আমরা হাই তুলি কেন?

1
617
হাই তোলা

প্রতিদিন আমরা এমন একটা কাজ করি যা অনেকটাই অদ্ভুত। কেন করি তার সঠিক কারণও জানি না। তেমন একটি কাজ হলো হাই তোলা! হাই তোলার ফলে আমাদের শরীরে কী উপকারই বা হয়। গবেষকরা অনেক বড় বড় রোগের পেছনে লেগে আছেন, তাই হাই তোলা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার সময়ও কারো হয়নি। তারপরও মানুষের মনে এ নিয়ে কৌতূহল টিকে আছে। হাই তোলার কার্যকারণ নিয়েও রয়েছে তত্ত্ব।

হাই তোলা নিয়ে সবচেয়ে পুরনো তত্ত্ব সম্ভবত হিপোক্রেটিসের দেয়া। যেখানে তিনি বলেন, হাই তোলার ফলে বিশুদ্ধ বাতাস শরীরে প্রবেশ এবং দূষিত বাতাস বের হয়ে যায়। এখনও এই তত্ত্বটি প্রচলিত আছে। তবে গবেষণায় কিন্তু এই তা প্রমাণিত হয়নি। বরং এর বিপরীত তথ্য জানা গেছে। যেসব মানুষের অক্সিজেনের দরকার বেশি থাকে তারা আসলে অন্যদের চাইতে বেশি হাই তোলেন না।

সবচাইতে সাম্প্রতিক তত্ত্ব, যার সাথে বেশিরভাগ গবেষক সহমত পোষণ করেন। তা হলো হাই তোলার মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা থাকে। মস্তিষ্ক যখন কোনো কারণে গরম হয়ে যায় তখনি আমাদের হাই তুলতে ইচ্ছা হয়। আমাদের মস্তিষ্ক খুব বেশি পরিমাণে শক্তি খরচ করে। আকৃতি সারা শরীরের তুলনায় ছোট হলেও, খরচ করে বিপাকীয় শক্তির প্রায় ৪০ শতাংশ। মস্তিষ্ক প্রায়ই গরম হয়ে যায়, আমাদের কম্পিউটার বেশিক্ষণ চললে যেমন গরম হয়ে যায়। ক্লান্ত হয়ে গেলে, বিরক্ত হতে থাকলে বা অসুস্থ থাকলে গরম হয় মস্তিষ্ক। হাই তোলার ফলে কিছুটা ঠাণ্ডা হয়ে আসে। এতে আমাদের মন আগের চাইতে একটু সজাগ হয়ে ওঠে।

মস্তিষ্কের তাপমাত্রা ৩ টি বিষয়ের ওপরে নির্ভর করে। ধমনীতে রক্তপ্রবাহের মাত্রা, রক্তের তাপমাত্রা এবং মস্তিষ্কে সৃষ্ট তাপ। হাই তোলার ফলে প্রথম দুইটি ক্ষেত্রে কাজ হয়। ধমনীতে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কে অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা রক্ত প্রবেশ করে।

আরও পড়ুনঃ   মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ ৮ ব্যায়াম জেনে নিন

হাই তোলার ফলে আমাদের মুখ হাঁ হয়ে যায় এবং অনেক গভীর একটা নিঃশ্বাস নেই, আর ছোট্ট করে প্রশ্বাস ছাড়ি। এ সময়ে আমাদের মাথার চারপাশের পেশিগুলো প্রসারিত হয়। ফলে ঠাণ্ডা রক্ত ধমনী দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবাহিত হয় এবং গরম রক্ত শিরা দিয়ে বের করে দেয়। হাই তোলার সময়ে আনুষঙ্গিক আরও কিছু কাজ করি আমরা। অনেকে হাত প্রসারিত করে দেয়, মাথা পেছনের দিকে হেলিয়ে দেয়। এর ফলে বাহুমূলে ঠাণ্ডা বাতাস লাগে এবং তাতেও শরীর ঠাণ্ডা হয়। সারা শরীর এভাবে স্ট্রেচ করার কারণে আমাদের পেশি কাজের জন্য প্রস্তুত হয়, কেটে যায় ঘুম ঘুম ভাব।

মস্তিষ্কের তাপমাত্রা বাড়লে যে শুধু মানুষেরই ঘুম পায় তা নয়। বরং ইঁদুরের ক্ষেত্রেও তা হতে দেখা গেছে এক গবেষণায়। হাই তোলার ফলে উভয় প্রাণীরই মস্তিষ্কের তাপমাত্রা কমে যায়। পরিবেশের তাপমাত্রা উচ্চ থাকলেও ঘন ঘন হাই তোলার প্রবণতা দেখা যায়। বিবর্তনবাদের গবেষণায় এক তত্ত্বে ধারণা করা হয়, মানুষের মস্তিষ্ক যখন উন্নত হবার পর্যায়ে ছিলো, তখনি খুলির আশেপাশে মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা রাখার জন্য ধমনীগুলো তৈরি হতে থাকে এবং এ সময়েই হাই তোলার মতো শারীরিক কর্মকাণ্ডের উদ্ভব ঘটে।

হাই তোলার আরও একটি অদ্ভুত ব্যাপার আছে। আমাদের সামনে কেউ হাই তুললে আমাদেরও হাই তুলতে ইচ্ছে করে! এটা কী কারণে হয়? মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা থাকলেও কেন হাই ওঠে? এমনকি অনেক সময়ে হাই তোলার কথা শুনলে বা লেখায় পড়লেও হাই ওঠে। ব্যাপারটা অনেকটা সহানুভূতির মত। টেলিভিশনে একজন খেলোয়াড় ব্যথা পেলে আমরা যেমন আহা-উহু করে সমবেদনা প্রকাশ করি। অনেক মানুষ একসাথে থাকলে যদি একজনের হাই তোলার প্রয়োজন হয়, তবে সম্ভাবনা আছে যে বাকিদেরও হাই তোলার প্রয়োজন হবে এবং এ থেকেই হাই তোলার ব্যাপারটা অনেকটাই ছোঁয়াচে হয়ে পড়ে!

জাগরণ

আরও পড়ুনঃ   লিউকোরিয়া সমাধান-সাদাস্রাব থেকে মুক্তির উপায়

বিঃ দ্রঃ গুরুত্বপূর্ণ হেলথ নিউজ ,টিপস ,তথ্য এবং মজার মজার রেসিপি নিয়মিত আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে লাইক দিন আমাদের ফ্যান পেজ বিডি হেলথ নিউজ

1 COMMENT

Leave a Reply to abdul rajjak Cancel reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

18 + twenty =