাহায্য করে না, বরং এটি কার্যকারী ডিটোক্স এজেন্ট হিসেবেও কাজ করে। এটি শরীরের ফ্যাটি এসিডকে ঠিক রাখে এবং ব্লাডে সুগারের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেও এটি সাহায্য করে।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়: গবেষণায় দেখা গেছে, দারুচিনি আপনার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। বাড়ায় স্মৃতি ও চিন্তাশক্তিও।

গ্যাস্ট্রিক দূর করবে দারুচিনি:
এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে এক চামচ দারুচিনির গুঁড়া ভালো করে গুলিয়ে পান করুন। সাথে মধুও মেশাতে পারেন। অথবা এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ দারচিনির গুঁড়া ভালো করে মিশিয়ে ২-৩ মিনিট পরে পান করুন। খাবার আগে কিছুটা দারচিনি পাউডার দুই চামচ মধু দিয়ে খেলে বদহজম আর অ্যাসিডিটির হাত থেকে মিলবে রেহাই।

ব্যথানাশক: শারীরিক নানা ব্যথা, এমনকি মাথাব্যথার সমস্যাও দূর করতে পারে দারুচিনি। এর প্রোস্টাগ্লান্ডিন নামক উপাদান মস্তিষ্ক শিথিল করে এবং মাংসপেশির ব্যথা উপশমে কাজ করে।

মুখের দুর্গন্ধ: দারুচিনির জীবাণুনাশক উপাদান মুখে ব্যাকটেরিয়ার উৎপাদন প্রতিরোধ করে দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষা করে। প্রতিদিন গরম পানিতে দারুচিনি মিশিয়ে কুলি করলে বা চিবিয়ে খেলেও মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

স্নায়ুরোগ প্রতিরোধ করে

পারকিন্সন এবং অ্যালজাইমার রোধ দারুচিনির মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, দারচিনির মধ্যে থাকা নিউরো প্রোটেক্টিভ প্রোটিন ব্রেন এবং স্নায়ুর স্বাস্থ্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস রোধ করতে সাহায্য করে:

দারুচিনির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ডায়াবেটিসরোধী উপাদান রয়েছে। এটি রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। একইভাবে ওজন বৃদ্ধি এবং উৎসেচকের কোনও সমস্যাতেও দারুচিনি দারুণ কাজে দেয়। দারুচিনি অতিরিক্ত সুগারকে রক্তে মিশে যেতে বাধা দেয়। ফলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বহুল পরিমাণে কমে।

ক্যানসার প্রতিরোধ করেঃ 

দারুচিনির মধ্যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় এটি ডিএনএ নষ্ট হতে দেয় না, এমনকি ক্যান্সার সৃষ্টিকারি টিউমারের বৃদ্ধিতেও এটি বাধা দান করে। দারুচিনির মধ্যে সিনাম্যালডিহাইড নামক একটি উপাদান উপস্থিত রয়েছে, যা ক্যান্সার রোধ করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ   বহুগুণের তেজপাতা, জেনে নিন ৭টি ভিন্নধর্মী ব্যবহার

বাতের ব্যথা দূর করেঃ দারুচিনিতে আছে ম্যাঙ্গানীজ; যা আমাদের দেহের মজবুত হাড়, রক্ত ও দেহের অন্য টিস্যু গঠনে সাহায্য করে থাকে। যাদের বাতে ব্যথার সমস্যা আছে তারা যদি দারুচিনির তেল বা চা পান করেন তাহলে বাতের ব্যথার সমস্যা দূর হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : দারুচিনির প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ আমাদের দেহের জন্য অনেক বেশি উপকারী এবং পৃথিবীর শীর্ষ ৭টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানই আছে দারুচিনির মধ্যে। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলো আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

পেশীর ব্যথা দূর করেঃ দারুচিনি তেল দিয়ে দেহের ব্যথাযুক্ত জায়গায় মালিশ করলে কিছুটা আরাম পাওয়া যায় এবং ব্যথাও কমে যায়।

মাথা ব্যথা দূর করেঃ দারুচিনি দিয়ে এক কাপ চা বানিয়ে খান। দেখবেন মাথা ব্যথা নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।

স্মৃতি শক্তি বাড়ায়: নিয়মিত দারুচিনি খেলে স্মৃতি শক্তি বাড়ে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে এ মসলা খেলে শেখার ক্ষমতা বেড়ে যায় এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে দারুচিনি খুবই কার্যকর।

ঠাণ্ডা ও কাশি দূর করতে: ঠাণ্ডায় গলা ব্যথা বা খুশখুশে কাশিতে মধু চায়ের সাথে দারুচিনি মেশালে আরাম পাওয়া যায়। ঠাণ্ডা লেগে সর্দি হলে ১ টেবিল চামচ হাল্কা গরম মধু আর ১/৪ চামচ দারুচিনি গুঁড়ো তিন দিন খেলে সর্দির হাত থেকে বাঁচা যাবে।

দাঁতের যত্নে দারুণ উপকারি:

দারুচিনির গুঁড়োতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, মুখের দুর্গন্ধ, দাঁতে ফুটো হয়ে যাওয়া, মুখের সংক্রমণ ইত্যাদি সমস্যা কমাতে ঠেকাতে দারুণ কাজ দেয়। দাঁতের যত্নে এর নির্যাসযুক্ত তেলও দারুন কাজে আসে।

রূপচর্চায় দারুচিনি: ত্বকের উজ্জ্বল্যতা বৃদ্ধিতে দারুচিনি, দূর্বাঘাস ও হলুদ সমপরিমানে বেটে মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রন রোধ করতে দারুচিনি উপকারী।

মেছতায়: এক থেকে দের গ্রাম দারুচিনি পূর্বদিন রাত্রে এক গøাস গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেটাকে ছেঁকে নিয়ে সকাল ও বিকাল দু’বেলা ঐ পানি খেতে হবে।

চিনির বদলে দারুচিনি ব্যবহার করতে পারেন:

স্বাদে মিষ্টি হওয়ায় এটি যে কোনও খাবার মিষ্টি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া প্রাকৃতিক গুণে সমৃদ্ধ বলে এটি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।

দারুচিনির কিছু ব্যবহার:

শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে এই মসলা বেশ উপকারী। আলাদা স্বাদ আনতে সুপ, রান্না করা খাবার, সালাদের সঙ্গে দারুচিনি মিশিয়ে নিতে পারেন। গরম পানীয় যেমন, চায়ের সঙ্গে এটি মেশাতে পারেন। দারুচিনির আরও কিছু ব্যবহার নিম্নরুপঃ

– পানিতে দারুচিনি দিয়ে তা ফুটিয়ে রাখুন। সারাদিন এই পানি পান করার অভ্যাস করুন। প্রতিবার খাবার গ্রহণের পূর্বে এই পানি পান করুন। রাতে ঘুমাতে যাবার পূর্বে পানি পান করুন।

– যারা কফি পান করতে ভালবাসেন, তারা কফির সাথে মিশিয়েও পান করতে পারেন। এতে কফির সাথে আলাদা চিনি না মিশিয়ে চিনির বদলে দারুচিনি ব্যবহার করতে পারেন।

– আপনি ইচ্ছা করলে শরবতের সাথেও দারুচিনি মিশিয়ে পান করতে পারেন। বিশেষ করে যারা সবজি ও ফলের রস পান করতে ভালবাসে তারা দারুচিনি মিশিয়ে নিতে পারেন।

– বিভিন্ন খাবারে দারুচিনির ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ করে বিভিন্ন সবজি ও মাংসের তরকারীতে দারুচিনির ব্যবহার করুন। এতে আপনার খাবারের স্বাদে পরিবর্তনের পাশাপাশি আপনার স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল হবে।

বিঃদ্রঃ সাধারণত মাটির দারুচিনি ছয়মাস পর্যন্ত টেকে। বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করলে সেটা এক বছর সংরক্ষণ করা যায়।

বিঃ দ্রঃ গুরুত্বপূর্ণ হেলথ নিউজ ,টিপস ,তথ্য এবং মজার মজার রেসিপি নিয়মিত আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে লাইক দিন আমাদের ফ্যান পেজ বিডি হেলথ নিউজ এ ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × 1 =