কিডনিতে পাথর হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। নিচের যেকোনো একটি কারণে পাথর হতে পারে অথবা সব কারণ একসঙ্গে মিশে পাথর সৃষ্টি করতে পারে। যেমন :
• শরীরে ভিটামিন এ’র ঘাটতি।
• প্রস্রাবে বিভিন্ন মাত্রায় লবণের আধিক্য।
• গরম আবহাওয়া।
• হরমোনের অসমতার কারণে প্রস্রাবে সাইট্রেটের পরিমাণ কমে যাওয়া।
• মূত্রথলিতে দীর্ঘ সময় প্রস্রাব জমে থাকা এবং পর্যাপ্ত প্রস্রাব না হওয়া।
• প্রস্রাবের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা।
• প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির অধিক কার্যকারিতার প্রস্রাবে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ হওয়া।
• দীর্ঘদিন নড়াচড়া না করা, অর্থাৎ শরীর অবশ থাকা।
• কিডনিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ও সংক্রমণ।
বিভিন্ন ধরনের কিডনি পাথর
পাথর গঠনকারী উপাদানের ওপর নির্ভর করে কিডনি পাথরের ধরন। পাথর বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন :
• ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর।
• ক্যালসিয়াম ফসফেট পাথর।
• ইউরিক এসিড বা ইউরেট পাথর।
• সিস্টিন পাথর।
উল্লেখ্য, প্রস্রাবে দ্রবীভূত ক্যালসিয়াম, অক্সালেট, ফসফেট, ইউরিক এসিড প্রভৃতি পদার্থ প্রস্রাবের সঙ্গে কিডনিতে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে। এভাবে দীর্ঘ সময় অবস্থানের পর পাথরের আকার ধারণ করে এবং দিন দিন বড় হতে থাকে।
উপসর্গ
শতকরা ৫০ ভাগ রোগীর কিডনিতে পাথর হয় ৩০-৫০ বছর বয়সে। নারীদের চেয়ে পুরুষদের পাথর হওয়ার ঘটনা কিছুটা বেশি। এই অনুপাত ৪ : ৩। সব পাথর উপসর্গ তৈরি করে না। ফসফেট পাথর সাধারণত নীরব থাকে। এ পাথর আকারে খুব বড় হলে কিডনির টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কেবল তখনই উপসর্গ দেখা দেয়। কিডনিতে পাথর হলে শতকরা ৭৫ ভাগ ক্ষেত্রে রোগী ব্যথা এবং প্রস্রাবে রক্ত যাওয়ার কথা বলেন। সংক্রমণ থাকলে প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
কিডনি পাথরের ব্যথা নির্ভর করে পাথরের অবস্থানের ওপর। পাথর যদি কিডনিতে থাকে তা হলে ব্যথা অনুভূত হয় পিঠে, পাঁজরের ঠিক নিচে। এ ব্যথা পেছন থেকে সামনে ছড়িয়ে পড়তে পারে। হাঁটাচলায় ব্যথা বেড়ে যায়। বিশেষ করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় ব্যথা তীব্র হয়।
পাথর বৃক্কনালিতে থাকলে কোমরের পশ্চাৎভাগে ব্যথা হয় এবং এ ব্যথা সেখান থেকে কুঁচকিতে ছড়ায়। বৃক্কনালিতে পাথর নিচের দিকে নেমে যাওয়ার সময় নালিতে সংকোচন হয় ও ব্যথা করে। হাঁটু গেড়ে বসলে ব্যথা বেড়ে যায়।
ব্যথার সময় রোগীর প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে এবং প্রস্রাব ধোঁয়াটে হতে পারে। পাথর বৃক্কনালিতে আটকে যেতে পারে, তখন নারীদের যৌনাঙ্গে ও পুরুষদের লিঙ্গ মুণ্ডে অথবা অণ্ডকোষে তীব্র ব্যথা করে। রোগীর প্রস্রাব করতে অসুবিধা হতে পারে, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে অথবা সামান্য পরিমাণ বা ফোঁটায় ফোঁটায় প্রস্রাব হতে পারে। প্রস্রাব খুব যন্ত্রণাদায়ক হয়।
রোগ নির্ণয়
• প্রস্রাব পরীক্ষা
• এক্স-রে কেইউবি
• আলট্রাসনোগ্রাম।
চিকিৎসা
• ব্যথা কমানোর জন্য অ্যান্টিস্পাসমোডিক ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। হায়োসিন বিউটাইল ব্রোমাইড ১০-২০ মিলিগ্রাম দৈনিক তিনবার।
• সাধারণত অপারেশনের মাধ্যমে কিডনি পাথর অপসারণ করা হয়।
• যন্ত্রের সাহায্যেও পাথর অপসারণ করা যায়।
এ পদ্ধতির নাম পারকিউটেনিয়াস লিথোট্রিপসি। অন্য আরেকটি পদ্ধতির নাম এক্সট্রা করপোরিয়েল শক ওয়েভ লিথোট্রিপসি।
পাথর সৃষ্টি প্রতিরোধ
কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে আবার কিডনিতে পাথর সৃষ্টি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
• প্রচুর পরিমাণে তরল খেতে হবে।
• যেসব অসুখে কিডনিতে পাথর হতে পারে তার চিকিৎসা করতে হবে, যেমন : হাইপার প্যারাথাইরয় ডিজম, গাউট, হাইপার ক্যালসেমিয়া সংক্রমণ, সারকয়ডোসিস, অ্যাড্রেনাল ডিসঅর্ডার ইত্যাদি।
• দুধ, পনির ও উচ্চ ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার পরিহার করতে হবে।
• রেডমিট, মাছ প্রভৃতি উচ্চ পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার পরিহার করতে হবে।
• সোডিয়াম বাই কার্বোনেট অথবা সাইট্রেট গ্রহণ করতে হবে।
• রুবার্ব বা পীতমূলি, স্ট্রবেরি, পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো, স্পিনিজ, আলুবোখারা, অ্যাসপ্যারাগাস প্রভৃতি অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার পরিহার করতে হবে।
(যদি এগুলো খেতেই হয়, তা হলে দুধের সঙ্গে খেতে হবে। দুধের সঙ্গে খেলে অক্সালেট ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিলে অদ্রবণীয় লবণ তৈরি করে, যা অন্ত্রে জমা হয় এবং পরিশোষিত হয় না।)
• সালফারসমৃদ্ধ খাবার, যেমন—ডিম, গোশত বা মাছ সীমিত করতে হবে।
• কার্বোহাইড্রেট ও চর্বি সীমিত করার প্রয়োজন নেই। কারণ এগুলো পাথর তৈরি করে না।
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
—————————————————————
কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে মুক্তি পাবার কিছু সহজ উপায়ঃ
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। এ ছাড়া কয়েকটি খাবার নিজের খাদ্যতালিকায় রাখলে কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
ধনে পাতাঃ
ধনে পাতার রস শরীর থেকে টক্সিনকে বের করে দিতে বিশেষ সাহায্য করে। এটি প্রোটিন ও ভিটামিন সি-এ সমৃদ্ধ, যা কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে মুক্তি দেয়। এটি কাঁচা বা রস করে খেতে পারেন।
তুলসী পাতাঃ
তুলসী পাতার অনেক গুণ। নানা ধরনের রোগের অব্যর্থ ওষুধ তুলসী। তুলসীর রস ও মধু নিয়মিত খেলে কিডনির পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
বেদানাঃ
কিডনির পাথরকে দূর করতে উপকারী বেদানার রস।
শিমের খোসাঃ
শিমের খোসা সেদ্ধ করে সেই পানি রসের মতো করে খেলে কিডনির উপকার হয়। কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
সুখযাপন: কিডনির স্টোন থেকে মুক্তি পেতে ১টি লেবু যথেষ্ট!
পাতিলেবুর রস আর এক গ্লাস পানি। হাজারো রোগ থেকে মুক্তি। প্রত্যেক বাঙালির হেঁশেলেই থাকে পাতিলেবু। কিন্তু এর উপকারিতা সম্পর্কে কজন বাঙালিই বা অবহিত? জানেন কি, খালি পেটে প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানিতে আধখানা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খেলে মুক্তি পেতে পারেন হাজারো সমস্যা থেকে। বিশেষ করে কিডনির পাথর।
কিডনি স্টোন হতে পারে ৪ রকম। ১ রকমের কিডনি স্টোন বংশানুক্রমে হয়। অন্য ৩ রকমের কিডনি স্টোন ৮০ শতাংশ ক্যালসিয়ামভিত্তিক। পরিবারের কারো কিডনিতে স্টোন হয়ে থাকলে কিডনিতে স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। দীর্ঘদিনের কিডনির রোগ থাকলে কিডনিতে স্টোন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাতিলেবুর রস করতে পারে মুশকিল আসান। পাতিলেবুর রসে থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড। এটা ক্যালসিয়ামজাত পাথরগুলোকে তৈরি হতে দেয় না। এছাড়াও বড় আকারের পাথরগুলোকে সাইট্রিক অ্যাসিড ছোট টুকরোতে ভেঙে দিতে পারে। যাতে সেগুলো সহজেই সরু মূত্রনালি দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। এবং ব্যথা কমায়।
শুধু কিডনির স্টোনই নয়। পাতিলেবুর রসে রয়েছে আরও নানা গুণ। শক্তি বাড়ায় পাতিলেবুর রস। ঘন ঘন সর্দি-কাশিতে উপকারী। এক গ্লাস পানিতে আধখানা পাতিলেবুর রস গুলে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে বন্ধ নাক থেকে মুক্তি। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ওজন কমায়। দাঁতব্যথা কমায়। ভাইরাসজনিত সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। চোখ ভালো রাখে। ত্বক পরিষ্কার রাখে। লিভার পরিষ্কার রাখে। সুতরাং প্রাকৃতিক উপায়ে কিডনির পাথর দূর করার উপায় নামের এই উপায়টি আজই ব্যবহার করুন।