এখন বসন্তকাল। বসন্ত শব্দটিতে রোমান্টিক ভাব আছে। কবি-সাহিত্যিক এই ঋতুকে নিয়ে কবিতা-গল্প লিখে থাকেন। আবহাওয়াটাও মাঝামাঝি। বেশি শীতও নয়, গরমও নয়। এত সুন্দর সময়েও আবার অসুন্দর কিছু হতে পারে যদি আশপাশে দেখা দেয় চিকেনপক্স বা জলবসন্ত। যদিও এ রোগটি খুব প্রকট আকারে দেখা দেয় না তবুও ছোঁয়াচে বলেই সবাই আতঙ্কিত। ভেরিমেলা জোস্টার নামের ভাইরাস এ রোগের কারণ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর নাম চিকেনপক্স। সব বয়সের সবাই আক্রান্ত হতে পারে। তবে ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের বেশি হয়।
রোগের সুপ্তকাল : জীবাণু শরীরে প্রবেশের দু-তিন সপ্তাহ পর লক্ষণ প্রকাশ পায়। কখনো এক সপ্তাহ পরেই লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে।
লক্ষণ : শুরুতে অল্প জ্বর, গা ব্যথা, শারীরিক অস্বস্তি দেখা দেয়। প্রধান উপসর্গ জ্বর ও দানা ওঠা। প্রায় ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ১০০০-১০১০ ফা: থাকে। তারপর প্রথমে ছোট ছোট দানা পিঠে, বুকে ও মুখে দেখা দেয়। পরে হাতে-পায়ে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে যায় এবং দানাগুলোর ভেতর পানিজাতীয় পদার্থ জমে ফোস্কার মতো হয়। তিন-চার দিনের মধ্যে দানা বেরোনো শেষ হয়।
অনেক সময় এ দানা গলার ভেতরেও দেখা দিতে পারে। তখন ঢোক গিলতে গলাব্যথা, খাবার খেতে অসুবিধা হয়। পাঁচ-সাত দিনে দানাগুলো লালচে বর্ণ ধারণ করে এবং চুলকায়। শুকানোর পর আক্রান্ত চামড়া ঝরে পড়ে। চিকেনপক্সে আক্রান্ত হওয়ার পর কোনো জটিলতা দেখা দেয় না। তবে কোনো সময় বেশি ফোস্কা ওঠে তাতে পুঁজ জমে সংক্রমিত হতে পারে বা চুলকানির জন্য ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে।
যেভাবে ছড়ায় : সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ফোস্কা ফেটে নির্গত পদার্থ থেকে ভাইরাস বাতাসে ছড়ায় এবং সুস্থ ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে জীবাণু দেহে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়।
চিকিৎসা : চিকেনপক্সের ধারাবাহিক কোনো চিকিৎসা নেই। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়। জ্বর, গা ব্যথার জন্য ট্যাবলেট বা সিরাপ প্যারাসিটামল বয়সানুসারে এবং চুলকানির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। ফোস্কার মধ্যে ইনফেকশন বা পুঁজ হলে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দিতে হবে।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা করে মশারি দিয়ে বাইরের ধুলোবালু, মশা-মাছি থেকে দূরে রাখতে হবে। সেই সাথে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শরীর পরিষ্কার করার জন্য নিমপাতা গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোরহেক্সিডিনও ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজনীয় পুষ্টিসম্পন্ন খাবার খেতে হবে, তবে অ্যালার্জি জাতীয় খাবার পরিহার করা ভালো।
জটিলতা এবং প্রতিরোধ : চিকেনপক্সে বয়সীদের জটিলতা না হলেও শিশুরা অনেক সময় বিভিন্ন জটিলতার শিকার হয়ে থাকে। যেমন- নিউমোনিয়া, হৃৎপি-ের মাংসপেশির প্রদাহ, কিডনির প্রদাহজনিত রোগ, মস্তিষ্কে প্রদাহ ইত্যাদি। যেহেতু চিকেনপক্স প্রতিরোধের জন্য কোনো ভ্যাকসিন বা টিকা নেই সেহেতু নিজেদের সচেতন থাকতে হবে যাতে রোগটি না ছড়ায়। অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা করে রাখতে হবে। সেই সাথে রোগীসহ বাড়ির অন্য সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করতে হবে। তাহলে সুখের বসন্তে সুখ ছাড়া জলবসন্তের মতো কোনো আতঙ্ক বা কোনো দুঃখ বয়ে আনবে না।
-ডা. শাহীদা হোসাইন