আরও পড়ুন জিরা পানি পানে ৭টি স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
জিরা পানি পানে ১২টি স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
খাবারের স্বাদ ও গন্ধ বৃদ্ধিতে জিরা অতুলনীয়। কিছুটা ঝাঁঝালো স্বাদ হলেও এর রয়েছে অনেকগুলো স্বাস্থ্যগুণ। জিরার পানি শুধু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয় ত্বকের জন্যও বেশ ভাল। এটি ডায়াবেটিস, টিউমার এবং মাইক্রোবিয়াল ইনফেকশন দূর করে থাকে।
প্রাচীনকালে অনেক রোগের চিকিৎসা হিসেবে এই পানি পানের পরামর্শ দেওয়া হত। পানি ১০ মিনিট ফুটতে দিন, তারপর এতে জিরা দিয়ে দিন। জিরা দিয়ে আবার ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। ঠান্ডা করে এটি পান করুন।
জিরা পানি কিভাবে তৈরি করবেন? আরও একটি উন্নত পদ্ধতি
- গুড়- ৪ টেবিল চামচ
- চিনি- ৪ টেবিল চামচ
- পানি- ২ কাপ
- লেবুর রস- ৪ চা চামচ
- তেঁতুলের রস- ৪ চা চামচ
- ভাজা জিরা গুঁড়া- ১ চা চামচ
- বিট লবণ- ১/৪ চা চামচ
প্রস্তুত প্রণালীঃ
১। একটি ছোট সসপ্যান নিন। এবার এতে ১ কাপ পানি, গুড় ও চিনি দিয়ে গরম করুন। চিনি না গলে যাওয়া পর্যন্ত অল্প আঁচে নাড়তে থাকুন ও সিরাপ তৈরি করে নিন।
২। একটি বড় পাত্রে বা জগে তেঁতুলের রস, সিরাপ ও অবশিষ্ট পানি নিয়ে নাড়ুন।
৩। এবার পানিতে জিরার গুঁড়া ও বিট লবণ দিন। সকল উপকরণের সুগন্ধ মিশে যাওয়ার জন্য ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
৪। সব শেষে বরফ দিয়ে পরিবেশন করুন।
আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই জিরা পানির স্বাস্থ্যগুণ।
১।যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি
জিরার মধ্যে থাকে পটাশিয়াম এবং জিঙ্ক। জিঙ্ক শুক্রাণুর পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং পটাশিয়াম হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে জিরা পানি আপনার প্রজনন করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
২। হজমক্ষমতা বৃদ্ধি
জিরার থাইমল এবং অন্যান্য উপাদান খাবার হজম করার শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। এটি পাচনশক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এক চা চামচ জিরা এক গ্লাস পানিতে জ্বাল দিন। বাদামী রং হয়ে আসলে চুলা বন্ধ করে দিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে এটি পান করুন। এটি দিনে তিনবার পান করুন। এটা পেট ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করবে।
৩। রক্তস্বল্পতা দূরীকরণ
আপনি জানেন কি ১০০ গ্রাম জিরাতে ১১.৭ মিলিগ্রাম লৌহ থাকে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রধান উপাদান এই লৌহ। ফলে নিয়মিত জিরা পানি পান করলে রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
জিরাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। শরীরের জন্য জরুরী অন্যতম মিনারেল আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে যা অক্সিজেন পরিবহন করতে সাহায্য করে। নিয়মিত জিরা পানি পান রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
৪। ক্যান্সার প্রতিরোধে
বেস্ট ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, পাকস্থলি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে জিরা পানি। Cancer Research Laboratory of Hilton Head Island, South Carolina, USA এর মতে জিরার উপাদানসমূহ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে। প্রতিদিনের রান্নায় কিছু পরিমাণের জিরা মিশিয়ে নিন।
৫। অনিদ্রা দূর করতে
আপনি কি অনিদ্রা সমস্যায় ভুগছেন? তবে জিরা হতে পারে এর সমাধান। জিরা গুঁড়ো এবং একটি কলা মিশিয়ে নিন। এটি নিয়মিত রাতে খান। এটি ভাল ঘুমাতে সাহায্য করবে।অর্থাৎ জিরার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে মেলাটোনিন থাকে। কলার সাথে জিরা খেলে মস্তিস্কে উপকারী ক্যামিকেলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় যার ফলে আপনি ইনসোমনিয়া রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
প্রত্যেক রাতে ঘুমানোর আগে পাকা কলার উপর জিরা গুঁড়া ছিটিয়ে খাবেন।
৬। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
কিছু পরিমানের জিরা ভেজে গুঁড়ো করে নিন। এবার এটি পানি অথবা মধুর সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। এছাড়া জিরার চা পান করতে পারেন। এমনকি জিরা পানিও আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করে দিবে।আঁশজাতীয় হওয়ায় এরা এনজাইম নিঃসরণের পরিমাণ বাড়িয়ে গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের কাজ সবল করে। জিরার গুঁড়া প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ হিসেবে খ্যাত। জিরা পানি এতই শক্তিশালী ল্যাক্সেটিভ যে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এটা পাইলস্ রোগ নির্মূল করতেও সক্ষম।
৭। গলা ব্যথা দূর করতে
গলা ব্যথা কমাতে জিরা পানি সাহায্য করে থাকে। কিছু পরিমাণে জিরা পানিতে ফুটিয়ে নিন। এবার এটি দিয়ে কিছুক্ষণ কুলিকুচি করুন। এটি আপনার গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
৮। ওজন হ্রাস করতে
জিরা মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে খাবারের রুচি হ্রাস করে থাকে। শুধু তাই নয় এটি রক্তে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে থাকে। নিয়মিত জিরা পানি পানে ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।
৯।হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপের নিয়ন্ত্রণ
প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় এরা শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য জিরা পানি অমৃতস্বরূপ।
নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস জিরা পানি পান করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
১০।ঠাণ্ডা এবং অ্যাজমা থেকে মুক্তি
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটোরি, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় জিরা পানি ঠাণ্ডা এবং অ্যাজমা রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
পানিতে জিরা এবং সামান্য আদা মিশিয়ে গরম করে অল্প অল্প করে পান করলে ঠাণ্ডা এবং অ্যাজমা থেকে প্রশস্তি পাওয়া যায়।
১১।গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারী
গর্ভবতী মায়েদের গর্ভধারণের সময় ন্যশিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য জাতীয় সমস্যা দেখা যায়। জিরা পানি এই সকল সমস্যার সাথে সাথে সন্তান প্রসবের নিরাপত্তা এবং ল্যাক্টেশনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
গর্ভবতী মায়ের জন্য জিরা মধু বা পানির সাথে মিশিয়ে দিনে অন্তত ২ বার পান করা ভাল।
১২।স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি
জিরাতে রিবোফ্লেভিন, জেক্সাথিন, ভিটামিন বি ৬, নিয়াছিন এবং আরো অনেক মিনারেল থাকে যা আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদে এমনেশিয়া রোগের চিকিৎসা করতে প্রায়ই জিরা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে হলে জিরা ভাজা চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়া ভাল।
সতর্কতা
নিয়মিত জিরা পানি পান করার আগে প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুনঃ দেহ সুস্থ রাখতে জিরা পানির ঔষধি গুণ