ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রসঙ্গে সকলের জেনে রাখা উচিৎ এই তথ্যগুলো

0
332
ওভারিয়ান ক্যান্সার
নারীরা ওভারিয়ান ক্যান্সারের কিছু উপসর্গের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে পারেন।

কিছু রোগ আছে যার লক্ষণগুলো দেখা যায় স্পষ্ট। রোগীর কষ্টের পেছনে সুস্পষ্ট কারণ বের করা যায় এবং তা সারিয়ে তোলাও যায় একটা সময় পর। কিন্তু কিছু কিছু রোগকে বলা হয় নীরব ঘাতক, কারণ এদের লক্ষণ মোটেই স্পষ্ট নয় এবং রোগ নির্ণয় হতে এতটাই দেরি হয় যে তখন আর রোগীকে বাঁচানো সহজ থাকে না। এমনই একটি রোগ হলো ওভারিয়ান ক্যান্সার। এ রোগটির ব্যাপারে জানতে আমরা কথা বলি আদ-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজের লেকচারার ডাঃ শাহনাজ সেতুর সাথে। তিনি আমাদের জানান এই রোগটির আদ্যপান্ত।

ব্রেস্ট ক্যান্সার শনাক্ত করার যেমন ম্যামোগ্রাম আছে, ওভারিয়ান ক্যান্সারের তেমন কোনো কার্যকরী স্ক্রিনিং পদ্ধতি নেই এখনো। ফলে রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে তা শনাক্ত করা খুবই কঠিন। সাধারণত রোগ বেশ কিছুটা ছড়িয়ে পড়ার পর উপসর্গ দেখা দেয়, তখনো সেটা ওভারিয়ান ক্যান্সার বোঝা সহজ হয় না। তবে নারীরা কিছু উপসর্গের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে পারে এবং তাদের ওভারিয়ান ক্যান্সার হবার ঝুঁকি কম রাখার জন্য কিছু কাজ করতে পারেন।

নারীর ওভারি বা ডিম্বাশয়ে যখন অস্বাভাবিক কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখন তাকে ওভারিয়ান ক্যান্সার বলা হয়। এছাড়া শরীরের অন্য স্থানের ক্যান্সারও ওভারিতে ছড়াতে পারে, একে বলা হয় মেটাস্ট্যাসিস।

বর্তমানে প্রতি ৭৫ জনের মাঝে ১ জন এই রোগে আক্রান্ত হয় বলে জানান ডাঃ সেতু। তবে প্রাথমিকভাবে ধরা পড়লে এবং যথাযথ চিকিৎসা করা গেলে পরের ৫ বছরের বেশী সময় সার্ভাইভ করার সম্ভাবনা শতকরা ৯০ ভাগ।

লক্ষণ

ওভারিয়ান ক্যান্সারে এমন কিছু লক্ষণ দেখা যায়, যেগুলো সাধারণত অন্যান্য সাধারণ শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রেও দেখা যায়। ফলে অনেকেই একে গুরুত্ব দেন না। নারীরা সাধারণত নিজের শরীরের ব্যাপারে বেশী সচেতন থাকেন। এসব লক্ষণের ব্যাপারে আপনার সতর্ক থাকা দরকার এবং এসবের পেছনে কোনো কারণ খুঁজে না পেলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো দরকার। বিশেষ করে দুই সপ্তাহ বা তারো বেশী সময় এসব লক্ষণ বজায় থাকলে গাইনোকোলজিস্ট দেখানো জরুরী। এসব লক্ষণ হলো-

আরও পড়ুনঃ   আপনার কি ভিটামিন খাওয়া উচিত?

– পেট ফুলে যাওয়া

– তলপেটে অস্বস্তি বোধ হওয়া

– পেট ও পিঠে ব্যথা

– কোষ্ঠকাঠিন্য

– অল্প খেলেও পেট ভরা লাগা ও বমি ভাব হওয়া

– ওজন কমে যাওয়া

– মুত্রত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন

অনেক নারী সাধারণ ডাক্তার, ইউরোলজিস্ট, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের কাছে যান এসব সমস্যা নিয়ে। কিন্তু তাদের এটা চিন্তা করা দরকার যে এসব সমস্যার পেছনে গাইনোকলজিক্যাল কারণ থাকতে পারে। আপনার সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বা পিরিয়ডের সমস্যার সাথে এসব লক্ষণের পার্থক্য হলো, এসব সমস্যা সাধারণত হুট করে দেখা দেয়, দিনের পর দিন থাকে এবং কোনোভাবেই তা দূর করা যায় না। পেটের পাশাপাশি পিঠেও ব্যথা হতে পারে।

ওভারিয়ান ক্যান্সারের স্টেজ

স্টেজ ১- একটি বা উভয় ওভারিতে ক্যান্সার ছড়ানো

স্টেজ ২- ওভারি থেকে তলপেটের আশেপাশে ছড়িয়ে পড়া

স্টেজ ৩- পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়া

স্টেজ ৪- সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়া

সাধারণত এই ক্যান্সারের শুরুটা হয় ওভারিকে ঢেকে রাখা টিস্যুতে। এ কারণে পেটের অন্যান্য অঙ্গে যেমন ব্লাডার, অ্যাবডোমিনাল লাইনিং এ তা ছড়িয়ে পড়তে পারে দ্রুত। এরপর তা ফুসফুস এবং যকৃতেও ছড়াতে পারে।

ওভারিয়ান ক্যান্সার নির্ণয়

বিভিন্ন উপায়ে পরীক্ষা করে দেখা হয় রোগীর সমস্যাটি আসলেই ওভারিয়ান ক্যান্সার কিনা। এর মাঝে আছে-

– রক্ত পরীক্ষা

– আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যানিং

– ল্যাপারোস্কপি

– সিরাম টিউমার মার্কার টেস্ট

– ইমিউনোলজিক্যাল টেস্ট

রিস্ক ফ্যাক্টর

ওভারিয়ান ক্যান্সারের ৩০ ধরণেরও বেশী প্রকারভেদ আছে। রোগীদের বিভিন্ন রকমের উপসর্গ দেখা যায় বলে রোগ নির্ণয়ের ছকটি বেশ জটিল। তবে কিছু কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর আছে যা থাকলে সেই নারীর ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশী থাকে, সুতরাং তাদের সতর্ক থাকা উচিৎ এবং ছয় মাস অন্তর চেক আপ করানো দরকার। এসব রিস্ক ফ্যাক্টরের মাঝে আছে-

– নিজ পরিবারে কারো স্তন ক্যান্সার, অন্ত্রের ক্যান্সার, ডিম্বাশয় ক্যান্সারের ইতিহাস থাকা (তবে পরিবারে কারো কখনো ক্যান্সার হয়নি তারমানে এই নয় যে আপনার হতে পারে না)

আরও পড়ুনঃ   চেকআপের সময় অবশ্যই জানুন এই বিষয়গুলো

– বার্ধক্য

– বন্ধ্যাত্ব

– ওবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজন

– এন্ডোমেট্রিওসিস

ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর উপায়

গবেষণায় দেখা যায়, যেসব নারী পরিবার পরিকল্পনার পদ্ধতি হিসেবে জন্মবিরতিকরণ পিল ব্যবহার করেন, এবং সন্তানকে বুকের দুধ যারা দেন তাদের মাঝে ওভারিয়ান ক্যান্সার হবার প্রবণতা কম। এই দুটি পদ্ধতি বেশ স্বাভাবিক। তবে যাদের শরীরে ওভারিয়ান ক্যান্সার হবার ঝুঁকি বেশী, তারা আরো বড় একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, আর তা হলো ওভারি এবং ফ্যালোপিয়ান টিউব অপসারণ। পাশ্চাত্যে কেউ কেউ এই কাজটির সিদ্ধান্ত নেন কারণ ওভারিয়ান ক্যান্সার রোধে এটি একটি কার্যকরী পদ্ধতি। আমাদের দেশে অবশ্য এমনটা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং এই অস্ত্রোপচার করানোটা এখনো প্রচলিত নয়।

ওভারিয়ান ক্যান্সারের চিকিৎসা

প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা এবং চিকিৎসা শুরু করা হলো এই ক্যান্সারকে রুখে দেওয়ার সবচাইতে ভালো উপায়। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে চিকিৎসা সফল হবার সম্ভাবনা বেশী তাদের তুলনায় যাদের ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই রোগে আক্রান্ত হলে একজন গাইনেকোলজিস্ট অনকোলজিস্টের চিকিৎসা নেওয়া সবচাইতে উপকারী হয়।

অতীতের চাইতে এখন অনেক আধুনিক হয়ে উঠেছে এই রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি এবং এই রোগের সাথে যুদ্ধ করে অনেকেই আগের চাইতে সুস্থ জীবন যাপন করছেন। সুতরাং ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেই হতাশ হবার কিছু নেই বরং সঠিক চিকিৎসা নেওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।

কে এন দেয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × five =