ইসিজি (ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম) ( ECG (Electrocardiogram)

0
11345
ইসিজি

ই.সি.জি. বা ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম হলো এমন একটি পরীক্ষা যার দ্বারা হৃদপিন্ডের বিদ্যুৎ পরিবহন বা পরিচলন পদ্ধতিকে গ্রাফের (Graph) মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। হৃদপিন্ড বা হার্ট এমন একটি অঙ্গ যা নিজে নিজেই চলতে পারে, বাইরে থেকে এর পরিচালনার জন্য কোনো স্নায়ু (Nerve)এর উদ্দীপনার প্রয়োজন নাই। হার্ট কে সবসময় স্পন্দিত রাখার জন্য এর ভেতরে একটি নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে, যাকে বলা হয় পেস মেকার (Pacemaker)।এই পেস মেকার থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ (Electricity) সমস্ত হার্টে একপ্রকার পরিবাহক তন্তর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিবহন প্রক্রিয়ায় কোনো প্রকার ত্রুটি – বিচ্যুতি থাকলে তা হার্ট এর কার্যক্রমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ইসিজি করার মাধ্যমে সেই সকল ত্রুটি এবং প্রতিক্রিয়া গুলো একটি কাগজে গ্রাফ একে উপস্থাপন করা হয়। একটি সরু বাকা গলিকে ১২ দিক থেকে ১২টি ক্যামেরা দিয়ে দেখালে যেমন তার সব কিছু ভালো ভাবে দেখা ও বোঝা যায় তেমনি হার্ট এর Electrical activity কে পরিষ্কার ভাবে বোঝার জন্য একে ১২ দিক থেকে ১২ টি লিড (Lead) এর মাধ্যমে দেখা হয়। ইসিজি করার মাধ্যমে হার্টের স্পন্দন এর হার, তা নিয়মিত কিনা, বিদ্যুৎ পরিবহনে কোনো বাধা আছে কিনা, হার্ট এ ব্লক আছে কিনা, ইশকেমিয়া বা ইনফার্কশন আছে কিনা, হার্ট এর মাংশপেশী মোটা হয়ে গেছে কিনা, তা ঠিক মতো কাজ করছে কিনা, অনেকদিন যাবত উচ্চ রক্তচাপ আছে কিনা ইত্যাদি নানা তথ্য খুব সহজেই বোঝা যায়। একজন রোগীর হার্ট এর Electrical activity খুব দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে তাই তাকে বার বার ইসিজি করে দেখার প্রয়োজন হতে পারে। ইসিজি করার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

প্রাথমিকভাবে রোগীকে পরীক্ষা করার পর প্রয়োজন মনে হলে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞগণ প্রথমে যে পরীক্ষাটি করাতে বলেন সেটি হচ্ছে ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফি। অনেকে একে ইকেজি-ও বলে থাকেন।

আরও পড়ুনঃ   সি টি এনজিওগ্রাম কী?

এটি একটি নন-ইনভেসিভ পরীক্ষা, অর্থাৎ রোগীর শরীর কাটাছেঁড়া করে ভেতরে কিছু প্রবেশ করানোর প্রয়োজন হয় না।

মোটামুটি পাঁচ মিনিটের মত সময় লাগে পরীক্ষাটি করতে। হৃদপিণ্ড তার স্বাভাবিক ছন্দে কাজ করছে কিনা, হৃদপিণ্ডের অবস্থান, হৃৎপেশীর কোন অংশ অতিরিক্ত পুরু হয়ে গেছে কিনা, হৃৎপেশীর কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা, রক্ত প্রবাহে কোন অস্বাভাবিকতা আছে কিনা ইত্যাদি বিষয় হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়া পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করা হয়।

একটি কাগজে গ্রাফ আকারে ইসিজি পরীক্ষার ফলাফল বা রিপোর্ট তৈরি হয়। আধুনিক ইসিজি মেশিনগুলোয় তাৎক্ষণিকভাবে একটি ডিসপ্লেতে-ও ইসিজি গ্রাফ পর্যবেক্ষণ করা যায়।

এই গ্রাফ দেখেই চিকিৎসক বুঝে নেন রোগীর হার্ট এটাক আছে কিনা, রক্তে হৃদপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকর মাত্রায় পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি ইলেকট্রোলাইট থাকার লক্ষণ আছে কিনা, উচ্চ রক্তচাপের কোন ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি হয়েছে কিনা।

এজন্য একটি সমতল বিছানায় রোগীকে শুইয়ে দুই হাত, দুই পা এবং হৃদপিণ্ডের কাছাকাছি ছয়টি নির্ধারিত স্থানে ইলেকট্রোড বা তড়িৎদ্বার লাগানো হয়। পরিবাহিতা বৃদ্ধির জন্য চামড়ায় বিশেষ ধরনের জেলও লাগানো হয় অনেক সময়।

এ পরীক্ষা সম্পূর্ণ ব্যথামুক্ত এবং কোন পূর্বপ্রস্তুতি প্রয়োজন হয় না। তবে কোন পুরুষের বুকে অতিরিক্ত লোম থাকলে বিদ্যুৎ পরিবাহিতা বাড়ানোর জন্য শেভ করার প্রয়োজন হতে পারে।

কেবল বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের অভিযোগ নিয়ে আসা রোগীর ক্ষেত্রেই নয়, বয়স্ক রোগীর অপারেশনের পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবেও ইসিজি করা হয়। তাছাড়া ইসিজি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষারও একটি অংশ।

ইসিজি করার পর রোগীর অবস্থা বুঝে আরও বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন চিকিৎসক। এসব পরীক্ষার মধ্যে ইটিটি, ইকো কার্ডিওগ্রাফি এবং এনজিওগ্রাফি উল্লেখযোগ্য।

ম্যামোগ্রাফি (Mamography) কী? কেন এবং কাদের জন্য এই টেষ্ট?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

thirteen + seven =