ঘাস আমাদের প্রধান খাদ্য!!!

0
1294
ঘাস, grass

আচ্ছা তোমাকে যদি বলি ঘাস ছাড়া বেশিদিন টিকে থাকা সম্ভব না। তুমি নিশ্চয়ই আমাকে পাগল ভাববে। বলবে আমি তো আর ‘‘তোমার মতো ঘাস খাই না’। তা তুমি যাই ভাব না কেন; আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে যে ঘাস ছাড়া বেশিদিন টিকে থাকা যাবে কিনা। কেন?  তাহলে ধৈর্য্য ধরে একটু মনোযোগ দিয়ে নিচের অংশটুকু পড়তে হবে।

কথায় বলে আমরা মাছে ভাতে বাঙ্গালি। আজকাল মাছ অবশ্য কম পাওয়া যায়। কিন্তু  আমরা অনেকেই দিনে দু বেলা ভাত খাই। কেউ কেউ সকালে নাস্তায় রুটি খাই। এখন যদি জিজ্ঞেস করি ভাত আর রুটি আসে কোথা হতে? বলবে আসলে ভাত আসে ভাত গাছ (মানে ধান গাছ) হতে; আর রুটি আসে রুটি গাছ (অর্থাৎ গম গাছ) থেকে। শুদ্ধ ভাষায় এ দুটো খাদ্য পাওয়া যায় ধান ও গম শস্য থেকে। সঠিক কথা।

নাহ্, আর হেঁয়ালি না, এবার সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছি। আসলে আমাদের প্রতিদিনকার যাবতীয় খাদ্য উৎসের ৮০% ই আসে ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ থেকে। কারণ ধান, গম, ভুট্টা, যব এ সবই হচ্ছে ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। কাজেই বলতে পারো ঘাসই মানব সম্প্রদায়কে টিকিয়ে  রেখেছে। যদি আমার কথায় সন্দেহ হয়, তবে এক কাজ করো। এক হাতে এমন একটি     উদ্ভিদ নাও, যেটা ঘাস বলে তুমি শতভাগ নিশ্চিত। আর অন্য হাতে ধান বা গমের যে  কোন একটি উদ্ভিদ। তারপর  এ দুটো উদ্ভিদকে পর্যবেক্ষণ শুরু করো। পাতা গুলো হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখো, কান্ডের গঠন দেখো, শীষের গঠন লক্ষ্য করো, দুটোর মধ্যে যথেষ্ট মিল খুঁজে পাবে। যদি তারপরও যথেষ্ট মিল খুঁজে না পাও কিংবা নিজের পর্যবেক্ষণের উপর আস্থা না থাকে, তবে একজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী বা উদ্ভিদ নিয়ে পড়াশোনা করছেন; এমন কারও সাহায্য নাও। তারাই তোমাকে বলবেন ধান, গম, যব, ভুট্টা ইত্যাদি ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। আর আমরা যেসব শস্য খাই তা আসে এসব গাছের বীজ থেকে। তাই বলা যায় তুমি প্রতিদিন দু বেলা করে ‘ঘাসফল’(ধান) খাচ্ছো ! তাই এখনই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো ঘাসের প্রতি। আর ভেবে  দেখো ঘাস ছাড়া সত্যিই কতদিন আমরা টিকে থাকতে পারতাম।

আরও পড়ুনঃ   বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম : একটি সফল প্রয়াসের মৃত্যু!

তোমাদের অনেকেরই চিনি খুব পছন্দ। এই চিনির প্রধান উৎস হল ঘাস। কেননা আখ গাছও এক ধরণের ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ঘর-বাড়ি নির্মাণের অন্যতম একটি উপকরণ বাঁশ। এই বাঁশও এক ধরণের ঘাস। ছন ঘাস গ্রামে ঘরের চালা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ বিশেষ ঘাসের রয়েছে কার্যকরী ঔষধি গুণ। ঘাসের দিকে তাকিয়ে থাকা চোখের জন্য আরামদায়ক। ঘাসবিহীন খেলার মাঠের কথা ভাবো তো কেমন দেখতে? আর আমাদের আঙ্গিনার সৌন্দর্য্যে ঘাসের অবদানের কথা বাদই দিলাম। এখন আবার ঘাস থেকে বিদ্যুৎও উৎপাদন করারও চেষ্টা হচেছ !

দুনিয়ার মানুষ সহ প্রাণীকুলের একটি বড় অংশেরই খাবার জোগায় ঘাস। ঘাস এমনই     উদ্ভিদ যে পৃথিবীর সব জায়গায় পাওয়া যায়। পাওয়া যায় শুষ্ক মরুভূমি থেকে বরফ শীতল দক্ষিণ মেরুতেও। ঘাস সারা পৃথিবীতে সব জায়গায় টিকে থাকার কারণ: এর বৃদ্ধির জন্য খুব কম পানির প্রয়োজন হয়;  প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। এসব গুণই ঘাসকে করেছে অনন্য। আর জোগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর প্রাণীদের জন্য খাবার।

এখন আমরা ঘাসের জন্য নতুন স্লোগান তৈরী করতে পারি ‘আসুন বেশি বেশি ঘাস লাগাই’। তবে বেশী বেশী ঘাস লাগাতে গিয়ে, অন্যান্য গাছ আবার কম লাগিও না যেন।

  • ধারণা করা হয় পৃথিবীতে প্রায় ১০,০০০ হাজার প্রজাতির ঘাস আছে।
  • ঘাস ব্যবসায় হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা লাভ হয়।
  • অনেক প্রাণী শুধু মাত্র ঘাসের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। যেমন: পান্ডা ও প্রজাপ্রতি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

8 + four =