দাঁতের ব্যাথায় ভোগেননি এমন লোক খুব একটা পাওয়া যাবে না। হঠাৎ দাঁতে ব্যাথা শুরু হলেও ভয়ের কিছু নেই। ঘরে বসেই করা যায় দাঁত ব্যাথার চিকিৎসা। দাঁতের ব্যাথায় ঘরোয়া চিকিৎসা নিতে এখনি জেনে নিন নিচের টিপস গুলো-
দাঁত ব্যাথার কারণ
দাঁত ব্যথার প্রধান কারণ হলো ডেন্টাল ক্যারিজ বা দাঁত ক্ষয় রোগ। দাঁত ক্ষয় রোগে সাধারণত দাঁতের কোনো অংশে গর্ত হয়ে যায় ও দাঁত ব্যথা করে। দাঁত ব্যথার অন্যান্য কারণগুলো হচ্ছে আক্কেল দাঁতের সমস্যা, মাঢ়িতে ইনফেকশন, পুঁজ হওয়া, আঘাতের কারণে দাঁতে ফাটল, ক্যারিজ ইত্যাদি।
বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ শুরু হয়ে গেলো দাঁতের ব্যথা। আর আপনি ব্যথায় কাতরানো ছাড়া অন্য কিছু করতে পারছেন না মোটেও। দ্রুত দাঁতের ডাক্তার বা ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া খুবই জরুরী। কিন্তু তখনই কি করে সম্ভব? তার দারস্থ হতেও তো অন্তত কিছুটা সময় দরকার। তখনই কি করণীয়? জেনে নিন সেসবই। কিছু ঘরোয়া উপায় জেনে নিলে এই সময় খানিকটা সময়ের জন্য মিলবে স্বস্তি। অবসান ঘটবে ব্যথার।
(1) দারচিনি:-
এসময়ে স্বস্তি দিতে পারে দারচিনি। এর মধ্যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল আর ব্যথা কমানোর গুন আছে ভরপুর। শুধু ব্যথা কমানোই নয়, এছাড়াও দারচিনি দাঁতকে আরো মজবুত করে তোলে। এইসব কারণে দারচিনি দাঁত আর মাড়ির জন্য খুবই উপকারী। দাঁত ব্যথা করলে একটা দারচিনির টুকরো নিয়ে যে অংশে ব্যাথা হছে সেই অংশের উপর রাখুন। হাল্কা করে চিবুতে থাকুন আর দারচিনি থেকে যে রসটা বেরোচ্ছে তা কিছুক্ষণ দাঁতের অংশে রেখে গিলে ফেলুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখবেন ব্যথা অনেকটা কমে আসছে।
(2)লবণ পানিঃ-
একেবারে সাধারণ এবং প্রচলিত এই প্রক্রিয়া আসলেই কার্যকর। এক গ্লাস গরম পানিতে বেশি করে লবণ গুলে কুলকুচি করুন যতক্ষণ সম্ভব। দাঁতের ব্যথার কারন হিসেবে যদি কোনও জীবাণু থেকে থাকে তবে তা দূর হবে। এছাড়াও মাড়িতে রক্ত চলাচল ভালো করে দেয় এবং সাময়িকভাবে দাঁত ব্যাথা কমে আসে। তবে এই লবণ পানি খেয়ে ফেলবেন না যেন। কুলকুচি করে ফেলে দেবেন।
(3)লবঙ্গঃ-
যে দাঁতটা ব্যথা করছে, তার ওপরে বা পাশে (যেখানে ব্যাথা) একটা লবঙ্গ রেখে দিন। মাড়ি আর দাঁতের মাঝে বা দুই চোয়ালের মাঝে এই লবঙ্গ চেপে রাখতে পারেন যতক্ষণ না ব্যথা চলে যায়। লবঙ্গের তেল ব্যবহার করতে পারেন তবে দুই-এক ফোঁটার বেশি নয়। লবঙ্গ গুঁড়োর সাথে পানি বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করেও লাগাতে পারেন।
(4)আদাঃ-
এক টুকরো আদা কেটে নিন এবং যে দাঁতে ব্যথা করছে সে দাঁত দিয়ে চিবাতে থাকুন। যদি চিবাতে বেশি ব্যথা লাগে তাহলে অন্য পাশের দাঁত দিয়ে চিবিয়ে যে রস এবং আদার পেস্ট তৈরি হবে সেটা ওই আক্রান্ত দাঁতের কাছে নিয়ে যান। জিহ্বা দিয়ে একটু চেপে রাখুন দাঁতের কাছে। কিছুক্ষণের মাঝেই ব্যথা চলে যাবে।
(5)রসুন:-
দাঁতের ব্যাথা শুরু হলেই এক কোয়া রসুন চিবোতে শুরু করুন। রসুনের রসের উপাদান যে কোন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। রসুনের কোয়া থেঁতলে অল্প লবণ মিশিয়ে পেস্ট বানিয়েও দাঁতের উপর লাগাতে পারেন।
(6)পেঁয়াজ:-
টাটকা এবং রসালো এক টুকরো পেঁয়াজ কেটে নিয়ে সেটা আক্রান্ত দাঁতের ওপর চেপে রাখুন। পেয়াজের রসটা উপকারে আসবে।
(7)মরিচ:-
হ্যাঁ মরিচ। শুকনো মরিচের গুঁড়ো দিয়ে পেস্ট তৈরি করে দাঁতের ওপরে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে মরিচের ভেতরে থাকা উপাদান আপনার দাঁতের ওই ব্যাথাকে অবশ করে দেবে। গোলমরিচের গুঁড়োও ব্যবহার করতে পারেন।
(8)শসা:-
শসাকে ফালি করে কেটে দাঁতে এবং মাড়িতে ধরে রাখুন। যদি ঠাণ্ডায় সেনসিটিভিটি না থাকে তাহলে ঠাণ্ডা শসা মাড়িতে লাগান।
ঠাণ্ডা শসার রস দাঁত ও মাড়ির ব্যথা দ্রুত উপশম করে।
(9)ভিনেগার:-
অল্প পরিমাণ আপেল সিডার
ভিনেগার অথবা সাদা ভিনেগার তুলায়
নিয়ে ব্যথার জায়গায় চেপে ধরে রাখুন।
(10)পুদিনা :-
কয়েকটি পুদিনা পাতা মুখের
ভেতরে নিয়ে কতক্ষন চিবালেও ব্যথা কমে আসে।
(11)আলু :-
কাঁচা আলু কুচি করে সামান্য থেঁতলে নিন এবং হালকা লবণ মিশিয়ে ব্যথার জায়গায়
চেপে ধরে রাখুন।
(12)লেবু :-
লেবুর রসও দাঁতের ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে। লেবুর এক অংশ ফালি করে কেটে নিন এবং দাঁতে, মাড়িতে ঘষে ঘষে লেবুর রস লাগান।
(13)বেকিং সোডা:-
একটা কটন বাড/এক টুকরো তুলা একটু পানিতে ভিজিয়ে সোডা লাগিয়ে নিন এবং দাঁতে মাড়িতে ঘষে ঘষে লাগান। এক চা চামচ বেকিং সোডা হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে ঘরেই তৈরি করতে পারেন
কেমিক্যাল বিহীন মাউথওয়াশ। আরেক ভাবেও বেকিং সোডা ব্যবহার করা যায়। এক চামচ বেকিং সোডা এক গ্লাস গরম পানিতে গুলিয়ে সেটা দিয়ে কুলকুচি করে ফেলুন।
(14)টি ব্যাগ
চা বানানর পর টি ব্যাগটি গরম থাকা অবস্থাতে ব্যথার জায়গায় ধরে রাখুন। চা পাতার “ট্যানিন” নামক উপাদান দ্রুত ব্যথা উপশম করে।
(15) বরফ
ঠাণ্ডা বরফের টুকরো দাঁতের
ব্যথা নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকর। সরাসরি বরফ
দাঁতে না লাগিয়ে বরফকে একটি নরম সুতি কাপড়
দিয়ে মুড়িয়ে নিন এবং ব্যথার জায়গায়
আস্তে আস্তে ঘষুন। ঠাণ্ডা বরফ দাঁতের
ব্যথা কমিয়ে আরাম দেয়। তবে মনে রাখবেন
সরাসরি বরফ দাঁত অথবা মাড়িতে লাগাবেন না।
এতে ফল উল্টো হতে পারে।
একটি কথা সবসময় মনে রাখবেন,আপনার দাঁত ব্যথা করছে তার মানে নিশ্চয়ই দাঁতের ভেতরে কোনো সমস্যা আছে এবং অবশ্যই ডেন্টিস্টের সাহায্য ছাড়া সে সমস্যার থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না। ঘরোয়া কার্যকরী এই পেইনকিলারগুলো আপনাকে কিছুটা সময়ের জন্য ব্যথা থেকে মুক্তি দিচ্ছে বলেই ডাক্তার দেখানোর কথাটা ভুলে যাবেন না যেন। বিশেষ করে যদি মাড়ি ফুলে যায় তবে বুঝতে হবে ইনফেকশন হয়ে গেছে এবং অতি সত্তর ডেন্টিস্টের সাথে দেখা করুন।
দাঁতে ব্যথা হলে কী করবেন?