জুন-অক্টোবর মাস থাকবে ডেঙ্গু ভাইরাসের আক্রমণ। এই সময়ে জ্বর বা গায়ে ব্যথা হলে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। গত কয়েক বছরে ডেঙ্গু নিয়ে অযথা আতঙ্ক ও ভুলভ্রান্তি অনেকটাই কমে এসেছে। তার পরও রয়ে যায় নানা প্রশ্ন।
ডেঙ্গু থেকে জীবনাশঙ্কা আছে?
সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর তেমন মারাত্মক কোনো রোগ নয়। এ থেকে মৃত্যুহার ১ শতাংশেরও কম। তবে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম প্রাণঘাতী হতে পারে। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে মৃত্যুহার ১০ শতাংশের বেশি এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে ৪০ শতাংশের বেশি। সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর যখন বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের প্রমাণ মেলে, (যেমন- মাড়ি বা নাক থেকে রক্তক্ষরন, মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ, মাসিকের সঙ্গে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ ইত্যাদি) তখন একে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়। রক্তে জমাট অংশ কমে গেলে বিভিন্ন অঙ্গে পানি জমতে পারে সেটাও একটা জটিল অবস্থা। আর রক্তচাপ কমে আসাটাও লক্ষণ।
প্লাটিলেট কমে যাওয়া মানেই ডেঙ্গু?
ডেঙ্গু ছাড়া আরও নানা জ্বরে প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা কমে যেতে পারে। যেমন- চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, হেপাটাইটিস বি ও সি সংক্রমণ, ম্যালেরিয়া, লেপটোস্পাইরোসিস ইত্যাদি। তবে এই মৌসুমে উচ্চমাত্রার জ্বর, প্রচ- মাথাব্যথা ও ত্বকে লাল র্যাশÑ এই তিন উপসর্গে ডেঙ্গু হয়েছে বলেই ধরে নেয়া যায়। রোগ শনাক্ত করতে ডেঙ্গু আইজিএম অ্যান্টিবডি করা যায়, তবে তা চিকিৎসা-পদ্ধতিতে কোনো হেরফের আনবে না।
প্লাটিলেট শিরায় দিতে হতে পারে?
শিরায় প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন ডেঙ্গুর চিকিৎসা নয়। ডেঙ্গুর মূল চিকিৎসা হলো যথেষ্ট বিশ্রাম, প্রচুর পানি ও তরল গ্রহণ এবং জ্বর কমাতে শরীর স্পঞ্জ করা বা প্যারাসিটামল বড়ি সেবন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
যত প্লাটিলেট কম, তত তীব্র ডেঙ্গু?
প্লাটিলেটের সংখ্যা দিয়ে ডেঙ্গু জ্বরের তীব্রতা মাপা যায় না; তীব্রতা বা জটিলতার লক্ষণ হলো অস্বাভাবিক রক্তপাত বা শকের লক্ষণগুলো। তাই প্লাটিলেট কমতে থাকলেও ভয়ের কিছু নেই।
একবার ডেঙ্গু হলে আর হয় না?
কথাটা ঠিক নয়। কেননা, ডেঙ্গু ভাইরাসের পাঁচটি ভিন্ন প্রজাতি আছে। এর একটি দিয়ে সংক্রমিত হলে সেই প্রজাতির বিপরীতে প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়, কিন্তু পরবর্তী সময়ে অন্যটির মাধ্যমে সংক্রমণ হতে পারে। পরবর্তী সংক্রমণ সাধারণত আগেরটার তুলনায় তীব্র হয়।
অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ
মেডিসিন বিভাগ, বিএসএমএমইউ।