বছরের পর বছর ধরে জীবন ও সংসার সম্পর্কে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তার নিদর্শন আপনার মাথার ওই কয়েক গোছা পাকা চুল । তবে, অভিজ্ঞতার থেকে পাকা চুলের পরিমান যদি বেশি হয়ে যায়, অর্থাৎ বয়সের আগেই কালো ঝলমলে চুলগুলো সাদা হতে শুরু করলে লোকে কী ভাববে?
পরিবেশ দূষণ, ভ্যাজাল প্রসাধনী, ক্ষতিকর খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে অকালে চুল পাকে। অনেকের আবার বংশগত কারণেও চুল সাদা হয়ে যায় সময়ের আগেই। কেন এমন হয়? কী হতে পারে এর সম্ভাব্য সমাধান?
কী কারণে চুল পাকে?
১। অনেক সময় ১২ বছর বয়সেই ছেলে মেয়েদের মাথায় পাকা চুল দেখা যায়। সাধারণত বংশগত কারণে এমনটি হয়ে থাকে। এই ধরনের সমস্যা স্থায়ী হতে পারে; আবার কোন কোন ক্ষেত্রে কিছুদিন পরে ঠিক হয়েও যেতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সমস্যা স্থায়ীরূপ ধারণ করে।
২। অতিরিক্ত মানসিক চাপ অকালে চুল পেকে যাওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক অস্থিরতা শরীরে অ্যাড্রেনালিন নামক হরমোনের নিঃসরণ ঘটায় যা ডিএনএ-কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে শরীরে বিভিন্ন অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। এসব অস্বাভাবিকতার মধ্যে পাকা চুল একটি।
৩। থাইরয়েড গ্রন্থির সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগ যেমন গ্রেভ’স ডিজিজ, হাইপারথাইরয়েডিজম, হাইপোথাইরয়েডিজম, অ্যানেমিক কন্ডিশন ইত্যাদি অকালে চুল পেকে যাওয়ার জন্য দায়ী।
৪। অপরিকল্পিত খাদ্য গ্রহণ পাকা চুল সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
৫। চুলে রঙ করা, গরম পানিতে চুল ধোয়া, চুল আয়রন করা, অতিরিক্ত হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা চুল পেকে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করে।
অকালে চুল পেকে যাওয়ার ঘরোয়া চিকিৎসা
ঘরে বসেই পাকা চুল সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কীভাবে?
১। কেরাটিন নামক এক ধরনের প্রোটিন দিয়ে আমাদের চুল গঠিত। তাই প্রোটিনযুক্তখাবার খেয়ে পাকা চুল সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
২। ভিটামিন এ, বি-১২, আয়রন, কপার এবং জিংক পাকা চুল প্রতিরোধে সহায়তা করে। মাংস, মাছ, বাদাম ইত্যাদিতে এসব ভিটামিন পাওয়া যায়।
৩। পাকা চুল বৃদ্ধি হওয়া কমানোর সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে পর্যাপ্ত আয়োডিন গ্রহণ করা। শুধুমাত্র লবন-ই আয়োডিনের একমাত্র উৎস নয়; কলা, গাজর ও বিভিন্ন ধরনের মাছ আয়োডিনের ঘাটতি পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
৪। চায়ের লিকারের সাথে লবন মিশিয়ে চুলে লাগালে পাকা চুল কমে আসে। এক কাপ রঙ চা ও এক চা-চামচ লবন একসাথে মিশান। চা কিন্তু ঠাণ্ডা হতে হবে। এবার চুলে ও চুলের গোঁড়ায় ভালভাবে লাগান। এক ঘণ্টা রাখুন এভাবে। পরিষ্কার পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পু করবেন না।
৫। নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার করুন। এটি চুলের যাবতীয় ক্ষতি এবং পাকা চুল থেকে দূরে রাখবে আপনাকে।
৬। যতটা সম্ভব মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। আনন্দে থাকুন।
৭। চুলে মেহেদি পাতা বেটে লাগান। উপকার পাবেন।
৮। আদা এবং মধু একসাথে মিশিয়ে খান রোজ। নিয়ম করে খাবেন, দিনে ১ বার। এটি পাকা চুল সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
৯। নিম তেল চুলে এবং মাথার ত্বকে লাগান।।
১০। আয়ুর্বেদিক ঔষধ ব্যবহার করে দেখতে পারেন। কিন্তু সেটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
এড়িয়ে চলুন……
অতিরিক্ত চা, কফি। ধূমপান করা যাবে না। অতিরিক্ত ক্ষারীয় কিছু চুলে ব্যবহার করে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পাকা চুল দেখা দেয়।