খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারিতা

0
429
Dates

আব্দুল মতিন: 

পৃথিবীতে সাড়ে চারশ’ জাতেরও বেশি খেজুর পাওয়া যায়। তামার বা খেজুর শব্দটি আল কোরআন ও রাসূলের বাণীতে অনেক বার এসেছে। হজরত মারইয়াম (আ.) যখন প্রসব-বেদনায় কাতর হয়ে যান, সে সময়ে তিনি খেজুর গাছের নিচে অবস্থান করছিলেন, তখন আল্লাহ তাকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘তুমি এ খেজুর গাছের কাণ্ড তোমার দিকে নাড়া দাও, (দেখবে) তা তোমার ওপর পাকা ও তাজা খেজুর ফেলছে।’ -সূরা মারইয়াম: ২৫

খেজুরের উপকারিতায় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অনেক বাণী এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেহ সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন তাকে কোনো বিষ ও যাদু ক্ষতি করতে পারবে না। আজওয়া খেজুর হলো মদিনার উৎকৃষ্ট মানের খেজুর।’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম আলেমরা আবশ্য আজওয়া ব্যতীত অন্য খেজুরের মাঝেও এমন উপকারিতা পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করেছেন। খেজুর তিনটি, পাঁচটি বা সাতটি বেজোড় করে খাওয়ায় শরীরের উপকারিতা সবচেয়ে বেশি। এজন্য হাদিসে বেজোড় সংখ্যার কথা বলা হয়েছে।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আলিয়ার (মদিনার গ্রাম) আজওয়া খেজুরে রোগ নিরাময়কারী এবং প্রাতঃকালীন প্রতিষেধক।’ –সহিহ মুসলিম

বলা হয়ে থাকে, বছরে যতগুলো দিন আছে, খেজুরে তার চেয়ে বেশি গুণ আছে।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিনি রোজাদারকে খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙার পরামর্শ দিয়ে বলেন, যে ব্যক্তি খেজুর পাবে সে যেন তা দিয়ে ইফতার করে। আর যদি না পায়, তাহলে পানি দিয়ে ইফতার করবে কেননা তা অধিক পরিষ্কারক ও পবিত্র। -সুনানে আবু দাউদ ও তিরমিজি

খেজুর জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম। রমজান মাসের ইফতারিতে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করতে দেখা যায়। ইফতারিতে খেজুর গ্রহণের ব্যাখ্যা হলো, সারাদিন রোজা থাকার কারণে শরীরের যে খাদ্য ঘাটতি দেখা যায়, শরীরের যে খাদ্য শক্তির প্রয়োজন হয় খেজুর তা অল্প সময়ের মধ্যেই পূরণ করে। কেননা খেজুর খুব সহজে হজম হয়ে শরীরে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ   শীতের দিনে খেজুর খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা

খেজুরের স্বাস্থ্য উপযোগিতা অনেক। খেজুরের মধ্যে প্রাকৃতিক আঁশের আধিক্য থাকায় এর  উপকারিতা ও গুরুত্ব অনেক। গবেষকদের মতে শুকনা খাবারের মধ্যে খেজুরেই সবচেয়ে বেশি পলিফেনল থাকে। বিপজ্জনক অনেক রোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে পলিফেনল। খেজুরের চেয়ে ভালো পটাশিয়াম উৎস আর হয় না। এটা সোডিয়ামেরও ভালো উৎস। কিডনি ও স্ট্রোক জটিলতা এড়াতে এর ব্যাপক প্রয়োজন রয়েছে। এ কারণে চিকিৎসকরা প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

খেজুরের মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণে তেল, ক্যালসিয়াম, সালফার, আইরন, পটাসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, কপার এবং ম্যাগনেসিয়াম বিদ্যমান যা সুস্বাস্থের জন্য অতি দরকারি।

এ ছাড়াও খেজুরে আরও যে সব উপকারিতা আছে-

-ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। আর খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়কে মজবুত করে।
-স্নায়ুবিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
-হৃদরোগীদের জন্য খেজুর বেশ উপকারী। খেজুর হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। রক্তপ্রবাহে গতি সঞ্চার করে।
-খেজুর রক্ত উৎপাদনকারী।
-হজমশক্তি বর্ধক, যকৃৎ ও পাকস্থলীর শক্তিবর্ধক।
-খেজুর রুচি বাড়ায়।
-খেজুর ত্বক ভালো রাখে।
-খেজুর দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।
-খেজুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
-পক্ষাঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারী।
-খেজুর ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধ করে।
-খেজুর খেলে জরায়ুর মাংসপেশির দ্রুত সংকোচন-প্রসারণ ঘটিয়ে, প্রসব হতে সাহায্য করে। প্রসব-পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়।
-খেজুরে কোলেস্টোরল থেকে মুক্তি দেয়।
-নারীদের শ্বেতপ্রদর ও শিশুর রিকেট নিরাময়ে খেজুরের কার্যকারিতা অনেক।
-খেজুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করে।

-খেজুর ডি-হাইড্রেশন রোধ করে।

-শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের সমতা রক্ষা করে।

-খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ, যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।
-খেজুর পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি এবং এজমার জন্য উপকারী।
-উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাটসম্পন্ন খেজুর জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন, যৌনরোগ, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী।

আরও পড়ুনঃ   ইসলামের দৃষ্টিতে হস্তমৈথুন কী? অভ্যস্ত হলে অবশ্যই এই পোস্টি পড়ুন

-খেজুর মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত রাখে।
-যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য খেজুর খুবই উপকারী।
-খেজুর লৌহসমৃদ্ধ ফল হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। রক্তে লৌহিত কণিকার প্রধান উপাদানের অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। খেজুর লৌহসমৃদ্ধ বলে এই রক্তশূন্যতা দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
-শিশুদের জন্যও খেজুর খুব উপকারী।

– ইফতারে যাঁরা শরবত খান না, তাঁরা কয়েকটি খেজুর খেয়ে এর চেয়েও বেশি শক্তি গ্রহণ করতে পারেন।

-অল্প কয়েকটা খেজুর খেলে ক্ষুধার তীব্রতা কমে যায়। এই ফল পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। অন্যদিকে শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে দেয়। ফলে মুটিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে।

রমজান মাসে ইফতারের তালিকায় খেজুরের পাশাপাশি সারা বছর পরিবারের সবার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় খেজুর রাখুন, তাহলে সুস্থ জীবন-যাপন সহজ হবে।

পরামর্শঃ
যাঁদের ডায়াবেটিস এবং শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি রয়েছে, তাঁদের বেলায় পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে খেজুর খাওয়া উচিত।

প্রতিদিন ২টি খেজুর উপকার দেবে ৭টি রোগে

স্বাস্থ্য বিষয়ক আরও টিপস ,সংবাদ ও তথ্যের জন্য নিয়মিত ভিজিট করুন –BD Health

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

eight − two =