টাইফয়েড জ্বরের কারণ ও প্রতিকার

0
838
টাইফয়েড জ্বর,টাইফয়েড

টাইফয়েড জ্বর স্যালমোনেলা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা গুরুতর ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের কারণে সাধারণত টাইফয়েড জ্বর হয়ে থাকে। টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তস্রোতে ও অন্ত্রনালীতে এই ব্যাটটেরিয়া অবস্থান করে এবং দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে তা দ্রুত সুস্থ ব্যক্তির দেহে সংক্রমিত হতে পারে। দুষিত খাবার ও পানি গ্রহণের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিযা দেহে প্রবেশ করা মাত্রই গুণিতক আকারে বেড়ে গিয়ে রক্তস্রোতে ছড়িয়ে পড়ে। আর তখনই দেহে জ্বরসহ নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।

কাদের টাইফয়েড জ্বর হতে পারে

টাইফয়েড জ্বর বাংলাদেশে খুবই সচরাচর একটি রোগ এবং স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া বাহিত দূষিত খাবার গ্রহণ বা পানি পানের মাধ্যমে যে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ কারণে বসতিপূর্ণ এলাকার লোকজনের টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

টাইফয়েড জ্বর কিভাবে ছড়ায়

টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া বহন করে। এছাড়াও টাইফয়েড জ্বর হতে আরোগ্য লাভ করেছেন কিন্তু এই ব্যাকটেরিয়া বহন করছেন এমন কিছু সংখ্যক ব্যক্তিও এই রোগের বাহক হতে পারে।

টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া বহনকারী উভয় ধরনের ব্যক্তিরাই মলত্যাগের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ঘটিয়ে থাকে।

পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা যথাযথ না হলে এবং তার ফলে টাইফয়েড রোগীর মলত্যাগের পর এই ব্যাকটেরিয়া পানির সংস্পর্শে আসলে এবং পরবর্তীতে এই দূষিত পানি খাবারে ব্যবহৃত হলে অথবা টাইফয়েড জ্বরের ব্যাকটেরিয়া বহন করছে এমন কোন ব্যক্তির স্পর্শকৃত বা হাতে বানানো খাবার গ্রহণ থেকেও টাইফয়েড জ্বর সংক্রমিত হতে পারে।

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ

১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত টানা জ্বর।

ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া, মাথাব্যাথা করা।

গা ম্যাজ ম্যাজ করা, কফ বা কাশি হওয়া, হার্ট রেট বা হৃদস্পন্দন কমে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা।

টাইফয়েড জ্বর সনাক্তকরণ

কেবল আপনার চিকিৎসকই বলতে পারবেন যে আপনার টাইফয়েড জ্বর হয়েছে কিনা। দ্রুত সনাক্তকরণের জন্য ব্লাড কালচার নামক রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার জন্য জ্বর হওয়ার ২য় সপ্তাহে উইডাল টেস্ট নামে এক ধলনের ননস্পেসিফিক ব্লাড টেস্ট করতে হয়।

আরও পড়ুনঃ   ডায়রিয়া হলে কী করবেন?

টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা

এন্টিবায়োটিকের মাধ্যমে টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিক শুরুর পর জ্বর কমতে পাঁচদিনও লেগে যেতে পারে। টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পরও যারা দ্রুত চিকিৎসা করেন না তাদের সপ্তাহ বা মাসব্যাপী জ্বর থাকতে পারে এবং বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে :

 অধিক পরিমাণে তরল খাবার গ্রহণে দীর্ঘস্থায়ী জ্বর এবং ডায়রিয়ার কারণে সৃষ্ট পানি স্বল্পতা দূরীভূত হয়। এছাড়া তীব্র আকারে পানি শূন্যতা দেখা দিলে শিরাপথে ওষুধ প্রদানের মাধ্যমেও তরলজাতীয় খাবার প্রদান করা যেতে পারে।

 স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে অসুস্থতাকালীন সময়ে হারানো পুষ্টি পুনরুদ্ধারে উচ্চ ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত।

 যতদিন পর্যন্ত চিকিৎসক এন্টিবায়োটিক গ্রহণের পরামর্শ দিবেন ততদিন পর্যন্ত তা গ্রহণ করতে হবে।

 প্রতিবার বাথরুম ব্যবহারের পর আপনার হাত পানি ও সাবান দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন।

 খাবার তৈরি করা বা খাবার পরিবেশন করা থেকে বিরত থাকুন।

টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে

টাইফয়েড জ্বরের জন্য নির্ধারিত ভ্যাক্সিন (টিকা) চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করুন। ইনজেকশন এবং মুখে খাওয়ার উভয় ধরনের ভ্যাক্সিন বাজারে খুবই সহজলভ্য। কোন ধরনের ভ্যাক্সিন গ্রহণ করবেন সে বিষয়ে আপনার চিকিৎসককের পরামর্শ নিন। শুধু ভ্যাক্সিনই ১০০% কার্যকর হবে তা নয়, এর সাথে নিম্নলিখিত কার্যকরী পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করতে হবে :

 শাকসবজি, ফলমূল এবং রান্নার বাসনপত্র পরিষ্কার পানিতে ধৌত করতে হবে।

 ভালভাবে রান্নাকৃত বা সিদ্ধকৃত খাবারই কেবলমাত্র পান করুন।

 খাবার গ্রহণ, প্রস্তত বা পরিবেশনের পূর্বে খুব ভালভাবে হাত ধৌত করুন।

 ভালভাবে ফুটানো, পরিশোধিত বা বোতলজাত বিশুদ্ধ পানিই কেবলমাত্র পান করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে ফুটানো পানি বা পরিশোধিত পানি সংরক্ষণ করুন এবং পানি যাতে দূষিত হতে না পারে সে জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংরক্ষণকৃত সেই পানি পান করুন।

আরও পড়ুনঃ   চুলকানি মানেই অ্যালার্জি নয়

 বোতলজাত, পরিশোধিত বা ফুটানো পানি হতে বরফ তৈরি করা না হলে সেই বরফ মিশিয়ে পানি বা অন্য কোন পানীয় পান করা হতে বিরত থাকুন।

 যে সমস্ত সবজি বা ফলমূলের খোসা উঠানো যায় না সেগুলো এড়িয়ে চলুন। আর যে সমস্ত ফলমূলের খোসা উঠানো যায় সেগুলোর ক্ষেত্রে আগে ভালভাবে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে তারপর খোসা উঠানো উচিত এবং সেই খোসা খাওয়া উচিত নয়।

 রাস্তার পার্শ্বস্থ দোকানের খাবার গ্রহণ এবং পানি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

 টয়লেট ব্যবহারের পর ভালভাবে হাত পরিষ্কার করুন, এছাড়া টয়লেট সব সময় পরিষ্কার রাখুন।

কখন আপনার হাত ধুয়ে নিবেন

 টয়লেট ব্যবহারের পর।

 আপনার শিশুকে পরিষ্কার করার পূর্বে।

 খাবার প্রস্তুত বা পরিবেশন করার পূর্বে।

 খাওয়ার পূর্বে বা আপনার শিশুকে খাওয়ানোর পূর্বে।

হাত ধোয়ার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা

 সব সময় সাবান ব্যবহার করুন।

 প্রচুর পরিমাণ পারিষ্কার পানি ব্যবহার করুন।

 হাতের সম্মুখভাগ, পশ্চাতভাগ, আঙ্গুলগুলোর মাঝামাঝি অংশ এক কথায় হাতের সকল অংশই যথাযথভাবে পরিষ্কার করুন।

মনে রাঝা উচিত

চিকিৎসা ছাড়াও যদি টাইফয়েড-এর উপসর্গগুলো এমনিতে বিতাড়িত হয় তারপরও স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার জীবাণু আপনার দেহে থাকতে পারে এবং এই অসুস্থতা পরবর্তীতে দেখা দিতে পারে বা আপনার কাছ থেকে অন্যত্র বাহিত হতে পারে। ভ্যাক্সিন নেয়ার পরেও খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় নির্বাচনে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে আপনি যখন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত রোগী বেশি আছে এমন এলাকা পরিদর্শনে থাকবেন।

 ডা. শাগুফা আনোয়ার

 জ্বর-সর্দি সারাবে আদা-রসুনের স্যুপ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × 1 =