দেশজুড়ে তীব্র গরমে সকলের শোচনীয় অবস্থা। নগরজীবনের অসহনীয় যানজট, ধুলোবালি, গুমোট আবহাওয়া, প্রখর রোদ, বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব এবং ঘন ঘন লোডশেডিং এই গরমকে আরও অসহনীয় করে তুলেছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের জন্য এই পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকা খুব মুশকিল। সাধারণ অসুখের পাশাপাশি তাদের জন্য অতিরিক্ত কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। আসুন সেগুলো জেনে নিই।
হিট সিনকোপ
অতিরিক্ত গরমে টানা পরিশ্রমের কারণে পানিশূন্যতায় শরীরের রক্তচাপ হঠাৎ কমে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়াকে হিট সিনকোপ বলা হয়ে থাকে।
করণীয়
আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত গাছের ছায়ায় বা ঠান্ডা কোনো স্থানে শুইয়ে দিতে হবে। পানিশূন্যতার ঘাটতি পূরণ করতে বেশি বেশি করে ডাবের পানি, তরল খাবার, খাওয়ার স্যালাইন, সাধারণ পানি পান করাতে হবে।
হিট ক্রাম্পস
গরমে মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করলে শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বেরিয়ে শরীরের মাংসপেশিগুলোতে তীব্র ব্যথাসহ খিঁচুনি হয়, যাকে হিট ক্রাম্পস বলে।
করণীয়
আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ফ্যানের নিচে নিতে হবে। বেশি করে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। তিন দিন টানা বিশ্রামে থাকতে হবে।
হিট এক্সহাশন
একইভাবে গরমে অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে পানিশূন্যতার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে নেতিয়ে পড়ে। এ অবস্থাকে হিট এক্সহাশন বলে। এ সময় আক্রান্ত ব্যক্তির মাঝে প্রচণ্ড শারীরিক দুর্বলতা, মাথা ব্যথা, শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা, বমি বমি ভাব, অতিরিক্ত পিপাসা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়।
করণীয়
আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ঠাণ্ডা জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে। ফ্যানের বাতাসের নিচে রাখা যেতে পারে। পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে দিতে হবে।
হিট স্ট্রোক
গরমে অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণেই সাধারণত হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে। এটি একটি জীবনঘাতী শারীরিক অবস্থা। বয়স্ক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে সঙ্গে প্রখর রোদে কাজ করতে থাকা শ্রমিকদের হিট স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আক্রান্ত ব্যক্তি বমি, মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা, খিঁচুনি, এলোমেলো কথা বলা ইত্যাদিসহ একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়ে।
করণীয়
আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত শীতল স্থানে সরিয়ে নিতে হবে। ভালো হয় সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিতে পারলে। সেটি সম্ভব না হলে, শরীরের জামা-কাপড় খুলে গোটা শরীর ঠাণ্ডা পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে বারবার মুছে দিতে হবে। হাত-পা এবং শরীরের সব মাংসপেশি ম্যাসেজ করতে হবে।
ডা. একেএম শাহিদুর রহমান
মেডিকেল অফিসার, কিডনি রোগ বিভাগ
বিএসএমএমইউ, শাহবাগ, ঢাকা